Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রথম সেলেব্রিটি প্রেসিডেন্ট

প্রচারের সব আলো শুষে নেন। সুন্দরী স্ত্রীকে পাশে বসিয়ে হাত নাড়েন হুডখোলা গাড়ি থেকে। হোয়াইট হাউস থেকে ছড়িয়ে দেন মার্কিন মূল্যবোধ। বেঁচে থাকলে জন এফ কেনেডি আগামী কাল পা দিতেন একশো বছরে। শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়প্রচারের সব আলো শুষে নেন। সুন্দরী স্ত্রীকে পাশে বসিয়ে হাত নাড়েন হুডখোলা গাড়ি থেকে। হোয়াইট হাউস থেকে ছড়িয়ে দেন মার্কিন মূল্যবোধ। বেঁচে থাকলে জন এফ কেনেডি আগামী কাল পা দিতেন একশো বছরে। শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি

প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

মজা হয়েছিল সে বারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিতর্কে। ১৯৬০। সে বছরই প্রথম টিভিতে সরাসরি দেখানো হবে প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেট। আমেরিকার ১০ লক্ষ ঘরে তত দিনে টেলিভিশন পৌঁছে গেছে। কিন্তু আরও বহু ঘরে পৌঁছয়নি। তাঁরা রেডিয়োতেই শুনলেন রিপাবলিকান প্রার্থী, ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন আর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, ম্যাসাচুসেটস-এর নবীন সেনেটর জন ফিটজেরাল্ড কেনেডির সেই বিতর্ক। যাঁরা রেডিয়োতে শুনলেন, তাঁরা সবাই নিক্সনের সতর্ক, সযত্নে চর্চিত রাজনৈতিক ভাষণ শুনে ধরেই নিলেন, নিক্সনই তর্কে জিতেছেন। আর যাঁরা টিভিতে দেখলেন সেই বিতর্ক, তাঁরা ঘাগু রাজনীতিক, কিছুটা নার্ভাস এবং সতর্ক ভাইস প্রেসিডেন্টের বিপরীতে দেখলেন প্রাণবন্ত এবং সুদর্শন এক মানুষকে, যিনি সরাসরি যেন তাঁদের সঙ্গেই কথা বললেন। তাঁরা নিশ্চিত হলেন, নিক্সন নয়, কেনেডিই বিতর্কটা জিতেছেন।

অবশ্যই কেনেডি জিতেছিলেন। সেই বিতর্ক এবং সে বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও। কিন্তু গণমাধ্যমের পণ্ডিতরা অবাক হয়েছিলেন, টেলিভিশনের মতো একটা আনকোরা নতুন জনসংযোগ-মাধ্যমকে কেনেডি কী স্বাভাবিক দক্ষতায় ব্যবহার করেছিলেন। যে সব ফোটোগ্রাফার আর ক্যামেরাম্যান তার পরেও কেনেডির ছবি তুলেছেন, তাঁরাও একবাক্যে স্বীকার করেছেন, কেনেডি জানতেন কী ভাবে প্রচারের সব আলো নিজের মুখে ফেলতে হয়। টিভি ক্যামেরা যে সচল, সজীব একটা ব্যাপার, তার সামনে আড়ষ্ট, ভাবগম্ভীর হয়ে বসে থাকতে নেই, সেটা কেনেডি সময়ের অনেক আগেই বুঝে ফেলেছিলেন। আর শোম্যান তো তিনি বরাবরই। প্লেন থেকে নেমে প্রেসিডেন্টের লিমুজিনে না উঠে একছুটে চলে যেতেন অপেক্ষারত জনতার সামনে। তাঁদের সঙ্গে হাত মেলাতেন হাসিমুখে, সই বিলোতেন।

কেনেডিকে দেখার আশায় মহিলা ভক্তদের উচ্ছ্বাস;

আসলে কেনেডি যে বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন, সেই ১৯৬০ সাল হল একটা বদলাতে থাকা সময়ের শুরু। আফ্রিকার এক গুচ্ছ ছোট ছোট দেশ ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। কমনওয়েলথ জোট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে স্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকা। আমেরিকায় বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে তখন ব্যাপক গণ-আন্দোলন গড়ে তুলেছেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। এ দিকে মার্কিন পেশাদার বক্সিংয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে কেন্টাকি থেকে আসা ১৮ বছরের এক কালো ছোকরা, ক্যাসিয়াস ক্লে। সেই বছরই রোম অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েট বক্সিংয়ে সোনা জিতেছে সে। ও দিকে ‘‌প্লেবয়’–‌খ্যাত হিউ হেফনার শিকাগোয় খুলছেন আমেরিকার প্রথম প্লেবয় ক্লাব। মেয়েদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে গর্ভনিরোধক বটিকা। সেই ভরসায় জনপ্রিয়তর যৌন স্বাধীনতার উদ্‌যাপন। ৩২ বছর নিষিদ্ধ থাকার পর ইংল্যান্ডে মুক্তি পাচ্ছে ডি এইচ লরেন্স-এর লেখা ‘‌লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’‌। আর সে বছরই লিভারপুলে গুটিকয় ছেলে মিলে তৈরি করছে গানের দল ‘‌বিটল্‌স’‌। পল ম্যাকার্টনি তখন সদ্য ১৭, জর্জ হ্যারিসন ১৬, আর জন লেনন ১৯।

জনপ্রিয়: টেক্সাসে জনসমুদ্রে প্রেসিডেন্ট কেনেডি।

ও দিকে তখন কেনেডির নির্বাচনী প্রচারের জন্য গান বেঁধে দিচ্ছেন ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রা। কেনেডির ভগ্নিপতি, অভিনেতা পিটার লফোর্ড ছিলেন সিনাত্রার বন্ধু। সেই সূত্রেই কেনেডির সঙ্গে সিনাত্রার আলাপ। আমেরিকার নতুন প্রজন্ম তখন উত্তাল সিনাত্রার গানে। ‘‌সুইঙ্গিং সিক্সটিজ’‌। কেনেডিও চমৎকার পা মেলালেন তার সঙ্গে। প্রেসিডেন্ট হয়েও, যা কিছু সময়ের দাবি, যা কিছু সেই বদলাতে থাকা সময়ের চোখে ঠিক, সে সব কিছুর পাশে দাঁড়ানোর সাহস এবং সততা দেখালেন। যদিও এমন নয় যে সব কিছুর সঙ্গে পুরোপুরি সহমত ছিলেন কেনেডি, কিন্তু সময়ের দাবিটা চিনতে, বুঝতে এবং মেনে নিতে কখনও সঙ্কোচ করেননি। যেমন, আমেরিকার সাদা এবং কালো মানুষের সমান নাগরিক অধিকারের দাবিতে মার্টিন লুথার কিং-এর যে আন্দোলন, তার বেশ কিছু ব্যাপারে কেনেডি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সেই বদলটা যে ঠেকানো যাবে না, আজ না হোক কাল আসবেই, সেটা বোঝার মতো বিচক্ষণতা তাঁর ছিল।

নিন্দুকে যদিও বলে, পোড়-খাওয়া রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে কেনেডির পুরোটাই ছিল ভোটের অঙ্ক। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার যখন চলছে, মার্টিন লুথার কিং তখন আটলান্টায় এক নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে জর্জিয়ার জেলে আটক। কেনেডি আগ বাড়িয়ে ফোন করলেন কিং-এর স্ত্রী করেটা–কে। খোঁজখবর নিলেন। যদি লোক-দেখানোও হয়, তবু কেনেডির এই উদ্বেগ ছুঁয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনিদের। কেনেডিও ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন। এতে রক্ষণশীল দক্ষিণে কিছু ভোট হারাতে হতে পারে, সেটা জেনেও। মার্কিন ঐতিহাসিকরা বলেন, শেষ পর্যন্ত রিচার্ড নিক্সনকে অতি সামান্য ব্যবধানে হারিয়ে কেনেডিই যে জিতলেন, তার কারণ ওই উত্তরের কৃষ্ণাঙ্গ ভোট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ব্যবধানের জয়, তবু
জয় তো!‌

হতে পারে ভোট-ব্যাঙ্কের রাজনীতি। আবার হতেও পারে, কেনেডি সত্যিই বিশ্বাস করতেন, সবাই মিলে, সবাইকে নিয়ে দেশ। ইনক্লুসিভ সোসাইটি। তিনি যে এগিয়ে ছিলেন সময়ের থেকেও, সেটা তাঁর নিন্দুকেরাও স্বীকার করেছেন। তাই কেনেডি সমর্থন জানিয়েছেন সমান নাগরিক অধিকারের আন্দোলনকে। পাশে দাঁড়িয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গদের। সমালোচিত হয়েছেন, তবু বরাবর ওঁদের হয়েই কথা বলেছেন। বিখ্যাত হয়ে আছে তাঁর সেই মন্তব্য— ‘‌একটা কালো বাচ্চা জন্মানোর পর, তার স্কুলে পড়ার সুযোগ একটা সাদা বাচ্চার অর্ধেক। কলেজে যাওয়ার সুযোগ তিন ভাগের এক ভাগ। কালোদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও সাদাদের এক তৃতীয়াংশ। নিজের একটা বাড়ি হওয়ার স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনাও অর্ধেক। কালোরা সাদাদের থেকে শুধু চার গুণ এগিয়ে আজীবন বেকার থাকার সম্ভাবনায়!‌’‌ এটাই ছিল সে সময়ের আমেরিকা। কেনেডি সেটা স্বীকার করার সৎসাহস দেখাতে পেরেছিলেন।

ভক্তদের অটোগ্রাফ বিলোচ্ছেন অকাতরে।

অথচ এই লোকটা কমিউনিস্ট আদর্শের কট্টর বিরোধী ছিলেন। ২৬ জুন ১৯৬৩। দ্বিধাবিভক্ত বার্লিন শহরের পশ্চিম ভাগে দাঁড়িয়ে কেনেডির সেই বিখ্যাত ‘‌ইশ বিন আইন বের্লিনার’‌ ভাষণ। আমিও বার্লিনেরই লোক! কেনেডি সে দিন বলেছিলেন, যাঁরা বলেন কমিউনিজমই ভবিষ্যৎ, তাঁরা এসে দেখে যান, কমিউনিস্ট শেকলে বাঁধা পূর্ব, না কি গণতান্ত্রিক পশ্চিম, কোন জার্মানিতে প্রাণের স্ফূরণ বেশি!‌ তখন প্রায় প্রতি দিনই লোকে পাঁচিল টপকে পুব থেকে পশ্চিমে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছে, গুলি খেয়ে মরছে, অথবা ধরা পড়ছে।

সম্ভবত এই কমিউনিস্ট–বিরোধিতার জায়গা থেকেই কিউবায় কাস্ত্রোকে ক্ষমতা থেকে হটানোর সিআইএ’র ছকে গোড়ায় সায় দিয়ে ফেলেছিলেন কেনেডি। তিনি যে বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হচ্ছেন, সেই ১৯৬০-এই কিউবায় মার্কিন মালিকানাধীন সমস্ত তেল আর চিনি কোম্পানি সরকারি দখলে নিচ্ছেন ফিদেল কাস্ত্রো। সিআইএ–র বন্দোবস্তে দেশ ছেড়ে আমেরিকায় আশ্রয় নেওয়া এক দল কিউবানকে তালিম দিয়ে, জোড়াতালি দেওয়া এক আধাসেনা বাহিনী বানিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হল কিউবায়। আমেরিকার কুখ্যাত বি–ফিফটি টু বম্বার গিয়ে এক প্রস্থ বোমাও ফেলে এল কিউবার সামরিক বিমানঘাঁটিতে। কিন্তু তার পরই মত বদলালেন কেনেডি। আর বিমান হামলার অনুমতি দিলেন না। ব্যর্থ হল ১৯৬১-র এপ্রিলে সিআইএ–র সেই ‘‌বে অব পিগ্‌স’‌ অভিযান। কাস্ত্রোর রেভোলিউশনারি আর্মি মাত্র তিন দিনের লড়াইয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করল দেশোদ্ধার করতে আসা সেই ভাড়াটে সেনাদের। আহত, ক্ষিপ্ত সিআইএ আরও ভয়ংকর এক ষড়যন্ত্র করল। ঠিক হল, আমেরিকার মাটিতে মার্কিন নাগরিকদের ওপর কিউবার সাজানো হামলা ঘটিয়ে, সেই অজুহাতে কিউবার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে যাবে মার্কিন বাহিনী। কেনেডি এ বার রাজি হলেন না।

আমেরিকার দ্বিতীয় কোনও প্রেসিডেন্ট এ ভাবে সিআইএ-র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন বলে জানা নেই। জনশ্রুতি, সেই বিরোধের পরিণতিই কেনেডি–হত্যা। তদন্তে যদিও প্রমাণ হয়েছিল ঘাতক লি হার্ভে অসওয়াল্ড একা ছিল, তার পাশে বা পিছনে কেউ ছিল না, কিন্তু আমেরিকার এক বড় অংশ সে কথা বিশ্বাস করেনি। মামলা চলাকালীন অসওয়াল্ড খুন হয়ে যাওয়ায় সেই সন্দেহ আরও জোরদার হয়। ফলে কেনেডি–হত্যা এখনও রহস্যই থেকে গেছে। এখনও তা নিয়ে বই লেখা হয়, সিনেমা তৈরি হয়। আর বহু লক্ষ বার দেখা হয় সেই ভিডিয়ো ফুটেজ। মাথায় গুলি লাগার ঠিক আগের মুহূর্তে, হুডখোলা লিমুজিনে বসে রাস্তার দু’‌পাশে ঝাঁক বেঁধে থাকা মানুষের দিকে হাসিমুখে হাত নাড়ছেন কেনেডি। পাশে বসা হাসিখুশি ‘‌ফার্স্ট লেডি’‌ জ্যাকলিন। ইতিহাস বলে, অ্যাব্রাহাম লিঙ্কন ছাড়া আর কোনও প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে এত কাঁদেনি আমেরিকা!

এর পাশাপাশি ছিল কেনেডির ব্যক্তিজীবনের তুলকালাম নষ্টামি এবং তার অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ। ঘরে জ্যাকলিনের মতো সুন্দরী, লক্ষ্মীমন্ত বউ, সারা দেশ তাঁকে ভালবাসে, অথচ কেনেডি ভালবেসে বেড়ান বিশ্বসংসারের বাকি মেয়েদের। বন্ধুরা কবুল করেছেন, সুন্দরী দেখলে কেনেডি মাথা ঠিক রাখতে পারতেন না। আর হোয়াইট হাউস-এর ‘ওভাল অফিস’-এর পবিত্রতা নষ্ট করার দুর্নাম জুটেছিল কিনা বেচারি বিল ক্লিন্টনের!‌ তখনও কিন্তু মার্কিন আমজনতা মুখ বেঁকিয়ে বলেছিল, কোথায় মেরিলিন মনরো, আর কোথায় মনিকা লিউইনস্কি!‌

আরও মজার কথা, মনরো–কেনেডির এই প্রেম রীতিমত ঢাক–ঢোল পিটিয়ে উদ্‌যাপিত হয়েছে মার্কিন গণজীবনে। ১৯ মে ১৯৬২। কেনেডির আসল জন্মদিনের ১০ দিন আগেই উৎসব হবে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেনে। ১৫ হাজার অতিথির তালিকায় তাবড় রাজনীতিক ও হলিউড সেলেব-দের ছড়াছড়ি। শেষ কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্মদিন এ ভাবে বারোয়ারি উৎসবের চেহারা নিয়েছিল দেড় দশক আগে, ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট-এর আমলে। সেই উদ্‌যাপন আবার কেনেডির খাতিরে। বিরাট কনসার্ট হবে। মারিয়া কালাস, এলা ফিটজেরাল্ড-এর মতো ডাকসাইটে শিল্পীদের পাশাপাশি কে গাইবেন?‌ মেরিলিন মনরো!‌ ইতিহাস হয়ে গেছে সেই সন্ধ্যায় মনরোর গাওয়া ‘‌হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মিস্টার প্রেসিডেন্ট’‌। ইতিহাস হয়েছে মনরোর সে দিনের শরীর–কামড়ানো স্ফটিক–খচিত সাঁঝপোশাক। বছর দুয়েক আগে সেই পোশাক ৪৮ লক্ষ ডলারে নিলাম হয়ে গেল। কিনল ‘‌আজব খবর’‌–খ্যাত ‘‌রিপ্লি’‌ সংস্থা। কারণ তাদের মনে হয়েছিল, অর্ধশতক আগে ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেনের ওই সন্ধে, মনরোর ওই গান এবং ওই পোশাক— ষাটের দশকের আমেরিকার এর থেকে ভাল অভিজ্ঞান আর হয় না।

এ ভাবেই ‘‌কাল্ট ফিগার’‌ হয়ে থেকে গিয়েছেন মাত্র তিন বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকা কেনেডি। একটা সময়ের প্রতিভূ হয়ে। তাঁর যাবতীয় স্খলন, ত্রুটি–বিচ্যুতিসমেত। আসলে জনমানসে তাঁর স্থায়ী ছাপ রেখে যেতে পারার কারণটা সম্ভবত অন্য। শুধুই বয়সে নবীন, স্বভাবে ফ্ল্যামবয়েন্ট, চরিত্রে রোম্যান্টিক বলে নয়, দেশের নেতা হিসেবে কেনেডির হৃদয়ও ছিল ঠিক জায়গায়। বিশ্বের অন্যতম সেরা উদ্ধৃতি‌ হয়ে আছে প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার পর কেনেডির ভাষণ— ‘‌আস্ক নট, হোয়াট ইওর কান্ট্রি ক্যান ডু ফর ইউ— আস্ক হোয়াট ইউ ক্যান ডু ফর ইওর কান্ট্রি’‌। জিজ্ঞেস কোরো না দেশ তোমার জন্যে কী করতে পারে— বরং (‌নিজেকে)‌ জিজ্ঞেস করো, তুমি দেশের জন্যে কী করতে পারো।

তাই কৃতিত্বে হোক বা কেচ্ছায়, উত্তরসূরিরা তাঁর তুলনায় নেহাতই বামন!‌ এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন লাগাতার উলটোপালটা বলছেন, তখন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বারংবার একটা কথা বলেছেন, যা-ই ঘটুক, মার্কিন মূল্যবোধ ভুললে চলবে না। যে নীতি আর আদর্শ আমেরিকার গণতান্ত্রিক ভিত্তি, তাকে নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।

সেই মানবিক মূল্যবোধের প্রতিরূপ জন এফ কেনেডি, যা আমেরিকা এক দিন হয়ে উঠতে চেয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE