Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

দেখছ না, এখানে সবাই যেন কেমন রেগে আছে, কিংবা সন্দেহ করছে, কিংবা ভয় পাচ্ছে?’ নন্দিনীর এই কথাগুলি এখন এই মুহূর্তে সবচেয়ে সত্যি হয়ে উঠেছে আমাদের দেশে, বা সারা পৃথিবীতেই। সম্ভবত সে জন্যেই রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ গৌতম হালদারের শিল্পিত অভিপ্রায়, তাঁর নতুন মঞ্চায়ন।‘পৃথিবী আপনার প্রাণের জিনিস আপনি খুশি হয়ে দেয়।

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১০
Share: Save:

নতুন করে ‘রক্তকরবী’র মঞ্চায়ন

দেখছ না, এখানে সবাই যেন কেমন রেগে আছে, কিংবা সন্দেহ করছে, কিংবা ভয় পাচ্ছে?’ নন্দিনীর এই কথাগুলি এখন এই মুহূর্তে সবচেয়ে সত্যি হয়ে উঠেছে আমাদের দেশে, বা সারা পৃথিবীতেই। সম্ভবত সে জন্যেই রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ গৌতম হালদারের শিল্পিত অভিপ্রায়, তাঁর নতুন মঞ্চায়ন।‘পৃথিবী আপনার প্রাণের জিনিস আপনি খুশি হয়ে দেয়। কিন্তু যখন তার বুক চিরে মরা হাড়গুলোকে ঐশ্বর্য বলে ছিনিয়ে নিয়ে আস, তখন অন্ধকার থেকে একটা কানা রাক্ষসের অভিসম্পাত নিয়ে আস... খুনোখুনি কাড়াকাড়ির অভিসম্পাত।’ অন্তরালবর্তী রাজার উদ্দেশে নন্দিনীর এই সংলাপ খেয়াল করিয়ে দিতে-দিতে গৌতম বলেন ‘‘সারা দুনিয়াতেই যত দিন যাচ্ছে ক্ষমতাসীনেরা মানুষকে জাঁতাকলে পিষে মারছে। ‘রক্তকরবী’ তাই আমার কাছে নাটক হিসেবে একই সঙ্গে চিরকালীন এবং ভীষণ ভাবেই সাম্প্রতিক।’’

শুধু মানুষের উপর ক্ষমতার পেষণই নয়, প্রকৃতিকেও যে ভাবে যথেচ্ছ ব্যবহারে, নিঃস্ব করে ফেলা হচ্ছে, যে ভাবে ভূমিকম্প, আয়লা, সুনামি, গ্লেসিয়ার ধ্বংস— একের পর এক বিপর্যয় ঘটে যাচ্ছে, উষ্ণায়ন কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, সেই গভীর সংকটও যেন চিনিয়ে দেয় এ-নাটক, মনে হয়েছে গৌতমের। নাট্যনির্দেশক গৌতম চলচ্চিত্রকারও, অডিয়ো-ভিসুয়াল আর্ট নিয়ে নিয়ত নিরীক্ষাশীল। ‘দৃশ্য আবহ কোরিয়োগ্রাফির ভিতর দিয়ে নন্দিনীর জাল ভেঙে বেরনোর স্পর্ধা স্তরে স্তরে প্রকাশ করতে চেয়েছি। আলোকসম্পাতে উত্তীয় জানা, আবহে গৌতম সোম আমার সঙ্গী। সরোদে উস্তাদ আমজাদ আলি খান এবং আমান ও আয়ান আলি খান, কণ্ঠসঙ্গীতে রাশিদ খান ঋদ্ধ করেছেন এ প্রযোজনাকে।’ রক্তকরবীর সমস্ত পালাটি ‘নন্দিনী’ ব’লে একটি মানবীর ছবি।— রবীন্দ্রনাথের কথাটিকেই ফের মনে করিয়ে দিলেন গৌতম, ‘চরিত্রটির সেই পূর্ণতা চৈতি ঘোষালের অভিনয়ে।’ সন্দর্ভ প্রযোজিত ‘রক্তকরবী’র প্রথম অভিনয় ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৭টায় অ্যাকাডেমিতে।

সুব্রহ্মণ্যমের ছবি

তাঁর ছবির মধ্যে উঠে আসে সামাজিক ভাষ্য, তাতে মিশে থাকে অন্তর্ঘাত। ফের কে জি সুব্রহ্মণ্যমের প্রদর্শনী কলকাতায়, দ্য সিগাল ফাউন্ডেশন ফর দি আর্টস-এর উদ্যোগে। হ্যারিংটন স্ট্রিট আর্টস সেন্টারে, চলবে ৫ মার্চ অবধি, প্রতিদিন ১-৮টা (রবিবার ও ছুটির দিন বাদে)। ‘স্কেচেস, স্ক্রিবলস, ড্রইংস’ নামাঙ্কিত এ প্রদর্শনীতে ৩৪০টি রঙিন আর সাদাকালো ড্রইং। ১৯৬০-’৯০, এই সময়পর্ব জুড়ে ছবিগুলি এঁকেছেন শিল্পী। সঙ্গে তারই একটি।

নতুন নাটক

সাহিত্য থেকে নাট্য নির্মাণের চল বাংলা থিয়েটারে বহু দিনের। কিন্তু একই গল্পকারের গল্প নিয়ে পর পর তিনটি প্রযোজনা মঞ্চস্থ করার প্রয়াস বিরল বলাই ভাল। কর্ণধার মেঘনাদ ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় সায়ক নাট্যগোষ্ঠী এর আগেও অমর মিত্রর গল্প নিয়ে মঞ্চস্থ করেছিল ‘পিঙ্কি বুলি’ (নাটক: ইন্দ্রাশিস লাহিড়ী), ‘দামিনী হে’ (নাটক: চন্দন সেন)। তাঁরাই এ বার গিরিশ মঞ্চে ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধে সাড়ে ৬টায় অমর মিত্রের কাহিনি ‘পাসিং শো’ (নাটক: উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়) মঞ্চস্থ করতে চলেছে। নাটকটি মূলত, মনের গহনে ডুব দিয়ে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গল্প। সংগীত জয় সরকার, কোরিওগ্রাফি সুকল্যাণ ভট্টাচার্য। নির্দেশক সেই মেঘনাদই।

ক্ষতি কার

‘বিশ্বায়ন আজ আমাদের দ্রুতই এক সম-সংস্কৃতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পাস্তা-পিৎজা খেতে ভালই লাগে, তবে দাদিমা-ঠাকুমাদের রান্না হারিয়ে গেলে, ক্ষতি কেবল বাঙালির রান্নাঘরের নয়, গোটা মানবজাতির রসনারই।’ বলছিলেন তানভীর মোকাম্মেল, তাঁর আসন্ন বক্তৃতা প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের এই চিন্তাবিদ ও চলচ্চিত্রকার ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা আকাদেমিতে সন্ধে সাড়ে ৬টায় প্রণবেশ সেন স্মরণে বার্ষিক বক্তৃতা দেবেন: ‘বাঙালির মেধা: জমা, খরচ ও ইজা’ (‘প্রাপ্তি’)। উদ্যোগে প্রণবেশ সেন স্মারক সমিতি। অন্য দিকে নন্দনে ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় দেখানো হবে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘অপুষ্টির অন্তরালে’। নির্দেশক রুম্পা গুঁই ও শুভব্রত দে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের সহায়তায় ছবিটি তৈরি করেছে বকুলবাগান রঙ্গমঞ্চ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দৈনন্দিন জীবনে বাজার অর্থনীতির হাত ধরে ঢুকে পড়া লোভনীয় খাবারের বিপরীতে প্রকৃতিজাত সহজলভ্য সঠিক পুষ্টির খাবারের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতেই বানানো এ-ছবি।

অরূপরতন

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শিল্পীজীবনের বহুরূপের অরূপ সন্ধান ২৪-২৮ ফেব্রুয়ারি, বেহালা শরৎসদনে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আছে কৃতীদের নাগরিক সংবর্ধনা, সঙ্গে সৌমিত্র রচিত শ্রুতিনাটক ‘টাইপিস্ট’। বাকি দিনে তাঁর নাটক ‘ফেরা’, ‘বোষ্টমী’, ‘হোমাপাখি’। থাকছে তাঁর উপর ক্যাথরিন বার্জ পরিচালিত ‘গাছ’ তথ্যচিত্রটি। শেষ দিনে সৌমিত্র-সৃষ্ট রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ‘প্রতিদিন তব গাথা’, তাঁর ও পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের পাঠ-আবৃত্তি সহ মনোময় ভট্টাচার্য ও পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানে। যৌথ উদ্যোগে ‘উজানী’ ও ‘মুখোমুখি’।

মেয়েদের নিয়ে

পনেরো বছর পেরিয়ে এ বার ‘সই মেলা ২০১৬’। উর্দু সাহিত্যিক ইসমত চুঘতাইয়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এই উৎসব শিশির মঞ্চে ২৬-২৭ ফেব্রুয়ারি (দুপুর ৩টে থেকে)। চুঘতাইয়ের জীবন এবং তাঁর লেখা গল্প, নাটক, চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা ও বিতর্কের ভাবানুষঙ্গে তাঁকে আরও একটু ঘনিষ্ঠ ভাবে চিনবার, জানবার চেষ্টা হবে। পাশাপাশি হয়ে গেল অন্য ধরনের আর্টস ফেস্টিভাল ‘আরএনবি দ্য ই-প্রোজেক্ট’। ছিল পারফর্মিং আর্টস, ফটোগ্রাফি, সিনেমা, ভিডিয়ো এবং লাইভ চ্যাট শো। সম্প্রতি ম্যাক্সমুলার ভবনে এই উৎসবে দেখানো হল কিছু অসমসাহসী মেয়েদের ভিডিয়ো-সাক্ষাৎকার। ছিল একক উপস্থাপনাও। অনুষ্ঠানটির মূল ভাবনায় বাচিকশিল্পী ও অভিনেতা সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

অঙ্গািঙ্গ

১৯৫৮ সাল। খুলনার খেসরা গ্রামের বছর পঁচিশের এক যুবক বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ গ্রন্থাগারে যোগ দিলেন। পরের সাড়ে চার দশকে বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে অঙ্গািঙ্গ হয়ে ওঠেন। বিশ শতকের শেষ তিন দশক পরিষৎ গ্রন্থাগারে যাঁদের কিছু প্রয়োজন হয়েছে, তাঁরাই এই আদ্দির পঞ্জাবি সাদা ধুতি পরা, ব্যাকব্রাশ চুল আর ভারী ফ্রেমের চশমা, দীর্ঘদেহী সুদর্শন মৃদুভাষী কিন্তু মজলিশি মানুষটির কাছে সব রকম সাহায্য পেয়েছেন। আর সে সাহায্য, অনেক সময়েই ছিল অযাচিত। তাঁর রাবীন্দ্রিক হস্তাক্ষর এখনও পরিষদের বহু নথিপত্রে উজ্জ্বল। লিখেছেন অনেক নিবন্ধ, লিখিত/ সম্পাদিত বইয়ের তালিকাটিও উল্লেখ্য। ৮৩ পূর্ণ করে প্রয়াত হলেন সম্প্রতি, ২৭ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ৪টেয় পরিষদে তাঁর স্মরণসভা।

স্মরণ

স্কুলশিক্ষক মলয়া ঘোষকে ১৯৭৪-এর ৩০ মে নীলরতন সরকার হাসপাতাল থেকে আটক করে পুলিশ। তাঁর ‘অপরাধ’, তাঁর স্বামী গৌতম ঘোষ তখন নকশাল আন্দোলনের অন্যতম নেতা। মলয়াকে লালবাজারে নিয়ে গিয়ে পুলিশ জেরা করার সময়ে অকথ্য নির্যাতন করে, সে কথা ধরা রয়েছে তাঁর লালবাজারে ৬৪ দিন (সেতু) বইয়ে। ১৯৭৭-এ মুক্তি পেয়ে যুক্ত হন সমাজকর্মে, ছিলেন মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ মঞ্চ, এপিডিআর বেহালা শাখার সঙ্গেও। সম্প্রতি ৭৮ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন মলয়া, ২৪ ফেব্রুয়ারি ৫টায় বই-চিত্রে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে সেতু প্রকাশনীর উদ্যোগে স্মরণসভা।

ঐতিহ্য

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছোটভাই ঈশানচন্দ্রকে বীরসিংহ গ্রামে হোমিয়োপ্যাথি প্র্যাকটিশ করতে বলেছিলেন। ঈশানচন্দ্রের ছেলে পরেশনাথ থিতু হন মিহিজামে, ১৯১৮ সালে। হোমিয়োপ্যাথিক ওষুধ তৈরির বিরাট ব্যবসার পাশাপাশি তাঁর চিকিৎসা যে ঐতিহ্য সৃষ্টি করে, পরেশনাথ-পুত্র প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে অব্যাহত রাখেন। ‘পি ব্যানার্জি (মিহিজাম)’ হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসাজগতে প্রবাদপ্রতিম। প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিকথন দ্য ডায়ারিজ অব আ স্টাবার্ন হোমিয়োপ্যাথ (সম্পা: বিদিশা ঘোষাল, প্রকাশক: প্রতীপ বন্দ্যোপাধ্যায়) ২৬ ফেব্রুয়ারি সাড়ে চারটেয় ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে প্রকাশ করবেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, বই থেকে পড়বেন আনন্দ লাল। লেখক স্বয়ং থাকবেন অনুষ্ঠানে।

জাপানি বাউল

ওসাকার কানসাই ইউনিভার্সিটির দর্শনের ছাত্রী মাকি কাজুমি ভাবসমাধিতে আচ্ছন্ন হন সাধন দাস বৈরাগ্যের গান শুনে। ১৯৯১-এর সেই সেপ্টেম্বরে সাধনবাবু তখন ভারত উৎসবে জাপান সফররত। বাউলের আকর্ষণে মাকি ডিসেম্বরে চলে আসেন এ দেশে। বাংলা শিখে সাধন দাসের তত্ত্বাবধানে (সঙ্গের ছবিতে) তিনি সাধনায় ডুবে যান এবং একই সঙ্গে ওসাকায় এই বাউলের চর্চা চালিয়ে যেতে থাকেন। এক সময় পৌষমেলার মূল মঞ্চে তিনি প্রবেশাধিকার পাননি। কিন্তু দমে যাননি তিনি। মাকি কাজুমি আজ বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত নাম। প্রতি বছর জাপানি বাউলরা আসেন কেঁদুলির মেলায়, দোলের পর ফিরে যান দেশে। মাকির সঙ্গে এ বারেও এসেছেন তাঁরা। ওঁদের নিয়েই ২৬ ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রসদনে বিকেল পাঁচটায় আয়োজিত হয়েছে একটি অনুষ্ঠান। সহজিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত সহজিয়া লোকগান দলের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে থাকবেন দেব চৌধুরী ও সাধন দাস বৈরাগ্য স্বয়ং।

প্রাতিষ্ঠানিক

১৮২৮-এ রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজ পরের পঞ্চাশ বছরে দু’বার ভাঙনের মুখে পড়ে। ১৮৭৮-এর সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজই ছিল সবথেকে বড় সংগঠন। ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতে। নতুন আদর্শ, তত্ত্ব ও জীবনভাবনার মাধ্যমে তার প্রভাব ছিল বিপুল। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই নানা কারণে দুর্বল হতে থাকে ব্রাহ্মসমাজ। আজ তার কী অবস্থা? প্রসাদ সেন ও পরীক্ষিৎ ঠাকুর সেই সমীক্ষাই করেছেন তাঁদের তথ্যসমৃদ্ধ দুই খণ্ডের ব্রাহ্ম সমাজস ইন ইন্ডিয়া/ আ রিসেন্ট হিস্টরি (১৯২০-২০১০) (সম্পা: পার্থপ্রতিম বসু, প্যাপিরাস) বইয়ে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ৬টায় রাজা রামমোহন রায় স্মারক সংগ্রহশালায় বইটি প্রকাশ করবেন জেরাল্ডিন ফোর্বস। অন্য দিকে বেলুড় বিদ্যামন্দিরের ৭৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে ৪ জুলাই। ওইদিনই শুরু হবে বর্ষব্যাপী প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী উৎসব পালন। এই উপলক্ষে চারটি স্থায়ী তহবিলও গড়া হবে। প্রাক্তনীরাও শামিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি পুনর্মিলন উৎসবে মিলিত হচ্ছে প্রাক্তনী সংসদ, বিদ্যামন্দিরেই সারাদিন।

বুড়োবুড়ি

যেখানে বাঙালি, সেখানে তাঁরা। সিডনি থেকে সাঁওতালডিহি, ডালাস থেকে দিনহাটা— সর্বত্র। সাড়ে তিন দশক ধরে অটুট সে-জয়যাত্রা। জগন্নাথ বসু-উর্মিমালা বসুর পুঁজি স্রেফ কণ্ঠস্বর। মঞ্চে সেরা সাহিত্য বা সমকালের চেনা জীবন মেলে ধরতে কণ্ঠই তাঁদের মেকআপ, আলো, প্রপ্‌স— সবকিছু। যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্বের সীমা পেরিয়ে অভিজ্ঞতার আলোয় সেই স্বর এখন আরও রসস্থ। অনেক দিন বাদে নিজের শহরে একক শ্রুতিনাট্য-সন্ধ্যা, এই জুটির। ২৫ ফেব্রুয়ারি, মিনার্ভা-য় গলা দিয়ে ছবি আঁকবেন সেই বুড়োবুড়ি।

স্বর্ণযুগের শিল্পী

রাধাকৃষ্ণন, রাজেন্দ্রপ্রসাদ, পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ ঠাকুরকে তিনি গান শুনিয়ে মুগ্ধ করেন। মুগ্ধতা থেকেই অনুপম ঘটক গৌরীকেদার ভট্টাচার্যকে যোগাযোগ করিয়ে দেন হিন্দুস্থান রেকর্ডে। ১৯৩৭-এ তাঁর প্রথম রেকর্ড ‘সুরের ধারায় স্নান করাবো’। একই সঙ্গে তাঁর তিনটি নামে রেকর্ড বের হত। ‘গোলাম কাদের’ নামে ইসলামি গান, গজল, বাংলা কাওয়ালি, আর ‘সুকুমার ভট্টাচার্য’ নামে পল্লিগীতি এবং স্বনামে আধুনিক। ১৯৩৩-এ রেডিয়োতে গাইবার সুযোগ। জন্ম ১৯১৬-য় চট্টগ্রামের পরৈকোড়া গ্রামে। অপর্ণাচরণ ও বাসন্তীদেবীর জ্যেষ্ঠপুত্র গৌরীকেদার দশ বছর বয়সে কলকাতায় চলে আসেন, তাঁর গান যখন সর্বত্র সমাদৃত, তখন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দৌহিত্রীর একমাত্র কন্যা শেফালিদেবীর সঙ্গে বিবাহ। সেই বছরই, প্রণব রায়ের কথায় ও সুকৃতি সেনের সুরে তাঁর রেকর্ড ‘কতদিন, কতদিন তুমি কাছে নাই’ জনপ্রিয়তার শিখর স্পর্শ করে। ১৯৪৭-এ শিল্পী গাইলেন, ‘বল ভাই মাভৈ মাভৈ, নবযুগ ওই এল ওই’। বাংলা চলচ্চিত্রে সুর দিয়েছেন, গেয়েছেন। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকার সময়েই সন্ন্যাস নেন, নাম হয় মোহন্ত চন্দ্রশেখর গিরি। শেষ জীবনে গৃহী সন্ন্যাসী, মৃত্যু ১৯৮৩-তে। তাঁর জন্মশতবর্ষে সংস্কার ভারতীর আয়োজনে রবীন্দ্রসদনে ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধে সাড়ে ৫টায় অনুষ্ঠান। কথায় ও গানে থাকবেন বিশিষ্টজন। দেখানো হবে তথ্যচিত্র ‘তর্পণ’।

চমকপ্রদ

তিনি মনে করেন, মিমিক্রি হল নিছকই একটা শিল্প, হিউমার তৈরির চেষ্টা। তিনি মীর আফসার আলি ওরফে মীর। উপস্থিতবুদ্ধি আর উইট মিলিয়ে তিনি যে হাস্যরস উৎপাদন করেন, তা স্বাদে স্বতন্ত্র। ১৯৯৪-এ রেডিয়ো জকির কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু। এ নিয়ে তাঁর গল্পটিও চমকপ্রদ: ‘এক বৃষ্টি-বিধ্বস্ত বিকেলে ধোপার বাড়ি গিয়েছিলাম কাচা কাপড় আনতে। ‘ইকনমিক টাইমস’-এ মোড়া কাপড়চোপড় নিয়ে ফিরছি, দেখলাম দু’লাইনের একটি বিজ্ঞাপন— নতুন এফ এম স্টেশনের জন্য রেডিয়ো জকি চাই। অডিশনের শেষ দিন কালকেই। পর দিন হাজিরা, একটা ছোট্ট বক্তৃতা, ব্যস।’ বাইশ বছরে পা দিল তাঁর কর্মজীবন। এখন তিনি অনুষ্ঠান সঞ্চালক, টেলিভিশন হোস্ট, অভিনেতা এবং ‘ব্যান্ডেজ’-এর প্রধান গায়কও বটে। সংবাদপাঠক হিসেবেও তাঁকে দেখা গেছে। তাঁর জীবন নিয়ে একটি বইও বেরল— মীর এই পর্যন্ত (শতরূপা বসুরায়, সৃষ্টিসুখ)। ৬৮ রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের বাড়ি থেকে ৩৩বি শরিফ লেন, আর তার মাঝে মাঝে মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জের সবুজে ঘেরা শান্ত নির্জন অখ্যাত গ্রামের খড়ের চালের মাটির দাওয়া— এতটা পথ একচল্লিশের মীর কী ভাবে পাড়ি জমালেন, উত্তর মিলবে বইটিতে। লেখক স্বচ্ছন্দে ঘোরাফেরা করেছেন মীরের ব্যক্তিগত জীবনে। যাঁরা এখনও জীবন ও সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, এ বই তাঁদের আলোর সন্ধান দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE