Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

কোনও শিল্পবিদ্যালয়ে প্রথাগত পাঠ নেননি তিনি। তাঁর শিক্ষা পরম্পরাবাহিত: বাবা হীরাচাঁদ দুগারের কাছে যার সূচনা, আচার্য নন্দলালের কাছে নাড়া বাঁধায় তার সমাপ্তি। তেলরঙ নয়, ওয়াশ নয়, বিশুদ্ধ জলরঙে তাঁর চিত্র চর্চায় সিদ্ধি।

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০১
Share: Save:

শিল্পের হারানো মণিমুক্তোর সন্ধান

কোনও শিল্পবিদ্যালয়ে প্রথাগত পাঠ নেননি তিনি। তাঁর শিক্ষা পরম্পরাবাহিত: বাবা হীরাচাঁদ দুগারের কাছে যার সূচনা, আচার্য নন্দলালের কাছে নাড়া বাঁধায় তার সমাপ্তি। তেলরঙ নয়, ওয়াশ নয়, বিশুদ্ধ জলরঙে তাঁর চিত্র চর্চায় সিদ্ধি। প্রতিকৃতিচিত্রে দক্ষতা দেখালেও ইন্দ্র দুগার অসামান্য সব নিসর্গচিত্রের জন্যই স্মরণীয়। তবু তাঁকে আমরা তেমন ভাবে মনে রাখিনি। তাঁর ছবি সহজে দেখার কোনও সুযোগ নেই, কোনও প্রামাণিক সচিত্র জীবনীও লেখা হয়নি, চারুকলা পর্ষদের একটি সাম্প্রতিক প্রয়াস বাদে। এই অবস্থায় তাঁর দুটি অপ্রকাশিত স্কেচের খাতা এবং পারিবারিক সংগ্রহ থেকে অনেকগুলি মূল চিত্রের প্রতিলিপি, শিল্পবিষয়ে ইন্দ্র দুগারের বারোটি লেখা, এবং তাঁর সম্পর্কে নারায়ণ সান্যাল, সুনীল পাল থেকে দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, সন্দীপ সরকার প্রমুখ দশ জনের আলোচনা সহ প্রকাশিত হল অপ্রকাশিত স্কেচে অজন্তা ও অন্যান্য (সম্পা: আশিস পাঠক, প্রতিক্ষণ)। দেশীয় শিল্পচর্চার সঙ্গে যাঁর নাড়ির যোগ, তাঁর চোখে প্রাচীন ভারতীয় শিল্প নিদর্শন নিজস্ব নিসর্গে অন্য মাত্রা পেয়েছে।

আশিস পাঠকেরই সম্পাদনায় প্রতিক্ষণ থেকে প্রকাশিত হয়েছে শিল্পবিষয়ক আরও একটি দুর্লভ সংকলন। সুভো ঠাকুর, যিনি বলতেন ‘আমার যেটুকু বিদ্যের দৌড় তার সবটাই কিন্ত পদগত— পুঁথিগত নয়। সবটাই যে পদাঘাতে আহরণ করা, অর্থাৎ কিনা পায়ে পায়ে।’ ঘুরতে ঘুরতে তিনি যেমন অসামান্য এক শিল্পসংগ্রহ গড়ে তোলেন, তেমনই সম্পাদনা করেন এক আশ্চর্য শিল্পপত্র— ‘সুন্দরম’। ঠিক পঞ্চাশ বছর আগে তার সূচনা। ছ’বছরে মোট ২৪টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। তবু সে পত্রিকা, সুভো ঠাকুরের মতোই, দ্বিতীয়রহিত। সেখানে ছড়িয়ে থাকা অজস্র মণিমুক্তোর মধ্যে শিল্পীদের নিয়ে দশটি লেখা সাজিয়ে এই সংকলনটি তৈরি হয়েছে, আছে সংশ্লিষ্ট অনেক ছবিও। তালিকায় আছেন প্রচারশিল্পী ও সি, মাখনলাল দত্তগুপ্ত ও রনেনআয়ন দত্ত, শশিকুমার হেশ, ইন্দ্র দুগার, সুনীলমাধব সেন, হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার, রামকিঙ্কর ও প্রদোষ দাশগুপ্ত। আছে বিদেশে রবীন্দ্রচিত্র প্রদর্শনী নিয়েও একটি লেখা। প্রায় অনালোচিত এই শিল্পীদের সঙ্গে ‘সুন্দরম’-এর মতো পত্রিকার কথা সযত্নে তুলে আনা আনন্দের খবর বইকী।

স্মরণ

একদিন প্রতিদিন-এ মা-র চরিত্রটিতে মৃণাল সেনের প্রথম পছন্দ ছিল তৃপ্তি মিত্র, শেষ পর্যন্ত তাঁর আর অভিনয় করে ওঠা হয়নি, করেছিলেন গীতা সেন (১৯৩০-২০১৭)। ছবিটি মুক্তির পর তৃপ্তি মিত্র ফোন করে বলেছিলেন ‘মায়ের রোলটা আমি করলে আমি একজন অসাধারণ অভিনেত্রীর অভিনয় দেখতে পেতাম না।’ জানিয়েছেন মৃণাল সেন তাঁর আত্মস্মৃতি তৃতীয় ভুবন-এ (আনন্দ)। কত বড় মাপের অভিনেত্রী গীতা সেন, তাঁর সদ্য বিদায়ের পর তা নিয়ে সরব সারা ভারতের শিল্পীরা... শ্যাম বেনেগাল, গোবিন্দ নিহালানি থেকে নাসিরুদ্দিন শাহ, পঙ্কজ কপূর পর্যন্ত। খণ্ডহর-এর প্রায়-অন্ধ ও অথর্ব মা-র চরিত্রে করার সময় একটি ব্লাইন্ড হোমে গিয়ে ক্রমশ অন্ধ হয়ে আসা এক মহিলার শোয়া-বসা-তাকানো-কথা বলা লক্ষ করতেন। কলকাতা ৭১, কোরাস, চালচিত্র-এ একই মায়ের নানা চরিত্রে মধ্য বা নিম্নবিত্ত পরিবারের গৃহস্থ মহিলার দৈনন্দিনের ডিটেল ফুটিয়ে তুলতেন। একই ভাবে আকালের সন্ধানে, খারিজ, মহাপৃথিবী... নিজের অভিনয় জীবনের খুঁটিনাটি ও মৃণাল সেনের সঙ্গে কাজের ঐক্যের কথা বলে গিয়েছেন মৃণাল সেনের ফিল্মযাত্রা-য় (প্রতিক্ষণ)। বিশিষ্ট জনেরা স্মরণ করবেন তাঁকে আজ বেলা ১১টায় গোর্কি সদনে।

অনুবাদ সাহিত্য

অন্নদাশংকর রায়ের সভাপতিত্বে ভারতীয় ও বিদেশি সাহিত্যকে বাংলায় সাহিত্যপ্রেমীদের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে তিনি ১৯৭৫ সালের ২৬ জানুয়ারি শুরু করেছিলেন অনুবাদ পত্রিকা। যা এখনও বাংলায় অনুবাদ সাহিত্যের একমাত্র পত্রিকা। ১৯৪৫-এ বর্ধমান জেলার পাচুন্নি গ্রামে জন্মাষ্টমীর দিন জন্মেছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক বৈশম্পায়ন ঘোষাল। জিয়াগঞ্জ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের কৃতী ছাত্র বৈশম্পায়ন তৈরি করেছিলেন বিশ্বসাহিত্যিকদের নিয়ে লিটারারি ও রাইটার্স ফোরামও। পেয়েছেন একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার। পত্রিকা সম্পাদনার ভার মেয়ে বিতস্তা-র হাতে অর্পণ করে তিয়াত্তর বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন।

সংগীতময়

প্রফুল্লকুমার সরকার ‘নবযুগের আবাহন’ নিবন্ধে লিখছেন, ‘সুভাষ বসল নৌকায় আগার দিকে আসন করে, আর আমি তার একটু পিছনে। অস্তোন্মুখ সূর্যের সোনার কিরণে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরচূড়া ঝলমল করছিল। সুভাষ গান ধরল সে অভাবনীয় মুহূর্তে ভাবগম্ভীর উদাত্ত সুরে— নাহি সূর্য, নাহি জ্যোতি নাহি শশাঙ্কসুন্দর...।’ সুভাষচন্দ্র বসু শুধুমাত্র বিপ্লবী বা দেশব্রতী ছিলেন না, তাঁর নান্দনিক বোধে সংগীতের মতো পারফর্মিং আর্টেরও প্রতিফলন ঘটেছিল। এ বার তাঁর জীবনে সংগীতের প্রভাব বা গুরুত্বের সূত্রগুলিকে অভীক চট্টোপাধ্যায় তাঁর সংগীতময় সুভাষচন্দ্র (সূত্রধর) বইটিতে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। বইটি নেতাজির ১২১তম জন্মদিন উপলক্ষে, ২৩ জানুয়ারি সন্ধে ৬টায় আশুতোষ মুখার্জি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউটে প্রকাশ পাবে। অনুষ্ঠানে নেতাজি প্রসঙ্গে আলোচনা করবেন কাশীকান্ত মৈত্র, চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় ও কুশল চৌধুরী। গ্রামোফোন রেকর্ডে ‘সুভাষচন্দ্রের প্রিয় সংগীত’ শোনাবেন সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়।

নতুন ভাবনা

উপনিবেশের রোদ্দুর যখন ভারতের মাথায় চড়া আলো ফেলছে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সেই সময়কার সৌধ। সেই সৌধের অন্দর-প্রাঙ্গণে ১৭ তারিখ ‘ডিকলোনাইজেশন’ বা উপনিবেশের ধ্বংস-প্রক্রিয়াটির বিশ্লেষণ শুনতে গিয়ে চোখের সামনে যেন জ্বলজ্বল করে উঠল সময় নামক প্রহেলিকা, এবং ইতিহাস নামক ভবিতব্যতা। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটন-এর স্কুল অব হিস্টরি, ফিলজফি, পলিটিকস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস-এর প্রধান শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ডিকলোনাইজেশন কোনও ‘ঘটনা’ নয়, বরং দীর্ঘ, জটিল, দ্বন্দ্বসংঘাতময় একটি ‘প্রক্রিয়া’। ১৯৪৭ সালের অগস্টের সেই মহারাত্রি পার হতেই ভারত ও পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি সবই আগাপাশতলা পাল্টে যায়নি। বহু অর্থে তারা সেই পুরনো ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রই থেকে গেল, পাল্টাল কেবল বাইরের প্রসাধন, নামধাম। সংবিধানের ধারা থেকে শুরু করে প্রশাসন, নীতি প্রণয়ন, সর্বত্রই এই প্রক্রিয়ার জট খুলে দেখাটা তাই জরুরি। নয়তো বোঝা যাবে না, কী ভাবে অনেক সম্ভাবনার মধ্যে একটির পথ ধরে রাষ্ট্রগুলি তৈরি হল। অর্থাৎ আজকের ভারতের নির্মাণের পিছনে রয়েছে অন্য অনেক সম্ভাবনার বি-নির্মাণ। এই যেমন, প্রথম নির্বাচনে কংগ্রেসের ‘অবিসংবাদী’ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তথ্য বলছে, তাতে দেশের অর্ধাংশেরও বেশি মানুষ ভোট দেয়নি। কিন্তু সেই অর্ধাংশেরও বেশি সমাজের প্রতিনিধিত্ব করার মতো কোনও শক্তি ছিল না। এই ঘটনাটার মধ্যে ঠিক কী বার্তা লুকিয়ে, তারও আজ ব্যাখ্যা দরকার।অসাধারণ বাগ্মী শিক্ষকের মগ্ন আলোচনা আবার শোনা যাবে ২৪ জানুয়ারি, বিকেল পাঁচটায়, নেতাজি ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডি়জ-এ শরৎ বসু মেমোরিয়াল লেকচার-এ। বিষয়: ‘পার্টিশন ইন বেঙ্গল, ১৯৪৬-৪৭: দ্য কাস্ট কোয়েশ্চন রিভিজিটেড।’

সোনার সাহিত্য

শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন: ‘রেখেছিলেম পদচ্যুত নূপুরখানি/যখন তুমি চাইবে জানি,/অনন্যোপায় দিতেই হবে, অনুভবে/অবিনশ্বর থাকবে কেবল পা দু’খানি।’ হরিপদ ভৌমিক অবশ্য তাঁর সোনার সাহিত্য/ইতিহাস ও সাহিত্যে বাংলার গয়না (পি সি চন্দ্র গ্রুপ) বইটিতে শুধুমাত্র পায়ের গয়নার কথাই বলেই ক্ষান্ত দেননি, মাথার-নাকের-কানের-গলার কোমরের-আঙুলের— সমস্ত নারী-অঙ্গের গয়নার উৎপত্তি ও বিবর্তনের কথা দু’মলাটের মধ্যে তুলে ধরেছেন। প্রায় পাতায় পাতায় ঝকঝকে গয়নার ছবি, চমৎকার ছাপা, শিল্পপ্রেমীদের মন ভোলাবে। বইটি এ বারের কলকাতা বইমেলার এসবিআই অডিটোরিয়ামে, ২৭ জানুয়ারি, ৩টেয় নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির হাত দিয়ে প্রকাশিত হবে।

নিষ্কৃতিমৃত্যু

১৯৭৩ সালের ২৭ নভেম্বর সন্ধে। মুম্বইয়ের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের নার্স অরুণা শানবাগ ডিউটি শেষে যখন তিনি পোশাক বদলাতে আসেন, তখনই আচমকা গলায় জোরে শিকল পেঁচিয়ে অকথ্য অত্যাচার চালায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সোহনলাল। এর পর বিয়াল্লিশ বছর স্রেফ ‘না মরে বেঁচে থেকে’ তিনি ২০১৫-র ১৮ মে মারা যান। তাঁর নিষ্কৃতিমৃত্যুর আবেদন মঞ্জুর হয়নি। মূলত এই বিষয়বস্তুকে মাথায় রেখেই ন্যাশনাল হেলথ মিশনের মেডিক্যাল অফিসার অবন্তিকা পাল-এর অরুণা শানবাগ/নিষ্কৃতিমৃত্যু ও ভারত (সুবর্ণরেখা) বইটি প্রকাশিত হল। বইটির প্রাথমিক উপস্থাপনা পিঙ্কি বিরানির ‘অরুণা’জ স্টোরি’ বইকে ঘিরে। তার পর লেখক তাঁর সাবলীল ভাষায় উন্মোচন করেছেন নিষ্কৃতিমৃত্যুর নানা দিক— কত ধরনের নিষ্কৃতিমৃত্যু হয়, কোন কোন দেশে চালু আছে, শর্তাবলি কী কী ইত্যাদি ইত্যাদি। সব মিলিয়ে একশো সত্তর পাতার বইটি বাংলায় এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

অন্তঃসলিল

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ বা ‘অবাক পৃথিবী’র মতো কবিতায় তাঁর দেওয়া সুর আজও আমবাঙালি গুনগুনিয়ে ওঠে। সলিল চৌধুরীর নিজেকে নিয়ে লেখা, তাঁর সাক্ষাৎকার এবং তাঁর সম্পর্কে আত্মীয়, বন্ধু ও সহযোগীদের লেখাকে অবলম্বন করে তৈরি হয়েছে সৌম্যেন্দু ঘোষের নাটক ‘অন্তঃসলিল’। এটির দ্বিতীয় শো ২৭ জানুয়ারি, সন্ধে সাড়ে ৬টায়, গিরিশ মঞ্চে ঊনচল্লিশ বছরের নাট্যদল অভিনেয়-র প্রযোজনায় এবং সৌম্যেন্দু ঘোষের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হবে। অন্য দিকে, শিক্ষার্থীদের তৈরি ছবিতে থাকে তরতাজা শিল্পভাবনার ছাপ, তর্কতোলা সমাজকথন। এ-দেশ সহ সারা দুনিয়ার ফিল্ম স্কুল থেকে তেমনই এক গুচ্ছ ছবি নিয়ে ‘ক্ল্যাপস্টিক ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-এর উদ্যোগে তাদের অডিটোরিয়ামে ২৭-২৯ জানুয়ারি। উদ্বোধনে উপস্থিত থাকবেন শত্রুঘ্ন সিংহ।

চড়ুইভাতি

চড়ুইভাতি বটে কিন্তু একটু অন্য রকম! সংসারে প্রায় নিঃসঙ্গ বৃদ্ধদের একটু আনন্দের ছোঁয়া দিতে দক্ষিণ দমদমের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অমরপল্লির বাসিন্দারা ভেবেছেন একটু অন্য ভাবে। এলাকার ষাটোর্ধ্বদের নিয়েই এদের চড়ুইভাতির এ বারে পঞ্চম বছর। উদ্দেশ্য বিলুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনা, বলছিলেন আয়োজকদের একজন সঙ্গীত রক্ষিত। যেমন এ বারের বিষয় ‘আলপনায় আলাপন’। ২৯ জানুয়ারি সারা দিন জমিয়ে খাওয়ার সঙ্গেই সাঁওতালি নাচ, আলপনা আর মঙ্গলঘট নিয়ে আলোচনায় বিধান বিশ্বাস। রয়েছে পাতা নাচ, নাটুয়া এবং রণনৃত্য রায়বেঁশে। সংবর্ধনা পাবেন বেণীপুতুল শিল্পী আরতি পাল। অন্য দিকে, গুরুসদয় সংগ্রহশালায় শিল্পার্ঘ্য জালখুরার যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে দক্ষিণবঙ্গ লোকশিল্প ও লোকসংস্কৃতি উৎসব। ২৬ জানুয়ারি, ২-৮ টা দক্ষিণবঙ্গের হস্তশিল্প সামগ্রী-সহ মেলার সঙ্গেই থাকবে লোকসঙ্গীত, লোকনাট্য ও নৃত্য, আলোচনাসভা এবং কর্মশালা।

শিল্পী

ছেলেবেলায় হারিয়েছেন মাকে, কিন্তু ‘স্নানের পর তাঁর গলায় শোনা মন্ত্রোচ্চারণ এখনও স্মৃতি হয়ে আছে। মায়ের হাত ধরে সুরের জগতে সেই ছিল আমার প্রথম প্রবেশাধিকার’, বলছিলেন বাংলা লোকগানের শিল্পী অভিজিৎ বসু। একই সঙ্গে তিনি গায়ক, সুরকার, গীতিকার এবং সঙ্গীত পরিচালক। বড় হয়েছেন কলকাতায়। কিন্তু রানিগঞ্জের কলেজে পড়ার সময় যাতায়াতের পথে কয়লা খাদানের শ্রমিকদের গান শুনে দিন কেটেছে। সুপ্ত বাসনা ছিল এই গানগুলি নিয়ে কিছু করতে হবে। একবার বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরের কলেজে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে কাছেই সাধন দাস বৈরাগ্যর আখড়ায় গিয়ে বিভোর হয়ে যান শিল্পী। অবশেষে, কলেজের ছাত্ররা খুঁজেপেতে শিল্পীকে নিয়ে যান মঞ্চে। শিক্ষক হিসেবে তিনি হেমাঙ্গ বিশ্বাস, কালিদাস গুপ্ত, দীনেন্দ্র চৌধুরী এবং নীহার বড়ুয়া-র সান্নিধ্য পেয়েছেন। বাংলা বিহার অসমের নানা প্রান্তে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন অজস্র গান। ১৯৯০-এ জি অরবিন্দনের বাস্তুহারা ছবিতে প্রথম প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ। তার পর বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের তাহাদের কথা এবং উত্তরা, বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁটাতার, কাগজের বউ, হাউস ফুল, এলার চার অধ্যায়, কাল, নায়িকা সংবাদ ইত্যাদি ছবিতে কাজ সংগীত পরিচালক, গীতিকার হিসেবে। অনেকদিন পর শিল্পীর একক গানের অনুষ্ঠান জার্নি টুওয়ার্ডস সোল হয়ে গেল সম্প্রতি মহাজাতি সদনে।

মাস্টারমশাই

গত শতকের বিশের দশকের গোড়ায় রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে গুরু অবনীন্দ্রনাথের কাছ থেকে কবির আশ্রমে চলে এসেছিলেন নন্দলাল বসু, কলকাতা থেকে কলাভবনে। তার পর আমৃত্যু শান্তিনিকেতনের লাল মাটি-কাঁকরের পৃথিবীতে। অবনীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘শ্রীমান নন্দলাল বাল্যাবস্থায় যে দিন আমার কাছে এসেছিলেন সেইদিন থেকেই তাঁকে শিল্পরসিক বলে আমি ধরেছিলাম।’ এই শিল্পী নন্দলাল শিক্ষক হিসেবে কোন বিরল গুণের অধিকারী ছিলেন সে ধারণা মেলে রবীন্দ্রনাথের রচনায়: ‘শিল্পী ও মানুষকে একত্র জড়িত করে আমি নন্দলালকে নিকটে দেখেছি। বুদ্ধি, হৃদয়, নৈপুণ্য, অভিজ্ঞতা ও অন্তর্দৃষ্টির এ-রকম সমাবেশ অল্পই দেখা যায়।’ সুশোভন অধিকারীর সম্পাদনায় সদ্য বেরল মাস্টারমশাই নন্দলাল বসু (লালমাটি)। নন্দলালের ভিতরে কী ভাবে গড়ে উঠেছিল শিল্পী ও শিক্ষকের সমাবেশ, তার আলোচনা সম্পাদকের কথা-য়। বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ দেববর্মা বা সুধীর খাস্তগীরের মতো শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্য ছাত্রছাত্রীদের কী ভাবে শিল্পচর্চার পাঠ দিতেন নন্দলাল, কোন মন্ত্রে উসকে দিতেন অন্তরের সৃজন-সাধনা, আবার ছাত্রছাত্রীরাই বা তাঁকে কী চোখে দেখতেন— এ সমস্ত মিলবে বইটিতে। লেখক-তালিকায় বিশিষ্টরা কেউই প্রায় বাদ নেই। অসিতকুমার হালদার, ইন্দ্র দুগার, চিন্তামণি কর, দিনকর কৌশিক, নীরদ মজুমদার, যামিনী রায়, রামকিঙ্কর, শঙ্খ চৌধুরী, সুরেন্দ্রনাথ কর, কে জি সুব্রক্ষ্মণ্যন... এমনকী ইন্দিরা গাঁধীও আছেন। আর আছে নন্দলালের আঁকা প্রচুর স্কেচ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkatar Korcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE