ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
ডিমনিটাইজেশন নিয়ে খুব চিন্তিত তিনি। সাক্ষাৎকার শুরুর আগে প্রশ্ন এল—
‘‘বলুন তো এই যে চেক পেমেন্ট চালু হল এটা কি ঠিক হল? আমার ড্রাইভার যিনি আমাকে শো-য়ে নিয়ে যান তাঁকে কি আমি চেক দেব?’’
•
পত্রিকা: আপনি বেশ উত্তেজিত।
অনুপম: এরকমও হয়েছে জানেন, একজন শিল্পী শো করলেন তারপর তাঁকে যে চেক দেওয়া হল, দেখা গেল সেটা বাউন্স করল। এ বার কী হবে?
পত্রিকা: কিন্তু আপনার বছরটা তো দারুণ শুরু হল। তাপসী পান্নু অভিনীত ‘রানিং শাদি ডট কম’য়ে আপনার সুরে গান আসছে।
অনুপম: হ্যাঁ। শুরুটা ভালই হল। এ ক্ষেত্রে সুজিত সরকারকে ধন্যবাদ। মুম্বইতে কাজ করার আনন্দই আলাদা। ভাবুন তো একজন গিটারিস্ট মুম্বইতে রেকর্ড করলে কলকাতার চেয়ে চার গুণ টাকা পায়। তবে একটা কথা, মুম্বইয়ে কাজ করতে হলে যে, মুম্বই গিয়ে সেটা করতে হবে এমনটা নয়। আর সেই কারণেই আমি কলকাতা ছেড়ে যাব না।
পত্রিকা: কলকাতা না হয় ছাড়লেন না, কিন্তু বাজারে যখন সিডি চলে না সেই সময় অনুপম রায় প্রাইভেট অ্যালবাম করার কথা ভাবছেন!
অনুপম: ভাবব না কেন! একটা ওল্ড স্কুলকে আমি ধরে রাখতে চাই। আমি আজও তো সেই মানুষ, যে এক সময় সুমন-অঞ্জন-নচিকেতার সিডি-র জন্য মুখিয়ে থাকত। আর শুনুন, আমারও তো ইচ্ছে করে এমন গান শ্রোতাকে শোনাতে, যা নিজের খেয়ালে লেখা।
পত্রিকা: ‘এক পুরনো মসজিদে’র মতো জনপ্রিয় গানে আপনি মসজিদের সঙ্গে মুরশিদ শব্দটা বসিয়েছিলেন! এ নিয়ে তো আনন্দ প্লাস-কে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে এক শিল্পী প্রবল আপত্তি তুলেছেন।
অনুপম: পড়েছি সাক্ষাৎকারটা। পোয়েটিক স্বাধীনতাকে লজিক বা বি়জ্ঞান নিয়ে জাস্টিফাই করা যায় না। আমি চোখ বুজে এক সমুদ্র পেরেক ভাসছে দেখতে পারি। যদিও সেটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। ঠিক সেই ভাবে আমার কল্পনার মসজিদে মুরশিদের গান গাইতে কোনও বাধা নেই।
পত্রিকা: আর সেই ইমেজারি দিয়েই নতুন অ্যালবাম?
অনুপম: সিডি কেউ না কিনুক ইউ টিউব বা আই টিউনস-এ রেভিনিউ আর্ন করার কথা ভাবা হচ্ছে। আসলে মার্কেটিং-এর পুরোটাই দেখছে শিবুদা (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়)। আমি কনটেন্ট তৈরির পর শিবুদাকে ফোন করে বলেছিলাম আমার অ্যালবামের প্রমোশনে হেল্প করবে? শিবুদা শুনে বলল, ‘আমরাই না হয় অ্যালবামটা তৈরি করি।’ শিবুদা-নন্দিতাদির সঙ্গে সেই ‘বেলাশেষে’ থেকে কাজ করছি। আমার অ্যালবামটা দিয়ে উইন্ডোজ মিউজিক লেবেল খুলছে। এটা আমার বিশাল পাওয়া। আমার তো মনে হয় এর পর ‘পোস্ত’ বা শিবুদার পরের ছবিতে গানের স্বত্বটাও ‘উইন্ডোজ’ মানেই শিবুদা-নন্দিতাদি-র কোম্পানির হাতেই থাকবে।
পত্রিকা: অনুপমের আগে ছিল সৃজিত মুখোপাধ্যায়, আর এখন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
অনুপম: ছিল-র কিছু নেই। সৃজিত ছিল বলেই, সৃজিতের জন্যই আমি সবাইকে, এমনকী শিবুদাকেও গান শোনাতে পারলাম। সৃজিতকেও বলেছি আমার নতুন অ্যালবামের কথা।
পত্রিকা: শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়...
অনুপম: সকলের সঙ্গেই কাজ করেছি। মিউজিক বোঝার জায়গাটা প্রত্যেকের আলাদা। সৃজিতদা যেমন প্রচুর গান শুনতে চায় আমার কাছে। শুনতে শুনতে নিজের মতো গান বেছে নেয়। কিন্তু শিবুদা, উফ! (ব়ড় বড় চোখ) একটা গান বাঁধলাম, শোনাতে গেলাম। শুনে বলল, পরেরটা শুনি। কী জ্বালাতন!
পত্রিকা: কেন?
অনুপম: ক্রিয়েটিভলি একই সিচুয়েশনে নানা রকম গান তৈরি করা খুব শক্ত! মুম্বইয়ে যেমন একটা সিচুয়েশনের জন্য সঙ্গীত পরিচালককে পাঁচ থেকে ছ’টা গান বাঁধতে হয়। আমায় যদিও শিবুদার ক্ষেত্রে এতগুলো গান বাঁধতে হয়নি। একবার তো নন্দিতাদি গান শুনে বললেন, ভাল। ওমা! শিবুদা তা’ও বলে কিনা আরেকটা শুনি... (মুচকি হেসে) তবে এই যুদ্ধটা আমি এনজয়ও করি।
পত্রিকা: আর কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়?
অনুপম: কৌশিকদা কী চাইছেন সেটা পরিষ্কার বুঝিয়ে দেন। তবে কৌশিকদার ‘ধূমকেতু’র কী হল আমি জানি না! কাজটা একদম অন্য রকম হয়েছিল। দেব, কৌশিকদা, রানা সরকার সকলের সঙ্গেই দেখা হয়। কেন যে ছবিটা আটকে আছে! আমি যদিও ছবিতে কাজ করার জন্য টাকাপয়সা পাইনি। তবে এখনই আমায় টাকা দিতে হবে এমনটা নয়। এত মানুষের পরিশ্রম, ছবিটা রিলিজ হওয়া উচিত।
পত্রিকা: টাকাটা না পেলেও চলবে? এতটা নির্লিপ্ত আপনি!
অনুপম: কাজটা হোক। টাকা আসার হলে আসবে। ২০১৭-তেও অনুপম রায় মানুষকে বিশ্বাস করে।
পত্রিকা: ২০১৭-য় আপনার ছবির কাজ কি একটু কমছে?
অনুপম: ‘পোস্ত’ তো আছে। ‘পোস্ত’য় নচিদা (নচিকেতা চক্রবর্তী) একটা দারুণ দুঃখের গান গাইল। ‘ধূমকেতু’ও তো রিলিজ হওয়ার কথা। আর মনীষা কৈরালাকে নিয়ে ‘ডিয়ার মায়া’ করছি। ব্যস, যথেষ্ট। আবার কী?
পত্রিকা: অ্যালবামের নাম — ‘এ বার মরলে গাছ হব’। হঠাৎ এ রকম নাম?
অনুপম: আজকের সময়টা ভাবুন। আজ নদী শুকিয়ে যায়। যে বন্দরে জাহাজ ঢুকত সেখানে জাহাজ আসে না। গাছ মানুষকে প্রাণ দেয়, ওম ছড়ায়। আমি মানুষ হয়ে সেটা পৃথিবীকে দিতে পারলাম না, এই নিয়ে গান....
পত্রিকা: সবই কি পরিবেশের গান?
অনুপম: না। ছ’টা গানের আলাদা আলাদা বক্তব্য। যেমন আমার শহর কলকাতাকে নিয়ে গান। এই শহরে আর ট্যালেন্ট থাকে না। শহর ছাড়ছে যুবকরা। তাই — ‘‘ভেঙেচুরে গেছে আমার শহর। চটি ছিঁড়ে গেছে আমার শহর।’’
পত্রিকা: অ্যালবাম আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। প্রেমের গান নেই?
অনুপম: আছে ‘ইস্ট্রোজেন’— গানটায় সরাসরি যৌন আবেদনের কথা আছে।
পত্রিকা: এই প্রথম অনুপমের অ্যালবামে অন্য কারও গান থাকছে?
অনুপম: ঠিক বলেছেন। ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র একটি ও উপল সেনগুপ্তর সুরে, তিলোত্তমা মজুমদারের কথায় আরেকটি গান গাইছি। আমার গান গাওয়ার ক্ষেত্রে উপলদা বা ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ ইন্সপিরেশনের কাজ করেছে। তাই-ই অ্যালবামে এই দুটো গান রেখেছি।
পত্রিকা: বইমেলাও তো আসছে। এ বার বই লিখছেন না?
অনুপম: না, পরের বার। বাকিটা ব্যক্তিগত!
পত্রিকা: কমার্শিয়াল ছবিতে গান তৈরি করেন না কেন?
অনুপম: ইদানীং ভাবছি জানেন। ওই গানের শব্দ লিখতে পারব না, কিন্তু যদি সুরের দায়িত্ব নিই...এরকম এক্সপেরিমেন্ট ২০১৭-য় করতে চাই।
পত্রিকা: এক গানেই যাঁরা স্টার তাঁদের কী বলবেন আপনি?
অনুপম: আমার ইচ্ছে করে নতুন আর্টিস্ট নারচার করার। আমার মধ্যে একটা প্রোডিউসর সত্তা আছে। ভবিষ্যতে আমি আর্টিস্ট জেনারেট করতে চাই। লগ্নজিতা, ইমন, এদের হেল্প করতে চাই।
পত্রিকা: নিজেকে হেল্পফুল বলছেন, তা হলে অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়কে টুইটে ‘চোর’ বলেছিলেন কেন?
অনুপম: (নড়েচড়ে বসলেন) আমি এই বিষয়টা ক্লিয়ার করতে চাই। আমার টুইটটা প্লেজরিজম নিয়ে ছিল। এর মধ্যে কোনও ব্যক্তিবিশেষের প্রসঙ্গ টানার দরকার নেই। যে কোনও ফিল্ডেই হোক না কেন— অ্যাকাডেমিক, সিনেমা, সাহিত্য, গান আমার বক্তব্য এটাই — ‘চিট ইজ অলওয়েজ আ চিট। নেভার অ্যান আর্টিস্ট।’ অর্থাৎ প্রতারক কখনও শিল্পী হতে পারে না। তাই বলছি, গুজবে কান দেবেন না।
এ বার গানে দেখানোর ইচ্ছে
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়,চিত্র পরিচালক
আমাদের একের পর এক ছবির গান সুপারহিট। সেই থেকেই ভাবনাটা মাথায় আসে। একটা মিউজিক কোম্পানি খুলি। তার সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল মার্কেটিংটাও এমন ভাবে করছি, যাতে বাংলা গানের ভিডিয়ো নিয়ে লোকে আবার উৎসাহী হয়। বরাবর শুনে এসেছি বাংলা ছবির বাজার খারাপ। বাংলা সিনেমা চলে না। কিন্তু সিনেমায় সেটা আমরা ভাঙতে পেরেছি। এ বার গানে করে দেখানোর পালা। তবে এই কাজটা আমার আর নন্দিতাদির পক্ষে করা সম্ভব হতো না যদি না প্রভাত রায় আর অতনু রায়চৌধুরী আমাদের পাশে না দাঁড়াতেন। আর উইন্ডোজ-য়ের তরুণ তুর্কির দলের সহযোগিতায় এটা সম্ভব হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy