Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিদ্বন্দ্বী

এক সময় সিনে দুনিয়ায় তাঁদের মধ্যে রেষারেষি ছিল চরম। কিন্তু আজ তিরিশ বছর পর প্রিয় বন্ধু স্মিতা পাটিল-য়ের জন্য শাবানা আজমি-র চোখে শুধুই জল। শুনলেন ভার্জিনিয়া ভাচা এক সময় সিনে দুনিয়ায় তাঁদের মধ্যে রেষারেষি ছিল চরম। কিন্তু আজ তিরিশ বছর পর প্রিয় বন্ধু স্মিতা পাটিল-য়ের জন্য শাবানা আজমি-র চোখে শুধুই জল। শুনলেন ভার্জিনিয়া ভাচা

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩৫
Share: Save:

স্মিতা।

আমার মনের এক নরম জায়গা।

অদ্ভুতভাবে আমাদের দু’জনের একটা আত্মিক যোগ থেকেই গিয়েছিল। দু’জনের একই ব্যাকগ্রাউন্ড, একই পরিচালকের কাছে হাতেখড়ি, একই ধরনের সিনেমা করেছি... এমনকী দু’জনের দৃষ্টিভঙ্গিটাও প্রায় এক।

দু’জনের এত মিল!

আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় দু’জনের মধ্যে টেনশনের চোরাস্রোতটা না-থাকলে আমরা ভয়ঙ্কর এক শক্তি হয়ে উঠতে পারতাম।

কিন্তু পারিনি।

ওই যে বললাম চোরাস্রোত! অনেক সময় পরিচালকেরাও সুযোগ বুঝে আমাদের টেনশনের কথা মাথায় রেখে আমাদের দিয়ে নানা রকমের সংলাপ বলিয়ে নিতেন।

‘অর্থ’‌ ছবির একটা দৃশ্য বেশ মনে আছে। যে দৃশ্যে আমি পার্টিতে স্মিতাকে অপমান করব। প্রচণ্ড মদ খেয়ে আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করব, ‘‘ওর মধ্যে কী এমন আছে, যা আমার নেই?’’

আমি তো বেশ ঘাবড়ে ছিলাম দৃশ্যটা নিয়ে। স্মিতাও নিশ্চয়ই খুব একটা স্বচ্ছন্দ ছিল না। ও ফস করে সে দিনের শ্যুটিংটাই বাতিল করে দিল। আমি এত প্রস্তুতি নিয়েছিলাম যে, আমার ভীষণ খারাপ লেগেছিল ঘটনাটা। পরে জেনেছিলাম, ওর নিজের কস্টিউমটা পছন্দ হয়নি। চিত্রনাট্যকার বাবুরাম ইশহারা এসে বলেছিল, ‘‘আমার মনে হয় না দৃশ্যটা আদৌ ভাল। পূজার মতো মেয়ে ও রকম ব্যবহার করবে না। সিনটা এ ভাবে করারই কোনও মানে হয় না।’’ আমি আরও ঘাবড়ে গেলাম।

তবে কি কেউ ইচ্ছে করেই…

আমি তো সিনটা করার জন্য পুরো তৈরি। বাবুরাম খুব একটা কনজারভেটিভ নন, তিনিও যখন এমন বলছেন। আমি কী করব বুঝে পাচ্ছিলাম না।

এমন সময় মহেশ ভট্টর স্ত্রী কিরণ সেটে হাজির।

কিরণকে পুরো সিনটা বললাম। সবাই কী বলছে, সেটাও বললাম। কিরণ তো লাফিয়ে উঠল, ‘‘কেন করবে না। আমি হলে তো মুখে জুতো মারতাম!’’ কিরণের কথা শুনে বুকে বল পেলাম।

আসলে আমি তো কিরণের চরিত্রটাই করছি। ও যখন বলছে, তা হলে আমার প্রস্তুতি ঠিকই আছে।

তবে তাতে স্মিতার সমস্যা কিছু কম হল না। সেটে একগাদা লোকের সামনে ওকেই তো অপমানিত হতে হবে। বলতে সহজ শোনালেও অভিনয় করাটা বেশ শক্ত। যাই হোক, আমরা শেষমেশ করেছিলাম সিনটা।

‘অর্থ’য়ে কবিতার মতো ছোট চরিত্র পেয়েও কাজটা ও ভালবেসে করেছিল। কিন্তু ছবিটা রিলিজ করার পর ওর মনে হয়েছিল ‘অন্য নারী’র ভূমিকায় হয়ত অভিনয় না করলেও পারত। তখন কিন্তু রাজ বব্বরের সঙ্গে ওর প্রেম চলছে। অভিনয় আর জীবন কোথাও একটা জাস্টিফিকেশনের জায়গা খুঁজছিল ও।

আরেকটু পরিষ্কার করে বলি। মহেশ(ভট্ট) কিন্তু ‘অর্থ’-য়ে স্মিতাকে অতিথি শিল্পী হিসেবে ‘বাঈ’-য়ের চরিত্র করার কথা বলেছিলেন। যেটা পরে রোহিণী হাট্টাঙ্গড়ি করেন। কিন্তু চিত্রনাট্য পড়ে স্মিতা এতটাই মুগ্ধ হয়ে যায় যে নিজে থেকেই বলেছিল, ‘‘আই উইল প্লে দ্য আদার উওমেন।’’

কিন্তু মুক্তির পর দেখা গেল ছবিটা পুরোটাই পূজার গল্প। আসলে মহেশ ভট্ট-র স্ত্রী কিরণের কথা ভেবেই ‘অর্থ’ তৈরি হয়েছিল। স্মিতার মনে হয়েছিল মহেশ ওকে ঠিকমতো ব্যবহার করেনি। ওর খারাপ লেগেছিল। আমারও মনে হয়েছিল ওর সঙ্গে যেটা হয়েছিল সেটা ঠিক হয়নি। সত্যিই তো কী অসাধারণ কাজ করেছিল ও ছবিতে। নিজেকে উজা়ড় করে দিয়েছিল। ওর অভিনয় ক্ষমতার জন্যই চরিত্রটা এত জীবন্ত হয়ে উঠেছিল।

আজ যদি আবার নতুন করে ‘অর্থ’ করতে হয় আমি কবিতার চরিত্রটা, যেটা স্মিতা করেছিল, তাকে শুধু একপেশে করে, দোষী করে দেখাব না। যদিও গল্পটা একরকম রাখার জন্য পূজা প্রোটাগনিস্ট থাকবে।

বিজয় তেন্ডুলকর খুব চমৎকার কয়েকটা কথা বলেছিলেন। ‘‘স্মিতার মতো ব্যক্তিত্বকে ‘অর্থ’য়ে কাস্ট করাটাই বিশাল ভুল। ছবিতে ওর জন্য আরও অনেক দৃশ্য তৈরি করা উচিত ছিল। পূজাকে বড় করে দেখাতে গিয়ে ওই চরিত্রটাকে ছোট করে দেখানো হয়েছিল।’’ এ রকমভাবে আর কেউ ‘অর্থ’য়ের ব্যাখ্যা করেনি।

স্মিতার সঙ্গে আমার সম্পর্কটাও কেমন যেন বয়ে চলা নদীর মতো। নদী কখনও খরস্রোতা, কখনও বা শান্ত, কখনও বা মোহনার সঙ্গে মিলনের জন্য উন্মুখ! আমাদেরও তাই কখনও ঝগড়া কখনও ভাব।

‘অর্থ’ ছবিতে স্মিতা পাটিল ও শাবানা আজমি

•প্রথম যে দিন দেখেছিলাম

এটা মনে করতে গেলেই ওর চোখ দুটো ভেসে ওঠে।

লং শটে ধরা হয়েছে ওকে।

স্মিতা তানপুরায় সুর ভাঁজছে। দূরত্ব কমছে... ক্যামেরায় বড় হয়ে উঠছে ওর মুখ। তানপুরার সুর আর স্মিতার মুখের ভাঁজ কোথাও মিলেমিশে একাকার।

অরুণ খোপকারের ‘তীব্র মধ্যম’ ছবিতে এই দৃশ্য যে দিন প্রথম দেখি আমি বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে পারিনি! পরে জেনেছিলাম ওই মুখের নাম স্মিতা পাটিল। ফিল্ম ইনস্টিটিউটে থাকাকালীন এই ছবিটা তৈরি করেছিলেন অরুণ খোপকার। আমি এই ছবিটা একটা ডিপ্লোমা ফিল্ম হিসেবে দেখেছিলাম। পরে জেনেছি দূরদর্শনে স্মিতা নিউজ রিডার ছিল। এবং শ্যাম বেনেগলই প্রথম ছোটদের ছবি ‘চরণদাস চোর’-য়ে তাঁকে কাস্ট করেন।

এটুকুই ছিল স্মিতাকে জানার পরিধি।

যখন ‘নিশান্ত’ করলাম তখনই অভিনেত্রী স্মিতা পাটিলকে বুঝতে আরম্ভ করলাম। ক্যামেরার বাইরে ছোটখাট চুলবুলে একটা মেয়ে। কিন্তু পর্দায় দৃপ্ত, বলিষ্ঠ, পরিণত একজন মহিলা। আমার মনে পড়ছে একটা দৃশ্যের কথা। স্মিতার স্বামী আমার প্রেমে পাগল। স্বভাবতই ওর সঙ্গে আমার খুব একটা ভাল সম্পর্ক নয় — কিন্তু কোথাও একটা গিয়ে স্মিতা একজন মেয়ে হিসেবে আমার প্রতি সহানুভূতিশীল— কারণ আমি ছবিতে খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি।

এর পর থেকে আমাদের একটা বন্ডিং তৈরি হয়ে যায়। ওই দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়েও আমার মনে হয়েছিল স্মিতা সত্যিই যেন আমার বন্ধু। ওর ওপর কেমন যেন নির্ভরতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

পরবর্তী কালে প্রচুর ফিল্মে একসঙ্গে কাজ করেছি আমরা। যত সময় গেছে একটু একটু করে খোলস ছেড়ে ও যেন বেরিয়ে এসেছে আমার সামনে। মুহূর্তে ভেঙে পড়া, আবার পরমুহূর্তেই মনকে শক্ত করে ফেলা এক অভিনেত্রী।

আসলে ছোটখাট কথাতেও মন খারাপ হয়ে যেত ওর। আবার ইচ্ছে হল তো সেই নরমসরম মনের মেয়েই বন্ধু দিলশাদের সঙ্গে জিপ নিয়ে বেরিয়ে পড়ত এক দেশ থেকে আরেক দেশে। এও শুনেছি দরকার পড়লে হাইওয়েতে গাড়ির টায়ারও সারিয়েছে নিজে। দারুণ বাইক চালাতে পারত স্মিতা। পেশাদার বাইক চালকদেরও রীতিমতো হার মানাতে পারত।

‘মান্ডি’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময় লক্ষ করেছি স্মিতা বেশ ডানপিটে। মাঝে মাঝেই মনে হতো, আমরা দু’জন যেন দুই মেরুর বাসিন্দা। ও কখনও হয়তো ভলিবল খেলছে, কখনও আবার ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা মারছে। উল্টো দিকে আমি বরাবরই চুপচাপ থাকতাম। শট দিয়ে এসে সেটের এক কোণে বসে বই পড়তাম।

তিরিশ বছর হয়ে গেল ও চলে গেছে। এখনও যখন ওর কথা ভাবি মনে হয় একই মানুষের মধ্যে এত রকমের শেড, বৈপরীত্য!

আমার ওকে বেশ ভাল লেগেছিল ‘মান্ডি’তে। একটা সিন ছিল, যেখানে আমি ঘরে ঢুকে পড়াতে ও খিলখিল করে হাসতে হাসতে সরে যাবে, কারণ ওর প্রেমিক খাটের নীচে লুকিয়ে। অসাধারণ অভিনয় করেছিল ও। তবে অদূরদর্শিতাও ছিল ওর মধ্যে। আর একটু দুষ্টু স্বভাব। ও বাঁচত শুধু মুহূর্তের জন্য।

•একটা মজার গল্প বলি

পেটের সমস্যায় প্রায়ই ভুগত স্মিতা। শ্যাম বেনেগলও যেমন ভুগতেন। একটা ঘটনার কথা স্পষ্ট মনে পড়ছে। শ্যুটিংয়ের লোকেশন ছিল প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে। সেটে যাওয়ার জন্য আমাকে আর স্মিতাকে আলাদা আলাদা গাড়ি দেওয়া হয়েছিল। তবে ‘মান্ডি’র কাস্টটাই ছিল অন্য রকম। প্রায় সবাই পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট বা ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে আসা। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে ওরা সবাই মিলে হয় ডাম্ব শ্যারাড খেলছে, নয়তো অন্তাক্ষরী। আমি আর স্মিতা ঠিক করলাম ওদের সঙ্গে যাব। তা হলে বেশ মজা করা যাবে।

একদিন শ্যুটিং থেকে ফেরার পথে বন্ধু ইলা অরুণ একটা মজার গল্প বলেছিল। ওদের সঙ্গে একদিন রাতে নাকি হোটেলে ফেরার পথে স্মিতার বাথরুমে যাওয়ার দরকার পড়েছিল। রাত তখন সাড়ে ন’টা। এ দিকে রাস্তা শুনশান। উপায় না-দেখে রাস্তার ধারের এক বাড়িতে ঢুকে ছোটখাটো চেহারার স্মিতাকে দেখিয়ে বলেছিল, ‘‘এই বাচ্চাটা একটু বাথরুমে যাবে।’’ স্মিতা বাথরুমে গেল। বাড়ির মালিক তখনও বোঝেননি যে তাঁর বাথরুমে ঢুকল তারকা স্মিতা পাটিল।

তবে এ সব তো আর বেশি সময় চেপে রাখা যায় না। একটু পরে মালিক যখন বুঝতে পারলেন, শুরু হল বাথরুমের দরজায় কড়া নাড়া। সঙ্গে চিল চিৎকার, ‘‘আরে, আপনিই স্মিতা পাটিল!’’ বেচারা স্মিতা না পারছে বেরোতে, না কারওকে ডাকতে। আসলে স্মিতাকে নিয়ে লোকজনের পাগলামিটা এমনই। আমার বেশ মজা লেগেছিল ঘটনাটা শুনে।

•আজ মনে হয়...

স্বীকার করছি, আমি বেশ নির্মম ছিলাম স্মিতার প্রতি। আর সেটা নিয়ে আমার অনুশোচনাও হয়। ওর সম্বন্ধে অনেক রূঢ় কথা বলেছি, যেগুলো না বললেই ভাল হতো। আসলে তখন ভেসে গিয়েছিলাম। বাহাদুরি দেখিয়ে লোকে অনেক সময় অনেক কিছু করে, পরে বুঝতে পারে সেটা ঠিক হয়নি।

অনেক সময় আমাদের মতবিরোধ হয়েছে। মিডিয়াও আমাদের মুখোমুখি বসিয়ে লড়িয়ে দিত। একবার তো জাভেদ (আখতার) বলেই বসল, ‘‘কী বোকার মতো তোমাদের দু’জনকে লড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে! তোমাদের দু’জনের এত মিল, তোমাদের ব্যাকগ্রাউন্ডও এক। তোমাদের তো একটা ফোর্স হিসেবে কাজ করা উচিত ছিল।’’ আমরা এর পরেও একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটা হয়নি।

ও কিন্তু অনেক চেষ্টাও করেছিল।

একদিন আচমকা আমার জানকী কুটিরের বাড়িতে এসে হাজির স্মিতা। সারা দিনটা কাটিয়ে ছিল আমার বাড়িতে। কবি সিলভিয়া প্লাথের লেখা ওর খুব পছন্দের। সারাদিন অনবরত সিলভিয়া প্লাথ নিয়ে কথা বলে গেল। আমি জারমাইন গ্রিয়র আর সিমন ডি’ভরয়ের খুব ফ্যান। দু’জনেই ফেমিনিজমের প্রথম ধাপে আছি তখন। আমরা সে সব নিয়ে কথা বলে গেলাম। কখনও জিজ্ঞেস করিনি সে দিন কেন হঠাৎ এসেছিল আমার বাড়ি। কিন্তু একটা বন্ডিং তৈরি হয়ে গিয়েছিল সে দিনই।

আমি আর স্মিতা দর্শকদের মনে কিন্তু একসঙ্গে থাকতাম। যে বার পাকিস্তান গেলাম, এমন একজন মানুষও পাইনি যাঁরা আমার ছবির কথা বলতে গিয়ে স্মিতার কথা বলেনি। যত দূর মনে পড়ছে প্রত্যেকেই, হ্যাঁ প্রত্যেকেই বলেছিল— ‘‘ইয়োর্স অ্যান্ড স্মিতা পাটিল’স ফিল্মস।’’ পাকিস্তান থেকে ফিরে স্মিতার মাকে গল্প করেছিলাম। বলেছিলাম, আমরা কিন্তু খুব সহজেই শাবানা-পাটিল, স্মিতা-আজমি হয়ে থাকতে পারি। মানুষের স্মৃতি অন্তত সেই কথাই বলে।

এত তিক্ত সম্পর্ক ছিল আমাদের, তবুও ক্যামেরার সামনে এলে সে সম্পর্কের ছাপ আর দেখা যেত না। দু’জনেই সেটা করতাম যেটা দু’জন চরম পেশাদার অভিনেত্রীর করা উচিত। আর তাই মনে হয় লোকে আমাদের এত পছন্দ করত।

প্রতিযোগিতা থাকলেও আমাদের সম্পর্কে একটা পারষ্পরিক সম্মানের জায়গা ছিল। আমরা একে অপরের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। মনে আছে ‘বাজার’ ছবিতে আমার মা একটা ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। শ্যুটের জন্য তখন স্মিতা রক ক্যাসেল নামের একটি ছোট হোটেলে ছিল। স্মিতা ‘বাজার’য়ের নায়িকা। হোটেলের বেস্ট রুমটা ওকে দেওয়া হয়েছিল। স্মিতা যখন জানল আমার মা আসছে, কোনও কিছু না ভেবেই ওর রুমটা মাকে ছেড়ে দেয়। আর নিজে একটা ছোট্ট রুমে গিয়ে ওঠে। ওর এই আন্তরিকতা কোনও দিন ভুলব না। সে দিন বুঝেছিলাম কী ধরনের মূল্যবোধ নিয়ে ও বড় হয়েছে। আমার বাবার সঙ্গেও ওর খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। কাজ নিয়ে ওর আর আমার মধ্যে টেনশন থাকলেও আমাদের ফ্যামিলিতে তার প্রভাব পড়েনি।

অন্য দিকে স্মিতার পরিবারও আমাকে ওদের মেয়ের মতো দেখেছে। ওর বড় বোন অনিতার সঙ্গে তো আমার খুব ভাল সম্পর্ক। বিশেষ করে স্মিতা চলে যাওয়ার পর আমি আর ও আরও ঘনিষ্ঠ হই। স্মিতার মতোই অনিতার সঙ্গে আমার প্রচুর মিল। সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে এই যে আমার পরিচয় তার অনেকটাই স্মিতার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। স্মিতার মায়ের অনেক স্লাম প্রজেক্টে আমি কাজ করেছি।

অনিতা ইন্ডিয়ান ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ইন শিকাগো নামে একটা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল। আমি তাদের হয়েও কাজ করেছি। অনিতার সঙ্গে সম্পর্কটা আজও একই রকম। স্মিতার চলে যাওয়ার পরে প্রতীকই যেন আরও বেশি করে সামনে এসে দাঁড়ায়! প্রতীকের সঙ্গে এখনও আমার যোগাযোগ রয়েছে। একটা সময় তো অনেক বেশি কথা হতো আমাদের। এখন তো আর প্রায় দেখাই যায় না ওকে। কখনও কখনও ওর বাবা ফোন করে আমাকে বলে, বাড়ি যেতে। আমি গিয়ে দেখা করে আসি। এটা চলছে...

•সেই প্রতীক!

আজ যখন প্রতীককে দেখি তখন এমন একটা মায়া হয় যেটা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ওর মা বেঁচে থাকলে ওর জীবনটাই তো অন্যরকম হতো! ওকে দেখলেই সেই ভয়াবহ সময়টার কথা মনে পড়ে। প্রতীক হওয়ার সময় ওর অবস্থা খারাপ হতে পারে এই আশঙ্কায় ডাক্তার ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলেন। স্মিতা কিছুতেই বাড়ি ছেড়ে যাবে না। যাবে না। কিছুতেই যাবে না...দরজা ধরে বলতে শুরু করল ‘প্লিজ, আমাকে নিয়ে যেও না’। যেন ও বুঝতেই পেরেছিল এ বার বাড়ি থেকে বেরোলে, আর ফেরা হবে না...

ফিরল না স্মিতা! শোকের আগুন নিয়ে গেল ওকে। আজ ও থাকলে শুধু প্রতীকের নয়, হয়তো আমার জীবনটাও অন্যরকম হয়ে যেত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shabana Azmi Smita Patil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE