Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পছন্দের বিষয় মেলেনি? মেলেনি পছন্দের কলেজও? কী করবেন..

পছন্দের কলেজ না পাওয়া অথবা ভাল লাগার বিষয় নিয়ে পড়তে না পারার সমস্যাটা নতুন নয়। শহরের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ না পেলে অনেক পড়ুয়ার মনেই হীনমন্যতা কাজ করে।

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ১১:৩০
Share: Save:

বয়সটা কম আর ইচ্ছে অনেক। স্বপ্নও আকাশ ছোঁয়ার। কিন্তু এর মাঝেই হয়ে যায় ছোটখাটো ছন্দপতন। সদ্য স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পা রাখার স্বপ্ন থাকে সমস্ত পড়ুয়ারই। কিন্তু তার মাঝেও লুকিয়ে থাকে নানা সমস্যা। যেমন কেউ পছন্দের মতো কলেজে ভর্তি হতে পারে না। তো কেউ নিজের ভাল লাগার বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পায় না। আবার কোথাও থাকে মা-বাবার স্বপ্নভঙ্গের চাপ। তা বলে কি থেমে যাবে স্বপ্নের উড়ান? মোটেই নয়। বরং বলা যায়, এখান থেকেই শুরুটা করতে হবে নতুন করে।

পছন্দের কলেজ না পাওয়া অথবা ভাল লাগার বিষয় নিয়ে পড়তে না পারার সমস্যাটা নতুন নয়। শহরের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ না পেলে অনেক পড়ুয়ার মনেই হীনমন্যতা কাজ করে। অন্য কলেজে ক্লাস করতে যেতে ইচ্ছে করে না। আবার ভাল লাগার বিষয় হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণাটাও মারাত্মক। যে ছেলেটি সারা জীবন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে মশগুল, সে যদি এন্ট্রান্সে সুযোগ না পায় এবং সাধারণ কোনও কোর্সে তাকে ভর্তি হতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তার পড়াশোনার ইচ্ছেটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আসলে স্বপ্নের উড়ান থেকে এক ধাক্কায় বাস্তবের সম্মুখীন হতে হলে, সমস্যাটা সন্তান এবং তার মা-বাবা দু’তরফেরই হয়। কিন্তু সমস্যাই শেষ কথা নয়। তা থেকে উত্তরণের পথ তো খুঁজতে হবে নিজেদেরই, তাই না? তাই রইল কয়েকটি সহজ সমাধানের উপায়।

প্রথমেই বলব, পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে পারার সুযোগ না পেলে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা অবশ্যই বন্ধ করে দিতে হবে। এতে পড়তে না পারার যন্ত্রণা সামান্য হলেও কমবে। বরং যে বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ হচ্ছে, তা নিয়ে মাথা ঘামানো জরুরি। ইন্টারনেটে সেই নতুন বিষয় নিয়ে ভাল করে খোঁজ করলে নানা সুযোগ সামনে আসবে। ফলে বিষয়টি সম্পর্কেও সম্যক ধারণা হবে, একই সঙ্গে তা নিয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথের দিশাও চোখের সামনে খুলে যাবে। তা ছাড়া, স্নাতক স্তরে কোনও একটি বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ না পেলে, পরেও যে সেটা নিয়ে চর্চা করা যাবে না, তা কিন্তু নয়।

স্কুল-পরবর্তী পড়াশোনার জন্য কোনও কলেজের পরিবেশ, সেখানকার পড়াশোনার ধরন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধরা যাক, কোনও পড়ুয়া একটি ভাল কলেজে অপছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পেল। এতে কলেজের পড়াশোনার গুণেই সেই পড়ুয়ার অপছন্দের বিষয়টির উপরে ভাল লাগা তৈরি হতে পারে। আবার ঠিক উল্টো সমস্যাটাও হতে পারে। যেমন অনেক পড়ুয়া পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পেল, অথচ কলেজ মনের মতো হল না। সে ক্ষেত্রে যদি পড়ুয়া স্নাতক স্তরে পছন্দের বিষয়ে ভাল ফল করে, স্নাতকোত্তর স্তরে পছন্দের কলেজে পড়ার সুযোগ পেতে পারে।

আবার রেজাল্ট, ভাল কলেজে সুযোগ না পাওয়ার সমস্যাটা কিন্তু শুধু প়ড়ুয়াদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তা সমানভাবে চিন্তায় ফেলে মা-বাবাকেও। সন্তানের পড়াশোনা এবং তার কেরিয়ার নিয়ে স্বপ্নের জাল বোনেন তাঁরাও। অর্থাৎ যে মা কিংবা বাবা নিজে ডাক্তার হতে পারেননি, তিনি অনেক সময়েই চান যে, তাঁর সন্তান ডাক্তার হয়ে দেখাক। অথচ সেই সন্তান সাহিত্য নিয়ে পড়েও অনেক বেশি উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। তাই মা-বাবারা যদি নিজেদের স্বপ্ন সন্তানের উপরে চাপিয়ে না দেন, তাতে সন্তানেরই মঙ্গল। সন্তানকে নিজের মতো এগিয়ে যেতে দিন। আবার কখনও মা-বাবা সন্তানকে যথেচ্ছ স্বাধীনতা দেন। ফলে তাঁদের ছেলে বা মেয়ে স্বাধীনতার মাঝেই কখনও ভুল পথ বেছে নেয়। সাম্প্রতিক অতীতে তেমন বেশ কয়েকটা ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, সন্তানের বিপথগামী হওয়ার পিছনে পেরেন্টিংয়ের ভুলও দায়ী। তাই আপনার সন্তানকে কতটা স্বাধীনতা দেবেন আর কোথায় দাঁড়ি টানবেন, সেটা পরিষ্কার হওয়াটা খুব জরুরি। প্রতিটি সন্তানের সঙ্গে তার মা-বাবার সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া ভিন্ন-ভিন্ন ধরনের। তাই এ ক্ষেত্রে জোর দিন নিজেদের সম্পর্ক ও সমঝোতার উপর।

কলেজ এবং বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সন্তানের অপছন্দটা মা-বাবারও খেয়াল রাখা জরুরি। প্রয়োজনে আপনারাও বিভিন্ন বিষয় এবং তার সুযোগ নিয়ে ইন্টারনেটে চর্চা করুন। খবর নিন। এতে কেরিয়ার নিয়ে সন্তানের সঙ্গে আলোচনার জায়গাও তৈরি হয়। সন্তান কোন কেরিয়ার বেছে নেবে, সেটা পুরোপুরি তাদের উপরে ছেড়ে না দিয়ে খোলাখুলি একসঙ্গে বসে আলোচনা করুন।
কোনও পছন্দের বিষয় নিয়ে সে যদি পড়তে না পারে, তখন তাকে বোঝান এবং নতুন বিষয় নিয়ে পড়ার আইডিয়া দিন। এতে সন্তানও কিন্তু কেরিয়ারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আপনার ভাবনাচিন্তার উপর নির্ভর করবে। সন্তানের মনোবল বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা থাকবে আপনার।

আপনার সন্তানের দৌড় কতটা, সেটা সবচেয়ে ভাল জানেন আপনি। তাই কোনও বছর আপনার সন্তান যদি কোনও পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়, তা হলে আর কত বার তাকে পরীক্ষায় বসতে হতে পারে, সে সম্পর্কে আন্দাজ আপনারও থাকবে। সে ক্ষেত্রে সন্তানকে ঠান্ডা মাথায় বোঝান। সংসারে উপার্জনের যতই দরকার থাকুক না কেন, ‘পড়াশোনা শেষে চাকরি পেতেই হবে’ এ রকম মানসিকতা মা-বাবার না দেখানোই ভাল। এতে সন্তানের উপরে মানসিক চাপ তৈরি হয়। অতিরিক্ত চাপ সন্তানের বেড়ে ওঠা বা পড়াশোনায় নিজেকে মেলে ধরার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে।

আরও একটা ব্যাপার খেয়াল রাখুন। সাধারণ কোর্সে পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক প্রফেশনাল কোর্সও থাকে। মা-বাবারা সে রকম কোর্সের ব্যাপারেও সন্তানদের আগ্রহী করে তুলতে পারেন। যেমন বুক পাবলিশিং, মাল্টিমিডিয়া অথবা মিউজিওলজির মতো কিছু প্রফেশনাল কোর্স করেও কিন্তু ভবিষ্যতে উন্নতি করা যায়। এই ভিন্ন ধরনের ভাবনা মা-বাবা সন্তানের মধ্যে যত ছড়িয়ে দিতে পারবেন, সন্তানের মানসিকতাও কিন্তু গড়পড়তা ভাবনা ছেড়ে ততই নতুন লক্ষ্যে পাড়ি দিতে পারবে...

রূম্পা দাস

তথ্য সহায়তা: পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subjects College
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE