Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষীণ কটি পেতে চান?

হাজার চেষ্টাতেও পেটের চর্বি থেকে মিলছে না রেহাই? এ বার জানুন সমস্যার সহজ সমাধান হাজার চেষ্টাতেও পেটের চর্বি থেকে মিলছে না রেহাই? এ বার জানুন সমস্যার সহজ সমাধান

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০০:২৯
Share: Save:

পার্টিতে যাবেন বলে দারুণ একটা এলবিডি কিনে রেখেছিলেন। কিন্তু পরতে গিয়েই সমস্যা। কারণ আপনার বেলি ফ্যাট! হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাগে আনতে পারছেন না। ব্যায়াম, ডায়েটের পরেও আপনার ভুঁড়ি প্রকাশ্যেই থাকছে। তাই বেলি ফ্যাট কমাতে গেলে আগে জানুন, আপনার ভুঁড়ি ঠিক কীরকম। তবে না পারবেন তাকে সামলাতে!

ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছেলেদের বেলি আপেল আর মেয়েদের নাসপাতি আকৃতির হয়। কিন্তু ভুঁড়ি-চরিত্রেরও হয় চুলচেরা বিশ্লেষণ!

দ্য পুচ: অফিসে চেয়ারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন? তার পর দিনের শেষে যখন আয়নায় নিজের দিকে তাকান, চোখে পড়ে ছোট্ট ভুঁড়ি? তা হলে অবশ্যই এটা ‘দ্য পুচ’। অর্থাৎ রোগা বা ছিপছিপে হলেও, অনেক কর্মরত মহিলার ‘পুচ’ গজিয়ে ওঠে।

স্ট্রেস বেলি: হতাশাই ‘স্ট্রেস বেলি’-র প্রধান কারণ। তাই নামটাই হয়ে গিয়েছে ‘স্ট্রেস বেলি’। অতিরিক্ত কাজের চাপ, মানসিক সমস্যায় কি আপনি অবসাদগ্রস্ত? তা হলে তার ছাপ শুধু চোখে-মুখেই নয়, দেখা দিতে পারে পেটেও। দেখা গিয়েছে, ‘পুচ’-ই গড়ায় ‘স্ট্রেস বেলি’তে।

স্পেয়ার টায়ার: অফিসে কাজের সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চয়ই হাজার রকমের প্যাকেটজাত আর চিনিভরা খাবার খেতে থাকেন? তার সঙ্গে অবসাদ কাটাতে অফিসশেষে মদ্যপান চলে প্রায়শই? তা হলে ‘স্পেয়ার টায়ার’ হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। অর্থাৎ, ‘পুচ’ আর ‘স্ট্রেস বেলি’ বাড়তে বাড়তেই দাঁড়ায় ‘স্পেয়ার টায়ার’-এ।

মাম্মি টামি: সন্তান ধারণের পর আপনার যে ওজন স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ে, তা রয়ে যায় সন্তানের জন্মের পরও। সদ্য মায়েদের ক্ষেত্রে যে পেট প্রায়শই চোখে পড়ে, তা হল ‘পোস্ট প্রেগন্যান্সি পুচ’ বা ‘মাম্মি টামি’।

এক নজরে বেলি ফ্যাট বাড়ার উৎস

• আপনার মা অথবা বাবা মোটা? তা হলে জিনগত কারণে আপনি পেতে পারেন এই লক্ষণ।

• জীবনযাপন সরাসরি প্রভাব ফেলে আপনার শরীর ও মনে। যদি অনেক রাত অবধি আপনি জেগে থাকেন অথবা আপনার ঘুমোনো, খাওয়াদাওয়ার নির্দিষ্ট সময় না থাকে, তা হলে ফ্যাট বাড়া স্বাভাবিক।

• অফিসে রাশিরাশি ফাইলের মধ্য থেকে কিংবা ঘরের হাজারো কাজের মাঝে যদি হতাশা আপনাকে গ্রাস করে, ওজন বাড়বেই।

• থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, মেটাবলিজমের সমস্যা ইত্যাদি নানা শারীরিক অসুস্থতাতেও বাড়তে পারে বেলি ফ্যাট।

ওজন কমান, বুদ্ধি নয়

ওজন কমানোটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু তা কমাতে গিয়ে ভুলেও ক্র্যাশ ডায়েটের খপ্পরে পড়বেন না। এখন সকলের হাতের নাগালে মাউস থাকায়, চট করে ইন্টারনেট থেকে ক্র্যাশ ডায়েট কোর্স জেনে যেতে পারেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে গেলে ক্র্যাশ ডায়েট নয়, ব্যালান্সড জীবনযাপনই শ্রেয়।

নিয়মমাফিক খাওয়াদাওয়া করলে অতিরিক্ত চর্বি জমবে না। কিন্তু জমে থাকা চর্বি, এক কথায় ভুঁড়ি কমাতে গেলে ব্যায়াম জরুরি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে জেনে রাখুন, পেটের মেদ কমানোর ব্যায়াম মানেই কিন্তু শুধু পেট-কেন্দ্রিক ব্যায়াম নয়। বরং ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্যাট কমাতে গেলে আগে শরীরের জোর বাড়ানোর ব্যায়াম করুন। এই ব্যায়ামে পেশির তন্তু বাড়ে। পেশিতন্তু খাবার চায়। আর খাবার আসে আপনার জমে থাকা চর্বি থেকেই। ফলে আপনি যদি জোর বা়ড়ানোর ব্যায়াম করেন, তা হলে বিশ্রামরত অবস্থাতেও পেশি চর্বি
থেকে খাবার সংগ্রহ করে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

বিশদে ব্যায়াম

একমাত্র মাম্মি টামি ছাড়া অন্য যে কোনও ধরনের বেলি ফ্যাটের জন্য নিম্নলিখিত এক্সারসাইজগুলো করুন...

• সপ্তাহে সাত দিনের মধ্যে ছ’দিন ব্যায়াম করুন। তার মধ্যে চার দিন বেছে নিন পেশির ব্যায়ামের জন্য। বাকি দু’দিন কার্ডিয়ো করুন।

• চার দিনের মধ্যে এক দিন রাখুন শরীরের উপরের অংশের জোর বাড়ানোর জন্য। এর জন্য বাড়িতে চেস্ট প্রেস, মাটিতে উপুড় হয়ে প্রোন রো, এক হাতে অর্থাৎ ওয়ান আর্ম রো, শোল্ডার প্রেস করুন। সবগুলিই ডাম্বেল নিয়ে করবেন। সঙ্গে থাক প্ল্যাঙ্ক, সাইড প্ল্যাঙ্কের মতো কোর এক্সারসাইজ। যাঁরা প্ল্যাঙ্কে অভ্যস্ত, তাঁরা যোগ করতে পারেন ডায়নামিক সাইড প্ল্যাঙ্ক, প্ল্যাঙ্ক অ্যান্ড আর্ম রিচ।

• শরীরের নীচের অংশে বড় বড় পেশি থাকে। তাই শরীরের নীচের অংশে জোর বাড়ানোর জন্য এক দিন অন্তর অন্তত তিন দিন ব্যায়াম করুন। তার জন্য স্কোয়াট, স্টেপ আপ, লাঞ্জ উইথ ডাম্বেল, এক পায়ে ডেড লিফ্ট, ওয়ান লেগ হিপ এক্সটেনশন করুন। এ ক্ষেত্রেও ডাম্বেল ব্যবহার করুন। এর পর দুটো কোর এক্সারসাইজ করুন।

• প্রতিটি ব্যায়াম ১২ বার করে করার পর ২-৩ মিনিট বিশ্রাম নিন। আবার শুরু করুন দ্বিতীয় দফার জন্য। এ ভাবে ৩-৪ বার করুন।

• সপ্তাহে যে দু’দিন কার্ডিয়ো করবেন, সেই দিনগুলো বক্সিং, পাওয়ার রোপ ওয়েভ জাতীয় হাই এক্সটেনশন এক্সারসাইজও করতে পারেন। বাড়িতে করতে চাইলে সহজেই সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত ওঠা, আপহিল রানিং কিংবা এক মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটার পরে এক মিনিট জগিংও
করতে পারেন।

• আধ ঘণ্টা জোরে হাঁটলেই পেটের চর্বি কমে না। হৃদ্স্পন্দন বাড়ানোর ব্যায়াম করুন। এতে মেটাবলিজমের হার বাড়বে। ওজনও কমবে।

• সদ্য সন্তানের জন্মের পর লোয়ার অ্যাবডোমেন লুজ থাকে। এই সময়টাকেই কাজে লাগান ‘মাম্মি টামি’ কমাতে। নিয়ম মেনে পেলভিক ফ্লো জাতীয় লো ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ করুন।

‘নো’ কার্ব নয়, ‘লো’ কার্ব

• আমরা সাধারণত ৬০% কার্বোহাইড্রেট, ৩০% প্রোটিন, ১০% ফ্যাট খেয়ে থাকি। ওজন কমাতে গেলে শরীরে এই সমস্ত উপকরণই জরুরি। কিন্তু আপনি বদলে দিতে পারেন উপকরণগুলির মাত্রা।

• পেটের চর্বি কমাতে ৫০% কার্বোহাইড্রেট, ৪০-৪৫% প্রোটিন আর ৫% ফ্যাট গ্রহণ করুন।

• এক বারে অনেকটা খাবার না খেয়ে স্বল্প সময়ের বিরতিতে অল্প অল্প করে খাবার খান। এতে আপনার মেটাবলিক হার অর্থাৎ খাবার হজমের ক্ষমতা বাড়বে। অনেকক্ষণ না খাওয়ার পর যেই আপনি কোনও খাবারই খাবেন, শরীর অনিশ্চয়তায় ভুগবে ও সেই খাবার জমিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। এ ভাবেই জমতে থাকবে ফ্যাট।

• ব্রেকফাস্ট ভারী করতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই প্রোটিনের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট রাখুন। প্রাতরাশে দুটো ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে অর্ধেক আপেল বা সামান্য ড্রাই ফ্রুটস নিতে পারেন।

• কালো কফির সঙ্গে দারচিনি গুঁড়ো বা গরম জলে লেবু-মধু খেলেই রোগা হওয়া যায়, এ ধারণা ভুল। এ সব শরীর পরিষ্কার রাখতে, টক্সিন বের করতে, হজমে সাহায্য করে। রোগা হতে নয়।

সব শেষে, ব্যায়াম করার সময় বা বেশি নিয়ম মেনে খেতে গিয়ে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়বেন না যেন। হাসিখুশি থাকুন। আনন্দের সঙ্গে ব্যায়াম করলে পেটের চর্বিও কমবে, সুস্থও থাকবেন।

রূম্পা দাস

তথ্য সহায়তা: ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

মডেল: রিয়া মেকআপ: অভিজিৎ চন্দ পোশাক: রিবক স্টোর, ক্যামাক স্ট্রিট

ছবি: আশিস সাহা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE