Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হিট স্ট্রোক এড়াতে জল খান বেশি

তা যেন কখনওই চার থেকে পাঁচ লিটারের কম না হয়। আর অবশ্যই সঙ্গে রাখুন ছাতাতা যেন কখনওই চার থেকে পাঁচ লিটারের কম না হয়। আর অবশ্যই সঙ্গে রাখুন ছাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

মাথায় চড়া রোদ। ঘেমে-নেয়ে একাকার। যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে। কাজের ব্যস্ততায় মানুষের থেমে থাকার উপায় নেই। পথে তো বেরোতেই হবে। সে দিনও তাই হল। ধর্মতলার মোড়ে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লেন মাঝবয়সি মানুষটি। শরীর যেন তেতে আগুন।

হ্যাঁ, হিট স্ট্রোক। যে কোনও মানুষেরই হতে পারে। কারণ তাপপ্রবাহের পরিণামে মানুষের শরীরেরও পরিবর্তন হয়।

কেন হয়?

শরীরে নির্ধারিত তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে তা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। আকাশে যখন গনগনে রোদ তখন তার প্রভাব মানুষের শরীরেও পড়ে। হাঁসফাঁস, দমবন্ধ অবস্থা বা শরীর আনচান করছে—এটাই প্রথম বিপদের লক্ষণ। কারণ বাইরের তাপমাত্রা যে শরীর নিতে পারছে না—তা প্রথম ধাক্কায় বুঝিয়ে দেয়। অনেকেই আছেন যাঁরা প্রথম দিকে তা তোয়াক্কা করেন না। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

শুরুর দিকে

অল্প তাপমাত্রায় শরীর যে বড় ধাক্কা যায়, তা নয়। ডি-হাইড্রেশন হতে পারে। দ্রুত শরীর থেকে লবণের মাত্রা কমতে থাকে। শুরু হয়ে যায় অবসাদ, ক্লান্তি ও বমি। রাস্তাঘাটে অসুস্থ হলে অন্যান্য মানুষরা প্রথম দিকে বুঝতে পারেন না, তাঁরা কী করবেন। কিন্তু তখনই উচিত কোনও ঠান্ডা ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া। অল্প তাপমাত্রায় আক্রান্ত হলে সাধারণত ঠান্ডা ঘরে বসিয়ে রাখলে বা বেশি পরিমাণে জল খাওয়ালে বড় বিপদের সম্ভাবনা থাকে না। তবে খেয়াল রাখতে হবে তিনি ঘন ঘন বমি করছেন কি না। যদি বমি না হয় তবে বড় বিপদ নেই বললেই চলে। একটু বিশ্রাম এবং শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে তিনি ধীরেসুস্থে বাড়ি চলে যেতে পারেন।

মাত্রা ছাড়ালে

হিট স্ট্রোকে বাড়াবাড়ি তখনই হয় যখন শরীর থেকে জলের মাত্রা অনেকটাই কমে যায়। এর ফলে রক্ত ঘন হয়ে যেতে থাকে। শুধু তাই নয় ব্রেনে রক্তচাপ দ্রুত কমে যায়। ফলে রোগীর বিপদ দ্রুত ঘনিয়ে আসতে থাকে। তিনি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাই হয়। এটাই হিট স্ট্রোকের বড় লক্ষণ।

কাদের বেশি হয়

হিট স্ট্রোকে যাঁরা আক্রান্ত হন তাঁদের অধিকাংশই বয়স্ক মানুষ। এমনিতেই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীর কমজোর হতে থাকে। কারও কারও অন্যান্য অসুখের লক্ষণও থাকে। কিন্তু বয়েস হলেই তো হবে না। পেনশন তোলা, বাজারে যাওয়া বা দৈনন্দিন কাজে তাঁদের তো পথে বেরোতেই হয়। হঠাৎ অতিরিক্ত গরমে তাঁরা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। জলের মাত্রা শরীরে এতটাই কমে যায় যে, ফলে বয়স্ক মানুষের কিডনি ফেলিওরও হতে পারে। প্রবীণদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁদের হার্টের অসুখ আছে বা ডায়বেটিসে আক্রান্ত। কমজোরি শরীরে অতিরিক্ত গরম তাই থাবা মারে বেশি। হঠাৎ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত সেই মানুষকে শুধু প্রা‌থমিক চিকিৎসা দিলে হবে না। তৎক্ষণাৎ কোনও নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। স্যালাইন দেওয়া জরুরি। তবে এখন চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ বছরের মানুষেরও হিট স্ট্রোক হতে পারে।

বাচ্চারাও বাদ নয়

টানা রোদে কোনও বাচ্চাকেই বেশিক্ষণ খোলা মাঠে খেলতে দেওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত গরমে ওই একই সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তার উপর যারা জল কম খায় তাদের এমনিতেই শরীরে জলের ঘাটতি থাকে। ছোটাছুটি ও অতিরিক্ত ক্লান্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কম বয়স বলে বড় বিপদের খুব একটা সম্ভাবনা দেখা দেয় না। তবুও এ রকম দেখলে তৎক্ষণাৎ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তার সেবা করা উচিত। শরীরকে দ্রুত স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরিয়ে আনতে হবে। ঘন ঘন জলও খাওয়াতে হবে।

মহিলারাও বাদ নন

আমরা হিট স্ট্রোক মানেই পুরুষদের কথাই আগে ভাবি। মহিলারাও এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বর্তমান যুগে পুরুষদের সঙ্গে মহিলাদেরও সমান তালে পথে বেরোতে হয়। তাঁরাও যে অসুস্থ হচ্ছেন না তা নয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে রোদে বেরোলেও তাঁরা ছাতা ব্যবহার করেন। ফলে অনেক সময় সরাসরি বিপদ তার উপর ঘনিয়ে আসতে পারে না।

উপায়

অতিরিক্ত গরম লাগলে একটু ঠান্ডা জায়গা খুঁজে নেওয়াই ভাল। তবে মাত্রাছাড়া গরম লাগলে বা বডি টেম্পারেচার খুব বেশি বেড়ে গেলে ভাল করে স্নান করুন। শরীরে তাপমাত্রা দ্রুত কমতে থাকে। হাঁসফাঁস অবস্থা থাকে না। সকলেরই উচিত নুন চিনির শরবত খাওয়া। বাড়ির রান্না যেন খুব কম মশলায় বা কম তেলে হয়।

মনে রাখবেন

• গরমের দিনে প্রচুর জল খেতে হবে। রোদে বেরোতে হলে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ লিটার জল খেতে হবে।
• ছাতা সঙ্গে রাখবেন।
• সুতির কাপড় বা হাল্কা পোশাক অনেকটাই শরীরকে রক্ষা করে। সে দিকেও নজর রাখতে হবে।
• সহজপাচ্য খাবার খাওয়াই ভাল।
• গরমে বেশি নেশা না করাই ভাল।
• যাঁদের শরীরে কোনও অসুখ আছে বা সারা দিনে প্রচুর ওষুধ খেতে হয় তাঁদের দিনের চড়া রোদে না বেরোনোই ভাল।
• হার্টের অসুখ থাকলে চড়া রোদে জলের মাত্রা কমে গিয়ে শরীরে রক্ত ঘন হতে থাকে। ফলে ব্রেনের ক্ষতি হয়। বেশির ভাগ মৃত্যু কিন্তু সেই কারণেই।

অনুলিখন: বিপ্লবকুমার ঘোষ

তথ্য: ডা. বিশ্বজিৎ ঘোষদস্তিদার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Heat Heat Stroke Summer Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE