Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

....

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মারক

একশো বছর আগে এই দিনেই শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। কলকাতায় সরাসরি তার আঁচ যে বিশেষ লেগেছিল তা নয়, কিন্তু ব্রিটিশ রাজশক্তির যুদ্ধ-প্রক্রিয়ায় ইচ্ছে-অনিচ্ছেয় যুক্ত হতে হয়েছিল অনেককেই। সেনাবাহিনীতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের তো সরাসরি যোগ। কাজি নজরুল বা আরও দু’একজন বাদে তাঁদের আর কে-ই বা মনে রেখেছে। লড়াইয়ের ময়দান থেকে তাঁরা সবাই ফিরতেও পারেননি। বাঙালি-অবাঙালি, ইংরেজ কি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মিলিয়ে পূর্ব ভারতে সে সংখ্যাটা বড় কম নয়। তাঁদের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে এ শহরেই অন্তত গোটা চারেক স্মারক তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যে বঙ্গসন্তানদের জন্য তৈরি স্মারকটি (বাঁ দিকের ছবি) আছে কলেজ স্কোয়্যারে, পুব দিকের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকেই।

রেলিঙে জামাকাপড় শুকোয়, পোস্টার আটকানো থাকে, সাদামাটা স্মারকে শুকনো মালা ঝোলে। ৪৯তম বেঙ্গলি রেজিমেন্টের সিপাই বর্ধমানের বগলাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বরিশালের বিশ্বেশ্বর ইন্দু, ঢাকার কামাখ্যা দে, কলকাতার দ্বিজেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত, বগুড়া চট্টগ্রাম ফরিদপুর হুগলি যশোহর খুলনা-র আরও অনেকের নাম আস্তে আস্তে ঝাপসা হতে বসেছে। বরং বাংলা, অসম আর উত্তর ভারতের ‘লস্কর’ যাঁরা ব্রিটিশ নৌবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে যোগ দেন, তেমন ৮৯৬ জনের স্মৃতিতে তৈরি ‘লস্কর মেমোরিয়াল’ গঙ্গার ধারে হেস্টিংস এলাকায় খুব ভাল অবস্থায় রয়েছে (মাঝের ছবি)। একশো ফিট উঁচু এই স্মারকটির নকশা করেছিলেন উইলিয়াম ইনগ্রাম ক্যের। আর ময়দানের উত্তর প্রান্তে হার্বার্ট উইলিয়াম প্যালিসার পরিকল্পিত ‘সেনোটাফ’ তো সুপরিচিত (ডান দিকের ছবি)। কলকাতার ইংরেজ ও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের জন্য তৈরি এই স্মারকটিতে আজ আর নামের ফলক নেই, ১৯৫৯ সালে তা সরিয়ে নেওয়া হয় সেন্ট জন্‌স চার্চে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের যে সব কর্মী মারা যান, তাঁদের জন্যও একটি স্মারক তৈরি হয়েছিল শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে। বাঁ দিক ও ডান দিকের ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

দুই শিল্পী

শ্রদ্ধানন্দ পার্কে বসেছিল ফ্যাসিবাদ বিরোধী অনুষ্ঠান। হেমাঙ্গ বিশ্বাস গান গাওয়ার জন্য নিয়ে আসেন শ্রীহট্টের ছেলে নির্মলেন্দুকে। গান গেয়ে তিনি আসর মাতিয়েছিলেন সে দিন। সেই শুরু। শিক্ষিত সমাজে ব্রাত্য লোকসঙ্গীতকে মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন লোকসঙ্গীত শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী (সঙ্গের ছবি)। অভিনয় করেছিলেন উত্‌পল দত্তের ‘অঙ্গার’ নাটকে, সঙ্গে গান। ছেলে উত্‌পলেন্দু চৌধুরীও সেই ধারা বহন করে গিয়েছেন। কাকতালীয় হলেও এই দুই শিল্পীই প্রয়াত হন ৫৯ বছর বয়সে। এ বছর নির্মলেন্দু চৌধুরীর ৯২তম জন্মদিন উপলক্ষে একই মঞ্চে দুই শিল্পীকে স্মরণ করবে লোকভারতী ও মা-দল। ১ অগস্ট সন্ধে সাড়ে পাঁচটায় শিশির মঞ্চে কথায়-গানে থাকবেন অমর পাল, পূর্ণ দাস বাউল, লোপামুদ্রা মিত্র সহ অনেকে।

প্রত্নবিদ

মোগলমারির পুরাক্ষেত্র থেকে বৌদ্ধ বিহারের নামাঙ্কিত সিল খুঁজে পেয়ে শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলেন। তারপরে তিনিই দেখালেন, এখানে ছিল দু’টি বিহার। কিন্তু উত্‌খনন করে প্রাচীন সভ্যতার সন্ধান তো করছিলেন সেই আশির দশকের মাঝামাঝি থেকেই। ওড়িশার ললিতগিরি, হরিয়ানার থানেশ্বর, গুজরাতের ধোলাভিরায় পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে মালদহের জগজীবনপুরে বৌদ্ধবিহার উত্‌খননে নেতৃত্ব দিলেন। তারপর থেকে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক প্রত্নক্ষেত্রে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। উদ্যোগী ছিলেন সংরক্ষণেও। লিখেছেন একাধিক গবেষণা নিবন্ধ। ইচ্ছে ছিল আরও অনেক কাজের। তা আর হল না। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে আচমকাই হৃদরোগে চলে গেলেন রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় দফতরের উপ-অধিকর্তা অমল রায়। গত শুক্রবার বেহালায় রাজ্য সংগ্রহশালায় ছিল স্মরণসভা।

কবিগান

অন্যান্য লোকশিল্পের মতো কবিগানের পরম্পরাও এখন অস্তমিত! কবিগানকে বাঁচিয়ে রাখতে নেওয়া হল বেশ কিছু সরকারি উদ্যোগ। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর কবিগানের প্রচার ও প্রসারের জন্য উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁয় গড়ে তুলেছে কবিগান একাডেমি। কাঁকুড়গাছির অম্বেডকর ভবনে হয়ে গেল ঢোল, কাঁসি বাদন এবং বংশী বাদন। সঙ্গে কবিগানের ওপরে আলোচনা এবং কর্মশিবির। ফি মাসে আয়োজিত হবে কবিগান নিয়ে শিবির।

স্মরণীয় সন্ধ্যা

সে কালের কলকাতায় নাটকের স্মারক সন্ধেগুলো ছিল মনে রাখার মতো। একশো, দু’শো বা পাঁচশোতম রজনীতে উত্‌সবের চেহারা নিত প্রেক্ষাগৃহ। আমন্ত্রিত থাকতেন বিশিষ্টরা। প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশের সময় গোলাপজল ছড়িয়ে অভ্যর্থনা জানানো হত। শুধু বক্তৃতা নয়, আমন্ত্রিত বিশিষ্টজনরা পুরো নাটকটাই উপভোগ করতেন। সকলের জন্য থাকত চায়ের ব্যবস্থা, সঙ্গে রেকাবিতে মিষ্টি। উত্তমকুমার অভিনীত ‘শ্যামলী’ নাটকটির ২০০-তম রজনীতে এ রকম অনুষ্ঠান হয়েছিল। সম্প্রতি পাইকপাড়ার মোহিত মৈত্র মঞ্চে দেখা গেল এ রকমই দর্শক আপ্যায়ন। জগন্নাথ বসু ও ঊর্মিমালা বসুকে তাঁদের শ্রুতিনাটকের বত্রিশ বছর উপলক্ষে সম্মান জানানোই ছিল মূল উপলক্ষ। বসেছিল আড্ডার আসর। আয়োজনে ‘ধ্রুপদী’। শেষে শিল্পী ও দর্শকদের হাতে লবঙ্গলতিকা, খাস্তা গজা, আর ছানার মুড়কির মতো প্রায় লুপ্ত মিষ্টি তুলে দিয়ে হারানো দিনগুলোকে ছোঁয়ার চেষ্টা করা হল।

সহজ পরব

জীবনের কোনও-না-কোনও সময়ে আমাদের শুনতেই হয় শিকড়ের ডাক, সে ডাক স্পর্শ করে গভীরে। সেই ডাকে সাড়া দিতেই ‘সহজ পরব’-এর আয়োজন করেছে দোহার ও লোপামুদ্রা প্রোডাকশনস। এই ‘সহজ পরব’ আদতে এক মঞ্চ মাত্র, এতে তুলে ধরা হবে দেশের বৈচিত্রময় সংস্কৃতির সম্ভার, বিভিন্ন লোকশিল্পের স্বতন্ত্র স্বর ও পরিচয়। লোপামুদ্রা মিত্রের মতে ‘সহজ পরব একটি অ-লাভমুখী যৌথ উদ্যোগ... এভাবে একটি সামগ্রিক ঐতিহ্য-চর্চা কেন্দ্র গড়ে ওঠে।’ আর দোহার-এর কালিকাপ্রসাদের কাছে সহজ পরব ‘শেকড়কে পুনর্সন্ধান ও পুনর্সংজ্ঞায়িত করার উত্‌সব।’ ১-৪ অগস্ট রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গণ আর প্রেক্ষাগৃহে এই উত্‌সব। প্রথম দিন বিকেল ৫টায় গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় বাংলার ব্রত-পার্বণের আলপনা ও লোক-বাদ্যযন্ত্রের প্রদর্শনীর উদ্বোধন। সন্ধে ৬টায় সহজ পরব-এর উদ্বোধন করবেন শুভা মুদগল। শেষ দিন থাকবেন ফকির লতিফ শাহ সহ বাংলাদেশের শিল্পীরা।

জাপানি সিনেমা

জাপানি ভাষা শিখতে আসা ছাত্রছাত্রীদের ভাষার সঙ্গে আরও বেশি পরিচিত করে তুলতে কলকাতার জাপান কনস্যুলেট জেনারেল এবং নিহঙ্গো কাইওয়া কিয়োকাই সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৩-এ শুরু হয় সিনেমা নিপ্পন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এ বার অগস্ট মাসের প্রথম তিন দিন নন্দন-২ এ চলবে জাপানি চলচ্চিত্র উত্‌সব। ইংরেজি সাবটাইটেল সহ ছবিগুলো দেখা যাবে। প্রতি দিন দুপুর সাড়ে তিনটে থেকে সন্ধে ছ’টা। অন্য দিকে, সত্যজিত্‌-ঋত্বিককে নিয়ে ফের কলকাতা সরব। তাঁদের সিনেমা নিয়ে নিরন্তর চর্চার ভিতর দিয়েই বোধহয় বাঙালি সংস্কৃতির নিত্য বেঁচে থাকা। বিড়লা অ্যাকাডেমি-র উদ্যোগে ৩০ জুলাই সন্ধে সাড়ে ৬টায় দেখানো হবে ফিল্মস ডিভিশন-এর দু’টি ছবি। ‘ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট অব ইন্ডিয়া: সত্যজিত্‌ রায়’ এবং সত্যজিতের তৈরি চিত্রকর বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে ‘ইনার আই’। সঙ্গে সত্যজিতের সিনেমা নিয়ে বলবেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। আবার ঋত্বিক সিনে সোসাইটি আয়োজিত ‘রানা সরকার স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন অমিয় বাগচী, বিষয়: ‘ঋত্বিক ঘটক, সমাজ ও ধর্ম’। ২ অগস্ট সন্ধে ৬টায় অবনীন্দ্র সভাঘরে।

শতবর্ষে

‘‘আমাদের ক্লাসের ছেলেরা সকলে মিলে ঠিক করেছিলাম যে আমরা নিজেরা একটা অভিনয় করবো... দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের একটা নাটক ঠিক করে... আমরা নিজেরাই তার মহলাটহলা দিচ্ছি, অমুক করছি হেডমাস্টারমশাই একদিন বললেন, এ সব কী হচ্ছে, না না এ সব করা হবে না বলে বন্ধ করে দিলেন’’। বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে পড়ার স্মৃতিচারণ করছেন শম্ভু মিত্র, ‘‘অভিনয়টা করতে পারলুম না, তার ফল কিছু ভালো হল না। আমাদের মাথায় অন্য রকম বদ বুদ্ধি ঢুকতে লাগলো একদিন আমরা সারা ক্লাস ফ্যান্সি ড্রেস করে গিয়ে উপস্থিত হলাম।” সুবীর রায়চৌধুরীকে দেওয়া এক সাক্ষাত্‌কারে যে স্কুলের এমন মজার স্মৃতি বলেছিলেন বিশিষ্ট নট ও নির্দেশক সেই বালিগঞ্জ গভর্নমেন্টই এ বছর তাঁর শতবর্ষের সূচনা থেকেই উদ্‌যাপন শুরু করছে। ২২ অগস্ট শম্ভু মিত্রের জন্মদিন। উত্তম মঞ্চে ২৪ অগস্ট সেই অনুষ্ঠান অভিনীত হবে নাট্যরঙ্গ-এর নাটক ‘শ্রীশম্ভু মিত্র’। নাট্যকার ও নামভূমিকায় সুরজিত্‌ বন্দ্যোপাধ্যায় (সঙ্গে প্রণব বসুর তোলা তাঁর ছবি), নির্দেশক স্বপন সেনগুপ্ত। সুরজিত্‌ জানালেন, ৩ অগস্ট নাট্যরঙ্গ-এর জন্মদিনটিও এ বার শম্ভু মিত্রকে নিবেদিত। ওই দিন অ্যাকাডেমিতে বিকেল তিনটেয় অভিনীত হবে নাটকটি। প্রাককথনে দেবশঙ্কর হালদার। থাকছে শম্ভু মিত্রের ছবির একটি প্রদর্শনীও।

প্রথম একক

আজ চোদ্দো বছর হল গান গাইছেন মনোময় ভট্টাচার্য, সে ভাবে কখনও একক অনুষ্ঠান করেননি। তাঁর গান মাতিয়ে রাখে বাঙালিকে, কিন্তু ক’জনই বা জানেন যে যদুভট্ট-র পঞ্চম প্রজন্ম মনোময়। বেহালা সাংস্কৃতিক সম্মিলনী তাই তাঁর এককানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে: ‘একলা মনোময়’। ২ অগস্ট সন্ধে ৬টায় রবীন্দ্রসদনে। নির্মলা মিশ্র, হৈমন্তী শুক্লা, বনশ্রী সেনগুপ্ত থেকে লোপামুদ্রা মিত্র, জয় সরকার, রূপঙ্কর অনেকেই থাকবেন সে সন্ধ্যায়। অন্য দিকে প্রবীণ মিডিয়া-ব্যক্তিত্ব ও তথ্যচিত্রকার অভিজিত্‌ দাশগুপ্ত অডিয়ো-ভিস্যুয়াল-এ দেশি-বিদেশি সঙ্গীতের সাহায্যে তাঁর গবেষণালব্ধ ‘মিউজিক্যাল জার্নি’র কথা জানাবেন: ‘ফ্রম ট্র্যাডিশনাল টু ডিজিটাল’, নন্দনে ৩১ জুলাই সন্ধে ৬টায়। আয়োজনে ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস ও বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন। ফোরামের উদ্যোগেই নন্দনে স্পেনীয় ছবির উত্‌সব ২৯-৩০ জুলাই।

ছকের বাইরে

আমার ছবি সব রকম দর্শকের জন্যে, তাঁদের কাছে পৌঁছনোর জন্যেই ছবি করি। দর্শকের কোনও ভাবেই যেন ‘বোরিং’ না লাগে সে দিকে খেয়াল রাখি। গতানুগতিক তথ্যচিত্র করি না আমি। বলছিলেন নিষ্ঠা জৈন। তাঁর প্রামাণ্যচিত্রে বাস্তবের প্রতিচ্ছবি প্রায় আখ্যানের ঢঙে উঠে আসে, তথ্যনথি বা সত্যতা বজায় থাকা সত্ত্বেও মানবজীবনের রহস্য মিশে যায় তাতে। তাঁর হালের ছবি ‘গুলাবি গ্যাং’ নিয়ে এখন রীতিমতো হইচই। মধ্যভারতের বুন্দেলখণ্ডের দরিদ্র দলিত মেয়েদের প্রতিরোধ, তাঁদের সংগঠন, এবং তাঁদের নেত্রী সম্পত পালকে নিয়ে তৈরি এ-ছবি মুম্বই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রোত্‌সব ‘মিফ’-এ সেরা-র শিরোপা, সেরা সামাজিক ছবি-র জাতীয় পুরস্কার, আর বিখ্যাত চলচ্চিত্রোত্‌সবগুলিতে সম্মান পেয়েছে। ম্যাক্সমুলার ভবনে গ্যেটে ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ছবিটি দেখানো হল সদ্য, সে উপলক্ষেই কলকাতায় এসেছিলেন নিষ্ঠা, এখানকার তন্নিষ্ঠ দর্শক দেখে তিনি মুগ্ধ। মুম্বইবাসী নিষ্ঠা দিল্লি থেকে ‘মাস কমিউনিকেশন’ করার পর পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট থেকে ‘ডিরেকশন কোর্স’ করেছেন। ২০০৪-এ প্রথম ছবি ‘সিটি অব ফোটোজ’। এমনই আর-একটি ছবি ‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’। দু’টি ছবিতেই স্মৃতি আর ইমেজ-এর সূত্রে উঠে আসে সাংস্কৃতিক ইতিহাস। আবার ‘লক্ষ্মী অ্যান্ড মি’ বা ‘অ্যাট মাই ডোরস্টেপ’ ছবি দু’টির সূত্রে শহরের প্রান্তিক মানুষদের জীবন, যাঁরা আমাদের দৈনন্দিনে জড়িয়ে থাকেন অথচ যাঁদের কোনও খবর রাখি না আমরা। ‘ছবি করতে-করতে নিজেকে আবিষ্কার করা যায়, এমনকী রূপান্তরিতও করা যায়, তাই প্রতিটি ছবিই আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং।’

নব্বই পেরিয়ে

সালটা ১৯৩১। মেদিনীপুর শহরে তখন বিপ্লবী আন্দোলনের উত্তাপ তীব্র। তারই আঁচ থেকে বাঁচাতে মাত্র সাত বছর বয়সে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হল তাঁকে। সংস্কৃত চর্চার সূচনা তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনে। সসম্মানে প্রবেশিকা উত্তীর্ণ হলেও জীবিকার জন্য চাকরি নিতে হয়। তারই মাঝে পড়াশোনা, সংস্কৃত কলেজে সংস্কৃত অনার্স, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালি নিয়ে এম এ। ১৯৫৩-য় সুনীতিকুমার পাঠককে শান্তিনিকেতনে ডেকে নিলেন প্রবোধচন্দ্র বাগচী, নব্বই পেরিয়ে তিনি আজও আশ্রমিক। ১৯৫৪-য় তিব্বতি বিভাগে যোগ দিলেন সুনীতিকুমার। প্রবোধচন্দ্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী ছি মেড রিক জিং লামা-র সঙ্গে গড়ে তুললেন ইন্ডো-টিবেটান স্টাডিজ বা ভোট-ভারত বিদ্যা চর্চা বিভাগ। ক্রমে দেশি-বিদেশি ছাত্র সমাবেশে বিভাগটি আন্তর্জাতিক মর্যাদা পায়। এর সঙ্গে বাংলা, সংস্কৃত ও দর্শন বিভাগেও নিয়মিত অধ্যাপনা করতেন সুনীতিকুমার। কেন্দ্রীয় সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৫৬-য় তিনি অরুণাচলের তাওয়াং বৌদ্ধমঠে সংগৃহীত পুথির নথিকরণের দায়িত্ব পান। আস্তে আস্তে অরুণাচল থেকে লাদাখ পর্যন্ত ভোটিয়াজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে সুনীতিকুমারের। ইতিমধ্যে তান উন শানের প্রেরণায় চিনা শিখেছেন, শেখেন জাপানিও। আবার ১৯৬০-এ কেন্দ্রীয় সরকারের ডাক এল, এ বার তিব্বতি ভাষা শিক্ষা ও সম্প্রসারণের দায়িত্ব। আট বছর সে দায়িত্ব সামলে ফিরলেন নিজের বিভাগে। ১৯৮৯-এ অবসর। রাহুল সাংকৃত্যায়নের তিব্বতি-হিন্দি কোষের নতুন সংস্করণ সংকলন ও সম্পাদনা, তিব্বতিতে রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’ ও অন্য বহু কবিতা অনুবাদ, তিব্বতি ভাষা সাহিত্য বৌদ্ধ ভোটিয়াজন বৌদ্ধবিদ্যা ও বুদ্ধপ্রসঙ্গে রচনা সংশ্লিষ্ট চর্চার জগতে তিনি বিশ্বনাগরিক। আজও সমান সক্রিয়, বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সদ্য ঘুরে গেলেন কলকাতায়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে সম্মানিত করা হল তাঁকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE