Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মন ভাল রাখার সহজ পাঠ

‘স্ট্রেস’ শব্দটি এখন প্রতিটি মানুষের নিত্যসঙ্গী। যা সুস্থ জীবনকে করে তোলে দুর্বিসহ। কীভাবে মুক্তি পাবেন এর থেকে? মেডিটেশন, বৈদিক চ্যান্টিংয়ের মাধ্যমে মন কীভাবে তরতাজা রাখবেন? তারই সন্ধান দিলেন এই বিষয়ে বিশারদ গোপা সেন‘স্ট্রেস’ শব্দটি এখন প্রতিটি মানুষের নিত্যসঙ্গী। যা সুস্থ জীবনকে করে তোলে দুর্বিসহ। কীভাবে মুক্তি পাবেন এর থেকে? মেডিটেশন, বৈদিক চ্যান্টিংয়ের মাধ্যমে মন কীভাবে তরতাজা রাখবেন? তারই সন্ধান দিলেন এই বিষয়ে বিশারদ গোপা সেন

মডেল: মৃত্তিকা, ছবি: অমিত দাস, মেকআপ: সায়ন্ত ঢালি, পোশাক: ওয়েস্টসাইড, ক্যামাক স্ট্রিট, লোকেশন: ভার্দে ভিস্তা

মডেল: মৃত্তিকা, ছবি: অমিত দাস, মেকআপ: সায়ন্ত ঢালি, পোশাক: ওয়েস্টসাইড, ক্যামাক স্ট্রিট, লোকেশন: ভার্দে ভিস্তা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। মনে হল, অফিসের শেষ কাজটা ঠিক মতো করেছিলাম তো? অমুক জায়গায় হিসেবটা মিলেছিল তো? কিংবা ভালবাসার মানুষটি বিয়ের কথা শুনে পিছিয়ে যাবে না তো? ছেলে জয়েন্টে চান্স পাবে তো? মেয়ে শহরের সেরা স্কুলটায় সুযোগ পাবে তো? এমন হাজারো চিন্তা প্রতিনিয়ত আমাদের মাথায় ঢেউয়ের মতো উঠছে-নামছে। চিন্তার এই দুলুনিতে জন্ম ‘স্ট্রেস’ শব্দটির। যার দৌলতে আমরা হাসতে ভুলে যাচ্ছি, শরীর নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, অল্প কথাতেই উত্তেজিত হয়ে উঠছে মন, অবসাদে ভুগে ভাবতে হচ্ছে আত্মহননের কথাও। ‘স্ট্রেস’ কিন্তু নতুন শব্দ নয়। যখন থেকে মানুষ সমাজ গড়েছে, সমাজে টিকে থাকার লড়াই শুরু করেছে, তখন থেকেই স্ট্রেসের জন্ম। জেতার জন্য লাগামহীন প্রতিযোগিতা, ব্যর্থতার ভয়, মনকে অশান্ত করে তোলে। এই অশান্ত মনকে শান্ত করার অন্যতম উপায় মেডিটেশন এবং বৈদিক চ্যান্টিং।

‘মেডিটেশন’ বা ‘ধ্যান’ শব্দটির চেয়ে ‘মেডিটেটিভ স্টেট’ কথাটা বলাই ভাল। কারণ ‘ধ্যান’ কিন্তু আক্ষরিক অর্থে সাধারণ মানুষের পক্ষে সংসার অফিস সামলে করা কঠিন। মেডিটেটিভ স্টেটের উদ্দেশ্য রিল্যাক্স করা, ফোকাস্ড হওয়া, উপলব্ধি করা। এই নিয়ে বিস্তারিত কথা বলার আগে বলি, মেডিটেশন বা বৈদিক চ্যান্টিং যে-কোনও ধর্মের মানুষই করতে পারে।

আমাদের মন অনেকটা বাঁদরের মতো। বাঁদর যেমন এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে বেড়ায়, তেমন মনও এক চিন্তায় বেশিক্ষণ থাকে না। মেডিটেটিভ স্টেটের মাধ্যমে সেই মাঙ্কি মাইন্ডকে কিছুটা শান্ত করা যায়। এই স্টেটের প্রথম ধাপ ‘প্রতিহার’। প্রতিহারের আবার দুটো ধাপ। ‘অন্তরমন’ ও ‘সোয়ান থিয়োরি’। ধরুন, আপনার সঙ্গে কারও মনোমালিন্য হয়েছে, ঝগড়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অন্যকে দোষ দেওয়ার আগে নিজের দিকটা একবার চিন্তা করুন। খুঁজে বার করুন আপনার কি কোনও কিছু দেখে বা শুনে হিংসে হয়? বা কোন বিষয়ে রাগ হচ্ছে, কোন ব্যাপারে আপনি আনন্দ পাচ্ছেন? অর্থাৎ নিজের অনুভূতিগুলো জানতে হবে। এগুলো কীভাবে জানবেন? ‘অন্তরমন’ দ্বারা। দিনের শেষে পাঁচ মিনিট চুপ করে বসুন। চোখ বন্ধ করে ভাবুন, ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে সারা দিন আপনি কী কী করেছেন। সিনেমা দেখার মতো আপনার সারা দিনের মুভমেন্ট, কাজগুলো চিন্তা করুন। চিন্তা করতে গিয়ে মনে হতে পারে, এটা করা উচিত হয়নি বা ওটা করা উচিত ছিল। সেই চিন্তাকে সরিয়ে রেখে ভাবুন, যা করেছি, করেছি। পরের বার ভুল শুধরে নেব। অন্তরমন নিয়মিত করতে হবে। সোয়ান (SWAN) থিয়োরি ছ’মাস অন্তর একবার করলেই হবে। এটা কী? একটা কাগজে S লিখুন (S= স্ট্রেন্থ বা শক্তি)। নিজের বিচারে আপনার কী-কী স্ট্রেন্থ আছে তা S-এর পাশে লিখুন। এরপর W-র (W= উইকনেস বা দুর্বলতা, যদিও উইকনেস না বলে লিমিটেশন বলা ভাল। কারণ লিমিটেশন ওভারকাম করা যায়) পাশে আপনার লিমিটেশনগুলো লিখবেন। এরপর A-র (A= অ্যাম্বিশন বা ইচ্ছে) পাশে আপনার ইচ্ছেগুলো লিখুন। এবং সবশেষে N (N= নিড বা প্রয়োজন) পাশে লিখুন আপনার প্রয়োজন। দেখবেন, হয়তো যেটা আপনার লিমিটেশন, সেটা আপনাকে সাফল্য দিতে পারে। একটা উদাহরণ দিই, ধরুন আপনার লিমিটেশন হল, জেদ। কিন্তু দেখা গেল এই জেদের জন্য অনেক বেশি কাজ করলেন, কাজ থেকে অর্থ এবং অর্থ থেকে প্রযোজন ও ইচ্ছেপূরণ। আবার কোনও স্ট্রেন্থ আপনার লিমিটেশন হতে পারে। যেমন, আপনি সকলের সঙ্গে মিশতে পারেন। আর এই মিশতে গিয়েই মানুষ চিনতে না পেরে আপনি বিপাকে পড়লেন। সোয়ান থিয়োিরর মাধ্যমে আপনার ভিতরের শক্তি, লিমিটেশন, ইচ্ছে প্রয়োজনগুলোকে আপনি একসঙ্গে দেখছেন, যা আপনাকে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

চিন মুদ্রা

এ তো গেল বাইরের মনকে শান্ত করার উপায়, কিন্তু অবচেতন মনকে কীভাবে ম্যানেজ করবেন? তার জন্যই প্রয়োজন বৈদিক মন্ত্র পাঠ। নিয়মিত মন্ত্র উচ্চারণে কাম ক্রোধ ঈর্ষার মতো মানসিক টক্সিনগুলো বার হয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ১১ বার ‘মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র’, তার পর ‘১১ বার গায়ত্রী মন্ত্র’ এবং তার পর তিন বার ‘দুর্গার ৩২ নাম’ পাঠ করুন। অনেকেই মনে করেন, সকালে উঠে স্নান করে নিঃশব্দে মন্ত্র জপ করতে হবে। এ ধারণা ভেঙে দিন। বিছানায় শুয়ে বা বসে, মর্নিংওয়াকের সময়, যে অবস্থায় আছেন সেই অবস্থাতেই জোরে-জোরে মন্ত্র উচ্চারণ বা পাঠ করুন। এর জন্য স্নান না করলেও হয়। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে, ভ্রামরী প্রাণায়ামের পর ‘ওম’ চ্যান্ট করুন। অনেকে বলেন, শক্ত সংস্কৃত মন্ত্র ঠিক মতো উচ্চারণ করতে পারছি না। হতাশ হবেন না, ভুল হতে-হতে ঠিক হবেই। কিন্তু ভুল হচ্ছে বলে ছেড়ে দেবেন না। সোজা কথায়, এটা অনেকটা উচ্ছে সেদ্ধ খাওয়ার মতো। চোখ নাক বুজে খেয়ে যান, ঠিক উপকার হবে।

মনে প্রশ্ন আসছে তো, চোখ বন্ধ করে পদ্মাসনে বসে শিরদাঁড়া সোজা রেখে মেডিটেশনের চেনা ছবিটা তা হলে কী? ওটাকে বলে মেডিটেটিভ পসচার। অন্তরমন যখন-খুশি যেখানে-খুশি করতে পারবেন, কিন্তু এটার জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গা ও সময় লাগবে। দিনের কোনও একটা সময় পদ্মাসনে বসুন। যাঁদের মাটিতে বসতে অসুবিধা, তাঁরা চেয়ারে বসুন। যাঁরা অসুস্থ, তাঁরা শুয়ে করুন। এ ক্ষেত্রে পা ক্রস করে নিন। শিড়দাঁড়া সোজা রেখে হাতে চিন মুদ্রা করে শান্ত হয়ে বসুন। দেখবেন অনেক রকম চিন্তা মনে আসবে। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। মন যেখানে যায় যাক। আপনি আস্তে-আস্তে নিশ্বাস টানুন ও বার করুন। নিশ্বাসের দিকে মন দিন।

এ সবের পাশাপাশি যোগ ব্যায়াম অভ্যেস করলে আরও ভাল ফল পাওয়া যাবে। মেডিটেশন যোগ ব্যায়ামের অংশ। মেডিটেটিভ স্টেট, পসচার, চ্যান্টিং নিয়মিত অভ্যেস করলে মন শান্ত হবে, আত্মবিশ্বাস বাড়বে। মন ভাল থাকলে শরীরও ভাল থাকবে নিঃসন্দেহে।

অনুলিখন: ঊর্মি নাথ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stress Heart
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE