Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জ্যান্ত ক্যানভাস

মডেলের শরীরের ওপর এঁকে, বিশ্ব বডিপেন্টিং প্রতিযোগিতায় সেকেন্ড! দু’বছর আগে হয়েছিলাম অষ্টম। আমার নামই এখন ওখানে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’!২০১৩-য় প্রথম জানতে পারি এই ফেস্টিভ্যালের কথা। ‘ওয়ার্ল্ড বডিপেন্টিং ফেস্টিভ্যাল’। মানুষের শরীরের ওপরেই ছবি আঁকা হবে, তারই উৎসব! তখন সময় প্রায় আর নেই, রেজিস্ট্রেশন করলাম শেষ মুহূর্তে। রং নিয়ে যেতে পারিনি, কারণ যে রং দিয়ে বডিপেন্টিং হয়, এ দেশে তা পাওয়াই যায় না! অস্ট্রিয়া-র ‘পোর্ট্রা’ নামের শহরটা ছোট্ট, কিন্তু জুলাইয়ের শুরুতে গমগমে ভিড়াক্কার, এই ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে। আঠারো বছর ধরে এটা হয়ে আসছে, আমরা জানিই না!

জুলাই, ২০১৫। ওয়ার্ল্ড বডিপেন্টিং ফেস্টিভ্যালে সনাতন দিন্দা, তাঁর ‘জীবন্ত ক্যানভাস’-এর সঙ্গে প্রথম রাউন্ডে।

জুলাই, ২০১৫। ওয়ার্ল্ড বডিপেন্টিং ফেস্টিভ্যালে সনাতন দিন্দা, তাঁর ‘জীবন্ত ক্যানভাস’-এর সঙ্গে প্রথম রাউন্ডে।

সনাতন দিন্দা
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

২০১৩-য় প্রথম জানতে পারি এই ফেস্টিভ্যালের কথা। ‘ওয়ার্ল্ড বডিপেন্টিং ফেস্টিভ্যাল’। মানুষের শরীরের ওপরেই ছবি আঁকা হবে, তারই উৎসব! তখন সময় প্রায় আর নেই, রেজিস্ট্রেশন করলাম শেষ মুহূর্তে। রং নিয়ে যেতে পারিনি, কারণ যে রং দিয়ে বডিপেন্টিং হয়, এ দেশে তা পাওয়াই যায় না! অস্ট্রিয়া-র ‘পোর্ট্রা’ নামের শহরটা ছোট্ট, কিন্তু জুলাইয়ের শুরুতে গমগমে ভিড়াক্কার, এই ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে। আঠারো বছর ধরে এটা হয়ে আসছে, আমরা জানিই না! ওয়ার্কশপ হয়, সেমিনার, নাচ-গান-কার্নিভাল, আর প্রতিযোগিতা। বিরাট স্টেজ, ক্যাম্প, টেন্ট। সেখানে মডেলদের গায়ে ছবি আঁকেন শিল্পীরা। সাত জন জাজ, তাঁরাও এক কালের প্রতিযোগী, পাঁচ-ছ’বারের চ্যাম্পিয়ন। অন্তত ৪৫টা দেশের আঁকিয়ে আসেন, আসেন নামজাদা মডেলরা।
আমার কোনও মডেল ছিল না। একটা কাগজে নিজের আই.ডি. আর ফোন নম্বর লিখে, ঝুলিয়ে দিলাম ক্যাম্পের সামনে। হাঁ করে বসেছিলাম, যদি কেউ আসে। কম্পিটিশনের দিন সকালে অ্যানা এল। ভলান্টিয়ার মডেল। ওর শরীরেই আঁকলাম। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের মূল তিনটে ক্যাটিগরি— ‘ব্রাশ অ্যান্ড স্পঞ্জ’, ‘এয়ার ব্রাশ’ আর ‘স্পেশাল এফেক্ট’। আমি নাম দিয়েছিলাম ‘ব্রাশ অ্যান্ড স্পঞ্জ’-এ। গোড়ায় একটা রাউন্ড হয়, সেখান থেকে ফাইনাল রাউন্ডে ওঠে ৩৪ জন। দুটো রাউন্ডেই একটা করে থিম থাকে। ২০১৩-তে থিম ছিল ‘প্ল্যানেট ফুড’। আমি অ্যানার সারা শরীরটা মাটির মতো করে আঁকলাম। শরীরটাই পৃথিবী। ওর বুকে আঁকলাম একরত্তি শিশু। মা’কে আঁকড়ে, মাটিকে আঁকড়ে ঘুমিয়ে আছে, নিষ্পাপ। আমপাতা গেঁথে যেমন আমরা শুভ কাজে ব্যবহার করি, সে-রকম এঁকে দিলাম ওর কোমরের বেড়ে। আপেলের মোটিফ, স্বস্তিকা চিহ্ন ব্যবহার করলাম, সিঁদুরে-লাল লেপে দিলাম কপালে, পায়ে আলতা-লাল। অ্যানা হয়ে উঠল ‘মাদার আর্থ’। সে-বার হলাম এইট্থ।
ক্যানভাসে বা কাগজে আঁকাটা এক রকম। তার ‘নেচার’টা তো আমার জানা। কিন্তু মানুষের শরীর, চামড়া তো একটা জ্যান্ত ব্যাপার। এক এক জনের চামড়া এক এক রকম। তার সাড় আছে। কাতুকুতু লাগে। চুলকোয়। চলতে-ফিরতে ভাঁজ পড়ে, ভাঙে। তার ওপর আঁকা, রং করা যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনই আশ্চর্য অভিজ্ঞতা।

২০১৪-তেও গেলাম। প্রথম বারেই গিয়ে অষ্টম হয়েছিলাম, গত বছর ফাইনাল রাউন্ডেই যেতে পারিনি। তাতে কী, দেখলাম, শিখলাম অনেক কিছু। রং নিয়ে এলাম, কলকাতায় বসে মডেলদের নিয়ে প্র্যাকটিস করলাম। তার পর, এ বছর জুলাইয়ে ফের গেলাম। আর, কী আশ্চর্য, এ বার একেবারে সেকেন্ড! ওখানকার সবাই আমাকে এসে বলছে, তুমি জানো না তুমি কী করেছ! এত বছরে এত শিল্পী এসেছেন ওখানে, ভারত থেকে কেউ কোনও দিন যায়নি। সেই দেশের এক শিল্পী তিন বার কম্পিটিশনে এসেই ‘চ্যাম্পিয়ন সেকেন্ড’! আমার নামই হয়ে গেল ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’।

এ বছর ফাইনাল রাউন্ডের থিম ছিল ‘সাররিয়ালিজ্‌ম অ্যান্ড ডিসটর্শন’। নিকোল রাইডার নামের একটি অস্ট্রিয়ান মেয়ে আমার মডেল ছিল। আমি এমন আঁকলাম, তার বুকে যেন বোমা বাঁধা। আর সারা শরীরটা ওই বোমার অভিঘাতে ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে। নিকোলের মাথায় ফ্রিল-দেওয়া হেড-গিয়ার পরালাম। আর গলার ঠিক নীচে, বুকের ওপরে আঁকলাম একটা ভয়ংকর মুখ, যার জিভটা বেরিয়ে এসে, ছড়িয়ে পড়েছে হাত-পা-পেট বেয়ে সারা শরীরে। আর আঁকলাম একটা শিশুকে, ভবিষ্যতের শিশু, আতঙ্কিত হয়ে সে দেখছে এই বীভৎস সন্ত্রাস। পিঠে আঁকলাম দালি-র একটা ভয়ার্ত মুখ। ফাইনালে সাড়ে ছ’ঘণ্টা সময় থাকে আঁকার। আমি পা-গুলো ফিনিশ করতে পারিনি, কারণ একা কাজ করতে হচ্ছিল। সঙ্গে আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট আর্টিস্ট পাঞ্চালী ছিল, কিন্তু ওকে সব কিছু খেয়াল রাখতে হচ্ছিল, রং শেষ হয়ে গেলে দৌড়ে হোটেলে গিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছিল। আর ও-দিকে অন্য শিল্পীদের সঙ্গে অনেক জন করে অ্যাসিসট্যান্ট। কেউ ক্যামেরায় ছবি তুলে, কেউ স্টেনসিল করে, কেউ ল্যাপটপে গ্রাফিক্স করে এগিয়ে দিচ্ছে মেন আর্টিস্টকে।

অন্য চ্যালেঞ্জও ছিল। কলকাতায় যে মডেলদের নিয়ে প্র্যাকটিস করেছি, তাদের শরীর আর ওখানকার মডেলের শরীর তো একেবারে আলাদা। নিকোল অস্ট্রিয়ান মেয়ে, পাঁচ ফুট ন’ইঞ্চি লম্বা, চওড়া কাঁধের একটা টিপিকাল জার্মান শরীর ওর। অনেক বড় একটা ক্যানভাস। আমার ভাবাই ছিল, যে রকম ক্যানভাস পাব, সে রকমই কম্পোজিশন করব। আগে থেকে ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে এগোব না। বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী ফ্রেড, এই প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক, ঘুরেফিরে আমার ক্যাম্পে এসে দেখে গেছেন, আমি কী করছি। শুনেছি, উনি ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে সঙ্গের জাজকে বলছেন, ‘আমি ওর থেকে শিখছি— কী টেকনিকে ও রংটা অ্যাপ্লাই করে।’ আমার কাজের ধরন তো ওঁদের কাছে একদম অচেনা। ওঁরা অবাক হচ্ছিলেন, আমি কী করে নিকোলের বডি জিয়োমেট্রিটাকে একটু একটু করে ভেবে, তক্ষুনি-তক্ষুনি ছবিটা ঠিক করছি, রং লাগাচ্ছি, ফিনিশ করছি।

ব্রাশ অ্যান্ড স্পঞ্জ-এর প্রথম রাউন্ডে এ বছর ছিল মোট ১৩৪ জন প্রতিযোগী। ফাইনালে ৩৪। খুব গরম ছিল এ বছর, তেমনই হিউমিডিটি। অনেক মডেল আর শিল্পী তো অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, এমনকী আমি নিজেও। প্রতিযোগী এ বার অনেক বেশি হওয়ায় একটা টেন্ট-এ তিন জন করে শিল্পীকে কাজ করতে হচ্ছিল। জায়গা কম, মডেলের গায়ে রং লাগাচ্ছি, গরমে গলে গলে যাচ্ছে। পাঞ্চালীকে বললাম হোটেল থেকে হেয়ার-ড্রায়ারটা নিয়ে আসতে। রং করছি, আর হেয়ার-ড্রায়ার চালাচ্ছি।

মডেলদের কথা একটু বলি। আমরা, অশিক্ষিত মানুষরা হয়তো ভাবব: কী রে বাবা, কাপড়টাপড় খুলে ও রকম ঘণ্টার পর ঘণ্টা উদোম হয়ে, ছিঃ! ওঁরা যে কী অসম্ভব পেশাদার, আমাদের কল্পনাতেও আসবে না! কম্পিটিশন শুরুর আগে রীতিমত ওয়ার্কশপ করেন, যোগ-প্রাণায়াম শেখেন, যাতে ছ’-সাড়ে ছ’ঘণ্টা টানা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন। এমনও দেখেছি, খুব গরমে আমার পাশের শিল্পীর মডেল অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, শুইয়ে দিতে হয়েছে। তখনও সেই মডেল বলছেন, এই তো, শুয়ে আছি তো! তুমি আঁকো না! সামনেটায়, হাতে-পায়ে তো আঁকাই যায়! কী ডেডিকেশন থাকলে এই জিনিস সম্ভব! আর কী আনন্দ! ও-ভাবেই ছুটে বেড়াচ্ছেন চার দিক। রেজাল্ট ঘোষণা হয়ে গেছে, রাতের দিকে তখন বেশ শীত-শীত ভাব, আমি আর পাঞ্চালী দুটো স্টোল কিনে গায়ে জড়ালাম। কিন্তু আমার মডেল নিকোল কিচ্ছু পরবেই না! বলছে, এই যে তুমি এত সুন্দর এঁকেছ আমার গায়ে, এই ‘স্কিনওয়্যার’টাই তো আমার সেরা পোশাক!

কম্পিটিশন হয়ে গেল। এ বার উৎসব। রাতে, বিশাল বড় স্টেজে একটা পারফরমেন্স হয়। খোলা মাঠের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে র‌্যাম্পে জীবন্ত ক্যানভাস-রা হাঁটবেন। শিল্পীরাও থাকবেন, যে যাঁর ক্যানভাসের সঙ্গে। দেড়-দু’মিনিটের ব্যাপার, কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে তখন একটা মিউজিক বাজবে। সেটা শিল্পীকেই বেছে দিতে হয়। আমি এ বছর ‘রামলীলা’ ছবির ‘ঢোল বাজে’ গানটা নিয়ে গিয়েছিলাম। গত বছর তো ‘লুঙ্গি ডান্স’ বাজিয়েছি, কী নাচ লোকের! দু’মিনিট পেরিয়ে গেছে, পুরো গানটা চলেছে, সবাই

ফাইনাল রাউন্ডের সৃষ্টি।

নেচেছে, আমিও! পরে ভিডিয়ো দেখেছি, আমার পারফরমেন্সের বেলায় ক্যামেরা যত না আমাকে আর আমার মডেলকে দেখিয়েছে, উৎসব-পাগল মানুষের উল্লাসকে দেখিয়েছে অনেক গুণ বেশি! আর এ বছর তো সেকেন্ড হয়েছি, এই ঘোষণার পর আর স্টেজ থেকে হেঁটে নামিনি, জনসমুদ্রের ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে নেমেছি। এত আনন্দ, ভালবাসা কোত্থাও কখনও পাইনি। কলকাতাতেও তো পুজোর সময় ঠাকুর গড়ে সবচেয়ে বড় বড় পুরস্কারগুলো সব ক’টা পেয়েছি, কত নাচানাচি হয়েছে। কিন্তু সে-ও বড়জোর একটা দিন। পর দিন সকালে সব আগের মতো, আমিও যে-কে-সেই মানুষ। আর ওখানে? ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’কে কোলে তুলে তুমুল হইহই। যেন আমি না, ওরাই পুরস্কারটা পেয়েছে!

আর রেজাল্ট বেরনোর পরের উৎসব! আমাদের হোলিখেলাকেও হার মানাবে। আমরা তো রং-মাখামাখির নামে অসভ্যতা করি। আর ওখানে? বিশ্ববিখ্যাত ক্রিয়োলান রং-কোম্পানি লক্ষ লক্ষ টাকা দামের রঙের টিউব বিলি করছে, যাতে রঙের উৎসবের শেষটাও হয় রং মেখে আর মাখিয়ে। মাতামাতি আছে, মাতলামি নেই। এত লোক উলঙ্গ, তবু কোনও অশিষ্টতা নেই, অনাকাঙ্ক্ষিত ছোঁয়া নেই। সেই সকাল থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, রাত দুটো বাজে, ক্লান্ত আমি বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে কেটে পড়ার মতলব করছি, ওরা হইহই করে এসে ফের টানতে টানতে নিয়ে গেল। ব্যাগট্যাগ, এমনকী আমার ট্রফিটাও রাস্তায় পড়ে, কেউ ছুঁয়েও দেখবে না। চোর নেই, ইভটিজার নেই, পলিউশন নেই।

আগামী বছর তিন জন আন্তর্জাতিক স্পনসর পাব। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারও আমায় সাহায্য করতে চাইছে! তারা চায় আমি এই ‘লিভিং আর্ট’ নিয়ে ওখানে ওয়ার্কশপ করি। আমেরিকাতেও এই জন্য যাব ডিসেম্বরে। ক্রিয়োলান এ বার আমাকে ১৭০০ ইউরোর গিফ্‌ট হ্যাম্পার দিয়েছে। আমি যে-যে রং চাইব, পাঠিয়েও দেবে। ছবি আঁকার সরঞ্জাম ক্যারি করার একটা দারুণ সুটকেস দিয়েছে। সার্টিফিকেট দিয়েছে। ৭০০০ ইউরো প্রাইজ মানি পেয়েছি। কিন্তু যে সম্মানটা দিয়েছে, সেটা আমার কাছে সবচেয়ে বড়। খুব আনন্দ হয়েছে যেমন, কষ্টও পেয়েছি, আমাদের এখানকার ছোট, কুচুটে জগৎটার কথা ভেবে। আমি এক জন পেন্টার, আমার কী করে দুটো-তিনটে বিদেশি গাড়ি হল, সে-সব এখানে আলোচনার বিষয়। ছবি নিয়ে, কাজ নিয়ে কেউ কিছু বলে না। এই বডিপেন্টিং নিয়ে কম কথা হয়েছে? নগ্ন শরীরে রং মাখাচ্ছি, এটা যেন একটা কেচ্ছার ব্যাপার। কেউ বোঝে না, একটা শরীর, সেটা ছেলে কি মেয়ের, আমার কাছে ম্যাটার করে না। আমি শুধু জানি, সামনে একটা ক্যানভাস আছে। হ্যাঁ, এই ক্যানভাসটা অন্য রকম। তাতে কী! আমি এই হাতে দুর্গাপ্রতিমা গড়তে পারি, একটু একটু করে তাকে পূর্ণ করে তুলতে পারি, আর মানুষের শরীর-ক্যানভাসে সৃষ্টি করতে পারব না? আসলে, আর্ট যে আজকের পৃথিবীতে কোন জায়গায় চলে গেছে, এখানে বসে আমরা কেউ জানিই না। ডাইনোসর-যুগের ব্যাপারস্যাপার নিয়েই পড়ে আছি।

মেদিনীপুরের ছেলে আমি। দিদিরা পুজোয় আলপনা দিত, মা গয়না ব়ড়ি দিত, দেখেছি। এগুলো আমার রক্তে ঢুকে আছে। উত্তর কলকাতার যে বাড়িতে বড় হয়েছি, সেখানে দোলে একটা ছেলের গায়ে অ্যাক্রিলিক দিয়ে আমি রং করেছি! রামায়ণ-মহাভারতেও তো শরীরে রঙের বর্ণনা দেওয়া আছে। রাম ‘নবদূর্বাদলশ্যাম’, কচি ঘাসের মতো সবুজ। কৃষ্ণ নীল। এ-ও কি বডিপেন্টিং নয়? ছোটবেলায় রামলীলা, যাত্রাপালা দেখেছি। সারা গায়ে ভস্ম-মাখা ছাইরঙা শরীরের সাধু দেখেছি। বৈষ্ণব দেখেছি, কপালে তিলক। দিনের পর দিন মা’কে দেখেছি, চান করে আয়নার সামনে লাল টকটকে সিঁদুরের টিপ পরতে। এ-ও আমার কাছে বডিপেন্টিং!

বডিপেন্টিং ফেস্টিভ্যালে সামনের বছর যাব, বছর বছর যাব। যে জিনিস আমরা, ভারতীয়রাও আমাদের জীবনে, সংস্কৃতিতে বয়ে নিয়ে চলেছি, অথচ স্বীকার করছি না, বুঝেও বুঝছি না, সেই শিল্পটাকে প্রচার-প্রসারের দায়িত্ব আমার।

অনেকে জিজ্ঞেস করছেন, এই পুরস্কার কাকে উৎসর্গ করলেন? আমার মেয়ে রায়সা, এই পুরস্কারটা ওর। সারা বছর এত ব্যস্ত থাকি, ও আমাকে কাছে পায়ই না। পুরস্কারটা পাঞ্চালীরও, ও প্রতিযোগিতাটার খোঁজ দিয়েছে, সঙ্গে থেকেছে, এঁকেছে, এত কাজ করেছে! পুরস্কারটা বাবা-মা’র, ওঁদের জন্যই আজ আমি এখানে। পুরস্কারটা গোটা দেশেরও। এই প্রথম তো ভারত এই সম্মান পেল, অত বড় মঞ্চে!

sanatandinda@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE