Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সতীনাথের স্বরাজ দিবস

জেলে একমনে লিখছেন ‘জাগরী’। সেই মানুষটাই লাঠির ঘায়ের পরোয়া না করে চিৎকার করে উঠছেন ‘বন্দে মাতরম্’। অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়জেলে একমনে লিখছেন ‘জাগরী’। সেই মানুষটাই লাঠির ঘায়ের পরোয়া না করে চিৎকার করে উঠছেন ‘বন্দে মাতরম্’। অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

তিনি তখন পূর্ণিয়া জেলা কংগ্রেসের সচিব। ১৯৪২ সাল। ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে উত্তাল হল দেশ। তিনিও তখন গভীর রাতে ‘জল কাদা ভেঙে বিনা টর্চের আলোয় ১৫-২০ মাইল’ হেঁটে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সভা সংগঠিত করছেন।

আর এ সব করতে গিয়ে ব্রিটিশ সরকারের ‘নেক নজরে’ পড়লেন তিনি। গ্রেফতার করা হল। পাঠানো হল পূর্ণিয়া জেলে। তিনি হলেন ‘ঢোঁড়াই চরিত মানস’-এর লেখক সতীনাথ ভাদুড়ী। সেখানে এক বার জেল ভাঙার চেষ্টা হল। চলল লাঠি। জখম হলেন সতীনাথ।

তাঁকে বদলি করে দেওয়া হল ভাগলপুর সেন্ট্রাল জেলে। এখানেই সতীনাথের সঙ্গে আলাপ জমল তাঁরই ‘শিষ্য’ হিন্দি সাহিত্যের বিখ্যাত লেখক ফণীশ্বরনাথ রেনুর। ফণীশ্বরনাথ এই প্রথম ‘ভাদুড়ীজি’কে দেখলেন অবসরযাপন করতে। সেলের অবসরের দিনগুলিতেই লেখা হয়ে গেল ‘জাগরী’। কখনও বা জেলের ময়দানে সহ-বন্দিদের নাস্তানাবুদ করতে থাকলেন ভলিবল খেলায়।

জানুয়ারি মাস। সাজো-সাজো রব বন্দিদের মধ্যে। ‘লাহোর কংগ্রেস’-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৬ জানুয়ারি ‘পূর্ণ-স্বরাজ’ দিবস পালন করতেই হবে। এক সপ্তাহ আগের থেকে শুরু হল ব্রিটিশ জেল কর্তৃপক্ষের তানাশাহি। জাতীয় পতাকা, পোস্টারের জন্য রাখা লাল রং, সবুজ কাগজের খোঁজে ওয়ার্ডে- ওয়ার্ডে শুরু হল ব্যাপক তল্লাশি।

২৫ জানুয়ারি। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, কোনও রকম ‘হল্লা’ হলেই চলবে লাঠি। সেই সঙ্গে ২৬ জানুয়ারি ওয়ার্ডের দরজা দিনভর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। এ বার রাজবন্দিরা দু’ভাগ হয়ে গেলেন। এক দল বললেন, এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে ‘পূর্ণ স্বরাজ’ দিবস পালন সম্ভব! অন্য দল অবশ্য অনড়। সতীনাথ সমর্থন করলেন দ্বিতীয় দলটিকেই।

অবশেষে এল ২৬ জানুয়ারি। সকাল থেকেই নিজের লেখায় নিমগ্ন সতীনাথ। ওয়ার্ডের দরজা বন্ধ। ঘন-ঘন প্যারেড করছেন রক্ষীরা। সতীনাথের ওয়ার্ডের কয়েক জন আচমকা স্লোগান দিতে শুরু করলেন। শুরু হল ‘বন্দে মাতরম্’ গাওয়া। গাঁধীবাদীরা বসে পড়লেন চরকা কাটতে। মুহূর্তের মধ্যে ‘হল্লা’র খবর পৌঁছে গেল কর্তৃপক্ষদের কাছে। ব্রিটিশ অফিসার চিৎকার করে ‘বেয়াদপি বন্ধের অর্ডার’ দিলেন। এ বার উঠে দাঁড়ালেন সতীনাথ।

শিষ্য ফণীশ্বরনাথ যেন একটু থমকে পেলেন। ক’দিন আগের লাঠিচার্জের ফলে ভাদুড়ীজির ঘাড়ের কাছে কালশিটেটা এখনও মেলায়নি। ফের যদি...

কিন্তু বাঙালি লেখকটি অন্য রকম। তিনি এক্কেবারে লাইনের গোড়ায় এসে চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘বন্দে মাতরম্!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Satinath Bhaduri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE