Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ব্যস্ত জীবনেও দৃশ্যমান শ্রীকৃষ্ণ

প্রীতম কাঞ্জিলাল নিজেকে প্রকাশের জন্য ব্যবহার করেন রেখা, বিন্দু, এবং খোদাই করা অক্ষর বা লিপি এবং রং। তিনি অন্তত ১৫টি দলীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন।

সেলিব্রেশন: অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত প্রীতম কাঞ্জিলালের একক প্রদর্শনীর একটি ছবি

সেলিব্রেশন: অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত প্রীতম কাঞ্জিলালের একক প্রদর্শনীর একটি ছবি

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

অ্যাকাডেমির উদ্যোগে দেখতে পাওয়ার সুযোগ হল প্রীতম কাঞ্জিলালের প্রথম একক প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘সেলিব্রেশন’। অর্থাৎ আনন্দোৎসব।

শিল্পী প্রীতমের জন্যে শিল্পচর্চাই উৎসব। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তাঁর কাছে আনন্দ বহন করে আনে। শিল্পসৃষ্টির কাজে এক অনাবিল পরিতৃপ্তি। নিজেকে জানা বোঝা এবং বাস্তব জীবনের কঠিনতার থেকে পালিয়ে যাওয়া। বাস্তবের রূঢ়তার থেকে সৌন্দর্য আহরণ করেন তিনি এবং সেই সৌন্দর্য শিল্পীকে আত্মার মুক্তির সন্ধান দেয়। প্রীতম এক সুন্দর পথের সন্ধানী, যে পথ সত্য ও সৌন্দর্য থেকে ক্রমশ এই আলোর উদ্দেশে এগিয়ে নিয়ে যায়। সমাজ সংসার তো আছেই। সেটা তো জীবনেরই অন্য নাম। সেখান থেকেই মৌমাছির মতো প্রীতম সংগ্রহ করেন উপাদান এবং শিল্পসৃষ্টির প্রবল আনন্দের জোয়ারে ভেসে যান তিনি।

প্রীতম কাঞ্জিলাল নিজেকে প্রকাশের জন্য ব্যবহার করেন রেখা, বিন্দু, এবং খোদাই করা অক্ষর বা লিপি এবং রং। তিনি অন্তত ১৫টি দলীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। শিল্পীর একটি ছবি ‘লুক….হি ইজ দেয়ার’ বিশেষ জোরালো অভিঘাত সৃষ্টি করে। হাওড়া ব্রিজ, নীচে গঙ্গা, গঙ্গার বুকে অসংখ্য ছোট ছোট কাগজের নৌকো, গঙ্গার ধারে ধারে জনসমুদ্র। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মেতে রয়েছে মানুষ। তারই মধ্যে দৃশ্যমান স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর নীলাভ অবয়ব পূর্ণাঙ্গ ভাবে শায়িত ওই হাওড়া ব্রিজের মাথায়। মানুষ তাঁকে দেখতে পাচ্ছে না। ভারি চমৎকার এই ছবিটি। অসামান্য ভাবনা একটি সাধারণ জীবনের ছবিতে। গঠনশৈলী অতি আধুনিক এবং রঙের ব্যবহার নিপুণ ও দক্ষ।

এর পর আরেকটি ছবির শিরোনাম ‘প্রিসার্ভ দ্য ইউনিক ওয়র্ল্ড’। এটির বক্তব্য হল সম্রাট শাজাহানের তৈরি তাজমহলের শিল্পকাল যখনই হোক না কেন, এর ভাস্কর যিনি-ই হোন না কেন, তা নিয়ে ভেবে বৃথা সময় নষ্ট করা কেন? এ বিষয়ে অনন্তকাল ধরে তর্ক চলতে পারে। কিন্তু এ তো সুনিশ্চিত যে তাজমহল দু’হাত দিয়ে রক্ষা করছেন সম্রাট শাজাহান আততায়ী বা দুষ্কৃতকারীর হাত থেকে। ছবির এক কোণে একটি বুদ্ধের মূর্তি শান্তির দূত হিসেবে অবস্থান করছে। খুব রঙিন এই ছবিটি।

তৃতীয় বড় ছবির বিষয় হচ্ছে ‘সময় এবং গতি’। সময় নিজের গতিতে বহমান। ঘড়ির কাঁটাকে স্থগিত রাখতে ব্যস্ত মানুষ, কিন্তু সে বিভ্রান্ত, দুর্দশাগ্রস্ত। সময়কে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা যে কারও নেই। বিশাল ঘড়ির মুহূর্ত কাঁটা, মিনিট কাঁটা এবং ঘণ্টার কাঁটায় ঝুলন্ত দোদুল্যমান মানুষ প্রচেষ্টা চালিয়ে চলেছে। বিষয়টিতে নতুনত্ব না থাকলেও রচানাশৈলীতে আছে অভিনবত্ব।

শিল্পীর অ্যানিমেশনের এর অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু তিনি ছবি আঁকতেই পছন্দ করেন বেশি। এই তরুণ শিল্পীর অন্তরের আনন্দধারা শিল্পের মাধ্যমে দর্শককে স্পর্শ করে। আলোড়িত করে, আলোকিত করে।

শমিতা বসু

গুরুশিষ্য পরম্পরা

সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের কত্থক নৃত্য শিক্ষালয় ‘স্তুতি’র বাৎসরিক অনুষ্ঠান সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল জ্ঞানমঞ্চে। উপস্থিত ছিলেন পণ্ডিত বিরজু মহারাজ ও শাশ্বতী সেন। এ দিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্তুতির শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করলেন ‘প্রাণস্বরূপিনী’। কত্থকের আঙ্গিকে তাল নিবদ্ধ করলেন ছাত্রীরা। খুবই সুন্দর প্রয়াস উপস্থাপনা করেছেন তাঁরা।

অনুষ্ঠানের পরবর্তী নিবেদন ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অভিসার’ কবিতার সঙ্গে বৈদুর্যা চট্টোপাধ্যায়ের নৃত্য। প্রতিটি পদক্ষেপ খুবই সুন্দর ও সাবলীল। সংস্থার প্রশিক্ষিতা সুস্মিতার নিবেদনে ছিল মিঞা কি মল্লার ধ্রুপদ, তাল চৌতালে নিবদ্ধ। সংগীতে ছিলেন সঞ্চিতা চৌধুরী। সঙ্গীত ও নৃত্য এই দুইয়ের সমন্বয়ে খুবই সুন্দর এই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করলেন সুস্মিতা। সর্বশেষ নিবেদনে ছিল কত্থকে শাশ্বতী সেনের ‘মধুরম’।

শিল্পীর সম্বন্ধে নতুন করে কিছু বলার নেই। বোল-পরানে ছিলেন রাগিণী মহারাজ। ১১ মাত্রায় পরান, তেহাই ও বন্দিশ। অনুষ্ঠানটির শেষ পর্বে পণ্ডিত বিরজু মহারাজ ছাত্র-ছাত্রীদের আশীর্বাদ করলেন ও ভবিষ্যতে আরও পরিণত হওয়ার উপদেশ দিলেন।

পলি গুহ

নিঃশর্ত ভালবাসার বার্তা

মা-বাবাদের সঠিক যত্ন এবং ভালবাসায় — সব শিশুই পারে, প্রতিবন্ধকতাগুলোকে কাটিয়ে সুন্দর ভাবে বিকশিত হতে। কারণ সব শিশুর বিকাশ একই সময়ে নাও হতে পারে। তাই তাদের আলাদা করে না রেখে, সবার মধ্যে বেড়ে উঠতে দেওয়া উচিত। এ কথাই সে দিন মনে করিয়ে দিল, নাটকে প্রায় চল্লিশটি বাচ্চার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। সম্প্রতি ‘লিটল থেসপিয়ান অব চুপকথা’র নিবেদনে মঞ্চস্থ হল চারটি ভিন্ন স্বাদের ছোট নাটক। ‘ম্যাম্বি’, ‘ট্রান্সপোর্টেশন’, গ্রাহাম গ্রিন-এর কমেডি নাটক ‘ইয়েস অ্যান্ড নো’ এবং ‘আ প্রিন্সেস হু স্টুড অন হার ওন টু ফিট’। নির্দেশনায় ডলি বসু। এ দিন নাচে-গানে-অভিনয়ে দর্শকদের একটি সন্ধ্যা বিনোদনে ভরিয়ে দিল এই সব কচি-কাঁচারা। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।

ভাল লাগে ‘ম্যাম্বি’ নাটকে বনের পরিবেশ, সব পশু-পাখিদের আনন্দে মেতে ওঠার দৃশ্য। একদিন বনে আগুন লাগার পরে কাকের ছানাদের পাখির বাসা থেকে ম্যাম্বির উদ্ধারের দৃশ্য মনে রাখার মতো। ‘ট্রান্সপোর্টেশন’ নাটকে মাইম-সহ যানবাহনের কোরিওগ্রাফি প্রশংসনীয়। প্রত্যেকের নিজস্ব ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখা, নিঃশর্ত ভালবাসার বার্তাই যেন ছড়িয়ে পড়ল নাটকগুলোর মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ পাঁচ মাসের কঠিন অধ্যবসায়ের ফসল ছিল এই প্রযোজনা। বর্তমান সময়ে এই ধরনের প্রযোজনার খুবই প্রয়োজন।

পিয়ালী দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE