Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কোনখানে মা কুড়িয়ে পেলি

দত্তক নেওয়ার টানাপড়েন। পালক বাবা-মা ভাবেন, বাচ্চাকে সত্যিটা বলে দেব, না লুকিয়ে রাখব? আবার জেনে হয়তো বাচ্চা বলল, ‘দেখো মা, আমি তোমার কাছে আসতে কোনও ব্যথাই দিইনি!’তিন বছর আগে বিজ্ঞাপনটা বেরিয়েছিল খবরের কাগজে। একটি মেয়ে তার নাম-ফোন নম্বর দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সে আট মাসের গর্ভবতী, কিন্তু টাকাপয়সা নেই, বাচ্চাকে মানুষ করতে পারবে না। তাই বাচ্চার জন্মের পর তাকে সে দিয়ে দেবে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

তিন বছর আগে বিজ্ঞাপনটা বেরিয়েছিল খবরের কাগজে। একটি মেয়ে তার নাম-ফোন নম্বর দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সে আট মাসের গর্ভবতী, কিন্তু টাকাপয়সা নেই, বাচ্চাকে মানুষ করতে পারবে না। তাই বাচ্চার জন্মের পর তাকে সে দিয়ে দেবে। যে দম্পতি বাচ্চাটাকে নেবেন, তাঁরা হাসপাতালে মেয়েটির ডেলিভারির ব্যবস্থা করে দেবেন, আর দু’লাখ টাকা নগদ দেবেন। টাকা হাতে পাওয়ার পর, মেয়েটি কোনও দিন বাচ্চাটাকে এক বার চোখের দেখাও দেখতে চাইবে না।

বিজ্ঞাপনটা দিয়েছিল টুম্পা। বছর চব্বিশের মেয়ে। বিবাহিত। কিন্তু বর কাজকর্ম করে না। বাধ্য হয়ে ‘ব্যবসা’র শুরু। বছরে এক বার বা দু’বছরে এক বার গর্ভবতী হও, আর কাগজে বিভিন্ন নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে সেই সন্তান বেচে দাও। কেস প্রতি আড়াই লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা রোজগার।

‘মোডাস অপারেন্ডি’ দুরন্ত। যে স্বামী-স্ত্রী ওর শর্তে রাজি হতেন, টুম্পা তাঁদের নামেই হাসপাতালে ভর্তি হত। অর্থাৎ, হাসপাতালের খাতায় আসন্নপ্রসবা হিসাবে টুম্পার নামের বদলে লেখা থাকত ওই সন্তানকামী স্ত্রীটির নাম, আর বাচ্চার বাবা হিসাবে তাঁর স্বামীর নাম। ব্যস! তাঁদের অভিভাবকত্বে প্রথম থেকেই সিলমোহর পড়ে যেত।

এতে লাভ কী হত? টুম্পা মিচকি হেসে বলেছিল, ‘বুঝলে না? এর জন্যই তো ওরা দু-তিন লাখ টাকা দিচ্ছে। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, সব্বাইকে বলবে, বাচ্চাটা ওদের নিজেদের। বউয়ের পেট থেকে বেরনো। দত্তক নেওয়া নয়। প্রমাণ? হাসপাতালের কাগজপত্র!’

তাবড় রাজারাজড়া থেকে ফিল্মতারকা যতই নির্দ্বিধায় দত্তক সন্তানের বাবা-মা হোন না কেন, ‘নিজের রক্ত, নিজের জিন’ নিয়ে একটা বড় অংশের মানুষের মরিয়া আদিখ্যেতা চলছে। তাই দত্তক নেওয়ার পরও সেই কথাটা পৃথিবীর কাছে এড়িয়ে যাওয়া। এর জন্যই টুম্পাদের ব্যবসার রমরমা।

ব্যবসার একটা ট্যারা পথও মাঝে মাঝে নিত টুম্পা, যখন হাতটান হত। যাঁদের বাচ্চা বেচেছে, কোনও এক জনকে ফোন করে আরও কিছু টাকা চাইত। দিলে ভাল, আর রাজি না হলে ছোট্ট করে একটু হুমকি দিয়ে রাখত—‘বাড়িতে গিয়ে সবার সামনে ফাঁস করে দেব যে ও তোমার বাচ্চা নয়। ডিএনএ পরীক্ষা করতে বলব পুলিশকে।’ এক ডোজেই দিব্যি কাজ হত।

কিন্তু অন্য রকম মানুষও আছেন। যাঁরা সন্তানের ‘দত্তক’ পরিচয় নিয়ে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত নন। তাঁরা সবাইকে তো বলে দেনই দত্তক নেওয়ার কথা, সন্তানটিকেও বলে দেন সরাসরি। ফল? আঠারো বছরে পা দেওয়া আনহিতি নস্করদের মতো দত্তক সন্তানেরা অনায়াসে বলেন, ‘ইচ্ছে হয়ে ছিলাম আমার মায়ের মনে। এটাই কি যথেষ্ট নয়?’

১৯৯৮-এর ফেব্রুয়ারিতে ঘরে এসেছিল সাত মাসের আনহিতি। যে হোম থেকে মেয়েকে আনা হয়েছিল সেখানকার সিস্টাররাই নাম দিয়েছিলেন ‘আনহিতি’। জানিয়েছিলেন, সংস্কৃত ভাষায় এর মানে, ‘উপহার।’ প্রথম দিন, মেয়েকে মাঝখানে রেখে শুয়েছেন নস্কর দম্পতি। বলতে গিয়ে এত দিন পরেও গলা বুজে আসছিল স্বপনবাবুর, ‘কেমন একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গিয়ে দেখি, মেয়েটা বড় বড় চোখ মেলে ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন বুঝতে চাইছে, এই বাবাটা আমাকে নিজের করে নেবে তো? ফেলে দেবে না তো? কী একটা হয়ে গেল মনের ভেতর। মনে হল, পৃথিবী এক দিকে, আর আমার মেয়ে এক দিকে।’

দুটো প্রতিজ্ঞা করেছিলেন স্বপনবাবুরা। এক, ছোটবেলা থেকে মেয়েকে জানিয়ে রাখবেন তাকে কাছে পাওয়ার বৃত্তান্ত। দুই, মেয়ের জন্মদাতা বাবা-মা সম্পর্কে কখনও কোনও বাজে কথা বলবেন না। গল্প বলার মতো করে ওকে বলা হত, কী ভাবে কত ঝক্কি পেরিয়ে হোম থেকে ওকে আনা হয়েছে। বিষয়টার সঙ্গে এতটাই সহজ হয়ে গিয়েছিল ও, এক দিন স্কুলে যিশুখ্রিস্টের ছবি দেখামাত্র ক্লাসে উঠে দাঁড়িয়ে গর্ব করে বলেছিল, ‘ওঁর বাড়ি থেকেই তো বাবা-মা আমাকে কোলে করে নিয়ে এসেছে।’

সেই মেয়ে এখন তরুণী। সে বলে, ‘আমার জন্মদাতা বাবা-মা কেমন হতে পারে, তা নিয়ে এখনও আমার এই মা-বাবার সঙ্গে অনেক কথা হয়। এখনও আমি মাকে প্রশ্ন করি, ধরো ওরা আমাকে কোনও ভাবে চিনতে পেরে তোমার কাছ থেকে নিতে এল, তখন কী হবে? আমি তখন কী করব? জন্মদাতাদের উপর আমার তেমন রাগ বা অভিমান হয় না। তবে মাঝে মাঝে ভাবি, ঠিক কোন পরিস্থিতিতে ওঁরা আমাকে ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। মায়ের সঙ্গে গল্প করি এ সব নিয়ে। কিন্তু ওগুলো শুধু গল্পই। আমি জানি, আমি শুধু আমার এই বাবা-মায়ের।’

জন্মদাতারা কেমন লোক হতে পারে, এই কথাবার্তা শুরু হয়ে যায় বহু বাড়িতে, দত্তক নেওয়ার কথা ভাবলেই। পরমা যখন খাওয়ার টেবিলে শ্বশুর-শাশুড়িকে জানালেন, আর টেলিফোনে বাবা-মা’কে, যে, তিনি ও রাঘব দত্তক নেওয়ার কথা ভাবছেন, দু’পক্ষই থতমত। মা বললেন, ‘তোর কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই হয়ে যেত। ডাক্তারও বলেছিলেন। আবার কোথায় খুঁজবি, সে কোন বাড়ির বাচ্চা হবে, মা-বাবা কী রকম, কিছুই তো জানতে পারবি না। খুনি-রেপিস্টও হতে পারে। জিনের একটা ইয়েও তো আছে।’ ওই ‘ইয়ে’টাকে চ্যালেঞ্জ করে পরমা বলেছিলেন, খবরের কাগজে পড়ো না, নিজের পেটের বাচ্চা তার বৃদ্ধা মা’কে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে? আর, আমার পেট থেকে বেরোনো বাচ্চাও যে বড় হয়ে খারাপ লোক হবে না, বদমাইশ হবে না, কী গ্যারান্টি আছে?’

দত্তক নেওয়ার আয়োজন যখন চলছে, ছোটাছুটি, কাগজপত্তর জোগাড়, পরমা কত বার ভেবেছেন, দশ মাস গর্ভবতী অবস্থায় মেয়েরা যখন থাকে, তাদের শরীরে-মনে কী কী হয়? একটা বাচ্চা তাঁর জীবনেও আসতে চলেছে, কই, কোনও আলাদা অনুভূতি হচ্ছে না তো? টেনশনও হচ্ছে না। তা হলে কি তিনি অন্যদের মতো মা হয়ে উঠতে পারবেন না?

হোম থেকে বছরখানেক বয়সের এক বাচ্চাকে দিল। কে বা কারা একটা কুয়োর পাশে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল তাকে। পোকায় খুবলে নিয়েছিল তার হাত। বাচ্চাটা কুঁকড়ে পরমার ঘাড়ে মাথা রেখে শুয়েছিল। বুকের ভিতরটা কেমন একটা করছিল পরমার। বাবা এসে ওর গাল টিপে ‘দাদুভাই’ বলে আদর করছেন, মা কপালে চন্দনের টিপ পরাচ্ছেন, চারপাশটা ঝাপসা হয়ে আসছিল। ভাবছিলেন, হাসপাতালের বেডে শোওয়া মায়ের হাতে বাচ্চাকে তুলে দিলে কি এই রকম অনুভূতিই হয়?

তার পর অনভ্যস্ত হাতে জামা পরানো, স্নান করানো, খাওয়ানো... সবচেয়ে নড়বড়ে অবস্থা হল পটি করাতে। প্রথম দিন বমি পেয়ে গেল। তার পরেই এল অপরাধবোধ। আমার পেটের সন্তান নয় বলে কি বমি আসছে? সব মায়েরাই তো এটা করে। তা হলে কি আমি ‘ঠিক ঠিক’ মা হতে পারছি না?

আমি কি ‘ঠিক ঠিক’ বাচ্চা নই— এই প্রশ্নটাও খুদে মাথায় ঢোকানোর লোকের অভাব থাকে না। আর্যমানকে দত্তক নেওয়ার বছরখানেক পরে যখন বিডন স্ট্রিটের সুমনা রায় কনসিভ করলেন, আত্মীয়স্বজন-পাড়াপড়শি নানা কথা বলতে শুরু করল। নিজের বাচ্চা হলে দত্তক ছেলের কপালে দুঃখ আছে। আর ওকে কেউ ভালবাসবে না। আর্যমানের তখন দেড় বছর বয়স। সুমনা নিজে বিশ্বাস করতেন, এই কথাগুলো আর্যর মাথায় কখনও ঢুকতে পারবে না, আর তার দায়িত্ব তাঁরই। বিয়ের ন’বছরেও সন্তান আসেনি শরীরে, আর্যমানই তাঁর মাতৃত্বকে জাগাতে পেরেছে। ছোট ছেলে শৌর্যমানের জন্মের পর বরং আদর বেড়ে গিয়েছিল আর্যর। একটু বড় হওয়ার পর এখন মাঝেমাঝেই মায়ের উপর অভিমান করে ঠোঁট ফুলিয়ে শৌর্য বলে, ‘মা সব সময় দাদাকে আমার থেকে বেশি ভালবাসে।’

সল্ট লেকের সীমন্তিকা নাগের এখনও সেই দিনটা স্পষ্ট মনে আছে। ছ’মাসের মেয়েকে তখন কিছু দিন হল বাড়ি এনেছেন। এক প্রতিবেশী বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে এসে সটান বলে বসলেন, ‘আপনাদের অ্যাডপ্টেড মেয়েটাকেও সঙ্গে নিয়ে যাবেন। আমাদের অসুবিধে নেই।’ বেশ কিছু ক্ষণ কোনও কথা বলতে পারেননি তাঁরা। তার পর নিজেদের বুঝিয়েছিলেন, প্রত্যেকের মন পালটানোর দায় তাঁদের নয়, শুধু নিজেদের ঠিক থাকতে হবে। মেয়ে একটু বড় হওয়ার পর অনেকেই ছবি দেখে বলতেন, ‘এ তো পুরো বাবার মতো দেখতে।’ সীমন্তিকার কথায়, ‘আমাদের মেয়ের ভাবনাচিন্তা, ম্যানারিজ্ম, রুচিবোধ, তাকানো, মুখভঙ্গি আমাদের মতো হবে— সেটাই তো স্বাভাবিক।’

এক বার টেলিভিশনে দত্তক নেওয়া নিয়ে একটি সরকারি তথ্যচিত্রে তাঁদের পরিবারকে দেখানো হল। মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে জিজ্ঞাসা করল, ‘মা, বন্ধুরা বলল, তুমি আমার আসল মা নও। সত্যি?’ সীমন্তিকা বললেন, ‘আসল মা দু’ভাবে হওয়া যায়। বাচ্চা পেট থেকেও হয়, আবার হোম থেকেও নিয়ে আসা যায়। বন্ধুদের বোলো, ওরা এটা জানে না। তুমি আমার আর তোমার বাবার মেয়ে, এটাই একমাত্র সত্যি।’

কিন্তু তাঁরই এক পরিচিত ভদ্রলোক এক দিন দিশেহারা হয়ে ফোন করলেন। ভদ্রলোক মেদিনীপুরে থাকেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী একটি ছোট্ট ছেলেকে দত্তক নিয়েছিলেন। সে আট-ন’বছরের হওয়ার পরেই বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গেলে, পাড়ার দোকানে গেলে, টিটকিরি উড়ে আসত তার জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে। বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল ছেলেটি, মিথ্যে কথা বলতে ও চুরি করতে শুরু করেছিল। শেষ পর্যন্ত গোটা পরিবারের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন দত্তক সন্তানদের বাবা-মায়ের একটি সংগঠন। তাঁদের পরামর্শে পাড়া বদল করে, পরিস্থিতি কিছুটা পালটেছিল। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে এমন নজিরও আছে, যেখানে দত্তক ছেলে বা মেয়েটি পড়াশোনায় একটু পিছিয়ে পড়লে, বা বেশি জেদ করলে, আত্মীয়স্বজন, এমনকী বাবা-মাও আপশোস করে ফেলেন, ‘আমাদের নিজের হলে এই রকম হত না। পেডিগ্রি যাবে কোথায়?’

কারও ক্ষেত্রে অবস্থা আরও জটিল হয়। সোনারপুরের এক দম্পতি দু’মাসের বাচ্চা দত্তক নিয়েছিলেন। তার দেড়-দু’বছর বয়স হওয়ার পর বোঝা গেল, তার ‘সেরিব্রাল পলসি’ আছে। পাগলের মতো হয়ে গেলেন সেই দম্পতি। বাচ্চাকে ফেরত দিতে চলে গেলেন শিশুকল্যাণ কমিটির কাছে। তাঁদেরও অনেক দিন কাউন্সেলিং করাতে হয়েছিল। বাচ্চাটি বছর বারো বেঁচেছিল। প্রথমে ভেঙে পড়লেও, পরে তার আপ্রাণ দেখাশোনা করেছিলেন দম্পতি। তার মৃত্যুর পরে আর একটি শিশু দত্তক নিয়েছিলেন।

শ্যামবাজারের পিয়ালি চট্টোপাধ্যায়। সাত বছর আগে, পুজোর মুখে, জেলার একটি হোম তাঁর হাতে তুলে দিল ছোট্ট ছেলেকে। হাড়জিরজিরে, অপুষ্ট। সারা গায়ে চর্মরোগ। অপরিচিত হাতে গিয়ে থরথর করে কাঁপছিল সেই শিশু। হোমের প্রধান আস্তে আস্তে বলেছিলেন, দেখবে, তোমাদের যত্নে, আদরে, ভাল পরিবেশে থেকে ঠিক তোমার মতো হয়ে যাবে।

তাই হয়েছিল। তার পর সে দেখল নিজের পিসির গর্ভাবস্থা, শিশুর জন্ম, তার পর তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়া। মা-কে জিজ্ঞেস করল, ‘আমিও কি তোমার পেট থেকে বেরিয়েছি মা? দুধ খেয়েছি?’ মা বোঝালেন, ‘তুমি তো টিভিতে ‘কৃষ্ণ’ দেখো। সেও তো যে-মায়ের কাছে বড় হয়েছে তার পেট থেকে বেরোয়নি। তা বলে কি তিনি কৃষ্ণের মা নন?’ পিয়ালি এখনও সোজাসুজি বলতে পারেননি, রোজই বলার তারিখটা পিছিয়ে দেন। আবার কখনও তাঁর মনে পড়ে যায় অনেক দিন আগে শোনা একটা গ্রামের মেয়ের কথা, যাকে তার বিয়ের দিন পুকুরে স্নান করার সময় এক প্রতিবেশী বলে দেন, সে তার মায়ের পেটের মেয়ে নয়, দত্তক। মেয়েটি শক পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।

মিথ্যে বা অস্পষ্টতার চেয়ে সত্যির জোর বেশি। যোধপুর পার্কের নীলাঞ্জনা গুপ্তের এক ছেলে ছিল। গুপ্ত দম্পতি ঠিক করেন, একটি মেয়ে হলে তাঁদের সংসার পূর্ণ হয়। বাড়ি আসে ছ’মাসের মেয়ে। ‘দত্তক’— এই সত্যিটার সঙ্গেই মেয়ে ও ছেলে দু’জনকে বড় করেছেন। তখন ছেলের বছর আটেক বয়স, মেয়ের বছর পাঁচেক, ছেলে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করল, ‘আচ্ছা মা, আমি তোমার পেটে ছিলাম, কিন্তু বোন ছিল না?’ নীলাঞ্জনা বললেন, ‘হ্যাঁ।’ মেয়ে তখন সামনেই ছিল। খানিক ক্ষণ পর মাকে বলল, ‘পেট থেকে দাদা কী করে বার হল?’ ‘ডাক্তারেরা পেট কেটে বার করেছিল।’ মেয়ে কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ‘দেখো, আমি কিন্তু তোমার কাছে আসতে তোমাকে দাদার মতো ব্যথা দিইনি। তাই না মা?’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

adoption parijat bandopadhyay doctor boy girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE