Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৯

অচেনা স্রোত

ফোন ছাড়ার পর হালকা লাগল প্রিয়তোষের। ইপ্সির ওপর ভরসা আছে। ই-মেল আইডি পেলে কস্তুরীকে কিছু কথা লিখে যাবেন। বলে যাবেন আপ্রাণ চেষ্টা করেও আর একটা গল্প লিখতে না পারার ব্যর্থতার কথা। মেলে অ্যাটাচ করে দেবেন নিজের অসমাপ্ত সব গল্পের স্ক্যানড কপি।

ছবি: পিয়ালী বালা

ছবি: পিয়ালী বালা

কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৭:৩০
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: মলয় সেবন্তীকে জানায়, নীহার সরখেল কী ভাবে সিকিয়োরিটির ছেলেদের হাত করে সিসিটিভির ফুটেজ নিয়ে নিয়েছে। ফুটেজে ধরা পড়েছে, টাওয়ার-বি’র তীর্থময় গাঙ্গুলির মেয়ে টুইটি পর পর দু’টো রবিবারে টাওয়ার-এ’র ছাদে যাচ্ছে। প্রিয়তোষ একা বারান্দায় বসে ভাবতে থাকেন কস্তুরীর কথা। কস্তুরী আর ফোন করে না, মেসেজও না। প্রিয়তোষ ঈপ্সিতাকে ফোন করেন, যদি সে কোনও খবর দিতে পারে।

প্রিয়তোষ দেখলেন, ব্যাপার অন্য দিকে ঘুরে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি বললেন, ‘‘মনে হয় ঠিক। মেয়েটার সঙ্গে এক বার যোগাযোগ করতে পারবি?’’

‘‘কেন, তোমার গুণমুগ্ধ পাঠিকা তোমাকে ফোন করেছিল, নামটা দিব্যি মনে রেখেছ, নম্বর সেভ করে রাখোনি? কোনও কেস খেয়েছ না কি? আচ্ছা, দরকারটা কী?’’

লম্বা শ্বাস ছেড়ে প্রিয়তোষ বললেন, ‘‘মেয়েটাও লেখালিখি করে। কয়েকটা গল্পে আটকে গিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, কী ভাবে শেষ করা যায়। আমার কয়েকটা পয়েন্ট মনে হয়েছে। যদি ওর ইমেলটা পাওয়া যায়, ওকে ওগুলো পাঠিয়ে দেব।’’

‘‘লে বাবা! তুমি আবার গল্প লেখার টিউশনি শুরু করলে কবে থেকে? চাপ নিও না। দাঁড়াও, মেসেঞ্জার ঘেঁটেঘুঁটে দেখছি যদি যোগাযোগ করা যায়। কী যেন নাম বললে, মৃগনাভি?’’

ফোন ছাড়ার পর হালকা লাগল প্রিয়তোষের। ইপ্সির ওপর ভরসা আছে। ই-মেল আইডি পেলে কস্তুরীকে কিছু কথা লিখে যাবেন। বলে যাবেন আপ্রাণ চেষ্টা করেও আর একটা গল্প লিখতে না পারার ব্যর্থতার কথা। মেলে অ্যাটাচ করে দেবেন নিজের অসমাপ্ত সব গল্পের স্ক্যানড কপি। আসলে সব ব্যর্থ গল্পের মধ্যে কস্তুরী কোথাও না কোথাও রয়ে গিয়েছে নানান নামের চরিত্র হয়ে। সেই সব চরিত্ররা শুধু গল্পের চরিত্র নয়, প্রিয়তোষের মানসিক অবলম্বনও। এখান থেকে চলে যাওয়ার আগে সব চরিত্রকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে যাবেন। সব কি গুছিয়ে লিখতে পারবেন কস্তুরীকে? অন্তত এটুকু লিখতেই হবে, আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, অর্জুন আর শ্রীতমাকে নিয়ে তোমার গল্পটা পড়ার অপেক্ষায় থাকব। ঈপ্সিতা আমাকে বলেছে, আজকাল সব খবরের কাগজ অনলাইন পাওয়া যায়। তুমি লিংকটা পাঠিও। আমি পড়ে নেব।

শ্রীতমা। নামটা মনে পড়তেই আর একটা কথা মনে পড়ে গেল প্রিয়তোষের। ওদের জানাতে হবে, এই ফ্ল্যাট আপাতত ভাড়া দেওয়া যাবে না। ওরাও হয়তো অপেক্ষায় আছে।

২০

‘‘ও হৃষিতাদিদি!’’

সকালবেলায় জগিং করতে করতে হঠাৎ পেছন থেকে হাঁপ-ধরা ক্ষীণ ডাকটা শুনতে পেল হৃষিতা। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে জগিং করছিল বলে খেয়ালই করেনি। ডাকটা শুনে থেমে গিয়ে, কান থেকে ইয়ারফোন খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে একটু অবাক হল। গোলাপি একটা জাম্পস্যুট পরে একদম পিছনেই টুইটি। রোজ জগিং করা হয়ে ওঠে না। তবে টুইটিকে কোনও দিন জগিং করতে দেখেনি। তাও এই রবিবার বেশ সকালে, যখন কেউই প্রায় জগিং করে না।

টুইটি এগিয়ে এসে অল্প হেসে বলল, ‘‘গুড মর্নিং।’’

মেয়েটার ওপর বিরক্তি ছিল হৃষিতার। এই সকালবেলায় তা দেখাল না। মিষ্টি হেসে বলল, ‘‘ভেরি গুড মর্নিং!’’

‘‘আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে একটু জগিং করতে পারি?’’ অল্প ঝুঁকে হাঁটু দু’টো ধরে দম নিতে নিতে টুইটি বলল।

‘‘কর। ভাল তো। চল। গেট আপ।’’

‘‘থ্যাংক ইউ।’’

পাশাপাশি জগিং শুরু করে হৃষিতা জিজ্ঞেস করল, ‘‘তোকে তো আগে কোনও দিন এই সময় জগিং করতে দেখিনি! কখন করিস তুই?’’

‘‘স্কুল থাকলে আরও সকালে। ঠান্ডা পড়ে গিয়েছে, লেপের তলা থেকে বেরিয়ে এখন আর জগিং করতে ইচ্ছে করে, বলো!’’

‘‘বুঝেছি। শীতকাতুরে তুই।’’ হেসে উঠস হৃষিতা, ‘‘তা হলে বিকেলবেলায় জিম জয়েন করতে পারিস।’’

একটু চুপ করে থেকে টুইটি বলল, ‘‘আগে জিম করতাম। মা বন্ধ করিয়ে দিয়েছে। এখন জগিং ধরিয়েছে।’’

‘‘পুওর গার্ল। কেন, জিমও তো ভাল। বন্ধ করে দিলি কেন? দুম করে ওয়ার্ক আউট ছেড়ে দিলে ওয়েট পুট অন করে যাবি। লাইট এক্সারসাইজগুলো কর।’’

‘‘আসলে...’’ কিছু বলতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে একটু চুপ করে থেকে টুইটি বলল, ‘‘তুমি কিছু শোনোনি?’’

হৃষিতা বুঝতে পারল না, ‘‘কী ব্যাপারে বল তো?’’

‘‘সবাই এখন আমাকে নিয়ে কথা বলছে। একা একা বাড়ির বাইরে যাওয়া প্রায় বন্ধ। মা এখন সেই ছোটবেলার মতো স্কুলবাসে তুলে দিতে যায়। আবার নামিয়ে আনে। টিউশনি গেলে সঙ্গে যায়। মোবাইল নিয়ে নিয়েছে। এই যে এখন জগিং করছি, ওই দেখো মা ওপরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নজর রাখছে।’’

এখানকার কোনও ব্যাপারেই কোনও আগ্রহ নেই হৃষিতার। তবে টুইটির কথাটা শুনে চোখটা বি-টাওয়ারের দিকে চলে গেল। লম্বা টাওয়ার। অনেকগুলো বারান্দা। হৃষিতা জানে, ওই বারান্দাগুলোর একটা বারান্দা থেকে দু’টো চোখ লুকিয়ে ওকে দেখে। জগিং করতে করতে সে কখনও বারান্দাগুলোর দিকে মুখ তুলে চেয়ে দেখে না। তবে আজ চোখটা চলে গেল। একটা বারান্দায় সত্যিই এক ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে। টুইটিদের ফ্ল্যাট কোনটা, চেনে না হৃষিতা। টুইটির মা’কেও না। তবে মনে হল টুইটি ওঁর কথাই বলছে।

‘‘তোর কি কিছু প্রবলেম হয়েছে টুইটি?’’

‘‘তুমি সত্যিই কিছু শোনোনি?’’

হৃষিতা বিরক্ত হল, ‘‘তুই কী বলছিস বুঝতে পারছি না।’’

‘‘তোমাকে বলছি হৃষিতাদি। তুমি টিটানকে চেনো? ভাল নাম স্বর্ণাভ। স্বর্ণাভ দত্ত। ওর বাবা সৌমিত্র দত্ত।’’

এখানে খুব অল্প লোককেই নামে চেনে হৃষিতা। অল্প কয়েক জন বাড়িতে বাবার কাছে এসে গায়ে পড়ে আলাপ করে। বাকি যাতায়াতের পথে মুখচেনা সব। টিটান, স্বর্ণাভ— কোনও নামই চিনতে না পারলেও সৌমিত্র দত্ত নামটাকে চেনে। লোকটা কায়দা করে এক বার মোবাইল নম্বরটা নিয়েছিল। গম্ভীর হয়ে হৃষিতা মাথা ঝাঁকাল, ‘‘না, ঠিক চিনি না রে!’’

‘‘টিটান এখানেই থাকে। ও আর আমি একসঙ্গে জিম করতাম। টিটানের আমাকে খুব ভাল লেগে গিয়েছিল। আমারও টিটানকে ভাল লাগে। টিটানের অনেক দুঃখ, জানো। ওর বাবাটা ভাল লোক নয়। টিটান আর ওর মায়ের ওপর অনেক অত্যাচার করে। টিটান আমাকে এ-টাওয়ারের ছাদে মাঝেমাঝে ডাকত। বিশ্বাস করো, খারাপ কোনও উদ্দেশ্যে নয়। ওর দুঃখের কথা বলত। আমার একটা ছোটবেলার হবি ছিল। সেটা এখন টিটানের হয়েছে। আনন্দ বা দুঃখ হলে সোপ বাবল ওড়ায়। কিন্তু এখানকার সিকিয়োরিটিরা সিসিটিভিতে আমার ছাদে যাওয়ার ছবি তুলে বাবাকে দেখিয়ে দিয়েছে। ব্যস।’’

গলাটা ভারিক্কি করে নিয়ে হৃষিতা বলল, ‘‘তার পর তোর মা তোর বাইরে বেরনো বন্ধ করে দিয়েছে। তোর মায়ের জায়গায় আমি হলে আমিও একই কাজ করতাম। তোর এখন কোন ক্লাস টুইটি?’’

‘‘টুয়েলভ।’’

‘‘টুয়েলভ মানে সামনের বছর বোর্ড এগজাম। ক’মাস বাকি আছে আর? এখন কি প্রেম করার সময়? সামনে পরীক্ষা, ফোকাসটা এখন অন্য কোনও দিকে ঘোরাস না টুইটি।’’

টুইটি আবার চুপ করে গেল। হৃষিতা মনে মনে হাসল। নিজে যখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ত, এ রকমই একটা ছেলেকে খুব ভাল লেগে গিয়েছিল। ইনফ্যাচুয়েশন। মা ধরতে পেরে খুব শাসন করে এ ভাবেই চোখে চোখে রাখত।

‘‘কী রে! তুই আবার আমার ওপর রেগে গেলি নাকি?’’

টুইটি মাথা নাড়াল, ‘‘না। একটু ওই বেঞ্চে বসবে দিদি?’’

‘‘না। জগিং করতে করতে বসতে নেই।’’

লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে টুইটি বলল, ‘‘আসলে আমি ভাবলাম তুমিই বুঝবে।’’

হৃষিতা চোখ বড় করে টুইটির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘কেন রে? এত লোক থাকতে আমিই বুঝব কেন?’’

একটু ইতস্তত করে টুইটি বলল, ‘‘কারণ, তোমার সঙ্গে তো একই জিনিস হয়েছে। লোকে যা-তা বলে বেরিয়েছে। জানো, কাজের লোকেরা পর্যন্ত।’’

‘‘মানে?’’ হৃষিতার পা দু’টো থেমে গেল।

‘‘ওই যে, তোমার গিটার শিখতে যাওয়া নিয়ে।’’

হৃষিতা গম্ভীর হয়ে গেল। টুইটি একটা ঢোক গিলল। কথাটা দুম করে বলা কি ঠিক হল? হৃষিতার মুখ দেখে একটু ঘাবড়েই গেল টুইটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে বলল, ‘‘স্যরি দিদি, এ ভাবে বললাম। জানো তো লোকগুলো কী জঘন্য! সিসিটিভির ফুটেজে শুধু আমার ছবিই দেখিয়েছে। টিটানের ছবি দেখায়নি। তাতে আমাকে নিয়ে খুব খারাপ খারাপ কথা রটছে। আমি কার জন্য ছাদে যাই, সবাই জানতে চাইছে। আমি কিন্তু কাউকে টিটানের কথা বলিনি। তোমাকেই আজ প্রথম বললাম। তুমি প্লিজ কাউকে বোলো না।’’

হৃষিতা চুপ করে থাকল। টুইটি বলতেই থাকল, ‘‘জানো, আমি মনটাকে সেটল করার জন্য খুব চেষ্টা করছি। মোবাইল-টোবাইল নেই তো, তাই ফিজিট স্পিনার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে...’’

হৃষিতা বলল, ‘‘টিটানের কথা বাড়িতে বলিসনি কেন?’’

টুইটি মুখ কালো করে বলল, ‘‘কী ভাবে বলি বলো তো? মা’কে বললেই তো মা ওর মা’কে ফোন করে আচ্ছা করে ঝাড় দেবে। তার পর টিটানের বাবা জানতে পারলে ওকে বেল্ট দিয়ে মেরে শেষ করে দেবে। যে ছেলেটা আমাকে ওর দুঃখের কথা বলতে আসত, তাকেই আমি মার খাওয়াব?’’

হৃষিতা অবাক চোখে টুইটির দিকে তাকাল। এইচআর ম্যানেজার হিসেবে অনেক মানুষের বিচিত্র সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু টুইটির মতো কাউকে দেখেনি। সবাই গা বাঁচাতে চায়। এ ভাবে গরল পান করে না। না কি এই ভালবাসা, এই সৎ সাহস ওই টুইটির মতো বয়সটা পর্যন্তই থাকে?

জগিং শুরু করে হৃষিতা বলল, ‘‘ সবাইকে কী বলেছিস?’’

‘‘প্লেন দেখতে যাই। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করছে না। প্লেন তো বারান্দা থেকেই দেখা যায়! আর প্লেন দেখার কী আছে!’’

‘‘তুই আর টিটান কি একসঙ্গে ছাদে যেতিস?’’

‘‘না না, পাগল! আলাদা সময়ে গিয়ে মিট করতাম। আবার আলাদা সময়ে বেরিয়ে আসতাম।’’

একটু চিন্তা করে হৃষিতা বলল, ‘‘তা হলে তোর আর টিটান, দু’জনেরই ফুটেজ আছে। একটা জিনিস ভাবাচ্ছে। তোরগুলো দেখাল, কিন্তু টিটানের ফুটেজ ওরা দেখাল না কেন? আচ্ছা, তোরা জানতিস না সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে?’’

‘‘জানতাম তো। টিটানকে বলেছিলাম। টিটান বলেছিল, সফ্‌টওয়্যারে গন্ডগোল আছে বলে চালু হয়নি। বাবা তো বলছে, বাবাকে ফাঁসানোর জন্য এ সব করেছে।’’

‘‘কেন? কে ফাঁসাবে?’’

‘‘ওই তো, নীহার সরখেলরা। ওরা তো বাবার অ্যান্টি গ্রুপ। সেই গ্রুপে আবার টিটানের বাবাও আছে।’’

‘‘স্ট্রেঞ্জ! অ্যান্টি গ্রুপ। সেখানে টিটানের বাবাও আছেন অথচ টিটানের ফুটেজ তিনি দেখেননি!’’ সারা সপ্তাহ খাটুনির পর রবিবার ছুটির দিনে এই সব জটিলতার মধ্যে ঢুকতে ইচ্ছে করছিল না হৃষিতার। কে কী বলল তা নিয়ে কখনও মাথা ঘামায়নি। তবে মনে হল, এত ঘা-খাওয়া জীবনেও প্রতিদিন অনেকের কাছে কিছু না কিছু শেখার আছে। একটা বাচ্চা মেয়েকেও নিয়ে পলিটিক্স! মেয়েটা বিশ্বাস করে সব কথা বলছে। ওকে বাঁচানোর জন্য কিছু করা যায় না?

‘‘তুই আমাকে বল তো টুইটি, কোন গ্রুপে কারা আছে!’’

‘‘বলছি...’’ টুইটি নিজের মতো করে বিবদমান দু’পক্ষের নাম আর ভূমিকা বলল। বলা শেষ করে জগিং থামিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলল, ‘‘উফ, হাঁপিয়ে গিয়েছি।’’

হৃষিতাও থেমে গিয়ে বলল, ‘‘ঠিক আছে। ওভারডু করিস না। চল, আমিও ফিরব। আমার বাড়িতে আসবি? ফ্রুট জুস খাবি? তোর ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলা দরকার।’’

টুইটি মুখ তুলে ওপরের দিকে চাইল। মা প্রবল ভাবে হাত নাড়ছে। চলে আসতে বলছে। বিড়বিড় করে বলল, ‘‘ঠিক হয়েছে। যেমন মোবাইলটা কেড়ে নিয়েছে, ফোন করে আর ডাকতে পারছে না। হাত ছুড়ছে। দেখো।’’

হৃষিতা এক ঝলক ওপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল, ‘‘ওহ! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তোর মা হয়তো তোর আমার বাড়ি আসা পছন্দ না-ও করতে পারেন। যা, বাড়ি যা। কালকে আবার সেম টাইম। উই উইল ওয়ার্ক আউট টুগেদার। চিন্তা করিস না, এ সব যাতে তোর পড়াশোনা ডিস্টার্ব না করে, তার জন্য কিছু একটা ভেবে বার করতে হবে আমাদের।’’

‘‘থ্যাংক ইউ দিদি। কাল তোমাকে বলব, কেন আমাদের বাড়িতে কোনও দিন কোনও লাভ স্টোরির জন্ম হবে না। আমার দাদার কথা বলব।’’

হৃষিতা হাসল, ‘‘তুই একটা ব্রেভ গার্ল। লাভ স্টোরির জন্য গোটা জীবন পড়ে। এখন কিন্তু শুধুই পড়াশোনা, কেমন!’’

২১

কলিং বেলের আওয়াজটা শুনে একটু চমকে উঠল রৌনক। রবিবার সকালে এই সময় কলিং বেল দু’জন বাজায়। এক দুধওয়ালা, আর দুই, কাগজওয়ালা। ওদের বেল বাজানোর কায়দাটা আলাদা। এ ভাবে বেল এক জনই বাজাত প্রত্যেক রবিবার। কিন্তু সেই বেল গত তিন সপ্তাহে বাজেনি। সে দিন মায়ের বাড়ি থেকে ফেরার পর হৃষিতার সঙ্গে ফোনেও আর কোনও কথা হয়নি। বেলের আওয়াজটা শুনে হঠাৎ ভিতরে একটা ভাললাগার অনুভূতি গোটা শরীরে ছড়িয়ে গেল। একটা ট্র্যাক আর টি-শার্ট গলিয়ে এসে দরজাটা খুলল রৌনক। বাইরে ঘন নীল রঙের সেই জাম্পস্যুটটা পরে হৃষিতা দাঁড়িয়ে আছে। এক হাতে গিটারের বাক্স, অন্য হাতে দুধ আর খবরের কাগজ। মুখটা গম্ভীর।

ক্রমশ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE