Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

তুমি ধন্য ধন্য হে

আইসিসিআর-এ আশিস ভট্টাচার্যের একক। লিখছেন বারীন মজুমদারসম্প্রতি সঙ্গীতাচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের ১১৬তম জন্মদিবস পালনের জন্য আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে দক্ষিণ কলিকাতা নান্দনিকী আশিস ভট্টাচার্যের এক একক সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। শুরুতেই তাঁকে নিয়ে ‘নিরন্তর’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হল। তথ্যচিত্রের পরে ‘তুমি ধন্য ধন্য হে’ শিরোনামে দুটি পর্বে বাইশটি গান শোনালেন আশিস। পরিবেশিত গানগুলি বহুশ্রুত হলেও শিল্পীর কণ্ঠে এগুলিকে আমরা অন্য ব্যঞ্জনায় পাই।

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

সম্প্রতি সঙ্গীতাচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের ১১৬তম জন্মদিবস পালনের জন্য আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে দক্ষিণ কলিকাতা নান্দনিকী আশিস ভট্টাচার্যের এক একক সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। শুরুতেই তাঁকে নিয়ে ‘নিরন্তর’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হল। তথ্যচিত্রের পরে ‘তুমি ধন্য ধন্য হে’ শিরোনামে দুটি পর্বে বাইশটি গান শোনালেন আশিস। পরিবেশিত গানগুলি বহুশ্রুত হলেও শিল্পীর কণ্ঠে এগুলিকে আমরা অন্য ব্যঞ্জনায় পাই।

প্রথম পর্ব শুরু হয়েছিল পাখোয়াজ সঙ্গত সহ ‘তুমি ধন্য ধন্য হে’ গানটি দিয়ে। প্রথম পর্বে সাতটি গান হল পাখোয়াজ সহযোগে ও দ্বিতীয় পর্বের একটি গানে ছিল পাখোয়াজের সহযোগিতা। প্রথম পর্বের গানগুলি চৌতাল সুরফাঁকতাল ধামার প্রভৃতি তালে নিবদ্ধ ছিল। যে এগারোটি গান তিনি প্রথম পর্বে পরিবেশন করলেন তার মধ্যে ‘হৃদয়ে হৃদয় আসি’, ‘তোমা লাগি নাথ’, ‘আঁধার এল বলে’ গানগুলিতে অন্য এক আবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় পর্বেও গাইলেন আরও এগারোটি গান যেগুলি নির্বাচন ও গায়ন ক্রিয়ার জন্য পরিচ্ছন্ন পরিবেশন। প্রথম পর্বের শেষ গান ‘এ পরবাসে রবে কে’ ও দ্বিতীয় পর্বের শেষ গান ‘ওগো কাঙাল আমারে কাঙাল করেছ’— গান দুটি যথোচিত ঢিমে লয়ে, কথা ও সুরের অনুকূলে প্রতিটি স্বরগুচ্ছকে ভাবের অনুকুলে অত্যন্ত দরদ দিয়ে গেয়েছেন। এসব সত্ত্বেও এদিনে পরিবেশিত ‘কে দিল আবার আঘাত’ গানটিতে তিনি গাইলেন আবারো আঘাতো। তিনি অশুদ্ধ উচ্চারণ করেছেন এ কথা বলা যাবে না। কেননা ১৩০৫ সালে প্রকাশিত ‘বীণাবাদিনী’ পত্রিকায় এই গানটির প্রথম ছত্রটি স্বরান্ত অর্থাৎ হসন্ত বর্জন করে গাইবার যে রীতি ছিল দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃত স্বরবিতান ১১তে কিন্তু তা পাল্টে হসন্ত উচ্চারণই হয়। তাছাড়া বিগত বা বর্তমান প্রজন্ম কেউই এইভাবে উচ্চারণ করেন না কেননা একশো আঠারো বছর আগে প্রকাশিত যে স্বরলিপি সেই অনুযায়ী আমাদের কথ্য ভাষাও নয়। স্বরলিপির প্রতি তিনি যত্নশীল।

আশিসের প্রতিটি গানের আগে শুভায়ু সেন মজুমদার গানগুলির ভাব ও রাগ অনুসারে যে আলাপ পর্বটি বাজাচ্ছিলেন তা এক কথায় তুলনাহীন।

বিপ্লব মণ্ডলের পাখোয়াজ, খোল তবলা সঙ্গতও অনুষ্ঠানটিকে অন্য মর্যাদা দেয়। মন্দিরায় ছিলেন সঞ্জীব আচার্য।

দিওতিমার গান

রোটারি সদনে শুনে এলেন শিখা বসু

রোটারি সদনে সম্প্রতি প্রকাশ পেল দিওতিমা চৌধুরীর আধুনিক গানের সংকলন ‘আমি দিওতিমা’। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, চিত্রপরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়।

তারপর দিওতিমার গান। একের পর এক গান শোনালেন তিনি। সুরেলা মেলোডিয়াস কণ্ঠ। খুবই অনায়াস ও স্বচ্ছন্দ। তাঁর বিচরণও স্বাভাবিক ও আড়ম্বরহীন। গায়নে কোনও জড়তা নেই। বোঝা যায়, তাঁর সামনের পথ অনেক দূর চলে গিয়েছে। তাঁর গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল, ‘রূপকথা অভিসারে’, ‘মনে পড়ে কি দুজনে’, ‘আমার মন আমারই মতন’ প্রভৃতি। গানের কথা ও সুর সৌমেন দেবের। সঙ্গীত আয়োজকও তিনি। বাণী যেমন, সুরেও তেমনই বৈচিত্র আছে। বাড়তি উচ্চকিত নয়। মঞ্চে গানের সঙ্গে যন্ত্র হাতে তিনিও উপস্থিত ছিলেন।

দ্বিতীয় পর্বে দিওতিমার গানের সঙ্গে ছিল নাচ, ছোটদের এবং বড়দেরও। দেখেই বোঝা যায়, অনেক পরিশ্রমে আর মহলায় এঁরা প্রত্যেকে নিজেদের তৈরি করেছেন। নৃত্যবিন্যাসও নিখুঁত। এ দিনের অনুষ্ঠানে দুটি রবীন্দ্রগান শোনালেন স্বাগতা ঘোষ চন্দ্র। ‘আজি এ আনন্দ সন্ধ্যা’ ও ‘বাদল বাউল বাজায় রে’।

শ্রুতিমধুর গীতি আলেখ্য

সম্প্রতি ‘স্বরক্ষেপণ’ রোটারি সদনে তাদের বার্ষিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত করলেন সম্মেলক আবৃত্তির অনুষ্ঠান। পরে আমন্ত্রিত শিল্পীদের দ্বারা পরিবেশিত রবীন্দ্রনাথের লেখনী ও গানে একটি গীতি আলেখ্য। বাসবদত্তা মজুমদারের পরিচালনায় পরিবেশিত কবিতাগুলির মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিবিড় অনুশীলনের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে এই সব আবৃত্তির অনুষ্ঠানগুলিতে একটাই অসুবিধে, দীর্ঘক্ষণ সম্মেলক কবিতা বলায় কোনও বৈচিত্র থাকে না। চন্দ্রমৌলি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঞ্চালনা অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা যোগ করেছিল।

সুলগ্না বসুর সংকলনে রবীন্দ্রনাটকের অংশ বিশেষ ও গান নিয়ে যে সংকলন উপস্থাপিত হল, যার গ্রন্থনায় ছিলেন সুলগ্না, সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ও বাসবদত্তা মজুমদার। গানে ছিলেন সুছন্দা ঘোষ। গীতিনাট্য ‘মায়ার খেলা’, নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’ ও ‘চণ্ডালিকা’, রূপক নাট্য ‘তাসের দেশ’ ও নাটক ‘ডাকঘর’ নিয়ে এই সংকলনে পাঠ ও গান এসেছে খুবই সংক্ষিপ্ত ভাবে। নৃত্যনাট্য বা গীতিনাট্যের সংকলনে ডাকঘরের সংযোজন মনে প্রশ্ন জাগায়। যে ভাবে গ্রন্থনাটি রচিত তাতে স্বল্প পরিসরে বিষয়বস্তুর তুলনামূলক আলোচনাও সম্ভবপর ছিল না। তবে পাঠে সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ও সুলগ্না বসু খুব যত্নবান ছিলেন। বাসবদত্তা মজুমদারও তাই। গানগুলির কোনওটিরই পূর্ণাঙ্গ রূপ শোনানো হয়নি। কখনও দু’ছত্র, কখনও আংশিক এই ভাবে গানগুলি গেয়েছেন সুছন্দা। তাঁর পরিবেশনা বেশ শ্রুতিমধুর। কিন্তু আক্ষেপ থেকে যায় দু’একটি পঙক্তি গাইলে যে বিখ্যাত গানগুলি তিনি গাইলেন তার কোনও রূপই ফুটে ওঠে না।

বারীন মজুমদার

তিন দিনের লোকগান

বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর উদ্যোগে

এরা ধারাবাহিকভাবে লোকসংস্কৃতির চর্চা করে আসছে। তিনদিনের এই উৎসবের সূচনা হয় প্রায় তিনশো শিল্পীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা দিয়ে। সংস্থার কর্ণধার উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় জানালেন, ‘হারিয়ে যেতে বসা লোক-আঙ্গিকগুলোকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য।’ শুধু তাই নয়, জেলাভিত্তিক এবং প্রাদেশিক লোকসংস্কৃতিরও মেলবন্ধন ঘটেছে এই মঞ্চ থেকে। উদ্বোধন করেন পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের অধিকর্তা ওমপ্রকাশ ভারতী।

পরে পরিবেশিত হয় উত্তরবঙ্গের চণ্ডীনৃত্য, বৈরাতি নৃত্য, ভাওয়াইয়া, মেদিনীপুরের বেনি পুতুল, পুরুলিয়ার ছৌ, ওড়িশার গোটিপুয়া প্রভৃতি লোকনৃত্য। দ্বিতীয় দিনে নজর কাড়ে গোবরডাঙা শিল্পায়ন প্রযোজিত লোকনাটক ‘পড়শি’। শেষ দিনে ছিল বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর নাটক ‘ধর্মমঙ্গল’। বাংলা নাটকে ধর্মমঙ্গলের এই অভিনব প্রয়াস দেখার জন্য উপস্থিত ছিলেন ঘনরাম চক্রবর্তীর উত্তরসূরিরাও। অনুষ্ঠানের শেষ হয় শতাধিক বাউল গানে। নজর কাড়লেন কার্তিক দাস বাউল।

পিয়ালী দাস

ষাটে পা

ষাটে পা দিল রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষায়তন ‘সুরঙ্গমা’। সূচনায় রবীন্দ্রসদনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করলেন সংস্থার শিল্পীরা। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন উর্মিলা ঘোষ। নৃত্য পরিচালনায় পূর্ণিমা ঘোষ। রবীন্দ্রনাথের নৃত্যগীতির ধারাকে অটুট রেখে অনু্ষ্ঠানটির পরিকল্পনা করা হয়। গান, নাচ ও বাদ্যযন্ত্রের সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। আচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘সুরঙ্গমা’। এই শিক্ষায়তনে সঙ্গীত শেখানোর মাধ্যম আজও তানপুরা।

অন্য মাত্রায়

বেহালা শরৎ সদনে ছন্দমাসের অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল ফুল্লরা মুখোপাধ্যায়ের কবিতা পাঠ ও তারই অনুষঙ্গে নাচ ও অভিনয়। দ্বিতীয় পর্বে ছিল মনোময় ভট্টাচার্যের গান। ফুল্লরার বেশ কয়েকটি পাঠ মনে রাখার মতো। ‘চড়ুইভাতি’ কবিতাটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ দিন মনোময় রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করলেন। পরে শোনালেন নজরুলগীতি ও নিজের আধুনিক গানের অ্যালবাম থেকে নির্বাচিত কয়েকটি গান।

শেষ বসন্তে

সম্প্রতি শিশিরমঞ্চে সোনারতরী কলাকেন্দ্র আযোজিত নাচ-গান ও পাঠের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন নবীন ও প্রবীণ শিল্পীরা। সুতপা হালদারের ‘ঝরাপাতা গো’ ও মৌসুমী কর্মকারের ‘বাসন্তী ভুবনমোহিনী’ বেশ ভাল লাগে। পরে সুলগ্না বসুর কবিতা পাঠে চিরায়ত বসন্তের রূপ ফুটে ওঠে। ইরাবতী বসুর ‘যে কেবল পালিয়ে বেড়ায়’ ও সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথ দিয়ে কে যায় গো চলে’ শ্রুতিমধুর। পাঠে দেবাশিস মিত্র রবীন্দ্রনাথের ‘শেষ বসন্তে’ প্রেম ও বিরহের ছবি ফুটিয়ে তোলেন। তানিয়া মিত্রের নিবেদনে ছিল ‘এসো এসো বসন্ত’। উষসী সেনগুপ্ত, ঈশিতা দাস অধিকারীর পাঠ মন কাড়ে।

এই সংস্থা বসন্তের গান নিয়ে আরও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। শিল্পীদের গানে মুখরিত ছিল অরবিন্দ ভবন।

ধ্রুবজ্যোতি তুমি

ইন্দ্রাণী গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় সৃষ্টি ডান্স অ্যাকাডেমির ‘ধ্রুবজ্যোতি তুমি অন্ধকারে’ অনুষ্ঠিত হল লবণহ্রদ মঞ্চে। গানে ছিলেন সুছন্দা ঘোষ, দেবাশিস ধর, পাঠে শুভদীপ ও কোরক বসু। নৃত্যে ইন্দ্রাণী গঙ্গোপাধ্যায় ও অভিরূপ সেনগুপ্ত ও সৃষ্টির ছাত্রছাত্রিবৃন্দ।

এ দিনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের নাচ যা নিঃসন্দেহে দর্শকচিত্তে সাড়া জাগায়। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন কৌশিক সেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE