Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

পাথুরিয়াঘাটা রামলোচন ঘোষের বাড়ি, আরও দুটি বাড়িতে প্রতিমার সাজ তৈরি করেন তিনি। এতে ব্যবহার হয় আংটি, শলমা, রাংতা, জরি ইত্যাদি। কেবল চুড়িতে ব্যবহার করা হয় শোলা। প্রতিমার গায়ের গয়না ছাড়াও তৈরি হয় বাঁধাই কলকা, ঝালর ইত্যাদি। সাজ তৈরি করে খুব একটা লাভের মুখ দেখেন না ভূতনাথবাবু।

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:১১
Share: Save:

সাবেক সাজের শিল্পী

আশ্বিনের দুপুরে ঠাকুরদালানের এক পাশে পুরনো খবরের কাগজের উপরে মোম বিরজার আঠা বুলিয়ে ঝলমলে বসমা কাগজ বসিয়ে তার উপরে কাচ-পুঁতি লাগিয়ে একমনে প্রতিমার সাজ তৈরিতে মগ্ন এক সত্তরোর্ধ্ব প্রবীণ। চোখে মোটা কাচের চশমা। পুজোর মাস দু’য়েক আগে থেকেই সাজের হরেক সরঞ্জাম জোগাড় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। বর্ধমান জেলার পাটুলি থেকে আজও প্রতি বছর প্রতিমার সাজ নিয়ে এ শহরে হাজির হন ভূতনাথ মালাকার। কলকাতার তিনটি প্রাচীন পারিবারিক পুজোয় ডাকের সাজ তৈরি করেন তিনি। সময়ের সঙ্গে নানা পরিবর্তন এলেও এ সাজ বাজারে চলতি ডাকের সাজের চেয়ে আলাদা। কাচপুঁতি, নিকেল করা চুমকির জায়গায় এসেছে প্লাস্টিকের চুমকি। কমেছে বুলেনের ব্যবহারও। তবে এখনও সাবেক ঐতিহ্য আর উপকরণ ধরে রাখতেই পছন্দ করেন ভূতনাথবাবু। চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ডাকের সাজ তৈরি করছেন। বাবা-ঠাকুর্দাও এই পেশায় যুক্ত ছিলেন। তবে তাঁর পরে পরিবারের আর কেউ এই পেশায় আসতে আগ্রহী নয়।

পাথুরিয়াঘাটা রামলোচন ঘোষের বাড়ি, আরও দুটি বাড়িতে প্রতিমার সাজ তৈরি করেন তিনি। এতে ব্যবহার হয় আংটি, শলমা, রাংতা, জরি ইত্যাদি। কেবল চুড়িতে ব্যবহার করা হয় শোলা। প্রতিমার গায়ের গয়না ছাড়াও তৈরি হয় বাঁধাই কলকা, ঝালর ইত্যাদি। সাজ তৈরি করে খুব একটা লাভের মুখ দেখেন না ভূতনাথবাবু। তবু এত বছরের অভ্যাস আর পুরনো পরিবারগুলির সঙ্গে সুসম্পর্কের টানে তিনি আজও ছুটে আসেন। এই সাজে নতুনত্ব আনার প্রসঙ্গে ভূতনাথ হেসে শুধুই বললেন, পড়ন্ত বেলা। সাজ তৈরি থেকে ঠাকুর সাজানো পর্যন্ত বেশ উৎসাহে কাটে। তবে বাড়ি ফেরার আগে একটা সংশয় তৈরি হয় ভূতনাথের মনে। এ বারও হল। তবে আসছে বছর আর আসতে পারবেন কি না
এ নিয়ে তাঁর মন সংশয় আর অনিশ্চয়তায় ভরা। ছবি: বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য

শতবর্ষে

এশিয়ার মধ্যে প্রথম মহিলা ডি এসসি তিনি। রসায়নের বিশিষ্ট শিক্ষক ও গবেষক অসীমা চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯১৭-র ২৩ সেপ্টেম্বর। ১৯৩৮-এ তিনি যখন বিজ্ঞান কলেজ থেকে রসায়নে এম এসসি করে প্রফুল্লকুমার বসুর কাছে গবেষণায় যোগ দেন, তখনকার পক্ষে সেটা ছিল যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৪০-এ তিনি লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজে রসায়ন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান হিসেবে যোগ দেন, ১৯৫৪-য় আসেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। ১৯৬২-তে হন খয়রা অধ্যাপক, ১৯৮২-তে অবসর পর্যন্ত ছিলেন সেই পদেই। গবেষণাক্ষেত্রে তাঁর প্রধান কাজ ছিল ভারতীয় বনৌষধির রাসায়নিক বিশ্লেষণ। তাঁর ছাত্রছাত্রীদের গড়া ‘অসীমা চ্যাটার্জি ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগে তাঁর শতবর্ষ উপলক্ষে ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টেয় রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কের বিবেকানন্দ হলে স্মারক বক্তৃতা দেবেন লখনউয়ের সেন্টার অব বায়োমেডিক্যাল রিসার্চের অধিকর্তা গণেশ পাণ্ডে। সঙ্গের ছবিটি ১৯৫২ সালে পরিমল গোস্বামীর তোলা।

বিদেশির চোখে

‘এদেশে দুর্গাপূজার উৎসবে সংস্কৃতির নানা দিক প্রতিফলিত হয়’, বলছিলেন প্রাগের চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা এবং ভারততত্ত্ব বিষয়ের অধ্যাপক মার্টিন রিবেক। ওঁর মতে এই উৎসবের তিনটি দিক রয়েছে। আয়োজনের ভিত্তিতে এই উৎসবে মানুষের মন এবং চোখ আকৃষ্ট হয়। চোখে পড়ে কিছু প্রতীকের ব্যবহার। দ্বিতীয়ত, এখানে রয়েছে কিছু ব্যাকরণ, তা মেনেই তো কোথাও কোথাও পশু বা প্রতীকী বলি দেওয়া হয়। তৃতীয়ত, এই পুজোর রয়েছে নিজস্ব ভাষা, যা মানুষকে এক তূরীয় আনন্দে নিয়ে যায়। ২০০০-২০০৪ তিনি কাটিয়েছেন এই শহরে, খুঁটিয়ে দেখেছেন এই উৎসবকে। সম্প্রতি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে শুনিয়ে গেলেন তাঁর সেই অভিজ্ঞতার কথা ‘বিদেশির চোখে দুর্গাপুজো’ শীর্ষকে। বাংলা ভাষাতেই স্বচ্ছন্দে বললেন তিনি।

ফরাসি ভাষায়

এ বার রবীন্দ্রনাথের গান ফরাসি ভাষায়। মৈনাক গঙ্গোপাধ্যায় ও পারমিতা দাস অনূদিত ছ’টি গান ফরাসিতে গেয়েছেন মধুছন্দা দত্ত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি ভাষার শিক্ষক। গেয়েছেন বাংলাতেও, বাংলায় কয়েকটি গান রূপঙ্করেরও গাওয়া। ‘রঁদেভু/ প্রাচ্য প্রতীচীর সাক্ষাৎ’ সিডিটি (ভাবনা) সদ্য প্রকাশিত। মধুছন্দা গান শিখেছেন সুমিত্রা সেনের কাছে, আর ফরাসি শিখেছেন রামকৃষ্ণ মিশন ও আলিয়ঁস ফ্রঁস্যাজ-এর পরে আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয় আর লন্ডনে।

কারাটে শিবির

কারাটের ‘ম্যাজিক কিকার’ এখন কলকাতায়। কিয়োকুশিন কারাটের আন্তর্জাতিক সংস্থা-র সভাপতি হানসি দাইগো ওইসি, নবম ডান ব্ল্যাক বেল্ট, এখন ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক কিয়োকুশিন (ফুল কনট্যাক্ট) কারাটে প্রশিক্ষণ শিবিরের প্রধান নির্দেশকের ভূমিকায়। ফুল কনট্যাক্ট কারাটে যিনি শুরু করেছিলেন সেই সোসাই মাস ওইয়ামা-র অন্যতম প্রধান শিষ্য ওইসি। কলকাতার এই শিবিরটি আয়োজন করেছে শিবাজি গঙ্গোপাধ্যায়ের অ্যাকাডেমি, কিয়োকুশিনকাই ইন্ডিয়ার অধীনে। অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা রাশিয়া নেপাল ইত্যাদি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে থাকছে ভারতীয়রা। প্রায় ২০০ জনের শিবির চলবে ১৯ পর্যন্ত। শিবিরের পরিকল্পনা ও রূপায়ণে শিহান শিবাজি গঙ্গোপাধ্যায় ও সেনসেই শিবায়ন গঙ্গোপাধ্যায়।

জন্মদিন

জন্মদিনে সুচিত্রা মিত্রের বাড়ির দরজা থাকত অনর্গল, সকাল থেকেই শুভকামনা ফুলে, গানে, গল্প-আড্ডায়। আগামী কাল তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে আজ ১৮ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রসদনে আশ্বিনের প্রথম সন্ধ্যায় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মনীষা বসুর শ্রদ্ধার্ঘ্য, যিনি গানের জীবনের শুরু থেকে পেয়েছিলেন সুচিত্রা মিত্রকে, তাঁর কাছেই অনুশীলন তিরিশ বছর। মনীষার নিবেদন: ‘গানের ভিতর দিয়ে— রবীন্দ্রনাটকে আনন্দ-সাধন।’ যে সব নাটকে রবীন্দ্রনাথ হয়েছেন কখনও ঠাকুর্দা, কখনও বৈরাগী, কখনও দাদাঠাকুর, কখনও-বা অন্ধ বাউল, কিংবা বাল্মীকি... তা দিয়েই মনীষার নির্বাচন। সঙ্গে গৌতম হালদারের একক অভিনয়ে প্রেমচন্দের গল্প থেকে ‘বড়দা’ নাটকটি। স্মৃতিকথনে প্রদীপ ঘোষ। আয়োজনে ‘রবিভৈরবী’।

আগমনী

মাতৃশক্তির উপাসনায় সোহাগে-বিরাগে, হাসি-কান্নায় পরিপূর্ণ আগমনী গান আবহমানকাল শরতের পল্লির মাঠে-ঘাটে গাওয়া হয়ে আসছে। ১৯০১ সালে বেলুড়মঠে প্রথম দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীতে স্বামী বিবেকানন্দ গেয়েছিলেন ‘গিরি গণেশ আমার শুভকারী’। গানটি শ্রীরামকৃষ্ণদেবের প্রিয় গান, উনি নিজেও গাইতেন। তাঁর অনুরোধে স্বামীজি গেয়ে শোনাতেন ‘কেমন করে হরের ঘরে ছিলি উমা বল মা তাই’। বেলুড়মঠে দুর্গাপুজোর সন্ধ্যা-আরতির পর দীর্ঘ মহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্রম ‘অয়ি গিরি নন্দিনি নন্দিতমেদিনি...’ সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয়ে থাকে। এ বার এ রকম গানই ম্যাডক্স স্কোয়ারের পুজো মণ্ডপে মহালয়ার সন্ধ্যায় (সাড়ে ৬টায়) আগমনী গানের আসরে উপস্থাপিত হতে চলেছে। পুজোকমিটির সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি পরিবেশিত হবে চন্দন বসু রায়ের পরিচালনায়। সঙ্গে পরিবেশিত হবে তপন রায়ের পরিচালনায় ‘মাদল’ গোষ্ঠীর লোকগান।

সম্মাননা

কলকাতার ইতিহাস পঠনপাঠন জগতে বিনয়ভূষণ চৌধুরির নামটি প্রায় একটি প্রতিষ্ঠানের সমান। আধুনিক ভারতের ইতিহাস-বিশেষজ্ঞদের মধ্যে তিনি অগ্রগণ্য। শুধু তাই নয়, উনিশশো ষাটের দশকের শুরু থেকে নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্যন্ত একটানা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার সুবাদে তাঁর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ও ব্যাপ্তিও চমক লাগানোর মতো। তাঁর নিজের পড়াশোনা প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় ছয় দশকব্যাপী তাঁর গবেষণা ও গবেষণা পরিচালনা। ছাত্র, সহকর্মী ও অনুরাগীদের কাছে বিনয়বাবু মানেই অসীম শ্রদ্ধেয় এক মানুষ। তাঁদেরই কয়েক জন আজ ১৮ সেপ্টেম্বর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলিপুর প্রাঙ্গণে একতলার হলঘরে বেলা তিনটের সময় তাঁর সম্মানে এক ইতিহাস-গ্রন্থ প্রকাশ করছেন। অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সংযুক্তা দাশগুপ্ত সম্পাদিত দুই খণ্ডের বইটির নাম ‘ইন কোয়েস্ট অব দ্য হিস্টরিয়ানস ক্রাফট: এসেজ ইন অনার অব প্রফেসর বি বি চৌধুরি’ (দিল্লি, মনোহর)। দেশবিদেশের প্রায় ৩৫ জন গবেষকের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির চিন্তাভাবনা রয়েছে দুটি খণ্ডে। সে দিনের অনুষ্ঠানে প্রথম খণ্ড (দি ইকনমি) নিয়ে আলোচনা করবেন অধ্যাপক অমিত দে, এবং দ্বিতীয় খণ্ড (দ্য সোসাইটি, পলিটি অ্যান্ড কালচার) সম্পর্কে আলোচনায় অধ্যাপক প্রদীপ বসু। কলকাতার ইতিহাস-বৃত্তের চলমান সমৃদ্ধিরই দ্যোতক এই অনুষ্ঠানে সভাপতি সে দিন অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্য।

ব্যতিক্রমী

প্রেম, বিরহ, বিচ্ছেদ যুগে যুগে বাসা বেঁধেছে বাংলার কথাসাহিত্যে। বহুপ্রজ লেখক সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস ‘বুকঝিম এক ভালবাসা’ এক ট্র্যাজিক প্রেমাখ্যান হয়েও ব্যতিক্রমী তার অপূর্ব গদ্যভাষা ও চিত্রকল্পের ব্যবহারে। পাঁচশো বছর আগের মনসুর বয়াতি আর চাঁদ সুলতানার প্রেমকল্পকাহিনি মনে করায় মৈমনসিংহ গীতিকাকে, অন্য দিকে মধ্যযুগীয় বাংলার বয়াতি সংস্কৃতিকেও। এমন সাহিত্যকর্মের নাট্যরূপ নির্মাণই দুরূহ, মঞ্চায়ন তো বটেই। তা-ই সম্ভব করেছেন এই শহরের নাট্যদল ‘একুশ শতক’। অভিনয়ে শ্রমণ চট্টোপাধ্যায়, নির্দেশনাও তাঁর। শ্রমণ যদিও বলছেন, ‘নির্দেশনা দিয়েছে শামসুল হকের ভাষা’। ওঁদের মঞ্চযাত্রায় আগে তৈরি হয়েছে শুভদীপ গুহর সুর ও সংগীত, নাটকের খড়মাটি লেগেছে পরে। ২৭ সেপ্টেম্বর শামসুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী, তার আগে ১৯ সেপ্টেম্বর মিনার্ভা থিয়েটারে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় ‘বুকঝিম এক ভালবাসা’। আয়োজনে ‘কলকাতা হুজ্জুত’ ও ‘খড়দহ ব্রাত্যজন’। সঙ্গে তারই ছবি।

মায়ের কথা

‘ওগো শক্তিপীঠের সন্তান বাঙ্গালী! মায়ের বুকের পাষাণ তুলিয়া লও, মাকে জ্ঞানে প্রেমে কর্ম্মে মায়ের মত হইতে দাও...’ লেখক বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, অগ্নিযুগের বিপ্লবী হিসেবেই প্রসিদ্ধি, ৯৬ বছর আগে মুদ্রিত তাঁর এই মায়ের কথা বইটি প্রকাশিত হবে ২২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টেয় রামকৃষ্ণ মঠ, বরানগর-এর ‘নিবেদিতা দেবাঙ্গন’-এ। ‘মাতৃশক্তি-সমীপে আমরা’ অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ-সারদা মিশন, দক্ষিণেশ্বর-এর সাধারণ সম্পাদক প্রব্রাজিকা অমলপ্রাণা মাতাজি। মাতৃসংগীত পরিবেশনে ভাস্কর মিত্র। আয়োজনে সূত্রধর।

স্মরণ

শেষ বয়সে প্রায়ই ফিরে যেতেন পাবনার পোর্জনা গ্রাম আর করতোয়া নদীর স্মৃতিতে, সেখানেই তাঁর শৈশব, জন্মও (১৯৩২)। বিয়াল্লিশের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তিনি বাঁকুড়ায়, খেলতে-খেলতে একদিন মিশে গিয়েছিলেন সাঁওতালদের মিছিলে, লাল বড় সিঁদুরের টিপ-পরা এক সাঁওতাল জননী তাঁকে রক্ষা করেছিলেন পুলিশের আক্রমণ থেকে, তাঁর মধ্যেই দেশমাতৃকাকে প্রথম প্রত্যক্ষ করেছিলেন তরুণ সান্যাল। প্রগতিবাদী সংস্কৃতির অন্যতম পুরোধা ছিলেন তিনি। কবি, প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ্, সর্বোপরি বিশিষ্ট এই চিন্তক একদা আলোড়ন জাগিয়েছিলেন তাঁর ‘মাটির বেহালা’ কাব্যগ্রন্থের জন্যে। রাজনীতি অর্থনীতি বিষয়ক প্রভূত লেখাপত্র ও গ্রন্থাদি। ‘সর্বেশ্বরী শব্দেশ্বরী’ কাব্যগ্রন্থের সুবাদে রবীন্দ্র পুরস্কার পেলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন বাম জমানায় সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-লালগড়ের কৃষক আন্দোলনের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর প্রতিবাদে। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকার জন্যে তাঁকে সম্মানিত করে বাংলাদেশ সরকার। চল্লিশ বছর অর্থনীতির অধ্যাপনা স্কটিশ চার্চ কলেজে। দীর্ঘ কাল ‘পরিচয়’ পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক এবং ‘সপ্তাহ’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন। সদ্য চলে গেলেন হঠাৎই। ২১ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টায় রামমোহন লাইব্রেরি মঞ্চে তাঁকে নিয়ে স্মরণসভা। আয়োজনে ‘সপ্তাহ’।

বিলু রাক্ষস

মাছিলেন সুচিত্রা মিত্রের ছাত্রী, বাবা সাগর সেনের। আর প্রতিবেশী ছিলেন কবি রাম বসু। রবীন্দ্রনাথের গান থেকে আধুনিক কবিতা বা সাহিত্যের সঙ্গে আশৈশব ওঠাপড়া ইন্দ্রাশিস আচার্যের। নিজে অভিনয়ও করতেন স্কুলে। বাংলা নাটকের পাশাপাশি পুরনো বাংলা ছবি দেখে বেড়ে ওঠা, তাতে সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণালের সঙ্গে তপন সিংহ অগ্রদূত অজয় কর তরুণ মজুমদার কিংবা সে সময়ের এ রকম আরও অনেকের ছবি, তপনবাবুর ‘গল্প হলেও সত্যি’ এখনও মুগ্ধ করে তাঁকে। নানান আর্টফর্মকে সম্মিলিত করে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা যায় বলেই ফিল্মে তাঁর আসক্তি। কৃতী ছাত্র পদার্থবিদ্যার, বহুজাতিক সংস্থার চাকুরে, সেই সূত্রে ‘গ্লোবাল’ এই শতকের শুরু থেকেই, আফ্রিকা-আমেরিকা-ইংল্যান্ড ঘুরতে-ঘুরতে আন্তর্জাতিক সিনেমার ভক্ত হয়ে ওঠা, বিশেষত ইউরোপীয় ফিল্মের। ‘সেখানকার বহু পরিচালকেরই আমি ভক্ত, তবু তাঁদের মধ্যে মাইকেল হ্যানিকে অত্যন্ত প্রিয় আমার।’ ইন্দ্রাশিস তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্রে আমাদের অমসৃণ বেঁচে থাকার টানাপড়েন, জটিল আত্মপরিচয়কেই মেলে ধরতে চেয়েছেন। তাঁর ‘বিলু রাক্ষস’ এখন চলছে কলকাতায়, দেখানো হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফিল্মোৎসবে। নতুন ছবি ‘পিউপা’ও তৈরি, মুক্তি পায়নি এখনও। ‘দেশ-জাতির ঘেরাটোপ থেকে সিনেমাই পারে মানুষকে মুক্ত করতে’, মনে করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkatar Karcha কলকাতার কড়চা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE