Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
আলোচনা

নিসর্গে নিঃস্তব্ধ সমুদ্রের তটভূমি

অর্পিতা দাশগুপ্তের ছবির শিরোনাম ‘প্রেমার্ত আত্মা’। দু’টি ছবিতেই সুন্দরী রমণী একটি কল্পনা জগতে স্থিতা। তাদের চারপাশে কাগজের ছোট ছোট নৌকো বা উড়ন্ত পাখি। নারীমূর্তির চোখ বন্ধ।

প্রকৃতি: গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় ‘টার্নিং স্ট্রোক’ প্রদর্শনীর একটি ছবি

প্রকৃতি: গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় ‘টার্নিং স্ট্রোক’ প্রদর্শনীর একটি ছবি

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০০:৩৯
Share: Save:

গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায় অনুষ্ঠিত হল ‘টার্নিং স্ট্রোক’-এর গ্রীষ্ম প্রদর্শনী। এই দলটিকে যিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি সোমেন সাহা। প্রথমেই যে শিল্পীর নাম উল্লেখ করা যায় তিনি হলেন দেবিকা বসু। শিল্পী শিশুকাল থেকেই আঁকছেন। তিনি সর্বভারতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। ইদানীং কালে শিল্পী বেশি করে নিসর্গচিত্র আঁকছেন। প্রদর্শনীতে শিল্পীর করা সুন্দর সমুদ্র চিত্র। যদিও বাস্তবধর্মী ল্যান্ডস্কেপই করেন, যা চিত্তাকর্ষক।

অর্পিতা দাশগুপ্তের ছবির শিরোনাম ‘প্রেমার্ত আত্মা’। দু’টি ছবিতেই সুন্দরী রমণী একটি কল্পনা জগতে স্থিতা। তাদের চারপাশে কাগজের ছোট ছোট নৌকো বা উড়ন্ত পাখি। নারীমূর্তির চোখ বন্ধ। সে কোনও কল্পনার জগতে বিরাজমান। তার কোনও ঠিকানা মেলে না। সুন্দর ছবি। রিতুজা গায়েনের ছবিগুলি প্রধানত নিসর্গচিত্র। কিন্তু অ্যাক্রিলিক ওয়াশে করার দরুন খুবই আর্দ্র, নরম এবং নয়নাভিরাম। এই ধরনের ছবির সঙ্গে সহবাস করা চলে। মন শান্তি পায়। অ্যাক্রিলিকে সমুদ্রচিত্র আঁকেন দেবতোষ মিত্র। সমুদ্রে নৌকো, মাঝিদের হইচই এবং উত্তাল ঢেউ অনুভব করা যায়। এই শিল্পীর কাজও ভাল, তবে বাস্তবধর্মী। লাল আকাশে ঝড়ের পূর্বাভাস। সাধনা রায় কাজ করেন অ্যাক্রিলিকে। কথাকলি নৃত্যের মুখছন্দ। শুধু চোখের ইশারায় ভাবের প্রকাশ।

সুনীতি সিংহও নিসর্গচিত্র আঁকেন। তাঁর ছবিতে গাছগাছালি, সবুজ মাঠ এবং দূরে পাহাড়ের আভাস মন ছুঁয়ে যায়। স্বপ্ননীল জানার ছবি প্রকৃতি নিয়ে। অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে তাঁর বিশেষ পারদর্শিতার ছাপ আছে। মনোরম নিসর্গচিত্র। স্বাতী সরকারের ছবির বক্তব্য খুব সুন্দর। একটি ছবিতে অন্ধকার থেকে আলোয় রেখেছেন একটি ঝুলন্ত চাবি এবং পাশে একটি হ্যারিকেন। শিরোনাম ‘বাঁচার চাবি’। অন্য একটি ছবিতে আপেল ঝোলানো আছে। শিল্পীর কাজে ভাবনাচিন্তা আছে। বাঁচার তাগিদের কথা আছে। বুদ্ধিদীপ্ত কাজ। তৃষা মজুমদার দেবদেবী নিয়ে ছবি আঁকেন। দেবী লক্ষ্মীর হাতে ধানের গোছা, পায়ের কাছে বেড়াল এবং কোমরে ঘট। সুন্দর ছবি। বিদিশা অগ্রবালের ছবি একটি স্টাইলে করা। ওই স্টাইল তাঁর একান্ত নিজস্ব। এ ছা়ড়াও উল্লেখযোগ্য ইয়াসমিন এবং শুভ্রা সাহার ছবি। এঁরা প্রত্যেকেই
ভাল আঁকেন।

শমিতা বসু

উপস্থাপনায় নজর কাড়ে

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত হল ওঙ্কার মিউজিক আয়োজিত দু’দিনের ‘নৃত্যাঞ্জলী’। পাতিয়ালা ঘরানার শিল্পী ইমন দাস, লখনউ ও জয়পুর ঘরানার নৃত্যশিল্পী এমিলি ঘোষের উদ্যোগে।

প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে প্রতিটি নৃত্যশিল্পীই তাঁদের নৃত্য-আঙ্গিকে দর্শকদের মন জয় করেছেন। গুরু এমিলি ঘোষের ছাত্রী শ্রেয়া গঙ্গোপাধ্যায়ের কত্থক নৃত্য দিয়ে শুরু। শিল্পীর নৃত্য পরিবেশনা প্রশংসনীয়। গুরু ভেঙ্কিট ও পৃথা ভেঙ্কিটের ছাত্রী তনিমা চক্রবর্তীর ‘কীর্তনম’ পরিবেশনার দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হতে হয়। সুরঞ্জনা ও সুদর্শনা নন্দী ভরতনাট্যম নৃত্য আঙ্গিকে পরিবেশন করলেন তোড়িয়ম্ ও বর্ণম। তাঁদের যুগল নৃত্যে পরিবেশিত হয় ‘হরধনু ভঙ্গন’। তাঁরা গুরু টি. এন. শঙ্কর নারায়ণ ও গুরু থাঙ্কমণি কুট্টির শিষ্যা। ওড়িশি নৃত্যের ভঙ্গিমায় যুগল নৃত্যে শান্তশ্রী শাসমল ও জ্ঞান দত্ত মুগ্ধ করলেন দর্শকদের। ভরতনাট্যমে দেবাঙ্গনা চৌধুরীর মনোগ্রাহী উপস্থাপনা উল্লেখযোগ্য। গুরু অসীমবন্ধু ভট্টাচার্যের ছাত্রী সুকন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কত্থক প্রশংসার যোগ্য। স্নিগ্ধা সিংহ, দেবস্মিতা ঠাকুর ও থাঙ্কমনি কুট্টির ছাত্র সৌমিক মণ্ডলের ভরতনাট্যম নৃত্যও নজর কাড়ে। শেষ অনুষ্ঠানটি ছিল শাস্ত্রীয় ও ভরতনাট্যমের আঙ্গিকে মহুল মুখোপাধ্যায় ও ইলিনা বসুর যুগল নৃত্য। সাবলীল ভঙ্গিমা, তাল, লয় ও অভিনয় গুণে সমৃদ্ধ নৃত্যের উপস্থাপনা তুলনাহীন।

দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই অংশ নিয়েছিলেন জ্যোতি ভট্টাচার্য, পারমিতা মুখোপাধ্যায়, সুদীপ সেনগুপ্ত, তন্বিকা মিত্র, শতাক্ষী মুখোপাধ্যায়। থাঙ্কমনি কুট্টি ও জয়শ্রী বিশ্বাসের ছাত্রী জ্যোতি ভট্টাচার্য পরিবেশিত ‘তোড়িয়া মঙ্গলম’ ও ‘রামায়ণা শব্দম’ সুন্দর অভিব্যক্তির জন্য উল্লেখযোগ্য। কত্থকে ছিলেন চেতন সুরাইয়া ও নীতা সুরভে। শেষে ছিল ইমন দাসের পরিচালনায় ‘শৃঙ্গার’। শাস্ত্রীয় ও ধ্রুপদী নৃত্যের সুন্দর মেলবন্ধন। নৃত্যে ছিলেন এমিলি ঘোষ, স্নিগ্ধা সিংহ ও মহুল মুখোপাধ্যায়। তবলায় সুবীর ঠাকুর, গিটার ও বাঁশিতে আনন্দ গোপীনাথ। ইমনের সঙ্গীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করলেন অন্যান্য শিল্পীরা। এমিলি ঘোষের কত্থক প্রশংসনীয়। দু’দিনের উৎসবের সূত্রধর ছিলেন শ্রাবণী ঘোষ।

জয়শ্রী মুখোপাধ্যায়

ঠুমরি ও তারানার মেলবন্ধনে

রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার এবং ‘স্বরগঙ্গা’র যৌথ প্রযোজনায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল শিল্পী অসিত রায়ের একক ‘সঙ্গীতাঞ্জলি’। পেশায় বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীতের অধ্যাপক অসিত রায় শঙ্করা রাগে একটি ধামার দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করলেন। পরে শোনালেন সুরফাঁকতালে নিবদ্ধ আরও একটি বন্দিশ। ধামার গায়নে কুশলতার পরিচয় রেখেছেন তিনি। তাঁর কণ্ঠের বলিষ্ঠতা গায়কিতেও ফুটে উঠছিল। তবে শুরুর আলাপ খানিক দ্রুততার সঙ্গে শেষ করলেন শিল্পী। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের পারম্পর্য অনুযায়ী বিলম্বিত, মধ্য এবং দ্রুত লয়ে আলাপ পরিবেশন করলেও, সংক্ষিপ্ত সময়ে তার সৌন্দর্য ধরা দেয়নি। আলাপ অংশটি আরও বিস্তারিত হলে ভাল হতো।

শিল্পীর পরবর্তী উপস্থাপনায় ছিল ইমন রাগের একটি বাংলা বন্দিশ। স্বল্প সময়ের বিস্তারে পরিচিত এই রাগটির চেহারা সাধ্যমতো ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি। মিঞামল্লার রাগে ত্রিতাল এবং সুরফাঁকতালে পরিবেশিত বন্দিশ দু’টিতে তাঁর চর্চিত কণ্ঠের আভাস পাওয়া গেলেও, সংক্ষিপ্ত রাগালাপে অধরা থেকে গেছে মিঞামল্লারের ভাবগাম্ভীর্য। ভক্তিগীতি এবং নজরুলগীতিও ছিল তাঁর অনুষ্ঠানসূচিতে। সঙ্গীতানুষ্ঠানকে বর্ণময় করে তোলার প্রচেষ্টায়, নানা ধরনের গানের এই আয়োজন বহুমুখী শ্রোতার সমাদর লাভ করেছে ঠিকই, কিন্তু মার্গ সংগীতের মেজাজটি কিছু ক্ষেত্রে সুপ্ত থেকে গিয়েছে সময়ের অভাবে।

তবে তাঁর শেষ উপস্থাপনায় ভৈরবী রাগে সৃজিত ঠুমরি এবং তারানার মেলবন্ধনে রাধা-কৃষ্ণের ভাবলীলার একটি চমৎকার রূপ ফুটে উঠেছিল। ঠুমরি ও তারানার বিপরীতমুখী মেজাজকে একটি ভাবসূত্রে গেঁথে পরিবেশন করার কাজটি পরিশ্রমসাধ্য। শিল্পী অসিত রায় নিপুণতার সঙ্গে তা পরিবেশন করেছেন।

তবলায় দেবাশিস চৌধুরী, পাখোয়াজে পার্থ ঘোষ এবং হারমোনিয়ামে সুশান্ত সরকার যথাযথ সহযোগিতা করেছেন।

চিত্রিতা চক্রবর্তী

অনুষ্ঠান

• আটত্রিশ বছর উদযাপন বর্য পালন করল ‘ধৈবত’ সংস্থা। সম্প্রতি আইসিসিআর-এর সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, পাঠ ও নৃত্যের মেলবন্ধনে পরিবেশিত হল ‘শ্রাবণের সে বৈভব’। প্রত্যেক শিল্পী তাঁদের সুনাম বজায় রেখেছেন।

• রবিআঙ্গিক আয়োজন করেছিল রবীন্দ্রনাথের প্রেম পর্যায়ের গান ‘আপন গানের টানে’। ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়ামে। শিল্পীরা ছিলেন অনিরুদ্ধ সিংহ, জয়শ্রী দাস, সুমনা সাহা, অর্ণব রায় প্রমুখ। ভাষ্যপাঠে ছিলেন শাশ্বতী সরকার ও অরবিন্দ দাস। সমবেত সঙ্গীতে ছিল রবিবিতান।

• আবৃত্তির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হল রবীন্দ্র ও রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার বিবর্তনের রূপকে। সম্প্রতি

রবীন্দ্র সদনে স্বাগতা পালের একক আবৃত্তির অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ তো বটেই, শোনা গেল সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, জীবনানন্দ, নজরুল, বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাও। অনুষ্ঠানটি দু’পর্বে ভাগ করা হয়েছিল। প্রথম পর্বে শুধু রবীন্দ্রনাথের আটটি কবিতা, দ্বিতীয় পর্বে বাকিদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE