Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৭

নুড়ি পাথরের দিনগুলি

খুব ধনী না হলেও উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলে ছিলেন তিনি। পরিবার যতই স্বচ্ছল হোক, অভিজাত হোক, একটা জিনিস তিনি বুঝেছিলেন, নিজের পায়ে  দাঁড়াতে হবে। স্কুল পেরিয়ে কলেজ, তার পর চার্টার্ড পাশ।

ছবি: অমিতাভ চন্দ্র

ছবি: অমিতাভ চন্দ্র

প্রচেত গুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: আহিরী বিতানের সঙ্গে কথা শেষ করে টিচার্স রুমে আসে। কমলেশ রায় সৌহার্দ্য বসু নামের ছেলেটিকে অফিসে ডেকে কথা বলেন, তার মায়ের নাম শ্রীকণা, জেনে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন। ছেলেটির বাড়ি কোথায়, গ্রামের নাম কী, জিজ্ঞেস করেন। অ্যাকাউন্টস বিভাগের একটি ভুল এই ছেলে ধরেছে, কোম্পানির লাভ হয়েছে তাতে।

কমলেশ তাড়াতাড়ি বলেছিলেন, ‘‘না না, আজ নয়। দেখছ না আজ কী অবস্থা? তুমি বরং সোমবার পাঠাও। লাঞ্চের পর কোনও একটা সময়ে... ঠিক আছে তিনটের সময়। ওর সঙ্গে চা খাব। যাবার সময় নিলয়কে বলে যাও, ও যেন অ্যাপয়েনমেন্টে নোট করে রাখে। কী নাম বললে যেন?’’

‘‘সৌহার্দ্য, সৌহার্দ্য বসু।’’

ত্রিপাঠী বেরনোর সময় নিলয়কে খাতায় অ্যাপয়েনমেন্ট লিখিয়ে দিল। নিলয় গত পাঁচ বছর ধরে কমলেশ রায়ের পিএ-‌র কাজ করছে। চৌখস ছেলে। বসের চেম্বারের সামনে টেবিলে বসে থেকে অফিসের অনেক খোঁজখবর রাখে। ‘সৌহার্দ্য’ নামটা শুনে বলল, ‘‘স্যর, কোন সৌহার্দ্য? নতুন জয়েন করেছে যে?’’

ত্রিপাঠী ঘাড় নাড়লেন। নিলয় বলল, ‘‘স্যর কি ওকে প্রাইজ দেবেন?’’

ত্রিপাঠী এই ছেলেটিকে খুব একটা পছন্দ করেন না। কৌতূহল বেশি।

‘‘তুমিও তা হলে খবর পেয়ে গেছ?’’

নিলয় প্রশ্নের জবাব দিল না। সামান্য হাসল। বলল, ‘‘সবাই কিন্তু ভাল ভাবে নেয়নি স্যর। মাত্র ক’দিন ঢুকেই.‌.‌.‌’’

ত্রিপাঠী খানিকটা কড়া গলায় বললেন, ‘‘আমারও তো সেটাই প্রশ্ন। যারা এত দিন আছে, তারা কী করছিল? হয় ধরতে পারেনি, নয় জেনেও চুপ করে ছিল।’’

নিলয় দ্রুত নিজেকে বদলে ফেলে বলল, ‘‘ঠিকই, স্যর। তা হলে কাল তিনটে লিখে রাখি?’’

সেই সৌহার্দ্য এসেছে তিনটে বাজবার দশ মিনিট আগে। তাকে অপেক্ষা করতে হয় আরও কুড়ি মিনিট। কমলেশ রায় ওর্য়াকশপ ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ওয়ার্কশপে একটা ছোট সমস্যা হয়েছে। বাইরের কোনও একটা ক্নাব থেকে ছেলেপিলে এসে টাকা চেয়েছে। ‘তোলা’ যাকে বলে। হুমকি দিয়ে গেছে। দীর্ঘ কর্মজীবনে কমলেশ বুঝেছেন, এই ধরনের সমস্যা হল ফোঁড়ার মতো। ফেলে রাখলে পেকে গিয়ে যন্ত্রণা বাড়ায়। ওর্য়াকশপ ম্যানেজারকে তিনি ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ছেলেগুলো কে? কত বড় গুন্ডা? এত দিন পরে হঠাৎ সাহস হল কোথা থেকে? নেতা কে? কিছু টাকা দিতে কোনও অসুবিধে নেই, কিন্তু তাতে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। সবটা বুঝতেই ওয়ার্কশপ ম্যানেজারকে ডেকে কথা বলতে চেয়েছিলেন। তার সঙ্গে কথা সেরে সৌহার্দ্যকে ঘরে ডেকে নিয়েছেন। ইন্টারকমে চা দিতে বললেন।

‘‘সৌহার্দ্য, ‌তোমার কথা শুনলাম। ভেরি গুড।’’

‘‘থ্যাঙ্ক ইউ স্যর।’’

‘‘তুমি কোন স্ট্রিম নিয়ে বি টেক করেছ?’’

‘‘মেকানিক্যাল, স্যর। তবে আমার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছে ছিল না। ফিজিক্স নিয়ে জেনারেল স্ট্রিমে পড়তে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম রিসার্চ করব। সুযোগ হয়নি।’’

‘সুযোগ হয়নি’ ধরনের কথা কমলেশের পছন্দ নয়। এটা হেরে যাওয়া কথা। যারা পারে না, তাদের কথা। সুযোগ হয় না, সুযোগ নিজেকে করে নিতে হয়। কমলেশ বললেন, ‘‘চা খাচ্ছ না কেন? খাও।’’

সৌহার্দ্য হাত বাড়িয়ে কাপটা নিল। সাবধানে ধরে চুমুক দিল। তার ভঙ্গি দেখে মনে হল, দামি কাপটা নিয়ে সে খানিকটা সতর্ক। কমলেশ আবার চোখ নামিয়ে নিলেন। কাগজপত্র দেখতে লাগলেন। দামি কাপ-‌ডিশে চা খাবার অভ্যেস তার ছোট থেকেই। খুব ধনী না হলেও উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলে ছিলেন তিনি। পরিবার যতই স্বচ্ছল হোক, অভিজাত হোক, একটা জিনিস তিনি বুঝেছিলেন, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। স্কুল পেরিয়ে কলেজ, তার পর চার্টার্ড পাশ। শেষে বিদেশে গিয়ে দু’বছর ম্যানেজমেন্ট পড়া। লম্বা জার্নি। পরিশ্রম করতে হয়েছে। নিজে সুযোগ তৈরি করে, সেই সুযোগ নিজেকেই দিতে হয়েছে। ফুটবল খেলার মতো। একে ড্রিবল করে, তাকে ট্যাকল করে গোলের সামনে বল এগিয়ে নাও। মনে রেখো, গোলে নিজেকেই মারতে হবে।

‘‘তোমার বাবা কী করেন?’’

‘‘স্যর, স্কুলে পড়াতেন। ওই ছায়াপাতা গ্রামেই স্কুল ছিল।’’

কমলেশ মনে মনে বোঝার চেষ্টা করলেন, এই ছেলের বয়স‌ কত?

‘‘বাবার কী হয়েছিল?’’

‘‘হার্টের সমস্যা ছিল।’’

‘‘ওহো।’’

কমলেশ চুপ করে রইলেন। এত কথা বলা ঠিক হচ্ছে না। কাজে নতুন জয়েন করে সে একটা ভাল পারফরমেন্স দেখিয়েছে। তার মানে এই নয়, তার পরিবারের এত সব খঁুটিনাটি জানতে হবে। কেন তিনি এমন করছেন? সৌহার্দ্যও সম্ভবত বুঝতে পারল, বেশি ক্ষণ থাকা হয়ে গেছে। সে চায়ের কাপে দ্রুত চুমুক দিল।

‘‘স্যর, আমি কি এ বার উঠতে পারি?’’

কমলেশ বললেন, ‘‘হ্যাঁ, এস। তোমার তো কাজ আছে। শোন সৌহার্দ্য, তুমি যা করেছ সেটা কোম্পানির জন্য ভাল হয়েছে। আমরা খুশি হয়েছি। এত দিন চোখ এড়িয়ে যাওয়া একটা ভুল তুমি নোটিস করিয়ে দিলে। এ রকম সিনসিয়ারিটি নিয়ে এবং অ্যালার্ট হয়ে কাজ করবে। আই উইশ ইউ অল সাকসেস।’’

সৌহার্দ্য উঠে দঁাড়ায়। কমলেশ উঠে দঁাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে তার হাতটা চেপে ধরেন। ঝাঁকিয়ে বলেন, ‘‘ভাল থাকো। মন দিয়ে কাজ করো।’’

সৌহার্দ্য চলে যাওয়ার জন্য ঘুরতে যায় আর তখনই একটা ছোট অঘটন ঘটে। তার বঁা হাতের আলতো ধাক্কায় বোন-চায়নার ফিনফিনে কাপটা টেবিল থেকে মোটা, নরম কার্পেটের ওপর পড়ে এবং ভেঙে যায় অতি হালকা আওয়াজ করে। সৌহার্দ্য সে দিকে ফিরেও তাকায় না। যেন কাপ পড়ে যাওয়ার ঘটনা সে জানতে পারেনি।

সৌহার্দ্য ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে আরও একটু অপেক্ষা করেন কমলেশ। তার পর ইন্টাকমে পর পর দুটো নম্বর ধরেন। প্রথমটা নিলয়কে।

‘‘ক্লিনিং-‌এর কাউকে পাঠাও। ঘরে একটা কাপ ভেঙেছে।’’

পরের ফোনটা ধরেন ত্রিপাঠীকে।

‘‘শোনো, এই ছেলেটির জন্য কিছু করা যায়?’’

ত্রিপাঠী একটু অবাক হয়ে বলল, ‘‘কার কথা বলছেন স্যর?’’

কমলেশ রায় বললেন, ‘‘আরে ওই যে, তোমার সৌহার্দ্য।’’

ত্রিপাঠী এ বার তড়িঘড়ি বললেন, ‘‘ওহো, আজ গিয়েছিল তো। আমার খেয়াল ছিল না স্যর। কী করতে বলছেন?’’

কমলেশ একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘‘একটা ইনক্রিমেন্ট যদি বাড়িয়ে দেওয়া যায়। রিওয়ার্ডস হিসেবেই ধরো, অথবা একটা পোস্ট লিফট করে দাও যদি।’’

‘‘আপনি যদি চান তাহলে এইচ আর ডিপার্টমেন্টকে বলছি স্যর, কিন্তু.‌.‌.‌ আমার মনে হয় এই মুহর্তে এত কিছু না করাই ভাল। এমনিতেই এক্সপিরিয়েন্স থাকার জন্য আমরা ওকে খানিকটা লিফট দিয়েই এনেছি। নেগোসিয়েশনের সময় ও যা চেয়েছিল। আপনি ডেকে চা খাইয়েছেন, ব্যস, আপাতত ওটাই এনাফ। বেশি করলে মনে হবে, কোম্পানি এত দিন হিসেবে বড় কোনও গোলমাল করছিল, আমরা বিরাট কোনও লসের হাত থেকে বঁাচলাম। সেটা মনে হয় ঠিক হবে না।’’

কমলেশ একটু ভেবে বললেন, ‘‘দ্যাট’স ট্রু।’’

ত্রিপাঠী বললেন, ‘‘তার পরেও যদি বলেন আমি ফাইলটা দেখতে পারি।’’

‘‘দরকার নেই। তুমি বরং একটা কাজ করো ত্রিপাঠী। এইচ আর হেডকে বলে দাও, এ বার থেকে এমপ্লয়িদের পার্সোনাল ফাইলে মাদার্স নেম মাস্ট। মায়ের নাম লিখতেই হবে। আদারওয়াইজ সার্ভিস বুক কমপ্লিট হবে না।’’

ত্রিপাঠী খানিকটা হতচকিত হয়ে বললেন, ‘‘মায়ের নাম!‌ ‌আমি কি স্যর এইচ আর হেডকে একটা ফোন করতে বলব?’’

কমলেশ বললেন, ‘‘না, তুমি বলে দাও।’’

ফোন রেখে ফাইল টানলেন কমলেশ রায়। একটু পরেই বুঝতে পারলেন, কাজে পুরোপুরি মন বসছে না। ভিতরে এক ধরনের অশান্তি হচ্ছে। অশান্তি ঝেড়ে ফেলবার চেষ্টা করলেন। পারলেন না। খচখচ চলতেই লাগল। আরও খানিক পরে অশান্তির কারণ ধরতে পারলেন কমলেশ। সৌহার্দ্য বসুর মায়াভরা চোখদু’টো তার পরিচিত। এই চোখ তিনি আগে কোথাও দেখেছেন। কোথায় দেখেছেন?

টেবিলের ওপর রাখা মোবাইল বেজে ওঠে। স্ক্রিনে মেয়ের মুখের ফোটো। প্রত্যেক বারের মতো আজও ফোন ধরার আগে কয়েক মুহূর্ত মেয়ের ফোটোর দিকে তাকিয়ে রইলেন কমলেশ। ফোটোটা আহিরীই বাবার মোবাইলে সেভ করে দিয়েছে। তার পঁাচ বছর বয়সের মুখ। দুষ্টুমিতে ভরা। এই মুখ এক বার না দেখে ফোন কানে নিতে পারেন না কমলেশ।

শ্রীকণা বললেন, ‘‘নতুন অফিস কেমন লাগছে?’’

সৌহার্দ্য স্নান করে এসেছে। মাথায় তোয়ালে ঘষতে ঘষতে বলল, ‘‘সবে তো কিছু দিন হল। মনে হয়, আরও ছ’মাস ভা‌ল লাগবে। তার পর আর নয়।’’

শ্রীকণা বললেন, ‘‘এ বার একটা কোথাও থিতু হয়ে বোস। বছর কাটতে না কাটতে তো অফিস বদলে ফেলছিস। এই নিয়ে ক’টা কোম্পানি হল বল তো?’’

সৌহার্দ্য আয়নার সামনে দঁাড়িয়ে আছে। কোমরে বড় একটা সাদা তোয়ালে জড়ানো, গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি। মায়ের সঙ্গে সে আয়নার মধ্যে দিয়ে কথা বলছে। তার চেহারা নিয়মিত জিমে যাওয়া, পেটানো। এই ছেলেকে অবশ্যই রূপবান বলা যায়।

‘‘এখন এটাই নিয়ম মা। কোম্পানি জাম্প করতে হয়। বেটার থেকে বেটার থেকে বেটার। যত ক্ষণ না তুমি প্রপারলি জাজড হচ্ছ, তোমার এমপ্লয়াররা তোমার কদর বুঝতে পারছে। তার পর এ কসময় সাঁইইই।’’

সৌহার্দ্য ডান হাত দিয়ে প্লেনের উড়ে যাওয়া দেখাল। শ্রীকণার ছেলের কথা পছন্দ হল না। ছেলেটা বড্ড কেরিয়ার-পাগল হয়ে গেছে। যত দিন যাচ্ছে পাগলামি বাড়ছে। টাকা চিনেছে খুব। শুধু উপার্জন নয়, দু’হাতে খরচ করতেও শিখেছে। তবে শুধু নিজের জন্য নয়, মায়ের জন্যও খরচ করে। সে সবের অনেক কিছু বেহিসাবি খরচ। বারণ করলে খেপে যায়। সৌহার্দ্য যে দিন তার ঘরে এসি মেশিন লাগিয়ে দিল, সে দিন তো শ্রীকণা ষথেষ্ট রাগারাগি করেছিলেন।

‘‘তুই কি খেপে গিয়েছিস সোহো? এসি দিয়ে আমার কী হবে? চার তলার ওপর ফ্ল্যাট। তার ওপর আমার ঘরটা দক্ষিণমুখী। জানলা খুলে দিলে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয়। এসি চালিয়ে মরব না কি? আমার ও সব অভ্যেস নেই বাপু।’’

সৌহার্দ্য বলেছিল, ‘‘সামান্য মাস্টারের বউ হয়ে অনেক কষ্ট করেছ। আর নয়, এখন তুমি এক জন ওয়েল প্লেসড ইঞ্জিনিয়ারের মা। এ বার নতুন করে লাইফ এনজয় করো। কোনও কিছুতে পুরোপুরি স্যাটিসফায়েড হবে না। ভাববে, আরও ভাল চাই। এই যে ফ্ল্যাটে আমরা রয়েছি, এটা আর আমার পছন্দ হচ্ছে না। কলকাতায় যা পলিউশন তাতে আরও ওপরে থাকা উচিত।’’

ছেলের এই কথায় শ্রীকণা আরও বিরক্ত হন। বলেন, ‘‘জীবন তো শেষ করে আনলাম। আর কী এনজয় করব?’’

সৌহার্দ্য বলে, ‘‘তোমার মতো করে এনজয় করবে। খাবেদাবে, বেড়াবে। পুজোর সময় তোমাকে নিয়ে কুলু–মানালি যাব ভেবেছি। কেমন হবে? তোমার অন্য কোনও প্ল্যান থাকলে বলতে পারো।’’

শ্রীকণা বললেন, ‘‘ধুস, পাগল! আমি কোথাও যাব না।’’

সৌহার্দ্য ‌চুল আঁচড়াতে অঁাচড়াতে বলল, ‘‘একটা সময় সংসারে টাকাপয়সা ছিল না। বাবা ধারদেনা করে জমি-‌বাড়ি কিনে বসল। এক বারও ভাবল না, সংসার কী ভাবে চলবে। ওইটুকু তো বেতন ছিল, তাই দিয়ে মাসের প্রথমে লোন মেটাতে হত, ফলে বাকি দিনগুলো খঁুড়িয়ে চলতে। এখন আর নয়।’’

শ্রীকণা ছেলের ছেড়ে রাখা জামা গোছাতে গোছাতে বললেন, ‘‘তোর বাবা শান্তশিষ্ট পাড়াগঁা পছন্দ করত। সেই জন্যই ওখানে জমি-বাড়ি কিনেছিল। খুব দাম তো ছিল না। ভেবেছিল, সারা জীবন থাকবে।’’

সৌহার্দ্য বলল, ‘‘ভুল করেছিল।’’

শ্রীকণা বললেন, ‘‘অমন ভাবে বলছিস কেন? তোকে তো লেখাপড়া শিখিয়েছে। মানুষ করেছে।‌’’

সৌহার্দ্য ট্রাউজার্স পরতে পরতে বলল, ‘‘কোথায় শিখিয়েছে? আমার তো হায়ার স্টাডিজ করবার ইচ্ছে ছিল। হায়ার সেকেন্ডারিতে আমার রেজাল্টও খুব ভাল ছিল। স্বপ্ন দেখতাম, বিজ্ঞান নিয়ে পড়ব। গবেষণা করতে বিদেশে যাব।
সে সব আর হল কই? বাবা তো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠিয়ে দিল, যাতে তাড়াতাড়ি রোজগার শুরু করি। এটা লেখাপড়া শেখানো হল?
আমি মানুষ হলাম ঠিকই, কিন্তু সেটা রোজগেরে মানুষ। বাবার ইচ্ছেমত মানু্্ষ।‌ আর এখন তাতেই আমি আমার সমস্ত মনপ্রাণ ঢেলেছি। হায়ার স্টাডিজ গো টু হেল।’’

ক্রমশ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Series Novel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE