Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা: গুরুসদয় সংগ্রহশালা বিপন্ন

ক্তির শর্ত অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রকের হস্তশিল্প দফতর সংগ্রহশালার আর্থিক দায়িত্ব বহন করে, আর স্বশাসিত সংস্থা হিসাবে এটি পরিচালনা করে ‘গুরুসদয় দত্ত ফোক আর্ট সোসাইটি’।

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০০:৩৬
Share: Save:

কলকাতার কাছেই জোকায় ১৯৪০ সালে ১০১ বিঘে জমি কিনে নাম দেন ‘ব্রতচারী গ্রাম’, সেখানে বড় আকারে জনশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন গুরুসদয় দত্ত। এক দিকে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভূমিজ ঐতিহ্যের সংযোগ স্থাপন, অন্য দিকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগে শিল্পী সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধারাবাহী শিল্পশিক্ষার উন্নতিসাধন— এই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। তারই অঙ্গ হিসাবে তিনি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার কথাও ভেবেছিলেন। ১৯৪১ সালে মাত্র উনষাট বছর বয়সে প্রয়াত হওয়ায় তাঁর স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়। কিন্তু ১৯২৯-৩৯ সালের মধ্যে অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে গুরুসদয় লোকশিল্পের যে বিপুল পরিমাণ লুপ্তপ্রায় নিদর্শন সংগ্রহ করেছিলেন তা তাঁর মৃত্যুর পর দু’দশক পেরিয়ে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়। ১৯৫৮ সালে এই সংগ্রহ তাঁর বাড়ি থেকে ব্রতচারী গ্রামে আসে, ১৯৬১-তে বিধানচন্দ্র রায়ের হাতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন আর ১৯৬৩ সালে ‘গুরুসদয় সংগ্রহশালা’র উদ্বোধন করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী হুমায়ুন কবীর। ১৯৮৪ পর্যন্ত ‘বাংলার ব্রতচারী সমিতি’ই এই সংগ্রহশালা চালায়, সেই বছরই এক চুক্তি মোতাবেক তা তুলে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রকের হস্তশিল্প দফতর সংগ্রহশালার আর্থিক দায়িত্ব বহন করে, আর স্বশাসিত সংস্থা হিসাবে এটি পরিচালনা করে ‘গুরুসদয় দত্ত ফোক আর্ট সোসাইটি’। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের পর হঠাৎই কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ২০১৭-র নভেম্বরে একটি চিঠি পাঠিয়ে এক তরফা ভাবে চুক্তি বাতিলের কথাও জানিয়েছে বস্ত্রমন্ত্রক। কর্মীরা ছ’মাস বেতন পাচ্ছেন না। বিভিন্ন মহলে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন সংগ্রহশালা কর্তৃপক্ষ, এখনও কোনও আশার আলো দেখা যায়নি। বাংলার নকশি কাঁথা, জড়ানো পট, চৌকো পট, কালীঘাটের পট, চালচিত্র, সরা, কাঠের কাজ, পাথরের ভাস্কর্য, পুতুল, মন্দির-টেরাকোটা, সন্দেশ ও আমসত্ত্বের ছাঁচ মিলিয়ে প্রায় চার হাজার নিদর্শনে সমৃদ্ধ এই লোকায়ত শিল্পের সেরা ভান্ডারটিতে কি তালা ঝোলাই ভবিতব্য? সঙ্গে গুরুসদয় দত্তের ১৯৩২-এর প্রথম লোকশিল্প প্রদর্শনীর ক্যাটালগ থেকে একটি পটচিত্র।

আধুনিক

বাংলা কথাসাহিত্যে কাহিনির মায়ামৃগ অনেক সময়ই আমাদের আত্মপরিচয় থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমাদের কঠিন স্পন্দমান বাঁচার ইতিবৃত্ত কথাসাহিত্যে তুলে আনায় সদা রত ছিলেন কার্তিক লাহিড়ী। পঞ্চাশের দশক থেকে আমৃত্যু সজাগ ছিল তাঁর আধুনিক কলম। বহুবিধ উপন্যাস— দশরথ নামে একজন, অন্ধকূপ, যুবক, শনি, কলকাতা সমুদ্র, স্নায়ুযুদ্ধ, সৌরভের ঘরে আগুন— উল্লেখযোগ্য। ‘শৌভিক এবং সৌভিক’-এর জন্যে সম্মানিত হন বঙ্কিম পুরস্কারে। পাশাপাশি প্রচুর ছোটগল্প ও নাটক। বাংলা উপন্যাসের বাস্তবতা, রূপকল্প ও প্রযুক্তি নিয়ে একাধিক প্রবন্ধগ্রন্থ। ঈশোপনিষদ ও মায়াকোভস্কি-র কবিতার অনুবাদ। বামপন্থায় বিশ্বাসী, ‘পরিচয়’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদ্যপ্রয়াত (জ. ১৯৩২) মানুষটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষকতা করেছেন সারা জীবন। তাঁর স্মরণসভা ২০ মার্চ বিকেল ৫টায় কলেজ স্ট্রিট বই-চিত্র সভাঘরে, উদ্যোগে ‘পরিচয়’।

ইতিহাসবিদ

মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ইতিহাসবিদ শরদিন্দুশেখর রায় চলে গেলেন। ছাত্রবয়স থেকে বামপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং জনবিজ্ঞান আন্দোলনের অন্যতম রূপকার শরদিন্দুবাবুর জন্ম ১৯৪৭ সালে বর্ধমানের শ্রীখণ্ডে। প্রেসিডেন্সিতে ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারিতে, পরে খিদিরপুর কলেজে শিক্ষকজীবনে অধ্যাপক-আন্দোলনেও যুক্ত হন। মার্কসবাদ চর্চার তাত্ত্বিক পত্রিকা ‘ইন দি ওয়েক অব মার্কস’ সম্পাদনা করেছেন, যুক্ত ছিলেন ‘দেশকাল ভাবনা’-র সঙ্গেও। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা (১৮১৮-১৮৬০) তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ। বন্দিমুক্তি কমিটি, শ্রমজীবী সংহতি কমিটি, পথবাসী সমিতি, ড্রাগ অ্যাকশন ফোরাম, দেহদান আন্দোলনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আজ ১৯ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় রোটারি সদনে তাঁর স্মরণসভা।

পর্বতারোহী

‘মদন আবার পাহাড়টার দিকে চাইল। পাহাড়টা তেমনি দাঁড়িয়ে আছে। তেমনি বিরাট উঁচু আর হিংস্র। সাদা বরফ যেন উপহাসের এক প্রচণ্ড অট্টহাসি।’ মালবাহকরা সেই বরফ পেরিয়ে যেতে নারাজ। পণ্ড হয়ে যেতে বসেছে নন্দাঘুণ্টি অভিযান। সময়টা ১৯৬০। আনন্দবাজার পত্রিকার আর্থিক সহায়তায় ভারতের প্রথম অসামরিক পর্বতারোহণের চেষ্টার তবে কি অপমৃত্যু হবে? না। ‘মদন ভাবল, একটি মৃত্যু কিছু না। কারণ এই মৃত্যু বাংলাদেশের শত হৃদয়ে প্রেরণার আগুন জ্বালিয়ে দেবে। আমরা কাপুরুষ নই, আমাদের চরম সান্ত্বনা হবে তাই।’ (নন্দকান্ত নন্দাঘুণ্টি) অভিযান সফল হয়েছিল। নন্দাঘুণ্টির মাথায় পড়েছিল বাঙালির পদচিহ্ন। অভিযানের অন্যতম কান্ডারি ছিলেন মদন মণ্ডল। সুকুমার রায়ের নেতৃত্বে একদল দামাল বাঙালির সঙ্গে নেমেছিলেন অভিযানে। ১৯৬১ ও ১৯৬৬ সালে মানা অভিযান, ১৯৬৪ সালে কাবরুডোম অভিযানে ছিলেন তিনি। সফলও হয়েছেন। রাজ্য ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করতেন। সম্প্রতি ৮১ বছর বয়সে চলে গেলেন মদনবাবু। বাঙালির পর্বতারোহণের একটি অধ্যায় শেষ হল।

নতুন গান

রবীন্দ্রগানের গবেষক ও শিল্পী দেবাশিস রায়চৌধুরী একটি অভিনব রেকর্ডিং প্রকাশ করেছেন— রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি ভাষায় রচিত কিছু গান। অনুবাদ নয়, ইংরেজিতেই রচিত এই গানগুলি আবিষ্কার করেন দেবাশিস ২০১৫-য় মার্কিন দেশের ইউনিটেরিয়ান গির্জার প্রার্থনা সংগীতের বই থেকে। গানগুলির সুর পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সংগীতের ধারায়। ভারতে ফিরে দেবাশিস রবীন্দ্রনাথের এই গানগুলিকে অর্কেস্ট্রা ও কয়্যার-সহ রেকর্ডিং করেন। যন্ত্রানুষঙ্গ উপমন্যু কর। দেবাশিসের লেখা একটি সংক্ষিপ্ত উপক্রমণিকাও ঠাঁই পেয়েছে অ্যালবামটিতে। শিকাগোর মিডভিল লম্বার্ড থিয়লজিকাল স্কুল এই রেকর্ডিংটিকে তাঁদের আর্কাইভে রেখেছেন। গানগুলির রেকর্ডিং দেবাশিস বিশ্বভারতীকেও দিয়েছেন। ‘নিউমারাস স্ট্রিংস’ শীর্ষক এই অ্যালবামটি (হিন্দুস্থান রেকর্ড) নিয়ে ২১ মার্চ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। সেখানে দেবাশিস এই সম্পর্কে বিশদ ভাবে জানাবেন এবং এই গানগুলির প্রথম ‘লাইভ’ উপস্থাপনা করবেন তিনি ও তাঁর কন্যা রোহিণী, অর্কেস্ট্রা ও সমবেত কণ্ঠ-সহ। সমবেত যন্ত্রসংগীতে ‘কলকাতা ইউথ অর্কেস্ট্রা’, পরিচালনায় সঞ্জীব মণ্ডল।

জনতার সাহিত্য

নিজেদের কলমে যে সাহিত্যিকরা প্রকাশ্যে এনেছেন দলিত, মুসলমান ও আদিবাসী সমাজের কথা, তুলে ধরেছেন নারীমুক্তি, সমকামীদের অধিকাররক্ষার দাবি, ফুটিয়ে তুলেছেন কাশ্মীর বা উত্তর-পূর্ব ভারতের নানা প্রদেশের মানুষের সমস্যার ছবি, তাঁরা থেকে যান প্রচারের আড়ালে। প্রভুত্বকামী ব্রাহ্মণ্যবাদী রাষ্ট্র চায় তার সাংস্কৃতিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে। সে জন্য কাউকে কলম ছাড়তে হয়, কাউকে দেশ, কেউ প্রাণ দেন আততায়ীর হাতে। এমন একাধিক সাহিত্যিককে সম্মান জানাতে, তাঁদের সাহিত্যকর্ম উদ্‌যাপনে বস্তার সলিডারিটি নেটওয়ার্ক (কলকাতা) ২৪-২৫ মার্চ (১১-৩০ থেকে ৮টা) ফুলবাগানের সুকান্ত মঞ্চে আয়োজন করেছে ‘জনতার সাহিত্য উৎসব’। থাকবেন ছায়া কোরেগাঁওকর, কুট্টি রেবতী, জেকিন্তা কেরকেটা, ভারাভারা রাও, হরিপ্রিয়া সইবাম, রাজা পুনিয়ানি, রিনচিন প্রমুখ।

কী যে পেলাম

আধুনিক বাংলা গানের তিনি খ্যাতনামা শিল্পী। দীর্ঘ দিন আকাশবাণীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অনেক ছবির নেপথ্য গায়ক হিসাবেও তাঁর খ্যাতি। উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিমপ্রাপ্ত অখিলবন্ধু ঘোষের (১৯২০-১৯৮৮) রাগপ্রধান গানেও জুড়ি মেলা ভার। তাঁর ‘ও দয়াল বিচার করো’, ‘শিপ্রা নদীর তীরে’, ‘ওই যে আকাশের গায়ে’, ‘পিয়াল শাখার ফাঁকে’, ‘তোমার ভুবনে ফুলের মেলা’, ‘যেন কিছু মনে কোরো না’ প্রভৃতি গান আজও বাঙালির মনে গাঁথা। শিল্পীকে স্মরণে রেখে এ বছরও ‘অখিলবন্ধু ঘোষ স্মৃতি সংসদ’ ২০ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় আশুতোষ মেমোরিয়াল হলে (হাজরা) ‘সারাটি জীবন কী যে পেলাম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

গানের ভান্ডার

১৯৫৫ সালে মার্গসংগীতের তালিম নিতে সহধর্মিণী সবিতাকে নিয়ে কলকাতার গড়িয়াহাটে বাসা বেঁধেছিলেন খুলনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তথা সংগীত-অনুরাগী অনিল দে। ১৯৫৭-৫৯, টানা তিন বছর নন্দী স্ট্রিটের বাড়িতে নিয়মিত হাজির হয়ে সবিতা দেবীকে সংগীতশিক্ষা দেন তারাপদ চক্রবর্তী। এর পরে ১৯৬০-৭৭, আমৃত্যু সেই বাড়িতে গিয়ে শিক্ষা দেন যশস্বী শিল্পী ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়। এক দিকে সবিতা দেবী যেমন শিল্পী হিসাবে পূর্ণতা অর্জন করেন, অন্য দিকে অনিলবাবু ক্যাসেটবন্দি করে রাখেন এই নিয়মিত তালিমপর্ব। সেই সব ক্যাসেট ছাড়াও আছে ভীষ্মদেবের মন্তব্য-সহ গানের খাতা। পারিবারিক চৌহদ্দির বাইরে কখনও গাননি সবিতা দেবী, করেননি কোনও রেকর্ডও। আজ ৮৮ বছরে এই গুণী শিল্পী অসুস্থ, সম্পূর্ণ বাকরুদ্ধ। ৯৮ বছরের অনিলবাবুর বাসনা, শিল্পীর দুই দশকের গুরুস্মৃতিকে যদি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা যায়। সঙ্গের ছবিতে বাঁ দিকে ভীষ্মদেব, মাঝে সবিতা দেবী ও ডান দিকে অনিলবাবু, ছবি তাঁরই সৌজন্যে।

অনুসন্ধিৎসু

ঔপনিবেশিক কলকাতার ইতিহাস নিয়ে বই আর নথিপত্র সংগ্রহের নেশা শুরু হয়েছিল সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রাবস্থা থেকেই। সে সংগ্রহ আজ মহীরুহ। পিতা প্রভাতেশ্বর রায় কর্মসূত্রে ছিলেন ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের (আজকের মির্জা গালিব স্ট্রিট) বাসিন্দা। সেই সূত্রে অমিত রায়ের বড় হয়ে ওঠা শহরের এক মিশ্র সংস্কৃতির মধ্যে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে স্নাতকোত্তর, পরে আইনশিক্ষা এবং ওকালতিকেই পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন তিনি। ওকালতির থেকে অবশ্য অনেক বেশি সময় কাটিয়েছেন কলকাতার উচ্চ ন্যায়ালয়ের লেখ্যাগারে। নানা অপ্রকাশিত উপাদানের অনুসন্ধান তাঁর আজও অব্যাহত। প্রকাশিত হয়েছে হারানো নথির সংগ্রহ ক্যালকাটা এফিমেরা, আর এই মুহূর্তে তিনি ব্যস্ত ‘কলকাতার উইল’ নিয়ে একটি বই লেখায়— যা হবে ১৭৭৪ থেকে ১৮৬০ কালপর্বের বিচিত্র তথ্যের সমাহার। সদ্য পা দিলেন পঁচাত্তরে, জন্মদিনে তাঁর বাড়িতে আয়োজিত হয়েছিল একটি বৈঠকি আড্ডা।

সংসৃতির পঁচিশ

‘নাট্যভাষার সন্ধানেই কেটে গেল পঁচিশটা বছর’, বলছিলেন দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, ‘সংসৃতি’ নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার, তাঁদের রজত জয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে, ‘এত বছর ধরে নানা নিরীক্ষার ভিতর দিয়ে এমন ভাবে নাটকের মঞ্চরূপায়ণের চেষ্টা করেছি যাতে নাট্যশিল্পের তত্ত্ব ও প্রায়োগিকতার সীমারেখা মুছে যায়।’ দেবেশেরই নির্দেশনায় সংসৃতি একের পর এক শিল্পিত স্বভাবের নাটক মঞ্চস্থ করে চলেছে... ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’, ‘ফ্যাতাড়ু’ থেকে হালফিল ‘তুঘলক’ বা ‘সওদাগরের নৌকা’। কেয়া চক্রবর্তী, সতু সেন, শেখর চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট জনকে নিয়ে নাট্যপত্রিকাও প্রকাশ করেছে সংসৃতি। সঙ্গে সেমিনার, ওয়ার্কশপ। পঁচিশ পূর্তি উপলক্ষে নাট্যোৎসব ২৩-২৫ মার্চ। প্রথম দিন নন্দনে সিনোগ্রাফি নিয়ে বলবেন দীপন শিবরামন। বাকি দু’দিন শুধুই নাটক। শেষ দিন সন্ধ্যা ৬টা ৪৫-এ পঞ্চম বৈদিক-এর সহযোগিতায় মঞ্চস্থ হবে সংসৃতি-র নতুন নাট্য ‘চাঁদ মনসার কিস্‌সা’। ‘এই ভাঙনের সময় দুটি নাট্যদল এক সঙ্গে কাজ করল, পঁচিশ বছরে এও এক প্রাপ্তি বইকি!’ জানালেন দেবেশ।

আজি এ বসন্তে

এক দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, অন্য দিকে ভারত ছাড়ো আন্দোলন— এই দুইয়ের মধ্যেই তাঁর জন্ম নবদ্বীপ শহরে। ছিয়াত্তর বছর বয়সি মণিপুরী নৃত্যগুরু পূর্ণিমা ঘোষের তালিম শুরু হয়েছিল ছ’বছর বয়সে বাবার কাছে। বাবা ব্রজবাসী সিংহও ছিলেন মণিপুরী নৃত্যগুরু। মলিনা দেবী ছিলেন তাঁর ছাত্রী। পূর্ণিমা তাঁর জন্মের বছর তিনেক পর পাকাপাকি ভাবে কলকাতায় চলে আসেন। এখানেই বড় হওয়া এবং শিক্ষাদীক্ষা। ক্যান্ডি, ভরতনাট্যম, কত্থক, ওডিশি, মণিপুরী— এই সমস্ত নাচের ফর্ম তাঁর করায়ত্ত। শিল্পী বলছিলেন, ‘বাবা সব সময় আমাকে বলতেন বিভিন্ন নৃত্যের ফর্ম শিখে রাখো, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’ গোবিন্দন কুট্টি, প্রদীপ্ত নিয়োগী প্রমুখ নৃত্যশিল্পীর সঙ্গে দেশেবিদেশে অনুষ্ঠান করেছেন। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মণিপুরী নৃত্যের পরীক্ষক ১৯৬২ সাল থেকে শৈলজারঞ্জন মজুমদারের প্রতিষ্ঠান ‘সুরঙ্গমা’য় যুক্ত। কস্টিউম পরিকল্পনা করা তাঁর শখ। ‘শ্যামা’, ‘চিত্রাঙ্গদা’র মতো নৃত্যনাট্যেও তিনি কস্টিউম ডিজাইন করেছেন। তাঁর একটি ছোটখাট বুটিকও আছে। এ বার তিনি ও শ্রাবণী সেন, মধুমিতা বসু, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ মিলে ১৯ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা ৪৫-এ রবীন্দ্র সদনে ‘আজি এ বসন্তে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে গান, গল্প, নাচ, আবৃত্তির ছন্দে বসন্ত উদ্‌যাপন করবেন। সৃজনে সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE