Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

চিত্রী ও ভাস্কর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী খ্যাতি-পরিচিতি পেয়েছেন তাঁর থেকে অনেক বেশি। আবার রোহিণীকান্ত নাগ বা ফণীন্দ্রনাথ বসুর মতো বিদেশে শিল্পশিক্ষার সুযোগও পাননি তিনি।

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০০:৪২
Share: Save:

বিস্মৃত বাঙালি ভাস্করের প্রদর্শনী

চিত্রী ও ভাস্কর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী খ্যাতি-পরিচিতি পেয়েছেন তাঁর থেকে অনেক বেশি। আবার রোহিণীকান্ত নাগ বা ফণীন্দ্রনাথ বসুর মতো বিদেশে শিল্পশিক্ষার সুযোগও পাননি তিনি। তা সত্ত্বেও ভাস্কর প্রমথনাথ মল্লিক (১৮৯৪-১৯৮৩) শিল্পসৃজনে যে বিস্ময়কর মান অর্জন করেছিলেন তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। আর অন্তত গত অর্ধশতকেরও বেশি তা চোখে দেখা অসম্ভব ছিল, কারণ গত শতকের চল্লিশের দশকে একমাত্র কন্যার আকস্মিক মৃত্যুতে শিল্পজগৎ থেকে সম্পূর্ণ সরে যান প্রমথনাথ। তাঁর প্রয়াণের পর শিল্পনিদর্শনগুলি রক্ষিত হয় রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কে। মূলত প্লাস্টারের কাজ বলে সংরক্ষণ ছিল দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ। বিশেষজ্ঞের সহায়তায় কিছু রূপান্তরিত করা হয়েছে ব্রোঞ্জে। এ বার প্রমথনাথেরই ৫৯টি কাজ দিয়ে সাজানো হয়েছে ইনস্টিটিউটের বার্ষিক প্রদর্শনী, প্রতিষ্ঠানের উজ্জ্বল উদ্ধারের ধারাবাহিকতায় নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

প্রমথনাথের শিল্পশিক্ষা রণদাপ্রসাদ গুপ্ত প্রতিষ্ঠিত ‘জুবিলি আর্ট অ্যাকাডেমি’তে। হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার ও অতুল বসু তাঁর সহপাঠী ছিলেন। ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্টে অবনীন্দ্রনাথ ও গগনেন্দ্রনাথের নজরে পড়ায় তাঁদেরই উদ্যোগে বিখ্যাত মরাঠি ভাস্কর বিনায়ক পাণ্ডুরঙ্গ কারমারকর-এর কাছে তিন বছর শিক্ষার সুযোগ পান, কারমারকর তখন কলকাতায়। মূলত প্লাস্টারই ছিল তাঁর মাধ্যম, প্রতিকৃতি ও মৌলিক দু’ধরনের কাজেই তিনি ছিলেন কৃতবিদ্য। কুড়ি ও তিরিশের দশকে দেশ জুড়ে বহু প্রদর্শনীতে যোগ দেন প্রমথনাথ, সাফল্য কোথাও অধরা ছিল না। ১৯২৮ সালে কলকাতার পার্ক সার্কাসে পণ্ডিত মতিলাল নেহরুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে তাঁর তেরোটি ভাস্কর্য প্রদর্শিত হয়, বিশেষ করে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের আবক্ষ মূর্তিটি প্রধান মঞ্চের জন্য বেছে নেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে রক্ষিত আচার্য জগদীশচন্দ্রের রিলিফ ভাস্কর্যটি তাঁরই করা।

ইনস্টিটিউট অব কালচারের প্রদর্শনীটি ১৫ মার্চ উদ্বোধন করেন ভাস্কর অনিট ঘোষ, ছিলেন সম্পাদক স্বামী সুপর্ণানন্দজি। ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এটি, রোজ ১১-১টা ও ২.৩০-৬টা। বাঁ দিকে প্রমথনাথের করা শ্রীরামকৃষ্ণের রিলিফ ভাস্কর্য (ব্রোঞ্জ), ডান দিকে একটি প্লাস্টারের আবক্ষ মূর্তি।

শতবর্ষে

আত্মস্মৃতি লেখার পর হাত দিয়েছিলেন শেষ উপন্যাসে— ‘কদম কদম’। চলে যাওয়ার আগে নবেন্দু ঘোষ (১৯১৭-২০০৭) সেটি সম্পূর্ণ করে তুলে দিয়ে যান কন্যা রত্নোত্তমার হাতে। হিন্দি ছবির বিশিষ্ট অভিনেতা নাজির হোসেনের স্বাধীনতার লড়াইয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজে জড়ানো জীবন নিয়ে এ-উপন্যাস। ২৭ মার্চ তাঁর শতবর্ষ সূচনা। সে দিন বিকেল ৪টেয় তাঁর জন্মদিন পালন করবে নন্দন। উপন্যাসটির পাণ্ডুলিপি বাংলা আকাদেমিকে সংরক্ষণের জন্যে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন রত্নোত্তমা। শুধু তো গদ্যকার-ঔপন্যাসিক নন, ভারতীয় ছবির প্রবাদপ্রতিম চিত্রনাট্যকারও নবেন্দু ঘোষ। তাঁর চিত্রনাট্য থেকে সুব্রত মিত্রের আলোকচিত্রে তৈরি রাজ কপূর ওয়াহিদা রেহমান অভিনীত বাসু ভট্টাচার্যের ছবি ‘তিসরি কসম’ দেখানো হবে সে দিন। ছবি এবং ছবিটির প্রযোজক শৈলেন্দ্ররও (গীতিকার) প্রয়াণের পঞ্চাশ পূর্ণ হল এ বছর। আর দেখানো হবে নবেন্দুবাবুকে নিয়ে একটি আঠারো মিনিটের ছবি ‘মুকুল’, তাঁরই পুত্র শুভঙ্কর ঘোষের তৈরি।

আড্ডা

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আড্ডায় ছাত্রদের উশকে দিয়ে গেলেন ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তী। ছাত্রছাত্রীরা জেএনইউ, কানহাইয়া প্রসঙ্গ এনেছিলেন। দীপেশ কিন্তু জানালেন, পিএইচ ডির লক্ষ্যে কানহাইয়ার এখন পড়াশোনাতেই মন থাকা উচিত। বিদ্যাচর্চার জগৎ দ্রুত এগিয়ে চলেছে, দু’ তিন বছর নষ্ট হলে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় কল্কে পাওয়া কঠিন। ছাত্ররা রাজনীতিবিবর্জিত হয়ে পড়াশোনা করবে? দীপেশের জবাব, বিদেশেও ছাত্ররা ভোটের কাজ করে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রফ্রন্ট খুলে বেড়ায় না। তা হলে ছাত্র-রাজনীতি থেকে উঠে এসে আপনি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ভদ্ররা কল্কে পেলেন কী ভাবে? ‘আমরা বুদ্ধি দিয়ে মেক-আপ করেছি, কিন্তু পড়াশোনায় ফাঁক রয়ে গিয়েছে,’ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি। আর এ ভাবেই তর্কে-গল্পে-স্মৃতিচারণে শুরু হল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিশতবার্ষিকী উৎসবের আড্ডা সিরিজ। প্রতি মাসে বিখ্যাত কোনও প্রাক্তনী আড্ডা দেবেন এখনকার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। আগামী মাসে অর্থনীতিবিদ অশোক লাহি়ড়ী।

ফিরে দেখা

কবির সার্ধশতবর্ষে ‘রবিরশ্মি’ নামক রবীন্দ্রচর্চাকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেন দীপ্তি সোম সিংহ ও ইন্দুদীপা সিংহ, নিজেদের বীরেন রায় রোডের বাড়িতে। প্রতি মাসে কোনও রবিবার বেছে নেওয়া হয় রবীন্দ্রবিষয়ক অনুষ্ঠানের জন্য। এ বার ২৭ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টায় আয়োজিত হয়েছে বসন্তোৎসব। রবীন্দ্রনাথের প্রপৌত্রী চলচ্চিত্রাভিনেত্রী স্মিতা সিংহ, এবং রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ সুবিমল লাহিড়ীকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। অন্য দিকে, প্রতি বছরের মতো এ বছরও ২৬ মার্চ আশুতোষ মেমোরিয়াল প্রেক্ষাগৃহে সন্ধে ৬টায় বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী অখিলবন্ধু ঘোষ স্মরণে ‘সারাটি জীবন কী যে পেলাম’ শীর্ষক এক সংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে অখিলবন্ধু ঘোষ স্মৃতি সংসদ।

শিক্ষক

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক উপেন্দ্রনাথ দত্ত পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল ধর্মবীরকে যত্ন করে বাংলা শেখাতেন। বরিশাল জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক কালীপ্রসন্ন দত্তের পুত্র উপেন্দ্রনাথের (১৮৯৮-১৯৮৫) জন্ম বরিশালে। ১৯২০ সালে শিক্ষকজীবন শুরু, ১৯৪৭-এ জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষক হন। তাঁর আমলেই স্কুলের গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয়। ১৯৬৫ সালে অবসর নিলেও আমৃত্যু রেক্টর হিসেবে থেকে যান। শতবর্ষ অতিক্রান্ত (১৯১৪-য় প্রতিষ্ঠা) বাংলা মাধ্যম স্কুলটির এই আদর্শ শিক্ষককে সম্মান জানাতে ২৭ মার্চ সন্ধে সাড়ে ৬টায় অবনীন্দ্র সভাগৃহে ‘উপেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারক বক্তৃতা ২’ আয়োজন করেছে স্কুলের প্রাক্তনী সংগঠন। বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ে শিক্ষার সংস্কৃতি বিষয়ে বলবেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়।

রসনা-বিচিত্রা

এক অভিনব ফিল্মোৎসব। খাওয়াদাওয়া-রান্নাবান্না নিয়ে, জীবনের ওঠাপড়ায় কী ভাবে জড়িয়ে থাকে সে সব। ফরাসি দেশেই তৈরি হয় এমন সব ছবি, হালফিল থেকে সপ্তদশ শতক অবধি ছবিগুলির ঘটনাপ্রবাহের চলন। ‘ফ্রেঞ্চ সিনেমা অ্যান্ড গ্যাস্ট্রোনমি’ শীর্ষক এ-উৎসব ২১-২৪ মার্চ নন্দনে। আয়োজক ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস এবং আলিয়ঁস ফ্রঁস্যাজ। সঙ্গে রোনাল্ড জফের ‘ভ্যাটেল’ ছবির স্থিরচিত্রে বিশিষ্ট ফরাসি অভিনেতা দেপারদ্যু। অন্য দিকে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত উদ্বোধন করবেন ‘ন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর, সেখানে দেখানো হবে সম্প্রতি কালের নতুন প্রজন্মের ভারতীয় পরিচালকদের ছবি। আদিত্যবিক্রম সেনগুপ্তের সাড়া-তোলা ‘লেবার অব লাভ’ ছবিটি আছে এ-উৎসবে। ২৫-৩১ মার্চ, নন্দনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ।

অপ্রকাশিত

বড়লাটের ফরেন প্রেস-এর সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন কলকাতায়। পরে শিমলায় চলে যান। কর্তাদের সঙ্গে মতভেদের জন্য চাকরি ছেড়ে স্বদেশি আন্দোলনে যোগ দিতে ফের কলকাতায় ফেরেন প্রাণকৃষ্ণ ভট্টাচার্য (১৮৫৮-১৯৩৩)। উত্তর ২৪ পরগনার নোনাচন্দনপুকুরে জন্ম, সংস্কৃতে কলেজে পড়াশোনা। সম্প্রতি, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে ‘প্রাণকৃষ্ণ ভট্টাচার্য স্মারক বক্তৃতা’য় ‘বই সম্পাদনা কী ও কেন’ এ বিষয়ে বললেন সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। প্রাণকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের কনিষ্ঠা পৌত্রী শম্পা ভট্টাচার্য তাঁর পিতামহ রচিত ইংরেজি ব্যাকরণ, বাংলা ব্যাকরণ এবং ব্রাহ্মসমাজ ও হিন্দুসমাজ বই তিনটির কথা বলে অপ্রকাশিত আত্মচরিত আমার জীবন-এর প্রতি আলোকপাত করেন। জানা গেল, এটি প্রকাশেরও ব্যবস্থা হচ্ছে। সভাপতিত্ব করেন গোপা দত্তভৌমিক।

নারীশক্তি

উপলক্ষ নারীত্বের উদ্‌যাপন। বালুচরী ও বিষ্ণুপুরী ঘরানার গয়নার সাজে ব্যালে-তে দেখা যাবে দ্রৌপদী, দেবযানী, শকুন্তলার মতো মহাকাব্যের চরিত্রদের, যাঁরা অসময়ে মনে করায় নারীশক্তির কথা। অথচ এ দেশে পুরুষের সমান সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা তো দূর অস্ত্‌, মেয়েদের জন্মানোর অধিকার নিয়েও চলে নানা টানাপড়েন। ঘরে-বাইরে নারীর উপরে চলতে থাকা সে সব অত্যাচারের প্রতিবাদে তাই মহাকাব্যের ‘শক্তিদের’ স্মরণ করা। শিল্পী তন্ময় বসুর পরিকল্পনায় ‘ফ্রিড’ আয়োজিত এই ব্যালে মঞ্চস্থ হবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল প্রাঙ্গণে, ২১ মার্চ সন্ধে সাড়ে ৬টায়।

আলোয় ফেরা

‘ যদি বিপিএল না হই, তা হলে কি ঋণ পাব না?’ ‘ফসল উঠতে লাগবে তিন মাস, সপ্তাহে সপ্তাহে টাকা শুধব কী করে?’ ব্যাঙ্ক কর্তাদের কাছে এমন প্রশ্ন নতুন নয়। তবে যাঁরা করছিলেন প্রশ্নগুলো, সেই মুখগুলো অচেনা। ওঁরা সবাই ছিলেন মনোরোগী, যাঁরা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে ফিরে গিয়েছেন বাড়িতে। রাজ্যের নানা জেলার তো বটেই, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, অসম, কেরলের প্রায় আশিজন এমন মানুষ সম্প্রতি কলকাতায় দু’দিন কথাবার্তা বললেন রোজগারের নানা উপায় নিয়ে। ‘মেকিং আ ডিফারেন্স’ (ম্যাড) নামে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে ‘অঞ্জলি’। বন্ধন ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের কর্তারা যেমন এসেছিলেন, তেমনই আসেন হোটেল, কেটারিং, হস্তশিল্প, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, রিটেল ব্যবসা, এমন নানা পেশার মানুষ। কী দক্ষতা প্রয়োজন, কেমন রোজগার হতে পারে, কোথায় পণ্যের বাজার, এমন সব আলোচনা করলেন তাঁরা। হাসপাতাল যাঁদের ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছে সমাজ যেন তাঁদের একঘরে করে না রাখে, তাই এই উদ্যোগ, জানালেন ‘অঞ্জলি’-র রত্নাবলী রায়।

অচর্চিত

সেতার, সরোদ, সারেঙ্গি, সানাই, বীণার মতো আজ যে বাঁশের বাঁশিও একটি পুরোদস্তুর কনসার্ট যন্ত্রের সমান, তার কৃতিত্বটি কিন্তু পান্নালাল ঘোষের! পল্লিসঙ্গীতের এই দীর্ঘকালের যন্ত্রটিকে তিনিই সার্বভৌম একক যন্ত্রে পরিণত করেন। কিছু দিন মাইহারে সঙ্গীতাচার্য আলাউদ্দিন খানের কাছে তালিম নেওয়ার পর গুরুর উৎসাহে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে অনেক নতুন রাগও সৃষ্টি করেন তিনি। ভৈরব রাগের পঞ্চম স্বরটিকে বাদ দিয়ে তৈরি করে নেন রাতের রাগ চন্দ্রমৌলি। হংসধ্বনি রাগের শুদ্ধ গান্ধারকে কোমল করে নিয়ে গড়ে নেন নূপুরধ্বনি রাগ। নিজের অকালমৃত ছোট মেয়ে নূপুরের নামে। আরও দুটি পান্নালাল-সৃষ্ট রাগ হল কুমারী ও দীপাবলি। এ নিয়ে কোনও চর্চাই এত দিন হয়নি। এ বার এই চারটি রাগ শোনার সুযোগ হবে কবীর সুমনের কণ্ঠে। বাংলায় খেয়ালের বন্দিশ রচনা করে বিলম্বিত ও মধ্য লয়ে পরিবেশন করবেন তিনি। ২৬ মার্চ আইসিসিআর-এ, সন্ধ্যা ৬-৩০।

পথিকৃৎ

কলকাতার অন্যতম সেরা হাসপাতালে প্রথম সারির ডাক্তার। সুচিত্রা সেন, স্বামী রঙ্গনাথানন্দ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ভিভিআইপি-র চিকিৎসক। অনেকের কাছেই তো এই পরিচয় যথেষ্টর থেকেও বেশি। না, সুব্রত মৈত্র এই ছকে বাঁধা পড়তে রাজি ছিলেন না। জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউশন, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হয়ে ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা সেরে ফিরে এলেন দেশে। চিকিৎসক ও সংগঠক দুই ক্ষেত্রেই সাফল্য। কিন্তু শহরে এসে যাঁরা চিকিৎসার সুযোগ পান না, তাঁদের কী হবে? আয়লা-বিধ্বস্ত সুন্দরবনে গিয়ে তাঁর মনে হয়েছিল, একটা হাসপাতাল দরকার, যা আশ্রয়স্থল হিসেবেও কাজ করবে। তাঁর উদ্যোগে, বহু জনের সহায়তায় সন্দেশখালি ব্লকের রাজবাড়িতে গড়ে উঠল ‘রঙ্গনাথানন্দ গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র’। নদীপথে ব্যবস্থা করলেন ‘ওয়াটার অ্যামবুলেন্স’। সুন্দরবনের বহু প্রত্যন্ত জায়গায় মেডিক্যাল টিম নিয়ে গিয়ে নিয়মিত ক্যাম্প করেছেন, যেতেন অন্যান্য জেলাতেও।

ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি রাজ্যের চিকিৎসাক্ষেত্রে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা নিয়েছিলেন সুব্রত মৈত্র। এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর দূরদৃষ্টির সুফল ইতিমধ্যেই ফলতে শুরু করেছে। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু করা, জেলার হাসপাতালে আইসিসিইউ, হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট, ডায়ালিসিস ইউনিটের ব্যবস্থা, সেন্টার অফ এক্সেলেন্স স্থাপন (ক্যানিংয়ে সাপে-কাটা রোগীদের জন্য ইতিমধ্যেই এই কেন্দ্র সক্রিয়), জঙ্গলমহলে ভ্রাম্যমাণ মেডিক্যাল ইউনিট, এ সবই তাঁর পরিকল্পনার সূত্র ধরে। চিকিৎসকজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বইও লিখেছিলেন। বছর দেড়েক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়েও কাজে ফিরে এসেছিলেন সমান উদ্যমে। দরাজ মনের মানুষটি চলে গেলেন মাত্র ৫৯ বছর বয়সে।

বিরল

এ কালে নয়, সব কালেই দ্বিজেনের মতো অভিনেতা বিরল। অত্যন্ত বুদ্ধিমান অভিনেতা তো বটেই, সেই সঙ্গে মননশীলও। আর তার সঙ্গে ওর অভিনেতা হিসেবে যা যা নৈপুণ্য... বিশেষত কণ্ঠস্বর উচ্চারণ, নতুন প্রজন্মের কাছে শেখবার মতো।’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে, তাঁকে গত কাল বেহালা শরৎ সদনে সংবর্ধিত করা হল। তাঁর সংবর্ধনার সঙ্গে মেঘনাদ ভট্টাচার্য উদ্বোধনও করলেন ‘কলকাতা থিয়েটার কার্নিভাল’-এর, আট দিন ব্যাপী এই নাট্যোৎসব চলবে ২৭ মার্চ পর্যন্ত। উদ্যোগে বেহালা নূতন দল ও সংস্তব। সংস্তব-এর কর্ণধার হিসেবে লম্বা সফর দ্বিজেনের— মুষ্ঠিযোগ, গুণধরের অসুখ, এই ঘুম, স্পর্ধাবর্ণ— এ সমস্ত উল্লেখ্য প্রযোজনায় নির্দেশনার সঙ্গে নিজের অভিনয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন দর্শককে পঁয়ষট্টি-পেরনো এই মানুষটি। সৌমিত্রের সঙ্গেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অভিনয়— নীলকণ্ঠ, কুরবানি, প্রাণতপস্যা, তৃতীয় অঙ্ক অতএব-এ। শম্ভু মিত্রের সঙ্গে ‘গালিলেওর জীবন’ ও ‘দশচক্র’-এ। বিভাস চক্রবর্তীর নির্দেশনায় ‘গাজি সাহেবের কিসসা’ ‘বলিদান’, বা প্রয়াত অসিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘নীলাম নীলাম’-এ আজও স্মৃতিধার্য তাঁর অভিনয়। ‘‘স্মরণীয় অভিনয় তো ওর অভিনয়-জীবনের শুরুতেই, ১৯৭৬-এ প্রেমচন্দ অবলম্বনে প্রয়াত নীলকণ্ঠ সেনগুপ্তের পরিচালনায় ‘দানসাগর’-এ, মধ্যবিত্ত ইমেজ ভেঙে বেরিয়ে নিম্নবর্গের এক চরিত্রে। আমরা দু’জনে একসঙ্গে যখন শূদ্রক থেকে ‘অমিতাক্ষর’ করেছি ১৯৭৮-এ, তখনও পরিচালনার চেয়েও অভিনয়ের প্রতি ওর ঝোঁক। যে কোনও দুরূহ সংলাপ নিজস্ব স্বরগ্রামে বলার এক দুর্লভ ক্ষমতা আছে ওর।’’ বললেন দেবাশিস মজুমদার, শূদ্রক-এর কর্ণধার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkata's korcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE