Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

......

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

তিনি কলকাতার মন পেয়েছিলেন

সাহেবি আমল থেকে আজ পর্যন্ত কলকাতা শহর যে কত শিল্পীকে আকৃষ্ট করেছে তা বলা কঠিন। তবে দেশি-বিদেশি শিল্পীদের অধিকাংশই এ শহরকে দেখেছেন তার বাইরের চেহারায়। প্রাসাদনগরী কলকাতা, বিলাসবৈভবের কলকাতাকে যেমন তাঁরা এঁকেছেন, নানা ধর্মীয় উত্‌সব-অনুষ্ঠানও তাঁদের রঙ-তুলিতে ধরা পড়েছে। সমীর বিশ্বাস (১৯৫২-২০১৪) কিন্তু নিজের শহরটাকে একটু অন্য ভাবে দেখতে চেয়েছিলেন। ঐতিহ্যবাহী বাড়িঘর তিনিও এঁকেছেন, কোথাও তা স্থপতির নীল নকশার কাঠিন্যে পথ হারায়নি। আশপাশের পরিবেশ, বিশেষ করে গাছপালা, পাখি, পথের কুকুর সকলেই রয়েছে যে যার জায়গায়, আর সবার সঙ্গে আছে জনমানব।

কলকাতার ভিতরে একের পর এক অন্য কলকাতা, নানা বিচিত্র মানুষের কলকাতা তাঁর বলিষ্ঠ রেখায়, তুলির ক্বচিত্‌ টানে, পরিমিত রঙের প্রয়োগে বার বার দর্শককে আবিষ্ট করেছে। ১৯৮০ থেকে নানা আকারের কার্ডের পরিসরে তাঁর ছবির আত্মপ্রকাশ। আশির দশকের শেষ দিক থেকে ২০০৯ পর্যন্ত কলকাতা বইমেলায় তাঁর স্টল ছিল কলকাতাপ্রেমী মানুষের অবশ্য গন্তব্য, সমীর এ বার নতুন কী আঁকলেন! শুধু কলকাতা নয়, বন্ধুর অনুরোধে ছুটে গেছেন বর্ধমান, এঁকেছেন হারিয়ে যেতে বসা নানা ঐতিহ্যবাহী ভবনের ছবি। দার্জিলিঙ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, সুন্দরবন, নানা জায়গায় গিয়ে ছবি এঁকেছেন সমীর। তবে সব ছাড়িয়ে উজ্জ্বল তাঁর কলকাতা চিত্রণ। একই জায়গায় বার বার ফিরে এসেছেন, তাঁর ছবিতে ধরা রয়েছে কলকাতার অনেক রূপান্তর। চুপচাপ, নিজের মনে কাজ করে যাওয়া মানুষটি কদাচিত্‌ মুখ খুলতেন রসিকের কাছে, ‘বউবাজারের কাছে আজ একটা চমত্‌কার কারুকার্য করা লোহার রেলিং-ওলা বাড়ি দেখলাম, ওটা এঁকে ফেলতে হবে।’ পাঁচ বছর অসুস্থতায় তুলিকলম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, এ বার তিনিও চলে গেলেন। কার্জন পার্কের বাদামবিক্রেতা, গড়িয়াহাটের কুমোর, লেনিনমূর্তির সামনে উনুন-ধরানো ছেলেটি, বড়বাজারের গলি আর গঙ্গার ঘাটের নামহীন মানুষেরা নিঃশব্দে কলকাতার মনটাকে ধরে রাখল সমীরের ছবিতে। দুটি মাত্র ছবির বই ছিল তাঁর (সঙ্গের ছবি), বন্ধুরা উদ্যোগী হয়েছেন তাঁর কাজকে দুই মলাটে ধরে রাখতে।

শিশু চলচ্চিত্র উত্‌সব

বড়দিনের আগেই ছোটরা মেতে উঠেছে উত্‌সবে। শুরু হয়ে গেছে কলকাতার চতুর্থ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উত্‌সব। উদ্যোগে ‘শিশু কিশোর আকাদেমি’। নন্দন রবীন্দ্রসদন শিশির মঞ্চ, দক্ষিণে অহীন্দ্র মঞ্চ, উত্তরে স্টার থিয়েটার, রাজারহাটে রবীন্দ্রতীর্থে। ২১-২৮ ডিসেম্বরের এ উত্‌সবে পঁচিশটি দেশের প্রায় দু’শোর কাছাকাছি ছবি দেখানো হচ্ছে, নামী পরিচালকদের সঙ্গে খুদে-নবীন পরিচালকদেরও ছবি। ‘ফোকাস-কান্ট্রি’ ইরান। সঙ্গে সিনেমা নিয়ে ওয়ার্কশপ, ক্যুইজ। চ্যাপলিনের ১২৫ আর ডিজনি ফিচার স্টুডিয়োর ৭৫ উপলক্ষে প্রকাশ পাচ্ছে দু’টি স্মারকগ্রন্থ, সঙ্গে আকাদেমির পত্রিকা চিরসবুজ লেখা-র উত্‌সব সংখ্যা। উদ্বোধনে দেখানো হল এ বছরের জাতীয় পুরস্কারে সেরা শিশুছবির শিরোপা পাওয়া ‘কফল’। শুধু ছোটদেরই নয়, এ-উত্‌সব বড়দেরও।

পরম্পরা

গুরু-শিষ্য পরম্পরায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের সংকলনে ১০৩ জন শিল্পীর কণ্ঠে ১০৫টি রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘পরম্পরা’ (মিউজিক জোন) প্রকাশ পেল সম্প্রতি। সুচিত্রা মিত্র ও অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বহু শিল্পীর গান সংকলনটিতে। পরিকল্পনা, পরিচালনা ও সঙ্গীতায়োজনে অগ্নিভ, জানিয়েছেন: ‘সুচিত্রা মিত্রের রবীন্দ্রসঙ্গীতের দর্শন তাঁর অন্যান্য শিষ্য শিষ্যাদের মতো আমার মাধ্যমেও প্রবাহিত হয়ে আমার ছাত্রছাত্রীদের রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষা ও রাবীন্দ্রিক শুদ্ধতাকে বয়ে নিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে।’ সেই অনুপ্রেরণারই ফসল এই অ্যালবামটি।

অন্য দিকে পৌষমেলা উপলক্ষে সপ্তর্ষি প্রকাশন থেকে বেরচ্ছে প্রিয়ম মুখোপাধ্যায়-ঋতপা ভট্টাচার্যর রবীন্দ্রগানের অ্যালবাম: ‘কখন যে বসন্ত গেল’। প্রিয়ম কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট বোনের ছেলে, ঋতপা তাঁর স্ত্রী, দু’জনেই কণিকার রবীন্দ্রগানের পরম্পরায় স্নাত। ১৬-২৫ বছরের মধ্যে লেখা রবীন্দ্রনাথের ১০টি প্রেমের গানে প্রেমভাবনার উচ্ছ্বাস থেকে গভীর উপলব্ধিতে পৌঁছনোর এক প্রয়াস। পরিকল্পনা-বিন্যাসে সুমিতা সামন্ত। সঙ্গীত ভাবনা ও পিয়ানো বাদনে স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত।

অভিনব

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করল রবীন্দ্রভারতী রেপার্টরি থিয়েটার। পূর্ব ভারতের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথম। নাটক বিভাগের প্রাক্তন প্রতিভাবান ছাত্ররা এখানে পেশাদার শিল্পী হিসেবে কাজ করতে পারবেন। শহর ও গ্রামের স্কুল এবং সংস্থাকে কর্মশালার মাধ্যমে এই রেপার্টরির কর্মীরা নাট্যপ্রশিক্ষণ দেবেন। ২৬ ডিসেম্বর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দালানে উপস্থাপিত হবে এই রেপার্টরির প্রথম প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথের ‘তোতা কাহিনী’ অবলম্বনে ‘বন্দী বিহঙ্গ’। নির্দেশনায় দেবাশিস চক্রবর্তী। অন্য দিকে এ বছরের গোড়ায় আশিস নন্দীর ভাষণ দিয়ে শুরু হয়েছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ বক্তৃতামালা। আজ ৪টেয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির উদয়শঙ্কর হলে এই পর্যায়ের ষষ্ঠ বক্তৃতাটি দেবেন বিশিষ্ট সমাজতাত্ত্বিক প্রদীপকুমার বসু। সমাজবিজ্ঞানের গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে যেমন তাঁর কাজ রয়েছে, তেমনই রয়েছে গুজরাতের মৃত্‌শিল্পীদের নিয়ে, উনিশ শতকের বাংলা সাময়িকী নিয়ে, গ্রামবাংলার শ্রেণি নিয়ে।

স্মরণ

‘নাটক ভালবাসার বীজটা আমার মধ্যে এক ভাবে বুনে দিয়েছিলেন আমার মা, নীতিকা বসু-ই,’ বলছেন ব্রাত্য বসু। ১৯৫০-এর দশকে গণনাট্য সঙ্ঘে নিয়মিত অভিনয় করতেন নীতিকা বসু। তাঁর অনূদিত হিন্দি গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে প্রতিবেশী গল্প নামে সংকলন। স্কুল পরিদর্শকের চাকরি থেকে অবসর নিয়ে শান্তিনিকেতনে আদিবাসী ছেলেমেয়েদের নিয়ে তৈরি করে ফেলেছিলেন ঘরোয়া একটি স্কুলও। তাঁরই স্মরণে ব্রাত্যজন এ বার শুরু করল ‘নীতিকা বসু স্মারক বক্তৃতা’। প্রথমটিতে ‘থিয়েটার-- যা দেখেছি’ শীর্ষকে বলবেন জয় গোস্বামী, ২৩ ডিসেম্বর সন্ধেয়, বাংলা আকাদেমি সভাঘরে। ব্রাত্য জানিয়েছেন, প্রতি বছর এই বক্তৃতার আয়োজন করা হবে।

বিবিধ ভারতী

‘বিবিধ ভারতী’— নামটির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে নস্টালজিয়া। ১৯৬০-’৮০-র দশকের বিনোদন বলতে ছিল রেডিয়ো। আর রেডিয়ো মানেই বিবিধ ভারতী। অনুরোধের আসর, হাওয়ামহল, নাটক, ছোটগল্প, ক্যুইজ— ভরপুর বিনোদন। ১৯৫৭-য় জন্ম হয়েছিল অল ইন্ডিয়া ভ্যারাইটি প্রোগ্রাম অব লাইট মিউজিক বা ‘বিবিধ ভারতী’র। অনুষ্ঠানে অনেক বেশি বৈচিত্র এনে ‘বিবিধ ভারতী’ বহু দিন শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে ছিল। পরে নানা বিনোদন মাধ্যমের দাপটে আড়ালে চলে যাওয়া চ্যানেলটিকে এ বার শ্রোতার কাছে পৌঁছে দিতে নতুন উদ্যোগ। বিবিধ ভারতী বেজে উঠবে মোবাইল ফোনেই। কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় রোজ ১৫-১৬ ঘণ্টা শোনা যাবে বিবিধ ভারতী। ২৬ ডিসেম্বর বেলা তিনটেয় আকাশবাণী ভবনে বিবিধ ভারতী কলকাতার এই নতুন ট্রান্সমিটারটির উদ্বোধন করবেন প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার।

মুদ্রা-উত্‌সব

চন্দ্রকেতুগড়ে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের মুদ্রায় পাওয়া গেছে নৌকো মাছ বা সূর্যের প্রতীকচিহ্ন। যেমনটি মিলেছে বাংলাদেশের উয়াড়ি-বটেশ্বরে। শশাঙ্কের মুদ্রায় গুপ্তযুগের মুদ্রা-ঐতিহ্যের অবশেষ। হরিকেল, সামন্ত বা চন্দ্র মুদ্রাও বাংলার বিশিষ্ট মুদ্রা। পাল সেন আমলে মুদ্রার অভাব, তারপর দনুজমর্দনদেব বা রাজা গণেশ এবং মহেন্দ্রদেব-- এই দুই রাজার মুদ্রায় ব্যবহৃত হয়েছিল বাংলা লিপি। বাংলার এই সমস্ত মুদ্রা নিয়েই আয়োজিত হয়েছে প্রদর্শনী। বালিগঞ্জ পার্কের হলদিরাম ব্যাঙ্কোয়েটে কলকাতার সংগ্রাহক দেবাশীষ পালের স্মৃতিতে এই উত্‌সব কলিকাতা মুদ্রা পরিষদের উদ্যোগে, ২৬-২৮ ডিসেম্বর, ১১-৮ টা রোজ। এ ছাড়াও থাকবে মুদ্রা সংক্রান্ত আলোচনা, নিলাম এবং প্রাচীন টাকা, টোকেন, মেডেল এবং আর অনেক কিছুরই প্রদর্শন ও বিক্রয়।

ভূতের জাদুঘর

সেই কবে অবনীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন কলকাতার জাদুঘরে ভূতের কথা। বিদেশে রয়েছে বেশ কিছু ভূতের জাদুঘর। এই সব নিয়েই ২৭ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায় দমদম মতিঝিলে দমদম চিত্রকর শিল্পশিক্ষা কেন্দ্রে বলবেন ভারতীয় সংগ্রহশালার প্রাক্তন নির্দেশক শ্যামলকান্তি চক্রবর্তী। কেন্দ্রের ২৭তম বার্ষিক অনুষ্ঠানে থাকছে রাজা মিত্রের পরিচালনায় তথ্যচিত্র ‘ভূতেদের জাদুঘর’, আর ‘বাংলা সিনেমায় ভূত’ নিয়ে পোস্টার প্রদর্শনী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২৬-২৭ দু’দিন শিল্পী রামপদ ঘোড়ুই পুতুলনাচের মধ্য দিয়ে দেখাবেন ভূতের নাচ এবং ২৭ তারিখে থাকছে একটি শিল্পশিবির। অন্য দিকে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সৃজায়তে’ টালাপার্ক ময়দানে আয়োজন করেছে ‘উত্তর কলকাতা সাংস্কৃতিক উত্‌সব ও সৃজন মেলা’। নাটক, শ্রুতিনাটক, গান, ছবি আঁকা ইত্যাদি নিয়ে মেলা চলবে ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি।

প্রতিবেশী

পেশোয়ার কত দূর কলকাতা থেকে? কী আসে যায় ভূগোলের হিসেবে? গত ক’দিন ধরে পথ চলতে এখানে ওখানে স্কুলপড়ুয়াদের দেখে এই শহর বার বার থমকে দাঁড়িয়ে গেছে, ভয়ে চোখ বুজে ফেলেছে, আর অমনি পৌঁছে গেছে সেই অনেক দূরের বধ্যভূমিতে, যেখানে স্কুলপড়ুয়ারা স্কুলে গিয়েছিল, আর ফেরেনি। বাবা-মায়েরা তাদের ছোট ছোট নিথর দেহগুলো ফিরে পেয়েছেন। সান্ত্বনা অর্থহীন, প্রতিবাদ নিষ্ফল, একসঙ্গে চোখের জল ফেলাটাই হয়তো একমাত্র সত্য। বুধবার উত্তর কলকাতার একটি স্কুলে এই ছবি তুলেছেন শৌভিক দে।

পুনর্মিলন

২৫ ডিসেম্বর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলন উত্‌সব। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী রাজস্থানের ক্ষেত্রী রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী আত্মনিষ্ঠানন্দ। উত্‌সবের বাড়তি পাওনা পরের দু’দিন (২৬-২৭ ডিসেম্বর) শৈশবে ফিরে যাওয়ার সুয়োগ। প্রাক্তন ছাত্রদের একটি বড় দল ওই দু’দিন নরেন্দ্রপুরে কাটাবেন। সকালে ব্যায়াম, প্রার্থনা, ধুলো ঝাড়া, ঘণ্টা শুনে খেতে যাওয়া, সন্ন্যাসী ও শিক্ষকদের সঙ্গে বসা-- দুটো দিন প্রাক্তনীরা বড় হয়ে ওঠার দিনগুলিতে ফিরে যাবেন। অন্য দিকে পঁচিশ বছর পর পুনর্মিলনে বাগবাজারের রামকৃষ্ণ সারদা মিশন সিস্টার নিবেদিতা গার্লস স্কুল-এর ’৮৯-এর মাধ্যমিক উত্তীর্ণ প্রাক্তনীর দল। ২৭ ডিসেম্বর বাগবাজারের ঐকতান-এ ওই প্রাক্তনীদের সঙ্গে মিলিত হবেন সে সময়ের শিক্ষিকারাও।

ফিরে এলাম

প্রিয় বন্ধুর চলে যাওয়া দেখেছিলেন তিনি, শপথ ছিল তখন থেকেই। ইচ্ছেমৃত্যুর বিরুদ্ধে প্রথম সিনেমাটি তৈরি করলেন পরিচালক রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনেত্রী মা শাশ্বতী দেবীর ইচ্ছেতেই ষোলো বছর বয়সে জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়ের নাট্যদলে যখন যোগ দেন, সপ্তাহে তিন দিন শুধু বসে থাকতে হত। চার মাস পরে সুযোগ এল, এক জন অসুস্থ হওয়াতে তার জায়গায় অভিনয়ের। পরে কাজ শেখা নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় বা সুজিত গুহদের কাছ থেকে।

১৯৯৮-এ প্রথম ছোট পর্দায় পরিচালনার সুযোগ। নিজের ছবির কাজ ছাড়াও তিনি এখন ব্যস্ত নতুন প্রতিভা অন্বেষণে। নতুনদের নিয়েই আরা’স ভিসনের প্রয়োজনায় বড় পর্দায় রাজার প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি ‘ফিরে এলাম’। সমাজ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আত্মহত্যায় উদ্যত এক যুবকের মূল জীবনে ফিরে আসার কাহিনি নিয়েই ছবি। সমীক্ষা বলছে, আত্মহত্যার প্রবণতা পশ্চিমবঙ্গেই সব থেকে বেশি। ছবিটি করার আগে পরিচালক নিজে কয়েক বছর ধরে অনুসন্ধান করেছেন এই বিষয়টি নিয়ে। কী ভাবে অবসাদ মানসিক ভাবে পঙ্গু করে ফেলে, তা উঠে এসেছে ছবিতে। লড়াই করো জীবনের জন্য, মৃত্যুর জন্য নয়— এই হল ছবিটির মূল কথা। ওঁর পরের ছবি একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প ‘সুইট ১৬’। ‘ফিরে এলাম’ মুক্তি পাচ্ছে ২৬ ডিসেম্বর।

বিস্মৃত স্রষ্টা

চৌকি, মেঝে ছাপিয়ে ভিড় তখন জানলায়। বসন্ত রায় রোডের বাড়ির সামনে মণিমালার মাঠও কানায় কানায় ভরা। হারমোনিয়ামে ঝড় তুলেছেন নজরুল ইসলাম আর নলিনীকান্ত সরকার। তাঁদের ঘিরে কালিদাস রায়, শরত্‌চন্দ্র, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার, সুনীতিকুমার, রমেশচন্দ্র মজুমদার সহ অসংখ্য শ্রোতা। জলযোগে মুড়ি-বেগুনি। ১৯২৮ থেকে শুরু হয় রবিবারের এই বৈকালিক আড্ডা ‘রস চক্র’। এর স্রষ্টা কালিদাস রায় তখন বড়িষা হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক। তত দিনে তাঁর কাব্যগ্রন্থ কিশলয়, ঋতুমঙ্গল, লাজাঞ্জলি, পর্ণপুট, রসকদম্ব প্রকাশিত। এর পরেও অসংখ্য কাব্যগ্রন্থ, গদ্য, রম্য রচনা, শিশু সাহিত্য ও পাঠ্যবই লেখার পাশাপাশি বাইশ বছর বাংলার শিক্ষকতা করেছিলেন ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনে। সেকেন্ডারি বোর্ডের বাংলা সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান এবং প্রধান পরীক্ষক পদেও ছিলেন। দীর্ঘদেহী, ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত কালিদাসবাবু ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন তাঁর সাদাসিধে স্বভাব এবং পাণ্ডিত্যের কারণে। তাঁর ‘ছাত্রধারা’ কবিতা সুপরিচিত বহু প্রজন্মের কাছে। বর্ধমানের কড়ুই গ্রামে ১৮৮৯ সালের ২২ জুন জন্ম। ১৯২০ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের রংপুর শাখা তাঁকে ‘কবিশেখর’ উপাধি দেয়। পেয়েছেন বহু সম্মান। তবু কবির সঠিক মূল্যায়ন হয়নি বলেই মনে করেন অনুরাগীরা। ১২৫ তম জন্মবর্ষেও ব্রাত্য কবিকে স্মরণ করলেন শুধু পরিবারের মানুষরাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE