Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

প্রতিনিয়তই প্রাসঙ্গিক

অমিয় দেব তাঁর ‘গোরা’ নিয়ে রচনাটির শেষ প্রান্তে এসে লিখছেন, এই উপন্যাসটি ‘‘ইজ নট জাস্ট আ কোর্স অব ইভেন্টস অ্যান্ড ইটস সাবজেক্ট-অবজেক্ট-এজেন্সি, বাট অলসো ইটস প্লেস, ইজ প্রুভড বাই গোরা টু অ্যাজ বাই মেনি আদার মডার্ন ‘এপিকস’।’’

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ০০:২১
Share: Save:

রিরিডিং টেগোর

লেখক: অমিয় দেব

৪৫০.০০

পেপার মিসাইল, নিয়োগী বুকস

গোরা পড়তে পড়তে মনে হয় রবীন্দ্রনাথ যেন পাঠকের মনের মধ্যে অদৃশ্য এক মানচিত্র এঁকে দিচ্ছিলেন কলকাতার, যা কোনও অংশে কম নয় যে ভাবে বালজাকের লেখায় প্যারিস বা দস্তয়েভস্কির লেখায় সেন্ট পিটার্সবার্গ উঠে আসে তার থেকে। অমিয় দেব তাঁর ‘গোরা’ নিয়ে রচনাটির শেষ প্রান্তে এসে লিখছেন, এই উপন্যাসটি ‘‘ইজ নট জাস্ট আ কোর্স অব ইভেন্টস অ্যান্ড ইটস সাবজেক্ট-অবজেক্ট-এজেন্সি, বাট অলসো ইটস প্লেস, ইজ প্রুভড বাই গোরা টু অ্যাজ বাই মেনি আদার মডার্ন ‘এপিকস’।’’ একই ভাবে দীর্ঘ গভীর রচনা ‘যোগাযোগ’ বা ‘চার অধ্যায়’ উপন্যাস নিয়ে। সেখানে প্রথমটিতে সম্পর্কের টানাপড়েনের বুনট, আর তাতে ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্রের সঙ্গে আকাশচুম্বি ধনতন্ত্রের শ্রেণিগত সংঘাত... কী ভাবে উপন্যাসটি প্রিয় হয়ে উঠল নিজের কাছে, লিখেছেন অমিয়বাবু, লিখেছেন পরের উপন্যাসটিতে দেশাত্মবোধের ছদ্মবেশে সন্ত্রাস কী ভাবে আদর্শের অপচয় ঘটায়, তাও। ব্যক্তি এবং বিশ্ব প্রায় পরিপূরকের মতো কেমন ব্যাপ্ত হয়ে থাকে রবীন্দ্ররচনায়, নিসর্গ কেমন ছেয়ে থাকে রবীন্দ্রকবিতায়, এমন নানা প্রসঙ্গ লেখকের রচনার বিষয়। আলোচনায় যেমন আছে ‘ডাকঘর’, ‘মুক্তধারা’ নাটক, তেমনই ‘পূজা’ পর্যায়ের গান। বিভিন্ন সময়ের লেখা এগুলি, গ্রন্থিত করার সময়ে নামকরণে ‘ফিরে পড়া’র অনুষঙ্গটি এনে খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন লেখক— আমাদের কাছে রবীন্দ্রনাথ এখনও কতখানি প্রাসঙ্গিক প্রতিনিয়ত: ‘কাম, লেট আস রিড অ্যাজ মাচ টেগোর অ্যাজ পসিবল।’

গীতাঞ্জলি-সমালোচনা প্রতিবাদ/ উপেন্দ্রকুমার কর

সম্পাদক: উষারঞ্জন ভট্টাচার্য

২৭৫.০০

গাঙচিল

রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির খবর প্রকাশিত হয় ১৯১৩-র নভেম্বরে। ১৯১৪-র গোড়ায় ভুবনমোহন বিদ্যার্ণব-সম্পাদিত সুরমা-বরাকের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘সুরমা’য় তিন কিস্তিতে প্রকাশ পায় গীতাঞ্জলি-কে কেন্দ্রে রেখে তীব্র রবীন্দ্র-সমালোচনা। লেখকের নাম ছিল না। শ্রীহট্ট-কাছাড়ের রবীন্দ্রানুরাগীদের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটল আইনজীবী লেখক উপেন্দ্রকুমার করের (১৮৭৭-১৯৫৪)কলমে, ‘সুরমা’ পত্রিকাতেই ছাপা হল তাঁর কয়েকটি প্রতিবাদ-নিবন্ধ। এইগুলির সঙ্গে আরও কয়েকটি অপ্রকাশিত নিবন্ধ যুক্ত হয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯১৪-য় প্রকাশিত হল গীতাঞ্জলি-সমালোচনা (প্রতিবাদ) বইটি। গীতাঞ্জলি বিষয়ে এই প্রথম আলোচনাগ্রন্থটি রসিকমহলে সমাদৃত হয়েছিল। বইটি পেয়ে রবীন্দ্রনাথ উপেন্দ্রকুমারকে চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘‘... এই গানগুলি আমারই জীবনপথের পাথেয়— এগুলি আর কেহই যদি গ্রহণ না করেন তথাপি আমার ইহা কাজে লাগিতেছে সেই আমার লাভ।’’ উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে রবীন্দ্র-সম্পর্কের তথ্য সন্ধানের পর্বে উষারঞ্জন ভট্টাচার্য দুর্লভ এই বইটির সন্ধান পান। ডিব্রুগড়ের বিরাজ আশ্রমের গ্রন্থাগারের আনুকূল্যে এ বার প্রকাশ পেল উপেন্দ্রকুমারের বইটির প্রতিলিপি-সংস্করণ। দীর্ঘ ভূমিকায় সম্পাদক রবীন্দ্র-বিদূষণের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বইটিকে স্থাপন করে তার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। বিস্মৃতির অন্তরাল থেকে তুলে এনেছেন উপেন্দ্রকুমারকেও। রবীন্দ্রনাথের উল্লেখিত চিঠিটি সত্যিই এক অনবদ্য দলিল, যা এই সংস্করণটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।

আমার পিতৃদেব/ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সম্পাদক: অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য ও গৌতম ভট্টাচার্য

২০০.০০

আশাদীপ

রবীন্দ্রনাথ তাঁর জন্মের পর চল্লিশ বছর পিতা দেবেন্দ্রনাথকে কাছ থেকে দেখেছেন, কাছে পেয়েছেন। যে হেতু কবি বালক বয়সেই মা সারদা দেবীকে হারিয়েছিলেন, তাই পিতা-পুত্রের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর ও স্নেহপূর্ণ হয়ে ওঠে। যে স্নেহ মহর্ষির অন্য পুত্র-কন্যারা তাঁদের পিতৃদেবের কাছ থেকে পাননি। রবীন্দ্রনাথ ‘জীবনস্মৃতি’তে লিখেছেন, ‘‘আমার বেশ মনে আছে, মেজদাদার কোনো চিঠিতে ছিল তিনি ‘কর্মক্ষেত্রে গলবদ্ধ রজ্জু’ হইয়া খাটিয়া মরিতেছেন— সেই স্থানের কয়েকটি বাক্য লইয়া পিতা আমাকে তার অর্থ জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, আমি যেরূপ অর্থ করিয়াছিলাম তাহা তাঁহার মনোনীত হয় নাই, তিনি অন্য অর্থ করিলেন। কিন্তু, আমার এমন ধৃষ্টতা ছিল যে সে-অর্থ আমি স্বীকার করিতে চাহিলাম না। তাহা লইয়া অনেকক্ষণ তাঁহার সঙ্গে তর্ক করিয়াছিলাম। আর-কেহ হইলে নিশ্চয় আমাকে ধমক দিয়া নিরস্ত করিয়া দিতেন, কিন্তু তিনি ধৈর্যের সঙ্গে আমার সমস্ত প্রতিবাদ সহ্য করিয়া আমাকে বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন।’’ বঙ্গীয় সংস্কৃতিতে দেবেন্দ্রনাথের অবদান অবিস্মরণীয়। কিন্তু তাঁর পুত্র-কন্যাদের কেউই তাঁর জীবনকাহিনি রচনায় এগিয়ে আসেননি। তবে রবীন্দ্রনাথের জীবনে মহর্ষির ভূমিকা ছিল অসীম। তাই ‘জীবনস্মৃতি’ থেকে শুরু করে নানা স্মৃতিকথায়, লেখায়, বক্তৃতায়, চিঠিপত্রে রবীন্দ্রনাথ পিতৃদেবের প্রসঙ্গ বারেবারেই উল্লেখ করেছেন। পিতাকে নিয়ে কবির সেই সমস্ত লেখার সংকলনই এই বই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Book Review Books
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE