Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

উডকাট আর লিনোকাট তাঁর সৃষ্টির প্রধান মাধ্যম হলেও আরও অজস্র দিকে বিচরণ ছিল তাঁর— সাদা-কালো ছবি, তেলরঙ, জলরঙ, প্যাস্টেল এমনকী পুতুলশিল্প। এক দিকে অত্যাচারে-নিপীড়নে লাঞ্ছিত, সংগ্রামে-বিদ্রোহে মুখরিত ভারতের মাটির রক্তগন্ধ-মাখা লোকায়ত; অন্য দিকে বিশ্বায়িত আধুনিকের সংমিশ্রণে সম্পূর্ণ নিজস্ব এক শিল্পভাষা গড়ে তুলেছিলেন চিত্তপ্রসাদ। পঞ্চাশের মন্বন্তর নিয়ে আঁকা তাঁর চিত্রগুচ্ছ নিষিদ্ধ করেছিল ব্রিটিশ ভারতীয় সরকার।

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০০:০৫
Share: Save:

শতবর্ষ পেরিয়ে চিত্তপ্রসাদ

উডকাট আর লিনোকাট তাঁর সৃষ্টির প্রধান মাধ্যম হলেও আরও অজস্র দিকে বিচরণ ছিল তাঁর— সাদা-কালো ছবি, তেলরঙ, জলরঙ, প্যাস্টেল এমনকী পুতুলশিল্প। এক দিকে অত্যাচারে-নিপীড়নে লাঞ্ছিত, সংগ্রামে-বিদ্রোহে মুখরিত ভারতের মাটির রক্তগন্ধ-মাখা লোকায়ত; অন্য দিকে বিশ্বায়িত আধুনিকের সংমিশ্রণে সম্পূর্ণ নিজস্ব এক শিল্পভাষা গড়ে তুলেছিলেন চিত্তপ্রসাদ। পঞ্চাশের মন্বন্তর নিয়ে আঁকা তাঁর চিত্রগুচ্ছ নিষিদ্ধ করেছিল ব্রিটিশ ভারতীয় সরকার। আইপিটিএ-র সুপ্রসিদ্ধ সেন্ট্রাল স্কোয়াড ধনী হয়েছিল তাঁর সাহচর্যে।

তাঁর ছবি চেকোস্লোভাকিয়ায়, চিনে, রাশিয়ায়, ডেনমার্কে, আমেরিকায়, জার্মানিতে আলোড়ন তুলেছে। ভারতের শিশুশ্রমিকদের নিয়ে ইউনেস্কো থেকে বেরিয়েছে তাঁর চিত্রসংকলন। শিক্ষার্থী চিত্তপ্রসাদকে শিল্পাচার্য নন্দলাল বলেছিলেন, ‘‘তোমার তো সব শেখা হয়ে গেছে। তোমাকে আর শেখাব কী!’’

এ সবই অধুনা প্রায়-বিস্মৃত ইতিহাস। এত খ্যাতি, এত স্বীকৃতি সত্ত্বেও মানুষটি শেষ পর্যন্ত স্থিত ছিলেন শুধু নিজের বিবেকের কাছেই। তাই কোথাও শিল্পীসত্তার বা মানুষের এতটুকু অসম্মান দেখলে অনায়াসে সরে এসেছেন। খুঁজে নিয়েছেন সেই নিভৃতি, যেখানে আপস-পা রাখতে লজ্জা পায়। তাই জগৎজোড়া খ্যাতি নিয়েও এই শিল্পী তাঁর নিঃসঙ্গতার অহংকার নিয়ে তাঁর নিজের দেশে ক্রমে মিশে যান অনিবার্য অবহেলার অন্ধকারে। রোগভোগ আর দারিদ্র হয় নিত্যসঙ্গী।

আজ শতবর্ষের তাড়নায় এই শিল্পপ্রতিভাকে স্মরণ করে অনেক পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবার সুযোগ এসেছে। ৬-১৯ জুন কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের তিনতলায় বই-চিত্র সভাঘরে দেখা যাবে চিত্তপ্রসাদ-এর (১৯১৫-১৯৭৮) শতবার্ষিকী স্মরণে এক প্রদর্শনী। যৌথ আয়োজনে চিত্তপ্রসাদ শতবর্ষ সমিতি ও সি গুহ মেমোরিয়াল গ্যালারি। থাকছে মূল চিত্রও। প্রকাশিত হচ্ছে সযত্নমুদ্রিত একটি অ্যালবাম। ৬ জুন বিকেল ৫টায় প্রদর্শনী (সোমবার বাদে রোজ ২-৮টা) উদ্বোধন করবেন হিরণ মিত্র। সঙ্গে মানস চট্টোপাধ্যায়ের তোলা শিল্পীর আলোকচিত্র ও দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের রেখাচিত্র।

সাহানা দেবী

‘তোমাকে দেখবার এবং তোমার গান শোনবার জন্যে ঔৎসুক্য প্রায় মনে জাগে— কিন্তু... পণ্ডিচেরীতে যাবার প্রস্তাব করলে আত্মীয়স্বজনেরা উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠে...’, ১৩৪৩ বঙ্গাব্দের বর্ষায় সাহানা দেবীকে চিঠি লিখছেন রবীন্দ্রনাথ।

কবির স্নেহধন্য সাহানা ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশের ভাগ্নী। রবীন্দ্রগানের এই অতুলনীয় শিল্পী নিভৃত সাধনপথেরও মার্গী, ১৯২৮-এ ঠাঁই নেন শ্রীঅরবিন্দের আশ্রমে, লিখেছেন ‘যখন এলাম তখন দেখি মন হয়ে গেছে শান্ত, ভাবনা মুক্ত, ভয় শূন্য, হয়ে উঠেছে গ্রহণোন্মুখ।’ শ্রীঅরবিন্দ-শ্রীমাকে ঘিরে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর নির্বাচিত রচনাসংগ্রহ (সাগ্নিক বুকস), সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের সম্পাদনায়। পরিশিষ্টে রবীন্দ্রনাথ-সহ অনেকের সঙ্গে পত্র-বিনিময় এবং দুষ্প্রাপ্য প্রবন্ধ ‘সমাজ ও সংস্কার’। সঙ্গে তাঁকে নিয়ে সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতি।

নীলিমা

প্রাচ্য-র নতুন প্রযোজনায় জবরদস্ত আকর্ষণ এ বার নানাবিধ। তাতে আলো আর শব্দের সৃজন-প্রয়োগের ‘ডিজাইনার’ ব্রাত্য বসু। নাট্যকার-নির্দেশক-অভিনেতা ব্রাত্যর এই প্রথম অন্য ধরনের মঞ্চকাজ।

আর নায়কের ভূমিকায় গৌতম হালদার, সঙ্গের ছবিতে মহড়ায় দেখা যাচ্ছে তাঁকে। অ্যাবসার্ড নাটকের রচয়িতা ইউজিন ইওনেস্কো-র দ্য লেসন, উদয়ন ঘোষের রূপান্তরে ‘নীলিমা’— নাটকটির নাম। জন্মলগ্ন থেকেই তো দেশ-কাল-সমাজের তাৎপর্যময় প্রসঙ্গাদি একের পর এক প্রযোজনায় উত্থাপন করে চলেছে এই নাট্যগোষ্ঠী, এতেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি, জানালেন নির্দেশক বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘শিক্ষা কী ভাবে সুগভীর জ্ঞান বা প্রজ্ঞার পরিবর্তে আজ তোতাপাখি করে তুলছে তরতাজা তরুণ-তরুণীকে, তারই আধুনিক বয়ান এর ব্ল্যাক হিউমার-এ।’ প্রথম অভিনয় জ্ঞান মঞ্চে ১১ জুন সন্ধে সাড়ে ৬টায়। ওই সন্ধ্যাতেই প্রাচ্য-র ওয়েবসাইট উদ্বোধন করবেন অশোক মুখোপাধ্যায়।

ওদের পাশে

কারও বাবার কারখানা বন্ধ। মা পরিচারিকা। কারও আবার সংসারে রোজগেরে বলতে কেউ-ই নেই, বাবা শয্যাশায়ী। কলকাতার বিভিন্ন বস্তির এমন ছেলেমেয়েরাই ১২ জুন বিকেলে রবীন্দ্রসদনে ‘রং বেরঙের’ নৃত্যানুষ্ঠানে মেতে উঠবে। সারা বছর ওদের প্রশিক্ষণ দেন ‘মুদ্রা’ সাংস্কৃতিক সংস্থার পক্ষে অসিত ভট্টাচার্য, মহুয়া চক্রবর্তী, অদ্রিজা ভট্টাচার্য, মৌসুমী ভট্টাচার্যরা। সে দিন মুদ্রার ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান। কী কী কারণে এক জন জঙ্গি হয়ে ওঠে এবং কী ভাবে তাদের পথ দেখিয়ে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়ে মঞ্চস্থ হবে ‘সালাম ইন্ডিয়া’ নামে আবৃত্তি, গান আর নৃত্যের একটি কোলাজ।

শ্রুতিনাটক

স্মরণীয় নাট্যব্যক্তিত্ব বিকাশ রায়ের হাত ধরে ও জগন্নাথ এবং ঊর্মিমালা বসুর লাগাতার প্রয়াসে যে শিল্পমাধ্যমটি বাঙালি শ্রোতাকে নাড়িয়ে দিয়েছে, তা হল শ্রুতিনাটক। মধুসংলাপী বিধায়ক ভট্টাচার্যের কন্যা বনানী মুখোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই শ্রুতিনাটকে মুগ্ধ করে চলেছেন অজস্র শ্রোতাকে। ৭ জুন বাংলা আকাদেমিতে বাচিকশিল্পী অনিন্দিতা বসু ও শুভাশিস ঘোষঠাকুরের উদ্যোগে সমস্বরের নিবেদন, বিধায়ক ভট্টাচার্য বিরচিত ‘তাহার নামটি রঞ্জনা’-য় নামভূমিকায় অভিনয় করবেন বনানী, সঙ্গে জগন্নাথ বসু। উপস্থিত থাকবেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ও কাজল শূর।

শতবর্ষ

মধ্য হাওড়ার কাসুন্দিয়া অঞ্চলে কয়েকজন যুবক ১৯১৬ সালে স্থাপন করলেন ‘রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ আশ্রম, হাওড়া’। শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ শিষ্য ও রামকৃষ্ণ সংঘের দ্বিতীয় অধ্যক্ষ স্বামী শিবানন্দজি তাঁদের আশীর্বাদ করলেন, ‘তোমরা স্বামীজির আদর্শে মানুষ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করো।’

গত একশো বছর ধরে এই আশ্রম নিষ্ঠার সঙ্গে সেই কাজটি করে আসছে। টানা পঞ্চাশ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ওই নিবেদিতপ্রাণ যুবকদেরই একজন— মৃগেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। বীজাকারে যার শুরু সেই প্রতিষ্ঠান এখন পরিচালনা করে বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন। এর প্রখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে আছেন শঙ্করীপ্রসাদ বসু, মণিশংকর মুখোপাধ্যায়, নিমাইসাধন বসু প্রমুখ। এ ছাড়াও অনাথ ভাণ্ডার, দাতব্য চিকিৎসালয়, গ্রন্থাগার, পুস্তকপ্রকাশ, অবৈতনিক নৈশ বিদ্যালয়, ব্যায়ামাগার, শিশু উদ্যান পরিচালনাও এই আশ্রমের কাজের পরিসর ও অঙ্গ। আশ্রমের শতবর্ষ উৎসব উদযাপিত হবে ১১-১৯ জুন। সঙ্গে আশ্রমের ছবি।

সূচনা-সন্দেশ

‘সন্দেশ বার হল। এতদিন তোমরা সন্দেশের আশায় আশায় দিন গুনেছ। এবার... তোমাদের কেমন লাগল না জানা পর্যন্ত আমরা খুব অস্বস্তিতে থাকব।’ ১৯৬১ সালের মে মাসে সত্যজিৎ রায় ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় তৃতীয় পর্যায়ে প্রকাশ পেল ‘সন্দেশ’ পত্রিকা।

৫৫ বছর ছুঁয়ে সে যাত্রা অব্যাহত আছে আজও। উপেন্দ্রকিশোর-সুকুমার-সুবিনয়ের ধারাবাহিকতায় সেই সূচনাপর্ব এক উজ্জ্বল ইতিহাস। নতুন-পুরনো লেখক আর শিল্পীসমাবেশে একেবারে চাঁদের হাট। সত্যজিৎ রায় হাত দিলেন ছোটদের জন্য লেখায়। দুর্লভ সেই প্রথম বছরের পুরো সন্দেশ এ বার সন্দীপ রায়ের সম্পাদনায় ফ্যাকসিমিলি সংস্করণে প্রকাশ পেল, আছে সমস্ত লেখা ও ছবি (নিউ স্ক্রিপ্ট)। সঙ্গে প্রচ্ছদ।

শিল্পের তিন মাত্রা

হেরিটেজ ওয়াক আওড়ানো বাংলা ছবির প্রেমিক ট্যুর গাইড নয়। বরং উনিশ শতকের সফরনামায় কী ভাবে ধরা পড়ত কলকাতা তার পোস্টকার্ড, গাইডবই, স্মৃতিকথা, ছবি ও হরেক অনুষঙ্গ নিয়ে? এ নিয়েই সুজন মুখোপাধ্যায়ের শিল্প-প্রকল্প। তার সঙ্গে থাকছে নীতিশাস্ত্র, যৌনশিক্ষা সব মিলিয়েমিশিয়ে বিশ্বজ্যোতি ঘোষের শিল্পকলা। আফরা শফিকের ছোট ফিল্ম দেখাবে ইতিহাসে লেখাপড়ার সঙ্গে মেয়েদের সম্পর্ক। স্ত্রীধর্মে মেয়েদের শিক্ষণীয় বস্তু তো শুধুই রান্নাবান্না, সেলাইফোঁড়াই, উদ্যান রক্ষণাবেক্ষণ। শরীরের ওপর অধিকারও নেই। তিনটি শিল্প প্রদর্শনীই ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন ফর আর্টস ও কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেস-এর যৌথ উদ্যোগে। শুরু হচ্ছে ১০ জুন লেক টেরেসের যদুনাথ ভবনে বিকেল ৪টা থেকে। চলবে ১৮ অবধি। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকারের স্মৃতিজড়িত বাড়িতে সেন্টারের সংগ্রহের তথ্য ও ছবির ওপর ভিত্তি করে শিল্প প্রদর্শনী এই প্রথম।

আরব্য রজনী

হঠাৎ দেখলে মনে হবে মুঘল মিনিয়েচার। এমনকী ছবির সঙ্গে আছে ফার্সি ক্যালিগ্রাফির ধাঁচে লেখাও। কিন্তু একটু ঠাহর করলেই ভুল ভাঙে।

ছবির চরিত্রগুলির আপাত চেহারায় বাদশাহি ঢঙের সঙ্গে মিশে আছে আটপৌরে রূপও, ফার্সির ছাঁদে আসলে লেখা বাংলা। আছে কার টেগোর কোম্পানির সাইনবোর্ড, আছে রুটিবিক্রেতাও। শহর কলকাতাকে আরব্য রজনীর জগতে নিয়ে গিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ? ১৯৩০ নাগাদ আঁকা তাঁর এই আশ্চর্য ‘আরব্য রজনী’ চিত্রমালা নিয়ে ৬ জুন সাড়ে ৫টায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বলবেন শিল্প-ইতিহাসবিদ দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে তারই একটি।

পরিবেশ রক্ষা

‘পরিবেশের দূষণ বা তার বিপন্নতা নিয়ে তো দীর্ঘকাল আলোচনা থেকে আন্দোলন করা হচ্ছে সবই। তবে তার পাশাপাশি পরিবেশ নিয়ে সংরক্ষণটাও জরুরি কাজ বলে মনে করছি আমরা। আর তা হবে বিভিন্ন পন্থায়, বিভিন্ন মাধ্যমে। সে ভাবনা থেকেই এ বার আমাদের বহুস্তরীয় উদ্যোগ।’ বলছিলেন নাগরিক মঞ্চ-এর কর্ণধার নব দত্ত। সম্মিলিত আয়োজনে আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ চর্চা চলবে নানা মাধ্যমে। ৭ জুন বিকেল ৩টেয় সূচনা, রাসবিহারী অ্যাভিনিউর শরৎ স্মৃতি সদনে। ভূস্তর জল ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রদীপ শিকদারের বই প্রকাশ, আলোচনা, সঙ্গে পামেলা মুখোপাধ্যায় পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘প্রবাহ’। ৮ জুন দুপুর ২টোয় হ্যান্ডমেড পেপার তৈরির কর্মশালা, অনুপম চক্রবর্তীর পরিচালনায়। সঙ্গে আলোচনা: ‘পরিবেশের রাজনীতি: উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের বিবাদ’। দুদিন ধরেই চিত্রকলা, আলোকচিত্র, বইয়ের প্রদর্শনী; গান ও নাটক।

সারাদিন

একই দিনে তিনটে নাটকে তিন রকমের চরিত্র, এত আলাদা আলাদা অভিনয়, দর্শকের কাছে যতটা বৈচিত্রের ততটাই চ্যালেঞ্জিং পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। সুমন্ত রায়ের ‘আগুনপাখি’তে মেজ বউ: ‘অসম্ভব আইডেনটিফাই করি। অনমনীয় দৃঢ়তা, প্রগাঢ় ভালবাসা নিজের মানুষজন-ভিটেমাটির প্রতি।

রুখে দাঁড়িয়ে বলে— কেন দেশান্তরী হব?’ পৌলমী বলতে থাকেন ‘সুপারি কিলার’ নিয়েও, ‘মৃত্যু ও জীবনের কথোপকথন যেন মহিলার বেঁচে-থাকাকে ঘিরে। বিপ্লবের (বন্দ্যোপাধ্যায়) চমৎকার মঞ্চায়নে ফিজিক্যাল অ্যাক্টিং, নাচ ইত্যাদির ওপর দাঁড়িয়ে চরিত্রটা, ভীষণ ভালো লাগে করতে, পাশে মঞ্চবন্ধু হিসেবে সুপ্রিয় দত্তের মতো অনবদ্য অভিনেতা।’ আর ‘ফেরা’র চরিত্রটির নির্দেশক তো তিনি নিজেই। ১১ জুন অ্যাকাডেমিতে সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় অভিনয় তিনটি ‘সারাদিন পৌলমী’ শিরোনামে, মুখোমুখি-র উনিশ পেরিয়ে কুড়িতে পা নাট্যোৎসবে। ১০ জুন উদ্বোধন করবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ১৫ অবধি চলবে অ্যাকাডেমি গিরিশ মঞ্চ মিনার্ভা ও তপন থিয়েটারে। ‘কাজ করার সুযোগ করে দেন মুখোমুখি-র কর্ণধার বিলু দত্ত, কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে, সঙ্গে দলের ছেলেমেয়েদের ভালবাসাও প্রেরণা জোগায়।’ স্বীকারোক্তি সৌমিত্র-কন্যার, শ্রদ্ধা জানালেন বাবা-সহ বাকি শিক্ষাগুরুদের। নিজের নাচের স্কুল আনর্ত চালনার পাশে নির্দেশনার জন্যে নতুন নাটকও পড়ছেন পৌলমী, ‘পরিচালনার কাজে দারুণ মজা পাই!’

পথিকৃৎ

মহাম্মদি আখবার’ থেকে ‘নবনূর’, ‘মোহম্মদী’ হয়ে ‘সওগাত’ বা ‘বেগম’-এর মতো কলকাতার মুসলিম পরিচালিত এবং সম্পাদিত পত্রিকা ও প্রকাশনার ধারাবাহিকতা স্তব্ধ হয় দেশভাগের পরে। শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত মুসলমানেরা পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় মুসলমান সমাজে বৌদ্ধিক চর্চার পরিসরে তৈরি হয় গভীর শূন্যতা।

১৯৬৫-তে হরফ প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠা সে দিক থেকে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আযীয আল আমান (সঙ্গের ছবি) মনে করতেন, নিজ নিজ ধর্ম এবং অন্যের ধর্ম বিষয়ে জানলে বিদ্বেষ ও হানাহানি অনেকটাই ঘুচে যাবে। সেই বিশ্বাস থেকেই তিনি হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ সমূহের প্রামাণিক অনুবাদ প্রকাশ করেছেন নিয়মিত। বেদ ও উপনিষদের জনপ্রিয় অনুবাদ ছাড়াও হরফ প্রকাশ করেছে গীতা, ভাগবত, ধম্মপদ, কোরান, হাদিস ইত্যাদির বাংলা অনুবাদ। হরফই নতুন করে প্রকাশ করে গিরিশচন্দ্র সেন অনূদিত প্রথম বাংলা কোরান। নজরুল ছাড়াও রামমোহন, মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, দীনবন্ধুর রচনাবলি প্রকাশ করেছে হরফ। গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল আযীয ১৯৬৪-র দাঙ্গার সময় বাধ্য হয়েই ঢাকায় চলে যান। ফিরে এসে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে গড়ে তোলেন হরফ প্রকাশনী এবং ছাপাখানা। কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক আবদুল আযীয প্রকাশ করেছেন তাঁরই সম্পাদিত দুটি সাময়িকপত্র— ‘কাফেলা’ এবং ‘নতুন গতি’। ১৯৯৪ সালে তাঁর অকাল প্রয়াণ ছিল হরফের পক্ষে বড় ধাক্কা। তাঁর পুত্র মুনীর বিন আবদুল আযীয এখন দায়িত্বে। পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে এল হরফ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE