Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আড্ডাপ্রিয় বাঙালির অজানা গল্প

তারাশঙ্কর-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সত্যজিৎ রায়-উত্তমকুমার। জহর রায়-ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে কমলকুমার-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। বাঙালি আড্ডার গল্প পাড়লেন অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায় মৃণাল সেন তখন সিনেমায় আসেননি। চুটিয়ে পড়াশোনা করছেন। সঙ্গে ভরপুর রাজনীতি আর মারকাটারি আড্ডা। যার মূল ঠেকটা ১১৩/২ হাজরা রোডের ধারে ‘প্যারাডাইস ক্যাফে’। বাজারে সবে এক ধরনের ঠান্ডা পানীয় এসেছে। কিন্তু মৃণালবাবু আর তাঁর সঙ্গীদের ধারণা, সেই পানীয় খাওয়ার অর্থ, ‘আমেরিকানাইজড্’ হয়ে যাওয়া।

ছবি: কল্যাণ চক্রবর্তী, সমর দাস, আনন্দবাজার আর্কাইভ

ছবি: কল্যাণ চক্রবর্তী, সমর দাস, আনন্দবাজার আর্কাইভ

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

মৃণাল সেন তখন সিনেমায় আসেননি। চুটিয়ে পড়াশোনা করছেন। সঙ্গে ভরপুর রাজনীতি আর মারকাটারি আড্ডা। যার মূল ঠেকটা ১১৩/২ হাজরা রোডের ধারে ‘প্যারাডাইস ক্যাফে’।

বাজারে সবে এক ধরনের ঠান্ডা পানীয় এসেছে। কিন্তু মৃণালবাবু আর তাঁর সঙ্গীদের ধারণা, সেই পানীয় খাওয়ার অর্থ, ‘আমেরিকানাইজড্’ হয়ে যাওয়া।

অগত্যা বর্জন।

এক দিন মৃণালবাবু একটা কাগজ হাতে নিয়ে ঢুকলেন আড্ডায়। কাগজটিতে একটি কবিতার অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। পাবলো নেরুদার।

সিগারেটে সংক্ষিপ্ত একটা টান দিয়ে ‘ফিউরিটি’ নামে সেই কবিতাটি বন্ধুদের পড়ে শোনাতে শুরু করলেন মৃণালবাবু।

আচমকা হোঁচট।

সেই ‘আমেরিকানাইজড্’ পানীয়টি নেরুদাও খেয়েছেন বলে কবিতায় জানিয়েছেন।

ধুস! তা হলে সেই পানীয়টি খেতে আর বাধা কোথায়!

তরুণ-হেমন্ত বৈঠক

তখনকার বাজারে সদ্য ঢোকা সেই ঠান্ডা পানীয়টি কিছু দিন বাজার থেকে বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার পরে আজও দিব্যি চলে।

এই আড্ডার আসরের কাছেই রয়েছে একটি পান-বিড়ির দোকান। সেখান থেকেই না কি বিড়ি কিনতেন আরও এক বিখ্যাত পরিচালক। আর তা করতে গিয়ে সেই দোকানে বিড়ির ধার হয় প্রায় ৮০ টাকা! ধারের অঙ্কটি আজকে বসে ধরতে পারা মুশকিল, কিন্তু আন্দাজ দিতে একটা হিসেব দেওয়া যায়।

মৃণালবাবু যে সময়ের কথা বলেছেন, সেই সময় ১০ পয়সায় মিলত ২৫ বান্ডিল বিড়ি। ৮০ টাকা ধার করা সেই পরিচালকটি আর কেউ নন, স্বয়ং ঋত্বিক কুমার ঘটক।

দেশবন্ধু পার্কের একটি চায়ের দোকান। সেখানে এক সময় নিয়মিত আড্ডা দিতে বসতেন তরুণ মজুমদার।

এক দিনের কথা। সে দিন কোথাও যেন আড্ডার তাল কাটছে। কারণ আড্ডার এক স্যাঙাতের আসতে বড় দেরি হচ্ছে। মোবাইল তখন দূর-অস্ত। অগত্যা লা-পাতা বন্ধুটির জন্য হা-পিত্যেশ করে বসে থাকা ছাড়া উপায় কি!

খানিক বাদে মূর্তিমান দেখা দিলেন।

‘‘কী ব্যাপার হে, এত দেরি?’’ খানিক চুপ সক্কলে।

যুবক-বন্ধু বললেন, ‘‘আর বলিস না, একটা সিনেমা দেখতে গিয়ে দেরি হয়ে গিয়েছে।’’

কী এমন সিনেমা, যার জন্য আড্ডায় আসতে দেরি হয়! ফলে সে দিনের আড্ডা জুড়ে বসল সেই সিনেমার গপ্পো।

আর তাতে সবাই এতটাই মজে গেলেন, ঠিক হল শুভস্য শীঘ্রম। ঠেক থেকেই সদলবল সিনেমা দেখতে ছুটলেন তরুণবাবু ও তাঁর বন্ধুরা।

ছবি দেখে তো সকলেই স্তম্ভিত। কিন্তু তার পরেও সবারই মনে হল, বাংলাতে এ সিনেমা তেমন চলবে না! কিন্তু সিনেমাটি ‘না চললে’ বাঙালির যে বড় ক্ষতি!

তাই ঠিক হল, শোভাযাত্রা বের করা হবে, সিনেমার সমর্থনে!

তার জন্যও ‘আড্ডা’ চাই। তবে সেদিনের আড্ডার ছবিটা অন্য রকম। রাতভর। কথায় কথায় সিনেমার গল্প তো চললই, সমান তালে তৈরি হতে থাকল প্ল্যাকার্ড।

পরের দিন সকালে শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা খানিক দূর যেতেই এ কী! ওরা কারা? কারা যেন পাশের গলিপথ দিয়ে এগিয়ে এল সিনেমাটির সমর্থনে।

শোভাযাত্রা চলছে। তাতে যোগ দিচ্ছেন আরও কত... কত...জন!

অনেকের হাতেই পোস্টার, প্ল্যাকার্ড— ‘পথের পাঁচালী দেখুন’, ‘পথের পাঁচালী দেখা আমাদের কর্তব্য’।

রবি ঘোষের বাড়িতে এক সময় নিয়ম করে আড্ডা দিতে যেতেন সদ্য যুবতী শর্মিলা ঠাকুর। শর্মিলার অভিনয়-জীবনের এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটে ওই আড্ডার সূত্রেই।

রবি ঘোষ এক জায়গায় তার বর্ণনা দিচ্ছেন এ ভাবে— ‘‘সর্বস্তরের লোকই আসত আড্ডা দিতে— শুধু অরসিকরা ছাড়া। স্বভাবতই অভিনয় ইত্যাদি নিয়েই আলোচনা হত। সেখানে অনবরতই কমলদার (কমলকুমার মজুমদার), রেফারেন্স আসত।

এক দিন রিঙ্কু (শর্মিলা ঠাকুর) বলল, সে অভিনয় শিখতে চায়। আমি বা আমরা খুব আড্ডা দিতে পারি, কিন্তু অভিনয় শেখাবার ক্ষমতা কোথায় আমাদের!

নিয়ে গেলাম রিঙ্কুকে সোজা কমলদার কাছে। গোড়ায় কমলদা একটু গররাজি হলেও অবশেষে আমাদের বি‌শেষ অনুরোধে রাজি হলেন। শুরু হল রিঙ্কুর অনুশীলন— ‘আলমগীর’-এ উদিপুরির ভূমিকায়। প্রতিদিন রিহার্সাল শুরু হত বেলা তিনটে নাগাদ, এবং শেষ হত রাত আটটায় রিহার্সাল হত শুধু হাঁটার!

সম্রা়জ্ঞী কী ভাবে হাঁটবেন, এটা দেখাতে গিয়ে কমলদা সব ধরনের নারী জাতির হাঁটার অনুশীলন করাতে শুরু করলেন রিঙ্কুকে দিয়ে। ...কমলদা অবশ্য একদিন বলেছিলেন, ‘নাঃ, মেয়েটার নিষ্ঠা আছে।’ সে নাটকটি মঞ্চস্থ হল না, কিন্তু রিঙ্কুর লাভ হল অনেক।’’

বাঙালির আড্ডা এমনই। কী নেই তাতে। সাধে কী, রবীন্দ্রনাথ বাঙালির আরেক নাম দিয়েছিলেন ‘গল্পপোষ্য জীব’?

আড্ডায় গল্পের মৌতাত জমে ওঠে। আর সেই মৌতাতের নেশা কী ভয়ঙ্কর রকমের, একবার তার একটি মারাত্মক নমুনা পেয়েছিলেন বলিউডি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র।

তখন সাহিত্যিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বসতভিটে ‘লালবাড়ি’-র আড্ডা রীতিমতো বিখ্যাত। প্রায়ই এসে পড়তেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে গান-জগতের মহাতারকাদের কেউ না কেউ। তখন অবশ্য বসত গান-আড্ডা।

বহু কাল পর্যন্ত রবিবার-এ কিন্তু গান নয়, তাস-আড্ডা ছিল ও বাড়ির রেওয়াজ। ঠায় বসে তাস-এ জমত ‘কনট্র্যাক্ট ব্রিজ’ আর মুখে মুখে গল্প আর গল্প। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বিকেলবেলায়।

সে রকমই এক রবিবারের বিকেল।

পরের চাল কী হবে, তা নিয়ে চিন্তায় সক্কলে। সঙ্গে চলছে এটা-সেটা খাওয়া-দাওয়া।

এমন সময় বাড়ির ফোনটা বেজে উঠল। ওপারে ধর্মেন্দ্র। কলকাতায় এসেছেন তিনি। আশুতোষকে তিনি বললেন, ‘‘আপনার একটা গল্প নিয়ে সিনেমা করার কথা ভাবছি। এক্ষুনি চলে আসুন। আমি অপেক্ষা করছি।’’

বাড়ির মেঝেতে তখন গুছিয়ে শতরঞ্চি বিছিয়ে জোর তাস-আড্ডা জমে উঠেছে। ফোনের কথা বুঝতে পেরে আড্ডায় ‘দ’ পড়ল। বন্ধুদের মুখ পানশে।— ‘‘আশুবাবু তা হলে কী চলে যাবেন?’’

ধর্মেন্দ্রর ডাক বলে কথা!

কিন্তু তা’হলে ও দিনের মতো আড্ডার গোটা আনন্দর অর্ধেকটাই তো মাটি। একটু পরে সকলকে ‘হাঁ’ করে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বিনীত ভাবে ধর্মেন্দ্রকে জানিয়ে দিলেন, ‘‘আজ রবিবার। আমার বন্ধুদের সঙ্গে এই একটা দিনই আড্ডা দিই। ফলে আজ যেতে পারছি না!’’

আশুবাবুর যেমন রবিবারের বিকেল, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে তেমন রবিবার সকাল।

রবিবার, বেলা ১১টা। মধ্যমণি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সামনের টেবিলে লাল-চা। হাতে সিগারেট।

চারপাশে ভিড় করে রয়েছেন নবীন কবির দল। তেড়ে আড্ডা চলছে।

হঠাৎ কলেজ-পড়ুয়া দুই সুন্দরীর আবির্ভাব। খুবই সঙ্কুচিত তাঁদের হাবভাব। কী ব্যাপার? সামনের মাসে ওঁদের কলেজে কোনও এক কনভোকেশন, সেখানে ওঁরা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে যাবেন।

ডায়েরি দেখে খালি আছেন কিনা বুঝে নিয়ে সুনীল সায় দিলেন।

‘‘ঠিক আছে, যাব।’’

দুটি মেয়ে এতক্ষণে বোধ হয় খানিক স্বস্তি পেয়ে হাসিমুখে বিদায় নিতে গিয়েও থেমে গেলেন। সুনীলের দিকে চেয়ে ওঁদের একজন বললেন, ‘‘আপনাকে কিন্তু গাড়িতে আমরাই নিতে আসব, ফেরতও আমরাই দিয়ে যাব।’’

উত্তর দিতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপ করলেন না স্বভাবরসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘ফেরত না দিলেও চলবে।’’

এ বার এক্সপ্রেস-গতিতে প্রস্থান লজ্জারাঙা দুই সুন্দরীর! এর পর ‘নীললোহিত’-এর আড্ডা-ঘরের অবস্থাটি সহজেই অনুমেয়।

বাঙালির আড্ডায় অদ্ভুত ভাবে জড়িয়ে থেকেছেন ভিনরাজ্যের মানুষেরাও। তেমনই এক জন ‘মহেন্দ্রদা’। শ্যামপুকুর থানার পাশে তাঁর চায়ের দোকান। জন্মসূত্রে বিহারি। সেই চায়ের দোকানেই মহলার ফাঁকে খানিক রসদ খুঁজে নেন ‘নান্দীকার’-এর অভিনেতারা। তেমনই একদিন। বেশ কয়েক জন নাট্যকর্মী মহলার পোশাক পরেই ভিড় জমিয়েছেন সেখানে। নাটকেরই চর্চা চলছে। একটি দৃশ্য। কেমন হবে? ছেলের দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে থাকবেন বাবা। তা সেই ‘চোখের চাওয়া’ কেমন হওয়া উচিত, সে নিয়ে একে অন্যকে মতামত জানাচ্ছেন অভিনেতারা। হঠাৎ কেটলি থেকে কাপে চা ঢালতে ঢালতে সেই বিহারি ‘মহেন্দ্রদা’র পরামর্শ, ‘‘ওই সময়ে আমি হলে ঠাটিয়ে থাপ্পড় মারতাম।’’

মহেন্দ্রদার এমন মোক্ষম ‘উপদেশ’ কী যে মনোরম ছিল!

‘নান্দীকার’-এর আড্ডার কথা বললে নাটক-অন্ত প্রাণ যে মানুষটির কথা অনিবার্য ভাবে উঠে আসে, তিনি অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।

৪৭/১ শ্যামবজার স্ট্রিট। দলের ঘর। আড্ডার আসর বসেছে সেখানেই। রয়েছেন নাট্যকর্মী, অধ্যাপক পবিত্র সরকার এবং আরও অনেকে।

দরজাটা ঠেলে ঢুকলেন অজিতেশ। ‘‘কী খবর সব?’’ এটা-সেটা কথার পরে স্বভাবসিদ্ধ উঁচু গলায় অজিতেশ একটা গল্প পাড়লেন।

এক জমিদারের ছেলে সে বার এমএ পরীক্ষা দেবেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তা তাঁর প্রস্তুতিতে যাতে কোনও খামতি না থাকে, সে জন্য জমিদার মহাশয় রীতিমতো ঘরভাড়া করে পরিচারক-পরিচারিকা রেখেছেন।

দেখতে দেখতে এমএ পরীক্ষার দিন চলে এল! নায়েব মশাই পরীক্ষা হলের বাইরে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছেন!

জমিদারপুত্র খাতা খুললেন। পেনের নিপ খাতায় ছোঁয়াতেই নায়েব কাদের দিকে যেন ইশারা করলেন! মুহূর্তের মধ্যে বেজে উঠল বিভিন্ন বাজনা, ব্যান্ড পার্টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, উপাচার্য সব হুড়মুড়িয়ে চলে এলেন। ততক্ষণে অবশ্য ব্যান্ড পার্টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজনা শুনিয়ে কলেজ স্কোয়ার পরিক্রমা শুরু করে দিয়েছে।

অজিতেশ অনেক দিনই এ রকম অদ্ভুতুড়ে সব গল্প বলে বলে আড্ডা জমিয়ে রাখতেন।

আড্ডাবাজ বাঙালিদের এগারো জনের দল গড়া হলে যাঁদের অনায়াসে দলপতি করে দেওয়া যায়, তাঁদের একজন অবশ্যই দাদাঠাকুর। অর্থাৎ শরৎচন্দ্র পণ্ডিত। তখন দাদাঠাকুরের জীবনী ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে ‘যুগান্তর’ পত্রিকায়।

বাইরে ঘোর বর্ষা।

দাদাঠাকুর নিজে রয়েছেন পত্রিকার অফিসে। তাঁকে ঘিরে অন্যান্যরা বসে। আড্ডাধারী এক জন প্রস্তাব দিলেন, ‘‘আজ খিচুড়ি হলে জমে যেত!’’

সঙ্গে সঙ্গে দাদাঠাকুর হঠাৎ বলে বসলেন, ‘‘খিচুড়ি শব্দটা কোত্থেকে এসেছে জানো?’’

সকলেই জানতেন, দাঠাকুরের এমন সব প্রশ্নের উত্তরে ‘টুঁ’ শব্দটি করতে নেই। বোমাটা ফাটাবেন শরৎপণ্ডিত নিজেই। যথারীতি তাই।

দাদাঠাকুর বললেন, ‘‘খিচুড়ি এসেছে খচ্চর থেকে।’’

মানে? এ কেমন কথা!

দাদাঠাকুর যুক্তি দিলেন, ‘‘ঘোড়াও নয়, গাধাও নয়, দু’য়ের মিশ্রণে খচ্চর। তেমনই চালও নয়, ডালও নয়, দু’য়ের মিশ্রণে খিচুড়ি।’’

হাসির রেশ শেষ হতে না হতেই আচমকা এক জন জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘‘আচ্ছা, আপনি খালি পায়ে চলেন কেন দাদা?’’

এ বার উত্তরে যা বললেন, তা এই রকম—

ছেলেবেলা কেটেছে কাকার অভিভাবকত্বে। কাকার শাসনে দাদাঠাকুরকে খালি পায়েই খাকতে হতো। অথচ অবাক চোখে চেয়ে দেখতেন, কাকার ছেলেরা দিব্যি জুতো পায়ে মচমচ শব্দ তুলে স্কুলে যাচ্ছে।

কাকাকে সে কথা বলতেই দাদাঠাকুরকে তিনি না কি বলেন, ‘‘পাড়ার স্যাকরার একটা পা নেই, তাই নিয়ে সব কাজ করছে। আর তোর দু’টো পা থাকতেও জুতো ছাড়া স্কুলে যেতে কষ্ট হয়!’’

কাকার মুখে এমন কথা শুনে আর কোনও দিন জুতো পায়ে দেওয়ার ইচ্ছে করেনি দাদাঠাকুরের।

মুহূর্তের মধ্যে থেমে গেল হাসির ধারা।

আড্ডা দিতে দিতেই এমন ‘বিষাদ -সিন্ধু’র ঢেউ এক এক সময় কাতর করে দিয়েছে অনেক রথীমহাথীকেও। তেমনই দুটি গল্প।

প্রথমটি বিমল মিত্রের।

জায়গাটা কালীঘাট ট্রাম ডিপোর উল্টো দিক। একটি চায়ের দোকান। সেখানে নিয়মিত আড্ডায় বসেন সাহিত্যিক বিমলবাবু।

এক দিন সকলে অপেক্ষা করছেন। বিমল মিত্র তখনও পৌঁছননি।

বেশ কিছু পরে এলেন তিনি।

তবে কী কারণে যেন তাঁর মুখ ভার-ভার! সঙ্গী বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় আর শচীন বন্দ্যোপাধ্যায়দের চোখেমুখে অবশ্য খানিক কৌতুক।

হেতুটি কী?

প্রেমেন্দ্র মিত্র সবে ‘পদ্মশ্রী’ পেয়েছেন। তাঁকে অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিলেন বিমল মিত্র এবং তাঁর দুই সঙ্গী। প্রেমেন্দ্র মিত্র রীতিমতো খাতির করে বসালেন তিন জনকে।

শুরু হল আড্ডা।

কথা প্রসঙ্গে প্রেমেন্দ্র মিত্র জানান, বিমলবাবুর ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’-এর প্রথম খণ্ড বই হিসেবে বের হবে, এ খবর তিনি বিজ্ঞাপন থেকে জেনেছেন।

পরক্ষণেই প্রেমেন্দ্র জিজ্ঞেস করেন, ‘‘বই করতে দেওয়ার আগে ভাল ভাবে এডিট করেছ তো?’’ বিমলবাবু খানিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জানান, ‘‘না, তা তো করা হয়নি।’’

কিন্তু মনের মধ্যে কোথাও যেন একটা খচখচানি।

প্রেমেন মিত্তিরের মতো লেখক বলছেন ‘এডিট’ করার কথা। তবে কি কোথাও ভুল হয়ে গিয়েছে! সে কথা জিজ্ঞেস করতেই এ বার উল্টো ফ্যাসাদ।

প্রেমেন্দ্র মিত্র জানান, ‘‘লেখাটা তাঁর এখনও পড়া হয়ে ওঠেনি।’’

তবে?

বিমলবাবুরই এক অন্ধ ভক্ত না কি ‘এডিট’ করার কথাটা বলেছেন। — আর এ কথা শুনেই বিমলবাবুর সটান জবাব, ‘‘ওটা যখন আপনার কথা নয় তখন আমি মানতে রাজি নই।’’

কিন্তু প্রেমেনবাবুর অমন কথার ‘ঝাঁঝ’ কিছুতেই যেন সহ্য করতে পারেননি বিমল মিত্র। সাততাড়াতাড়িই চলে এসেছিলেন। এ কথায় সে কথায় সঙ্গীরা তাঁকে হালকা করতে চেয়েছিলেন বারবার। লাভ হয়নি কিছুতেই। সেই দমচাপা মন নিয়ে আড্ডায় গিয়েছিলেন ঠিক। তবে সে দিন যেন কিছুতেই ‘তাল’-এ ছিলেন না ঘোর আড্ডাবাজ বিমল মিত্র।

এ বার বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

টালা পার্ক। তারাশঙ্করের বাড়ি। কলেজ স্ট্রিটে এক বিখ্যাত প্রকাশকের আড্ডার ঠেকে তারাশঙ্করকে পাকড়াও করেছেন বিভূতিভূষণ। দুপুরের খাওয়াটা তারাশঙ্করের টালা পার্কের বাড়িতেই সারবেন তিনি।

ভূরিভোজটা ভালই হল খাদ্যরসিক বিভূতিভূষণের। এ বার খানিক ‘ভাত-ঘুম’ দিতেই হয়।

কিন্তু তারাশঙ্কর শুনলে তো! তাঁর মন তো এখন আড্ডা-আড্ডা করে।

অগত্যা শুরু হল গপ্পো। এটা-সেটা কথার পরে আড্ডার মেজাজ যখন তুঙ্গে, তারাশঙ্করের কথায় হঠাৎ আচমকা বিস্ফোরণ!

দিব্যি প্রশংসাই করছিলেন। তার পর হঠাৎই বলে বসলেন, ‘‘দেখো বিভূতি, তুমি কিন্তু একটা ভুল করছ। তুমি তোমার গণ্ডি ছেড়ে বেরচ্ছ না, এখনও সেই গ্রাম আর নদী, সাঁই-বাবলাক জঙ্গল আর অরণ্য এই নিয়েই পড়ে আছ। দাঙ্গা, মন্বন্তর, অত বড় যুদ্ধের আঁচ আমাদের গায়েও তো কম লাগেনি!’’

কী বলেন তারাশঙ্কর!

মহা ধাক্কা খেলেন বিভূতিভূষণ! মুহূর্তে থমথমে হয়ে গেল আড্ডার হালকা রসের চল।

তা হলে কি এত দিন বিভূতি যা লিখেছেন, সব ভুল?

চুলোয় গেল ঘুম।

আড্ডা দূর-অস্ত।

টালা থেকে সোজা টালিগঞ্জ। চারু অ্যাভিনিউতে তখন থাকতেন কালিদাস রায়। যাঁর সাহিত্য-বিচারবোধের ওপর বিভূতিভূষণের অগাধ শ্রদ্ধা।

সব শুনে তিনি বললেন, ‘‘শোনো বিভূতিভূষণ, দেবী সরস্বতীকে তারাশঙ্কর গা-ভরা সোনার গয়না দিয়ে যতই সাজাক, তুমি দেবীর নাকছাবিতে যে হিরে বসিয়েছ, তা দেবীর সারা অঙ্গের গয়নার জৌলুসকে ছাপিয়ে চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।’’

এ কথায় এত ক্ষণ পরে যেন শান্তি পেলেন বিভূতিভূষণ।

বাঙালির আড্ডায় খানার সঙ্গে ‘পিনা’র রেওয়াজ বহুকালের।

তেমনই ‘পিনা’ পার্টি ঘিরে মহানায়ক উত্তমকুমারের অনেক গল্পই বেশ মিষ্টিমধুর।

এক রাত-পার্টি।

মহনায়কের বাড়িতেই।

হই-হুল্লোড় চলছে। সঙ্গে স্ক্রিপ্ট লেখা, সিনেমার খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আড্ডাও।

রাত গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কেউ খানিক মাত্রা ছাড়াচ্ছেন। সেখানেই রয়েছেন সাহিত্যিক আশুতোষবাবুর সদ্য কিশোরী-কন্যা বুলবুলও। কিন্তু পার্টির অমন চড়া সুরে একটু যেন থতমত কিশোরী। ঘুমও আসছিল তার চোখ জুড়ে।

লক্ষ করলেন স্বয়ং উত্তম।

এগিয়ে এলেন। বুলবুলের হাত ধরলেন পিতৃতুল্য উত্তম। যাওয়ার আগে উপস্থিত সকলকে লক্ষ করে বলে উঠলেন, ‘মেরা বুলবুল শো রাহা হ্যায়/শোর অউর গুল না মাচাও’।

এই গানে সকলের না হোক, এক-আধজনের হুঁশ তো ফিরল!

‘পিনা’র কথা উঠলই যখন, খালাসিটোলার গল্পে না গেলেই নয়। আর সেখানে এক বিখ্যাত সাহিত্যিকের অদ্ভুতুড়ে স্বভাব অনেককেই অবাক করে দিত প্রায়ই।

নব্য সাহিত্যিকদের আড্ডা-গোষ্ঠী। সেই গোষ্ঠীর উজ্জ্বল মুখ তরুণ বয়সের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-শক্তি চট্টোপাধ্যায়েরা। আড্ডার মূল আকর্ষণ ছিলেন ওঁদের ‘কুলগুরু’ কমলকুমার মজুমদার।

খালাসিটোলার সেই ‘বাংলা-আসরে’ গ্লাস হাতে গপ্পো জমাতেন কমলকুমার। তাঁর কথাতে তখন বাংলার বাউল, গিরিশ ঘোষ, ডোকরা শিল্প থেকে ফরাসি সাহিত্য— বাদ যেত না কিছুই। হাঁ করে গিলতেন অন্যরা। কিন্তু অদ্ভুত হল, এ হেন আড্ডা-চর্চায় কমলকুমার না কি কখনও বসে কথা বলতেন না। চেয়ার ফাঁকা থাকলেও না। এই গোটা দৃশ্যটাকে সুনীল তুলনা করেছিলেন ‘সক্রেটিসের আড্ডা’র সঙ্গে।

‘পিনা’র আড্ডায় যেমন রস আছে, তেমন আছে রসভঙ্গও।

কফি হাউস।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে আড্ডায় মশগুল শিল্পী দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। খানিক বাদে সেখানে এক বিখ্যাত অধ্যাপক ও সাহিত্যিকের প্রবেশ। শিল্পীর সঙ্গে অধ্যাপক মশায়ের আলাপ দেখে ছাত্রদল খানিক অবাক!

হলটা কী, দু’জনের এমন ভাবের কথা তো জানা ছিল না।

ছেলের দলের অবস্থা আন্দাজ করে শিল্পী তখন বলেন, ‘‘...আমরা যে এক গ্লাসের ইয়ার।’’

অধ্যাপক ভাবলেন, গেল গেল। ছাত্রদের কাছে মাথা কাটা গেল!

তিনি চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘এক্ষুনি ওদের বোঝাও, আমরা গ্লাসের না, এক কাপের ইয়ার।’’

হঠাৎ পরিবেশ উত্তপ্ত। তর্কাতর্কি। কথা কাটাকাটি। অধ্যাপক না বোঝালে ছাড়বেন না। শিল্পীও গোঁ ধরে বসে। শেষ পর্যন্ত শান্ত হল কফির পেয়ালা। তবে অবশ্যই তুফান উঠিয়েই। সাহিত্যিক মানুষটি আর কেউ নন, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়।

‘বসুশ্রী’ সিনেমা হলের আড্ডার কথা না বললে বোধহয় বাঙালি-আড্ডার নটে শাক কিছুতেই মুড়বে না।

বসুশ্রীতে ঢুকতেই বাঁ দিকের ছোট্ট একটা ঘর। সেখানেই একটা লম্বা টেবিলের ওপারে বসে সিনেমা হলের কর্ণধার মন্টু বসু। সামনে বেশ কয়েকটি হাতলওয়ালা চেয়ার।

সেখানে বসে রয়েছেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, শ্যামল মিত্র প্রমুখ। হঠাৎ হলের সামনে থামল একটা ফিয়েট গাড়ি।

নেমে এলেন ধবধবে ধুতি-পাঞ্জাবি পরা উত্তমকুমার। হাতে কিং সাইজ সিগারেট। ঘরে ঢুকেই দেখেন, ভানুবাবু সবে একটা বিড়িতে সুখটান দিচ্ছেন।

উত্তম বলেন, ‘‘ভানুদা, বিড়ি কেন খাও! খেলে সিগারেট খাও।’ শোনামাত্র ‘ছাইড়্যা দিলুম’ বলে বিড়িটা পা দিয়ে দলে দিলেন রসরাজ।

এই আড্ডাতেই অন্য এক দিন—

আড্ডার পাত্ররা সকলেই আছেন। হঠাৎ জহর রায় উঠে পড়লেন— ‘‘বাথরুম যাব।’’

ভানু: আমিও যামু।

জহর: কেন?

ভানু: শিস দিমু! না হলে তো তর হইব না।

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন নানা কাহিনি এক সময়ের আড্ডায় ছিল ভীষণ ‘হটকেক’।

তারই একটি বলা যাক। এন্টালিতে অনুষ্ঠান। ষাটের দশক। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বভাব ছিল, যে কোনও অনুষ্ঠান রাত ১২টার মধ্যে শেষ করে বাড়ি ফেরা।

সে বার এক জন বড় গাইয়ে গান করছেন। ওদিকে স্টেজের পিছনে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। রাত ১১টা বেজে গিয়েছে। গায়ক মঞ্চ ছাড়েন না। তিনি গান করছেন, ‘বালা নাচো তো দেখি’। ভানু আর থাকতে না পেরে সোজা স্টেজে চলে এলেন। লাউড স্পিকার টেনে বললেন, ‘‘শুধু বালায় হইব না। মধুবালা লাগব।’’

এর পর আর দর্শক ছাড়ে ওঁকে!

মহা আড্ডাবাজ ছিলেন বাংলা থিয়েটার-সিনেমার আরেক রসরাজ অনুপকুমার। শুধু নির্দিষ্ট ‘ঠেক’ নয়, যেখানে সেখানে আড্ডা বসিয়ে দেওয়া যেন ছিল তাঁর ‘বাঁ হাতের খেল’। এমনকী তার জন্য গুরুগম্ভীর পরিবেশেরও তোয়াক্কা করতেন না।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ।

অস্ত্রোপচার হচ্ছে অনুপকুমারের স্ত্রী’র। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অনুপকুমার। পাশে এক বিখ্যাত পরিচালক এবং আরও কয়েক জন থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে। সেখানেই গোল-আড্ডার মধ্যমণি অনুপকুমার।

ডাক্তার ওটি’তে ঢুকতে যাবেন, এমন সময় অনুপকুমার তাঁকে পাকড়াও করলেন। বললেন, ‘‘আমি ভাগ্যবান হতে চাই।’’

ডাক্তারবাবু তো হাঁ। হকচকিয়ে বললেন, ‘‘মানে?’’

অনুপবাবু: মানে একটু যদি এ দিক, ও দিক করে দেওয়া যায়... আমি আপনাকে উপযুক্ত পারিশ্রমিকও দেব।

ডাক্তার: মানে? কী বলছেন?

অনুপবাবু: না, মানে কথায় আছে ভাগ্যবানের বউ মরে। আমার ভাগ্যবান হওয়া এখন আপনার হাতে..!’

এ কথা শুনে কেউ গুম মেরে থাকতে পারে? পরিবেশ যাই-ই হোক!

কথার পিঠে কথা দিয়ে ‘কাবু’ করাও আড্ডার এক মস্ত আর্ট। বাঙালি আড্ডায় তেমন গল্পও নেহাত কম নয়।

ছোট্ট একটা নমুনা দেওয়া যাক—

প্রথম জন: আচ্ছা, আপনি শান্তিনিকেতনে কদ্দিন ছিলেন?

দ্বিতীয় জন: উনিশ বছর..

প্রথম জন: গান শিখেছেন?

দ্বিতীয় জন: না, ওই গানটাই শেখা হয়নি।

প্রথম জন: সেকি! উনিশ বছর ছিলেন অথচ গান শেখেননি?

দ্বিতীয় জন: আপনার বাড়ি কোথায়?

প্রথম জন: দমদমে। তিন পুরুষের বাস।

দ্বিতীয় জন: তা আপনি এরোপ্লেন চালাতে পারেন?

দ্বিতীয় জনের নাম প্রমথনাথ বিশী। প্রথম জন তাঁর জনৈক বন্ধু।

আড্ডার আসরে এমন কথার পিঠে কথা সাজাতে রাজশেখর বসুরও জুড়ি মেলা ভার।

অথচ এই রাজশেখরই কিনা অভিধানে আড্ডার মানে লিখতে গিয়ে লিখেছিলেন, ‘কু-লোকের মিলন-স্থান’!

রাজশেখর বিজ্ঞান-সচেতন। সকলেই জানতেন।

এক আড্ডায় তাঁর এক বন্ধু জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘‘দাড়ি কাটা হয়ে গেলে পুরনো ব্লেডগুলো ফেলে দিই আমরা। এগুলো দিয়ে কোনও কাজ হতে পারে না?’’

বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাজশেখরবাবু গম্ভীর গলায় বললেন, ‘‘মাটিতে পুঁতে দিয়ে দেখতে পারেন, যদি গোলাপ গাছ হয়!’’

পরশুরাম ছাড়া এমন উত্তর আর কে দেবেন!

ঋণ: কলকাতার আড্ডা: (সম্পাদনা: সমরেন্দ্র দাস), ‘হীরের নাকছাবি’ ও ‘সম্পাদকের বৈঠকে’ (সাগরময় ঘোষ), আড্ডা (গোপাল হালদার), সবুজপাতার ডাক (হারীৎকৃষ্ণ দেব), প্রভিনসিয়ালাইজিং ইউরোপ (দীপেশ চক্রবর্তী), সর্বাণী মুখোপাধ্যায়, পিনাকী ঠাকুর, দেবশঙ্কর হালদার, পবিত্র সরকার, দেবজীবন বসু, শ্রীজাত, পঙ্কজ সাহা, রামকুমার মুখোপাধ্যায়, জয়ন্ত চক্রবর্তী, সুব্রত ভট্টাচার্য, দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ও রোটেনস্টাইন (অশ্রুকুমার সিকদার), বাঙালির আড্ডা (সম্পাদনা: লীনা চাকী), গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, অলকা গঙ্গোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE