Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

চারপাশের ধূর্ত সময়টা কি আপনাকে তাড়া করে ফেরে, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টোপ’ গল্পটি নিয়ে নির্মীয়মাণ নতুন ছবি প্রসঙ্গে এ কথা শুধোতেই বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত জানালেন ‘এটি এই সময়ের গল্প, তাকে পেরিয়ে আরও অনেক সময়ের গল্প।’

শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৫২
Share: Save:

‘একটা গাছ খুঁজতে হিমশিম’

চারপাশের ধূর্ত সময়টা কি আপনাকে তাড়া করে ফেরে, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টোপ’ গল্পটি নিয়ে নির্মীয়মাণ নতুন ছবি প্রসঙ্গে এ কথা শুধোতেই বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত জানালেন ‘এটি এই সময়ের গল্প, তাকে পেরিয়ে আরও অনেক সময়ের গল্প।’ সর্বকালের সেরা বাংলা গল্পগুলির মধ্যে অন্যতম এই গল্পটির সঙ্গে বহু দিনের বসবাস বুদ্ধদেবের, ‘পনেরো বছর আগেই করার কথা ছিল, এত দিনে শুরু করলাম।’ শুটিং শেষ, পরবর্তী পর্যায়ের কাজ চলছে। যে দৈনন্দিনের মধ্যে, এ-দেশের সমাজ-রাজনীতির যে ঘোলা জলের মধ্যে খড়কুটোর মতো বেঁচে আছে সাধারণ মানুষ, নিয়ত ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের ‘টোপ’ হিসেবে, তাদের মুখই খুঁজে এনেছেন এ-ছবিতে। ‘এমনই একটি মেয়ে, এগারো-বারো বছরের, কাজল, রাস্তা থেকে তুলে এনেছি, অসাধারণ পারফরম্যান্স।’ আর সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে: ‘ছবির জন্যে যেমন চেয়েছিলাম, সেই মুখ, সেই চেহারা।’ অন্য অভিনেতারা এ-ছবিতে চন্দন রায় সান্যাল অনন্যা চট্টোপাধ্যায় ও পাওলি দাম (স্থিরচিত্রে তাঁর সঙ্গে কাজল, ছবির দৃশ্যে)। অসীম বসুর সিনেমাটোগ্রাফি, সঙ্গীত অলকানন্দা দাশগুপ্তের, সহযোগী পরিচালক সোহিনী দাশগুপ্ত। ‘আসলে কী ভাবে বলব সেটাই ভাবছিলাম, বলা তো যায়ই, কিন্তু কী ভাবে বললে অর্থে গাঁথবে আমার ভাবনাটা, সেটা নিয়েই আমার নিরবচ্ছিন্ন লড়াই। নতুন মাত্রায় গড়ে নিতে হবে গল্পটা, প্লট-সাবপ্লট সব কিছু, আর বাস্তবের ক্লিশে থেকে তো বেরতে হবে... হঠাৎ যেন এক দিন ধরা দিল ছবিটা, হঠাৎই ঘটে গেল ম্যাজিকটা, সবচেয়ে ছোট মাপের রোগা স্ক্রিপ্ট নিয়ে। তাতে একটা গাছ, সে গাছ খুঁজতে হিমশিম। বয়সি একটা গাছ, কেউ কোত্থাও নেই, একলা অদ্ভুত একটা গাছ। পুরুলিয়ায় পেলাম শেষমেশ, তাকে দেখতে গেলাম, তার সঙ্গে কথা বলে ফিরে এলাম। এবার শুটিং শুরু হল...’, বুদ্ধদেবের বাস্তব-পেরনো এ-ছবিতে গাছটা কত গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট হয়ে আসছিল। ঠিক তাঁর কবিতার মতোই: সারাজীবন একটা গাছের জন্যই বেঁচে থাকা যায়/ বেঁচে থাকা যায় একটা ডালের জন্য/ একটা পাতার জন্য, গভীর থেকে/ গভীরে চলেছে যে শিকড়...।

ছবি: স্বরূপ দত্ত

শিল্পীর সম্মান

গত শতকের চল্লিশ-পঞ্চাশ দশকে কলকাতার বেশ কিছু শিল্পশিক্ষার্থী প্যারিসে গিয়ে শিক্ষা সম্পূর্ণ করে দেশে ফেরেন। স্বল্প কয়েক জন যাঁরা প্যারিসেই থেকে কলাসাধনা করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম শক্তি বর্মন। ১৯৫৬ থেকে প্যারিস নিবাসী, কিন্তু এখনও ভারতীয়, মনেপ্রাণে, পাসপোর্টেও। আবার ফরাসিও। প্রমাণ তাঁর ছবি। তখন পাশ্চাত্য কলায় বিমূর্তের প্রতাপ প্রবল। তা ছাড়া, পাশ্চাত্যবাসী ভারতীয় শিল্পীদের সমস্যা মূর্ত ছবিতে কী আঁকবেন? প্যারিসে বসে স্বদেশের ছবি, না স্বল্প পরিচয়ের ফরাসি জীবনদৃশ্য? কিন্তু শক্তি বিমূর্ত ছবি আঁকলেন না। আঁকলেন দেশ-কাল-সংস্কৃতির গণ্ডি পেরনো এক কল্পজগতের ছবি যেখানে মিলেমিশে থাকে হিন্দু-গ্রিক-খ্রিস্টীয় পুরাণের চরিত্রদের সঙ্গে আধুনিক নরনারী। এ হেন শিল্পীকে ১০ মার্চ দিল্লির ফরাসি দূতাবাসে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ‘লিজিয়ন অব অনর’-এ ভূিষত করবেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত। এই প্রথম কোনও বাঙালি চিত্রশিল্পী এই সম্মান অর্জন করলেন।

সীতায়ন

‘আমি লঙ্কা জয় করে, রাবণকে সবংশে নিধন করে নিজ বংশের মান অনুযায়ী কার্য করেছি, তোমাকে ফিরে পাবার জন্য নয়’— যাঁর উদ্দেশে কথা ক’টি বলা হচ্ছে, তিনি সীতা। বক্তা স্বয়ং রামচন্দ্র। সীতাহরণের পর রামচন্দ্রের যে বিরহকাতর ছবি আমবাঙালির চোখে ভাসে, এখানে তার ছিটেফোঁটাও মেলে না। সীতার চোখে দেখা অন্য রামায়ণ লিখেছিলেন মল্লিকা সেনগুপ্ত, ‘সীতায়ন’। সেই উপন্যাস অনুসরণে নতুন আঙ্গিকের নাটক ‘সীতায়ন’ মঞ্চস্থ হতে চলেছে মিনার্ভা থিয়েটারে, ৩ মার্চ। প্রযোজনায় পূর্বরঙ্গ স্টেপ’ন স্টেজ। এই নতুন আঙ্গিকটিকে নাট্যকার-পরিচালক মলয় রায় বলছেন, ‘স্টোরি টেলিং ফর্ম।’ সব নারীর অবচেতনের যন্ত্রণাকেই তুলে ধরবেন সীতার চরিত্রে অভিনয়কারী, আবৃত্তিশিল্পী ও মঞ্চাভিনেত্রী রোকেয়া রায়। তিনি একই সঙ্গে গল্পকার বা সূত্রধর, সীতা এবং কৌশল্যা। অন্য দিকে, একসঙ্গে সব ক’টি পুরুষ চরিত্রে রূপদান করেছেন সুমন সাহা।

ঐতিহ্য গ্রন্থাগার

ভারতীয় নাট্য এবং নাট্যচর্চার নানাবিধ বিষয় সংরক্ষণে নাট্য শোধ সংস্থান সুপরিচিত। বিভিন্ন ক্ষেত্রের গবেষকসহ অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন এই সংস্থা থেকে। নাট্যগবেষণার প্রয়োজনে এখানে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। এরই অঙ্গ হিসেবে একটি ‘হেরিটেজ লাইব্রেরি’ গড়া হয়েছে। নাটক ছাড়াও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিকের বই নিয়ে তৈরি এই গ্রন্থাগার (ইই-৮, সেক্টর ২, বিধান নগর) ৪ মার্চ বিকেল পাঁচটায় উদ্বোধন করবেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। পরে তাঁর আলোচনা বেদ প্রসঙ্গে। বাসবী রায় এবং শুভ্র মজুমদার প্রণীত ‘নাটকের নানা রং : মনোজ মিত্র’ শীর্ষক বইটি প্রকাশ করবেন সভাপতি শঙ্খ ঘোষ। থাকবেন পবিত্র সরকার, প্রতিভা অগ্রবাল এবং মনোজ মিত্র।

পাড়ার টানে

মেয়েটি ঝগড়া করতে করতে একটা বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল। উল্টো দিকে আর একটা বাড়ির গাড়িবারান্দায় এক জন শুয়ে। ছেলেটা সেখানে গিয়ে বসল। ভবানীপুরের এই পাড়ায় এখন এ রকম গাড়িবারান্দা, থামওয়ালা পুরনো বাড়ি ভেঙে বহুতল খাঁচা তৈরির হিড়িক। শনিবার দুপুরে ভবানীপুরের চন্দ্রমাধব রোড, অ্যালেনবেরি রোড এ ভাবেই জীবন্ত হয়ে উঠেছিল দুটি চরিত্রের আধ ঘণ্টার অভিনয়ে। ওরা দুই জনে শুধু নয়। রাস্তা, বাড়ি, চায়ের দোকান, পার্ক সবই অমিত চৌধুরীর লেখা নাটকের চরিত্র। তাঁর উদ্যোগে সম্প্রতি এ ভাবেই দু’ দিন ধরে উদ্‌যাপিত হল পাড়া, প্রতিবেশের নিজস্বতা। হিন্দুস্থান পার্কের পুরনো এক বাড়িতে শিল্পী অতুল দোদিয়া দেখালেন মুম্বই ও ঢাকা নিয়ে তাঁর আঁকা ছবি।

তথ্যচিত্র

প্রতি বছর এই সময় পৃথিবীর তাবড় তথ্যচিত্রনির্মাতারা জড়ো হন কলকাতায়। গ্যেটে ইনস্টিটিউট-ম্যাক্সমুলার ভবনের আয়োজনে, ভারতের সবচেয়ে সফল ডকুমেন্টারি প্ল্যাটফর্ম ‘ডকেজ কলকাতা’য়। আসেন বহু আন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশন ও ব্রডকাস্টার, ছবি-করিয়ে ও শিল্পীরা তুলে ধরেন নানা ‘আইডিয়া’, নির্বাচিত প্রস্তাবগুলি পায় আর্থিক ও পরিকাঠামোগত সাহায্য। এ বারের অনুষ্ঠান শুরু আজ, প্রধান অতিথি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। চলবে ৬ মার্চ পর্যন্ত, থাকছে আলোচনা, নামী পরিচালকদের মাস্টারক্লাস আর রোজ সন্ধেয় তথ্যচিত্রের প্রদর্শন। অন্য দিকে, ইজরায়েল দূতাবাসের সহযোগিতায়, ভবানীপুর ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত তিন দিনের ইজরায়েলি ছবির উৎসব চলছে নন্দনে, আজ সন্ধেয় শেষ ‘ইয়ার জিরো’ ছবি দিয়ে।

গল্পের ছলে

মূল্যবৃদ্ধি কত শতাংশ বাড়ল বা কমল কী ভাবে মাপা হয়? গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডই বা কাকে বলে? জটা আর বটাকে এ সব জানতেই হবে। কারণ, সামনেই অর্থনীতির পরীক্ষা। আর আমরা যারা মূল্যবৃদ্ধি বলতে শুধুই বুঝি বাজারে গিয়ে পকেটের টান, তারাও এ বার অক্লেশে ঢুকে পড়ি ‘টাকা ইনফ্লেশন হাইপার ইনফ্লেশন’-এর জগতে। নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতির শিক্ষক অমল সান্যালের নতুন বইয়ের নাম এটিই। আগ্রহী পাঠককে গল্পের ছলে অর্থনীতির ঘাঁতঘোঁত বুঝিয়ে দেওয়া। ২ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টেয় ভারতীয় ভাষা পরিষদে প্রকাশ অনুষ্ঠানে থাকবেন অনুপ সিংহ, জয়শ্রী রায় ও গৌতম ভদ্র।

ব্যতিক্রমী

বছর পাঁচেক আগে ‘টেগোর অ্যান্ড উই’ অ্যালবাম সাড়া ফেলেছিল। পরে দ্বিতীয় এবং সম্প্রতি এল ন’টি রবীন্দ্রগানে সমৃদ্ধ তৃতীয় অ্যালবাম। অন্য আঙ্গিকে, নতুন যন্ত্রানুষঙ্গে ‘টেগোর অ্যান্ড উই-৩’ প্রকাশ করেছে আশা অডিয়ো। কাজটি ব্যতিক্রমী। এই গানই আজ সন্ধে ৬টায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল-এ ‘লাইভ’ শোনা যাবে। সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিতের সঙ্গে শ্রাবণী সেন, জার্মান কম্পোজার-গিটারিস্ট স্টপক ও বাংলায় এই প্রথম রেখা ভরদ্বাজ গলা মিলিয়েছেন। অন্য দিকে ফেসবুক-স্কাইপ-হোয়াটসঅ্যাপের যুগের তিন শিল্পী চিঠিকেই বেছে নিলেন তাঁদের বসন্ত উৎসবের বিষয় হিসেবে। ভরা বসন্তে হঠাৎ চিঠি লিখতে শুরু করে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আকাশ। কী ছিল সেই চিঠিতে? তা নিয়েই ‘রঙের মাতন’ অনুষ্ঠানে রোহিণী, ঋষি ও সাম্য। ১ মার্চ ত্রিগুণা সেন মঞ্চে, সন্ধে সাড়ে ৬টায়। রোহিণী আর ঋষির কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীতের মাঝে মাঝে সাম্যর পাঠে রয়েছে আকাশের চিঠি, যা আসলে কৃষ্ণা বসু, বুদ্ধদেব গুহ, শামসুর রহমান প্রমুখর লেখা চিঠির অংশ।

নাট্যমেলা

সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি প্রাপ্ত অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদারের আটটি নাটক নিয়ে তপন থিয়েটারে (১-৬ মার্চ, সন্ধে ৬টায় ও শনি-রবি বিকেল ৩টে) ‘দ্বিতীয় দেবশঙ্কর নাট্যমেলা’র আয়োজন করেছে নাট্যরঙ্গ। সূচনায় দেবশঙ্করের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীকেও সম্মানিত করা হবে। দেবশঙ্করের কথায়, ‘আমি যদি মঞ্চ হই, তবে আমার স্ত্রী মুনমুন তো আমার সাজঘর। আমাকে নিয়ে নাট্যমেলায় এই প্রথম আমার সাজঘর সম্মানিত।’ অভিনেতা জানালেন, ‘নাট্যমেলায় যে দলগুলি তাঁদের নাটক মঞ্চস্থ করছে, তারা কেউ কল-শো হিসেবে দরদাম কষছে না। আমাকে ভালবেসেই মূলত আসছে তারা।’ মঞ্চস্থ হবে ধর্মাশোক, বিলে, অয়দিপাউস, ফেরা, দহনান্ত, কাল্লুমামা, ঝড়ের পাখি ও শের আফগানের টিনের তলোয়ার। ‘বন্ধু দেবশঙ্কর, আমি ও আমার বন্ধুদের থিয়েটার’ শীর্ষক আলোচনা করবেন কৌশিক সেন। উদ্বোধনে শঙ্খ ঘোষ। প্রধান অতিথি বিভাস চক্রবর্তী।

জাতীয় সংহতি

‘আমরা মুসলমান, খ্রীষ্টান, শিখ— যাদের যা ভাল আছে, সব নেব। ভারতের বাইরে যদি কোন জিনিস ভাল থাকে তা-ও নেব, নিচ্ছিও তাই।... আরও বৈচিত্র আনব এর মধ্যে— একঘেয়ে কেন হব? সংহতি আসবে এই ভালবাসা, শ্রদ্ধা ও প্রীতির ভেতর দিয়ে।’ লিখেছেন স্বামী লোকেশ্বরানন্দ। তাঁর এই জাতীয় সংহতি পুস্তিকাকারে প্রকাশ করছে সূত্রধর। সঙ্গে গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের রামকৃষ্ণ-অনুধ্যান, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সারদামণি দেবী, খগেন্দ্রনাথ মিত্র ও সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের স্বামী বিবেকানন্দ। আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ৫ মার্চ সন্ধে ৬টায় রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের বিবেকানন্দ হলে। ‘স্বামী লোকেশ্বরানন্দ স্মারক বক্তৃতা’-য় স্বামী বলভদ্রানন্দ বলবেন ‘এই সময় ও শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবান্দোলন’ নিয়ে। প্রাক্‌-কথনে তরুণ গোস্বামী। আয়োজনে সূত্রধর।

বহুরূপীর উদ্যোগ

এ বার কুমার রায় স্মারক বক্তৃতা-য় আসছেন অমল পালেকর ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের আলাপচারিতায় উন্মোচিত হবে ভারতীয় থিয়েটারের গতিপ্রকৃতি। ২ মার্চ, কুমার রায়ের জন্মদিনে, গোর্কিসদনে সন্ধে সাড়ে ৬টায়। বছর ছয়েক আগে প্রয়াত হন কুমার রায়, তিনিই শম্ভু মিত্রের পর পরম যত্নে লালন করেছিলেন বহুরূপী-কে। বহুরূপীর তত্ত্বাবধানে গঠিত ‘কুমার রায় স্মৃতিরক্ষা সমিতি’ স্মারক বক্তৃতার পাশাপাশি তাঁর পারিবারিক আনুকূল্যে তাঁর নামাঙ্কিত পুরস্কারেরও প্রচলন করে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নাট্যচর্চাকারী জেলাভিত্তিক গোষ্ঠীকেই এ-পুরস্কার দেওয়ার রীতি। এ বারের প্রাপক হুগলি জেলার বৃশ্চিক নাট্যসংস্থা।

পরম্পরা

পৈতৃক ভিটে মল্লরাজধানী বিষ্ণুপুর হলেও বিষ্ণুপুর ঘরানার পঞ্চম প্রজন্মের শিল্পী অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯২৭-এ কলকাতার টেগোর ক্যাসল স্ট্রিট অঞ্চলে। বাবা সত্যকিঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই সংগীতে হাতেখড়ি। সাত বছর বয়সে প্রথম পারফরম্যান্স। স্কুলজীবন শুরু ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম এ। ১৯৬৮-তে ‘সংগীতের শিল্প দর্শন’ বিষয়ে ডক্টরেট। রবীন্দ্রভারতীর জন্মলগ্ন থেকেই জড়িত। পরে সংগীত বিভাগে প্রধান। অল্প বয়স থেকেই বিখ্যাত সব মিউজিক কনফারেন্স-এ গাইবার সুযোগ পান। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই বুঝতে পেরেছিলেন ভারতীয় মার্গ সংগীতে পরিবর্তন আসছে, যুক্ত হচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়া। টিকে থাকতে গেলে চিন্তাধারা, শিক্ষা দান ও পারফরম্যান্স-এ আনতে হবে পরিবর্তন। সংগীত গবেষণায় নতুন পথ দেখিয়েছেন তিনি। দেশে-বিদেশে বহু অনুষ্ঠান করেছেন, রচনা করেছেন বহু বন্দিশ, লিখেছেন ‘নন্দনতত্ত্ব’ নিয়ে দুটি বই ও আত্মজীবনী। ২১ ফেব্রুয়ারি ৯০ বছর বয়সে ‘পরম্পরা বিষ্ণুপুর’ নামে সংগীত শিক্ষা কেন্দ্র উদ্বোধন করলেন শিল্পী। ‘১৯৬১-তে শিলিগুড়ির এক মিউজিক কনফারেন্সে ভীমসেন যোশী গান গেয়ে যাবার পর গাইতে উঠে দেখি হল-এ এক জনও দর্শক নেই। কী করব, দিশেহারা লাগছে— আমি কি এই চেয়ারদেরকেই গান শোনাব? তার পর দু’মিনিটের এক বন্দিশ গেয়ে চোখ খুলতেই দেখি হল ভর্তি। এই ঘটনা কোনও দিন ভুলতে পারব না।’ জানালেন শিল্পী।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

ব্রততীর সঙ্গে

এ শহরে বসন্ত বড় স্বল্পায়ু৷ শীতের কাঁপুনি কমতে না কমতেই গ্রীষ্ম হাজির হয়৷ তারই ফাঁকে কখন যে বসন্ত কংক্রিটের জঙ্গলে শিমুল ফুটিয়ে যায়, টেরই পাওয়া যায় না৷ কিন্তু যে কজনের কণ্ঠ এ শহরে সারা বছরই বসন্তের আমেজ রাখে তাঁদের মধ্যে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম৷ বেথুন স্কুলের প্রাক্তনী, অর্থনীতির স্নাতকোত্তর ব্রততী আবৃত্তির জগতে এখন বিশিষ্ট নাম৷ প্রথম একক রবীন্দ্রসদনে, ১৯৯৬-এ৷ তার পরে বেশ কয়েকটি একক অনুষ্ঠান করেছেন৷ কিন্তু গত বছর দুয়েকে তাঁর তেমন বড় আকারের কোনও একক অনুষ্ঠান হয়নি৷ এ বার কলামন্দিরে একক ব্রততীর আয়োজন করল ‘আনন্দম’, সুতপা দাশগুপ্তের প্রযোজনায়, ৭ মার্চ, সন্ধে সাড়ে ছটায়৷ ‘এক সন্ধে ব্রততীর সঙ্গে’ নামের এই অনুষ্ঠানে থাকবে পুরনো-নতুন বাংলা কবিতার ডালি৷ ইতিমধ্যে গঙ্গা দিয়ে কত জল বয়ে গিয়েছে, বাংলা আধুনিক কবিতার শব্দভাণ্ডারে সেলফি থেকে অসহিষ্ণুতা...কত প্রসঙ্গই নতুন জায়গা নিয়েছে৷ আর এই উদ্যোগের নেপথ্য-পুরুষ চিকিৎসক-কবি অনির্বাণ দাশগুপ্ত লিখেছেন ব্রততীকে নিয়েই কবিতা, ‘ও কণ্ঠ ফিরিয়ে দেবে বাদল স্মৃতি... চোখের জল/ ও কণ্ঠ ফিরিয়ে দেবে মায়ের আঁচল... প্রেমের পল/ ও কণ্ঠ ফিরিয়ে দেবে জারুল ডালে... মোমের ফুল/ ও কণ্ঠ ফিরিয়ে দেবে সোনাঝুরির ডোকরা দুল৷’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE