Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মোষের মাংসে অরুচি হলে রাজার চাই মুরগি!

রোজ সকালে হেল্থ ড্রিঙ্ক খায় বাবু। শিম্পাঞ্জি কিনা! অন্য দিকে মোষের মাংসে অরুচি হলে রাজার চাই মুরগি। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার যে! কুন্তক চট্টোপাধ্যায়খা বার দেখাতেই হেলতে দুলতে ছুটে এসেছিল বাবু। হাত বাড়িয়ে খাবারও নিয়েছিল। তার পরই মুখ বাড়িয়ে পুচ...। এক রাশ এঁটো জল এসে পড়ল তাঁর গায়ে। সে এক বিতিকিচ্ছিরি দশা! সদ্য পাটভাঙা জামা তত ক্ষণে সপসপে।

ছবি: রণজিৎ নন্দী

ছবি: রণজিৎ নন্দী

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

খা বার দেখাতেই হেলতে দুলতে ছুটে এসেছিল বাবু। হাত বাড়িয়ে খাবারও নিয়েছিল। তার পরই মুখ বাড়িয়ে পুচ...। এক রাশ এঁটো জল এসে পড়ল তাঁর গায়ে। সে এক বিতিকিচ্ছিরি দশা! সদ্য পাটভাঙা জামা তত ক্ষণে সপসপে। বছর দুয়েক আগের এক রোদ-ঝলমলে সকালে খিটখিটে বু়ড়োর এমন দুষ্টুমিতে রাগ করতে পারেননি তৎকালীন অধিকর্তা কানাইলাল ঘোষ। হাসতে হাসতেই কোয়ার্টারে ছুটে ছিলেন জামা বদলাতে।

চেন্নাই থেকে এ শহরে এসেছিল বাবু। তখন সদ্য যৌবনে পা দিয়েছে সে। তবে বিশ বছরে দক্ষিণী হাবভাব ভুলে কলকাত্তাইয়া হয়ে উঠেছে সে। এখন ‘বাবু... বাবু’ বলে ডাকলেই কুতকুতে চোখ দিয়ে ভিড়ের মধ্যে ঠিক খুঁজে নেয় তপনচন্দ্র মণ্ডল, বিশ্বনাথ রামদের। এ শহরে ওঁরাই তো বাবুর ‘আত্মীয়’!

বাবু আলিপুর চিড়িয়াখানার বৃদ্ধ শিম্পাঞ্জি। তপন, বিশ্বনাথ তার ‘কিপার’।

তপন, বিশ্বনাথেরাও বাবুর মন বোঝেন। সকাল হলেই দুধে কমপ্ল্যান গুলে নিয়ে দৌড়ন বাবুর কাছে। ‘ঘুম থেকে উঠে বুড়ো খোকার কমপ্ল্যান চাই-ই চাই। না হলে মেজাজ বিগড়ে যাবে। চুকচুক করে কমপ্ল্যান খেয়ে আড়মোড়া ভাঙবে সে।’ তার পর একটু শসা, কলা, গাজর, খেজুরে ব্রেকফাস্ট। তবেই না দিনভর দাপিয়ে বেড়াবে খাঁচায়। বাবুর সারা দিনের মেনুতেও ৪টে আপেল, ১২টি কলার সঙ্গে শাঁকালু, গাজর, আঙুর, বাঁধাকপি, খেজুর। ‘স্যালাড’ হিসেবে পেঁয়াজ, টমেটো। সব মিলিয়ে খাবারের ওজন দিনে প্রায় ৮ কেজি।

ঋতু বদলে লাঞ্চের মেনুতেও বদল আনতে হয়। গরমের দুপুরে চাই পাকা পেঁপে। শীতে মরশুমি ফল। মেজাজ ভাল থাকলে জল ছুড়ে খুনসুটি করে, কখনও আবার নিজের পাতের খাবারও এগিয়ে দেয়। আর মেজাজ বিগড়ে গেলে? দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে আসে। ওষুধেও ভয়ানক আপত্তি, কিছুতেই খাওয়ানো যায় না। আগে দু’-এক বার কলায় ট্যাবলেট পুরে দেওয়া হয়েছিল। ওষুধ খুঁটে ফেলে কলাটা খেয়ে নিয়েছিল সে। বুড়োকে ভোলাতে তাই ডাক্তারি পরামর্শে ‘রোজ সিরাপ’-এর দাওয়াই বেছেছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। মিঠে স্বাদের লাল রঙের সিরাপ দেখলে আর মাথা ঠিক থাকে না বুড়ো খোকার। জলে অল্প করে সিরাপ মিশিয়ে তৈরি হয় শরবত। তাতেই মিশিয়ে দেওয়া হয় ট্যাবলেটের গুঁড়ো। মানুষের এই ছলচাতুরি এখনও বুঝে ওঠেনি বাবু।

তবে বউয়ের চলে যাওয়া কিন্তু বুঝেছিল বুড়ো! বছর কয়েক আগের সেই দিনটা এখনও চোখে ভাসে চিড়িয়াখানার মানুষদের। রানি মারা যাওয়ার পর কাছে গিয়ে হাত বোলাচ্ছিল। মুখ, গায়ের গন্ধ শুঁকছিল। প্রিয় সঙ্গিনীকে শেষ বারের মতো চুমু খাচ্ছিল। তার পর সরে গিয়েছিল খাঁচার এক পাশে। কিপাররা রানিকে সরিয়ে নিয়ে আসার সময় এক বারও মুখ ঘুরিয়ে দেখেনি। ঝাড়া ক’দিন মুখ গুঁজে বসেছিল। দর্শকদের ভিড় দেখেই এখন নিঃসঙ্গতা কাটে তার। ‘ওরে বাবা, ভিড় দেখলে সে খাঁচায় ঢুকতে চায় না। এমন ভাবভঙ্গি করবে যেন কোনও সুপার মডেল ছবির পোজ দিচ্ছে!’ হাসতে হাসতে বুড়ো খোকার কীর্তি শোনাতে থাকেন তপন।

ছোটু, মস্তান, বাসন্তীকে তো কোলেপিঠেই ‘মানুষ’ করেছেন ওঁরা। বাগুইআটির এক পাখি ব্যবসায়ীর বাড়ির ঘুপচি খাঁচায় শিম্পাঞ্জি ছানাগুলোকে পাওয়া গিয়েছিল। ভয়ে, অনাহারে নেতিয়ে পড়েছিল দুধের ছানাগুলো! আলিপুরে এসে যেন কাছের মানুষ পেয়েছিল ওরা। হাসপাতালের আলাদা ঘরে ফিডিং বোতলে করে দুধ খাওয়াতেন কিপাররা। তখন থেকেই গায়ে-পিঠে উঠে দুষ্টুমিতে হাতেখড়ি। একটু বড় হতে যে দিন খোলা মাঠে ছাড়া হল, উফ! সে কী হুল্লোড়! এখন ওরাও গাজর, আপেল, আঙুর খায়। বুড়োর মতো কমপ্ল্যানের ‘নেশা’ ধরেছে! কিন্তু ছোটবেলার আদরের নেশা কাটেনি। চিড়িয়াখানার বর্তমান অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত তো মাঝেমধ্যে বলেই ফেলেন, ‘আদরে আদরে একেবারে ‘বাঁদর’ হয়ে উঠেছে তিনটে!’

মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ফ্রঁস দ্য ওয়াল-এর গবেষণাতেও উঠে এসেছে শিম্পাঞ্জিদের বোধের কথা। ওয়াল লিখেছেন, কুইফ নামে একটি মাদি শিম্পাঞ্জির কাছে অনাথ একটি ছানা শিম্পাঞ্জিকে লালনপালন করতে দিয়েছিলেন তিনি। কুইফ আদর করে দুধ খাওয়াত, ছানা ঢেকুর তোলার চেষ্টা করলেই সময়মত মুখ থেকে দুধের বোতল সরিয়ে নিত ঠিক মানুষ মায়ের মতো।

আদরে বাঁদর না হোক, পুরোদস্তুর গন্ডার হয়ে উঠছে আরও এক অনাথ শিশু। জলদাপাড়ার জঙ্গলে মা-হারা শিশুকে আলিপুরে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেই থেকে আদরের জলদাপ্রসাদ চিড়িয়াখানার নয়নের মণি! দিনে দিনে দস্যিপনা বাড়ছে তার। খুনসুটি করে ঢুসো মারতে আসে কিপারদের। আর যুবক রাতুল ডাক শুনলে খড়্গ নাচাতে না়চাতে আদর খেতে আসবেই। ‘ছেলেটার বয়স হচ্ছে। একটা যোগ্য পাত্রী পাচ্ছি না,’ আক্ষেপ করেন চিড়িয়াখানার বড়কর্তা।

শিউপূজন, রামচন্দ্র, সীতারামের ঘরে আবার শিগগিরই নাতি-নাতনি হবে! মঙ্গলির উপর একটু বেশিই নজর দিতে হচ্ছে তাঁদের। ভালয় ভালয় সব মিটে গেলেই শান্তি। মঙ্গলি তো জিরাফ! ও আবার মেয়ে হল কবে?

‘মেয়ের থেকে কমই বা কী সে!’ ধমকে ওঠেন রামচন্দ্র। শুধু মঙ্গলি নয়, সুন্দর, রোশন, লক্ষ্মী মিলিয়ে মোট ন’জন জিরাফ ছেলেমেয়েই যেন কিপার রামচন্দ্রের পরিবারের সদস্য। রামচন্দ্র অনর্গল বলে চলেছেন, ‘মঙ্গলবারে জন্ম হয়েছিল ওর। তাই তো নাম দিয়েছিলাম মঙ্গলি। ওই যে লক্ষ্মী, ওর জন্ম হয়েছিল এক বিষ্যুদবারে।’ ঘরের ছেলেমেয়েদের মতোই তরিবত করে খাবার তৈরি করেন রামচন্দ্র, সীতারাম। ভুসি, গাজর, মুসুর ডাল সেদ্ধ, বিন্‌স, কলা, রাঙা আলু, পেঁয়াজের মিশ্রণে মেশানো গুড়, নুন, পাতিলেবু। ন’টি জিরাফের রোজকার বরাদ্দ ১৪০ কেজি খাবার। সকাল-সকাল খাবার ঢেলে নিয়ে খাঁচায় ঢুকে হাঁক পাড়তেই হাজির লম্বা-গলাওয়ালারা। দাঁড়িয়ে থেকে প্রত্যেকের খাবারের তদারকি করা। ওদের খাইয়ে, নাইয়ে দুপুরে কয়েক ঘণ্টার ছুটি। ত়ড়িঘড়ি নিজেদের নাওয়া-খাওয়া সেরে ফের হাজির ওদের কাছে। বিকেলে আবার খাওয়াতে হবে না! এত ভালবাসা?

শিউপূজন বলে ওঠেন, ‘নিজেদের ছেলেমেয়েদের আদর না-ও করি, দিনে এক বার ওদের আদর করতেই হবে।’ তবে কখনও কখনও দূরত্ব যে বাড়ে না তা নয়। ‘মিলনের সময় হলে ওরা একটু রেগে থাকে। হাত-পা ছুড়ে দিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড। সে সময় একটু এড়িয়ে চলি।’ জিরাফ সন্তানদের ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলান না মানুষ ‘বাবা’।

বাঘের হালুম ডাকেও নাকি খুশি বোঝা যায়! বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে সেই আহ্লাদি ডাকই ডেকে চলছিলেন ৩৮ বছর ধরে চি়ড়িয়াখানায় সংসার করা শিউপূজন রাম। তিনি অবশ্য শুধু এক খাঁচাতেই থিতু নন, গন্ডার, বাঘ, হাতি, জিরাফ—সবারই ঘরের লোক।

শুধু নাওয়ানো-খাওয়ানো নয়, শরীর খারাপ হলে তাঁর সেবাও পায় বাঘ-সিংহ-হাতিরা। বলছেন, ‘আমি তো বাঘ, সিংহের শরীরে হাত বুলিয়েই শিরা খুঁজে পাই। শরীর খারাপ হলে হাসপাতালে স্যালাইন চালাতাম বাঘ, সিংহের শরীরে। বিশ্বাস করুন, আদর পেলে ওদেরও চোখের ভাষা বদলে যায়। ওরা তখন গরগর করে আহ্লাদের ডাক ছাড়ে।’

আহ্লাদ আর কী! অমন ডাক শুনলে পিলে চমকে ওঠার জোগাড় হয়, পালানোর পথ মেলে না। আলিপুরের পড়ন্ত বিকেলে অবশ্য শিবপ্রসাদ কাহার গলা উঁচিয়ে এক বার ডাকলেই সুড়সুড়িয়ে ঘরমুখো হয় রয়্যাল বেঙ্গলেরা। খাঁচার ভিতরে থাকা ভয়ংকর সুন্দরেরাও যে অনেকটা পোষ মেনে যায়, তিরিশ বছরের ঘরকন্নায় তা বুঝে গিয়েছেন সুভাষচন্দ্র দে, শিবপ্রসাদ কাহার। ‘ওরা জানে, ওই ডাক মানেই এ বারে ঘরে ঢুকে তাজা মোষের মাংস মিলবে। সারা দিনে পেট ভরানোর চিন্তা তো সবারই থাকে,’ হাসতে হাসতে বলছিলেন শিবপ্রসাদ। কয়েক ফুট দূরে দাঁড়িয়ে সে কথা যেন কান পেতে শুনছিল পায়েল। সাত বছরের বাঘিনি সে। কিপার ঘুরে ‘হুই’ করতেই বাধ্য মেয়ের মতো হেলতে দুলতে খাঁচার অন্য দিকে চলে গেল সে।

আদুরে বাঘ আর চিড়িয়াখানার বড়কর্তার গল্প আছে লীলা মজুমদারের ‘খেরোর খাতা’য়ও। লেখিকার বিজয় মেসো তখন চিড়িয়াখানার অধিকর্তা, এক সন্ধ্যায় নতুন আসা একটি বাঘ খাঁচায় না ঢুকে হঠাৎ দৌড়! সবাই আতঙ্কে। অধিকর্তা গিয়ে ‘বাচ্চু’ বলে ডাকতেই সে আদুরে বেড়ালের মতো চলে এল তাঁর কাছে। বাচ্চুর জন্ম চিড়িয়াখানাতে, মাতৃহারা শৈশবে অধিকর্তার যত্নেই বেড়ে ওঠে সে। পরে তাকে এক সাহেবের কাছে বেচে দেওয়া হয়। হাত বদল হয়ে ফের আলিপুরে, কিন্তু ভোলেনি শৈশব-স্মৃতি।

বাঘেদের ঘরে কার মুখে কী রোচে, কার পেটে কতটা খাবার ধরে, অনায়াসে মনে রাখেন শিবপ্রসাদেরা। বিকেলে কার পাতে ৮ কেজি মাংস প়ড়বে, কার পাতে ১২ কেজি— তার জন্য খাতা দেখতে হয় না ওঁদের। মোষের মাংস খেতে খেতে কার অরুচি ধরেছে তা হালুম-হুলুমেই বুঝে নেন। রুচি ফেরাতে রান্নাঘরে অর্ডার যায়, রাজার আজ মুরগি চাই, কৃষ্ণার জন্য শুয়োর।

এক কালে কলকাত্তাইয়া বাবুরা বেড়ালের বিয়ে দিতেন। আলিপুরে বেড়ালের বোনপোর বিয়ে দেন শিবপ্রসাদেরা। সেখানেও রয়েছে মনপসন্দ সঙ্গী খোঁজার স্বাধীনতা। পাশাপাশি দুটো খাঁচায় রাখা হয় বাঘ-বাঘিনিকে। ক’দিন পরেই দু’জনের হাবেভাবে ওঁরা টের পান, পাত্রপাত্রীর একে অন্যকে মনে ধরেছে কি না! ভাব জমলে তবেই দম্পতিকে এক ঘরে থুড়ি খাঁচায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মধুচন্দ্রিমা মিটলে নবদম্পতির জোড় ভাঙানোর দায়িত্বও তাঁদের।

৩১ বছর আগে বাবা সন্তু কাহারের হাত ধরে চিড়িয়াখানায় এসেছিলেন শিবপ্রসাদ। তারও আগে এসেছেন সুভাষ। বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এই তো কৃষ্ণা। ওর সঙ্গে সাদা বাঘ অনির্বাণের ভাব হয়েছিল। ওদের বাচ্চা বিশাল, রূপা পুরো বাবার রূপ পেয়েছে!’ রূপার জন্য নন্দনকানন থেকে পাত্র এসেছে। নাতনির বিয়ের দায়িত্ব এখন দুই দাদুর কাঁধে।

পরিবার ভাঙার যন্ত্রণাও সইতে হয়েছে সুভাষ-শিবপ্রসাদকে। আলিপুর থেকে ঝড়খালিতে চলে যাওয়া সুহান-সুহানার জন্য মন কাঁদে। এই তো সে দিন উত্তরবঙ্গে চলে গেল স্নেহাশিস ও শীলা। ‘নন্দনকানন থেকে আসার পরে ক’মাসই বা ছিল! তাতেই খুব মায়া পড়ে গিয়েছিল। খুব মনে পড়ে ওদের,’ গলায় যেন ছেলেমেয়েকে দূরে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যথা বেজে ওঠে শিবপ্রসাদের গলায়। ‘বর্ন ফ্রি’ সিনেমার জর্জ ও জোয় অ্যাডামসন আদরের সিংহী এলসাকে কেনিয়ার জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসার এক বছর পরে গিয়েও দেখেছিলেন, এলসা তাদের ভোলেনি। শিবপ্রসাদ অবশ্য সুহান, সুহানা, স্নেহাশিস, শীলাদের আর দেখতে যাননি। তবে শুনেছেন, ওরা ভালই আছে।

রানি, তিথির দুষ্টুমিতে মাঝেমধ্যেই নাজেহাল হয়ে যান অশোক রাম, মহম্মদ সামির, মহম্মদ আনোয়ারেরা। ‘হোক না খেলাচ্ছলে, অত বড় চেহারা নিয়ে এসে যদি গায়ে আলতো করেও ধাক্কা দেয়, বলুন তো কেমন লাগে! ঘুরতে ফিরতে শুঁড় দিয়ে আদিখ্যেতাও করে দুজনে। রাগ ধরে যায় মাঝেমাঝে। হাত-পা ভেঙে মরব নাকি!’ রাগের অবশ্য লেশমাত্র গলায় মেলে না। বরং হাসতে হাসতেই বলেন, ‘হোক না ছোট, হাতির খোরাক তো! দিনে বটপাতা, আখপাতা, খিচুড়ি, কলা মিলিয়ে সে এক-এক জনের ৬০ কেজি খাবার লাগে। স্নান করানো, জল খাওয়ানো— সে সবও চাট্টিখানি ব্যাপার নয়।’ মুমতাজ, ফুলবন্তী, উত্তরাও এমনই দুষ্টুমি করত। আকারে বড় হয়ে গিয়েছিল, চিড়িয়াখানার ছোট্ট ঘেরাটোপে থাকতে কষ্ট হবে, এই যুক্তি দেখিয়ে ওদের পাঠিয়ে দেওয়া হল জলদাপাড়ায়। আজও সে দিনটা ভুলতে পারেন না আনোয়াররা। চেনা মাহুত, চেনা চৌহদ্দি ছেড়ে নড়বেই না ফুলবন্তী, মুমতাজ! যত বারই ট্রাক এগিয়ে আসে, তত বারই প্রবল আপত্তি তুলে ঘরের ভিতরে সেঁধিয়ে যাচ্ছিল তিন বন্ধু। শেষে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে, টোপ দেখিয়ে ট্রাকে চাপানো হয়। চলে যাওয়ার সময় বারবার ফিরে তাকাচ্ছিল ওরা!

ছেলে-মেয়েদের পরের ঘরে পাঠানোর সময় আলিপুর থেকে এক জন ‘বাবা’ সঙ্গে যান। মুমতাজদের সঙ্গে সঙ্গে গিয়েছিলেন অশোক। স্নেহাশিস-শীলাকেও নতুন বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসেছেন সুভাষ। কে জানে, যদি পথে ওরা অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা নতুন জায়গায় গিয়ে মানিয়ে নিতে না পারে!

ছেলে-মেয়েকে বিদেশ-বিভুঁইয়ে পাঠালে চিন্তা হবে না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chimpanzee Alipore Zoological Gardens
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE