Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নিস্তব্ধতার রং সবুজ

ডালহাউসি। নামটাতে যেরকম বিদেশি গন্ধ, পাহাড়ি শহরটাতেও তাই। হিমাচল প্রদেশের ছোট্ট টাউনটি ঘুরে দেখলেন পারমিতা সাহা হিমাচল প্রদেশের উত্তরপ্রান্তে ডালহাউসি শহর। যেন একটুকরো ইউরোপ। পরাধীন ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহাউসির নামানুসারে ব্রিটিশদের গ্রীষ্মাবকাশের ঠিকানাটির নামকরণ হয়। পাহাড়ি শহরটাকে খাস বিলিতি সৌন্দর্যবোধে সাজিয়েছিলেন তাঁরা।

সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ

সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

হিমাচল প্রদেশের উত্তরপ্রান্তে ডালহাউসি শহর। যেন একটুকরো ইউরোপ। পরাধীন ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহাউসির নামানুসারে ব্রিটিশদের গ্রীষ্মাবকাশের ঠিকানাটির নামকরণ হয়। পাহাড়ি শহরটাকে খাস বিলিতি সৌন্দর্যবোধে সাজিয়েছিলেন তাঁরা। তাই আজ স্বাধীনতার এত বছর পরও ব্রিটিশের পদধ্বনি অনুভূত হয় সমুদ্রতট থেকে ১,৯৭০ মিটার উচ্চতায় চাম্বা জেলার এই হিল স্টেশনে।

পাহাড় ঘেরা ডালহাউসির আর পাঁচটা হিল স্টেশনের চেয়ে ভিন্ন একটা রূপ আছে। আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়, তাতে ভর দিয়ে লম্বা-লম্বা পাইনের সারি, ওক, রডোডেনড্রন, সবুজেরও কত বৈচিত্র! পাহাড় আর পাইনের এহেন সমাহার দেখে মনে উঁকি দেয় অন্য এক মহাদেশের সিগনেচার ‘নেচার স্টাইল’। এর মাঝে বহুদূরে দেখা যায় বরফ ঢাকা পিরপঞ্জালের রাজকীয় উপস্থিতি। আর শহরটা? ভিক্টোরীয় স্টাইলে তৈরি প্রাসাদোপম ম্যানসন, স্কটিশ স্থাপত্য, ব্রিটিশ স্থাপত্যে তৈরি চার্চ... সব মিলিয়ে পুরনো এক দুনিয়ায় ঘুরে আসে ভ্রমণপিপাসু মন।

এবার আসি আশপাশে কী-কী দেখবেন সে প্রসঙ্গে।

খাজিয়ার

শপিং, খাওয়াদাওয়া, গাড়ির হর্ন, দোকানপাট... হিলস্টেশনের ম্যালের চরিত্র, স্থানভেদে মোটামুটি এক। ডালহাউসির তিনটি ম্যাল। গাঁধী চকের থেকে প্রায় হাজার ফুট উঁচুতে যে ম্যালটি রয়েছে, তা দেখনদারির দিক থেকে অপূর্ব এবং ম্যাল তিনটির মধ্যে সবচেয়ে বড়ও বটে।

২৭৫৫ মিটার উচ্চতায় ডাইনকুণ্ড থেকে প্রকৃতির আরও ভার্জিন রূপের সঙ্গে পরিচয়। পুরো ভ্যালির একটা অনবদ্য ভিউ দেখার সৌভাগ্য হয়, যদি আকাশ থাকে পরিষ্কার। ধৌলধার রেঞ্জও এখান খুব ভাল দেখা যায়। এই পাহাড়টির ডাকনাম সিংগিং হিল, বাতাস বইলে পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে তার অনুরণন যেন গানের মতো শোনায়। পাহাড় চুড়োয় আছে ফোলানি দেবীর মন্দির এবং ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের বেস।

ডালহাউসি থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বে পাঁচ পুলা। তীব্র গতিতে নেমে আসা জলের ধারা ও ঝরনার কারণে চারদিকে পাহাড় ঘেরা জায়গাটি মোহময়। আশপাশের শহরে এখান থেকেই জল সরবরাহ করা হয়। বোটিংও করতে পারেন, ছবি তোলার খুব সুন্দর অনেকগুলো স্পট রয়েছে। বিরাট মনুমেন্টের কাছ থেকে অনেকগুলো জলধারা একসঙ্গে মেশার দৃশ্যটি দেখা যায়।

কালাটপ ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি এখানকার একটি অন্যতম দর্শনীয় জায়গা। স্যাংচুয়ারির মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৫টি গ্রাম। ঘন দেবদারু গাছে ঢাকা এই জায়গায় একটা নির্দিষ্ট পয়েন্টের পর আর গাড়ি যায় না। কালাটপ থেকে ডালহাউসির একটি ট্রেকিংয়েরও রুট আছে। তাই পায়ে জোর এবং মনে পিরপঞ্জালের মাইন্ডব্লোয়িং ভিউ দেখার ইচ্ছে থাকলে, হেঁটে-হেঁটে টপে পৌঁছন। স্যাংচুয়ারির ভিতর নানারকম পশুপাখির আস্তানা। জায়গাটি নির্জন বলে একা যাওয়ার ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। কালাটপ থেকে প্যারাগ্লাইডিংয়েরও সুযোগ আছে।

সুভাষচন্দ্র বসু-র নামে নামাঙ্কিত ঝরনা ‘সুভাষ বাওলি’। শোনা যায়, টিউবারকিউলোসিসে আক্রান্ত হয়ে নেতাজি ডালহাউসিতে মাস সাতেক ছিলেন এবং এখানকার জল নিয়মিত পান করে সুস্থ হয়েছিলেন। পাইন বেষ্টিত ঝরনাটি ছবির মতো সুন্দর।

খাজিয়ার! ভারতের সুইজ়ারল্যান্ড বা হিমাচলের গুলমার্গ, সুন্দরীকে ডাকতে পারেন যে কোনও নামে।

ঘন সবুজ ঘাসে ঢাকা খাজিয়ার আসলে ছবির মতো এক মালভূমি, মাঝখানে রয়েছে নীলের স্পর্শ। ছোট্ট এক লেক। চারপাশে মানুষের চেয়েও বেশি লম্বা ঘাসের বেড়াজাল। এখানকার নাইন-হোল গল‌্ফ কোর্সটিও দ্রষ্টব্য। রূপসী খাজিয়ারকে অনেকটা সময় নিয়ে দেখে, আশ মিটিয়ে ছবি তুলে জ়োরবিংয়ের মতো অ্যাডভেঞ্চারাস স্পোর্টসের মজা নিতে পারেন।

ডালহাউসির বিলিতি ফিল-টা অনুভব করার জন্য সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চে অবশ্যই যাবেন। ১৮৯৪ সালে তৈরি সুভাষ চকের এই গির্জাটি পুরনো ধাঁচের ব্রিটিশ স্থাপত্যে তৈরি। গুরুগম্ভীর পাথরের কারুকার্য করা চার্চে অদ্ভুত নিস্তব্ধতা বিরাজমান। মনে হয়, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বোধ হয়, হঠাৎ করেই কোনও ওয়ান্ডারল্যান্ডে পৌঁছে গিয়েছি! ডিজাইন করা কাচের বাহারও মুগ্ধ করে। ভিক্টোরিয়ান স্টাইলে তৈরি গাঁধী চকের সেন্ট জর্জ চার্চটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটেস্ট্যান্ট মিশনারিরা ব্রিটিশ আমলে এটি তৈরি করেছিল।

ডালহাউসি ম্যাল

শপিং ও স্ট্রিট ফুড

নানা রকম হ্যান্ডিক্রাফট আইটেম, কাঠের বাহারি জিনিস, সূক্ষ্ম কারুকাজ করা ছোট-ছোট জুয়েলারি, কার্পেট, শাল ও তিব্বতি জিনিসে সাজানো তিনটি ম্যালে গেলে, পকেট ফাঁকা হতে বেশি সময় লাগে না। সেই সঙ্গে রাস্তা জুড়ে রয়েছে স্ট্রিট ফুডের সারি। মোমো, ম্যাগি, স্মাইলি তো বটেই, এখানকার চানাচাট খেতে ভুলবেন না। মোটা গোল পাউরুটির মধ্যে ভরে দেওয়া চানামশলা খেতে অসাধারণ। ম্যালে আপনি সকালে উঠে ঘুরে আসতে পারেন আবার সন্ধেবেলাতেও যেতে পারেন। দোকান বহুক্ষণ খোলা থাকে।

পাঁচ পুলা

কীভাবে যাবেন

সরাসরি ডালহাউসি যাওয়ার কোনও উপায় নেই। কলকাতা থেকে ট্রেনে চলে যান পাঠানকোট বা অমৃতসর। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ডালহাউসি। অমৃতসর থেকে ডালহাউসির দূরত্ব ৮০ কিমি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dalhousie
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE