Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

গণেশ পাকড়াশির আত্মহত্যা

গণেশ পাকড়াশিকে অনেকে ডাকে ‘গাধা পাকড়াশি’। এর কারণ সে এক জন সৎ মানুষ। ছোটবেলা থেকেই তার এই স্বভাব। বড় হয়েও এক কাণ্ড! নগদ টাকা নিয়ে কাজ কারবার, কিন্তু হিসেব ঠিক রাখে। সম্ভবত এই কারণেও তাকে ‘গাধা’ ডাকা হয়। সৎ মানুষকে ‘গাধা’ ডাকা হবে কেন? গাধারা কি সৎ হয়?

প্রচেত গুপ্ত
শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

গণেশ পাকড়াশিকে অনেকে ডাকে ‘গাধা পাকড়াশি’। এর কারণ সে এক জন সৎ মানুষ। ছোটবেলা থেকেই তার এই স্বভাব। বড় হয়েও এক কাণ্ড! নগদ টাকা নিয়ে কাজ কারবার, কিন্তু হিসেব ঠিক রাখে। সম্ভবত এই কারণেও তাকে ‘গাধা’ ডাকা হয়। সৎ মানুষকে ‘গাধা’ ডাকা হবে কেন? গাধারা কি সৎ হয়? পশুবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে গবেষণা করেছেন কি না, কারও জানা নেই। তবে ভবিষ্যতে যদি এমন কোনও গবেষণা হয়, তা হলে গণেশ পাকড়াশির এই গল্প কাজে লাগতে পারে। গল্পটা এ রকম—

অনেক ভাবনাচিন্তার পর গণেশ সিদ্ধান্ত নিল, সে আত্মহত্যাই করবে।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বালিশের তলা হাতড়ে হাতঘড়ি বের করে চোখের সামনে ধরল গণেশ। জানলা থেকে আসা ল্যাম্পপোস্টের ফ্যাকাসে আলোয় সময় দেখল। রাত দেড়টা। তার ভুরু সামান্য কুঁচকোল। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাত দেড়টা কি শুভক্ষণ? মা বলতেন, ‘বাবা গণেশ, বড় কাজ করার আগে সময় বিচার করবি। বড় কাজের জন্য আলাদা সময় থাকে। সেই সময় জানতে হয়।’

আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত অবশ্যই একটা ‘বড় কাজ’। সেই কাজ শুভক্ষণে করা গেল কি না কে জানে। তবে সিদ্ধান্ত নিতে বাবাও খানিকটা সাহায্য করেছে। শুয়ে শুয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলেছিল গণেশ। মনে মনে কথা। মনে মনে কথা কেউ শুনতে পায় না, বাঁচোয়া। নইলে লজ্জার ব্যাপার হত। কেউ শুনলে ভাবত, পাশাপাশি শুয়ে পিতা পুত্র কথা বলছে। আসল ঘটনা তা না। বাবা সাড়ে চার বছর আগে মারা গিয়েছেন।

‘বাবা, আমি তো বিরাট সমস্যায় পড়েছি। সমস্যা থেকে বেরোতে গিয়ে সব জট পাকিয়েও ফেলছি।’

বাবা বললেন, ‘গনশা, সমস্যার পিছনে কি রহস্য আছে?’

গণেশ বলল, ‘তা-ই মনে হচ্ছে।’

বাবা বললেন, ‘অনেকটা আমার মতো কেস। অবশ্য এমনটা হওয়ারই কথা। উত্তরাধিকার বলে একটা ব্যাপার আছে না?’

গণেশ বলল, ‘এখন ও সব জ্ঞানের কথা ছাড়ো। সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনও উপায় আছে কি না বলো।’

বাবা হেসে বললেন, ‘সমস্যা নিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েছিস গনশা! তুই কি আমার ছেলে? আমার হাল মনে নেই তোর? একে ওই কাণ্ড, তার ওপর ঘাড়ে অত বড় সংসার, তোর মায়ের অসুখ, তোর পরীক্ষা, পাড়ার গুন্ডা বিয়ে না করলে মান্তুকে অ্যাসিড মারবে বলে হুমকি দিয়েছে। পুলিশ ডায়রি নিচ্ছে না। কী ভয়ংকর সে-সব দিন গেছে! ভুলে গেলি?’

গণেশ বলল, ‘উফ, আবার পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে শুরু করলে।’

বাবা একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘হ্যাঁ রে, পজিশন কি সত্যি খুব ঢিলা হয়ে পড়েছে?’

গণেশ বলল, ‘তবে আর বলছি কী? নিজের ওপর কোনও জোর নেই। সে দিন তো পথে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার জোগাড়। একটা চায়ের দোকানে বসে জলটল খেয়ে সামলালাম। দরজায় ঠকঠক শুনলেই ভাবি পুলিশ এসেছে।’

বাবা বললেন, ‘তা হলে এক কাজ কর গনশা, যখন সমাধান কিছু পাচ্ছিস না, এক্সট্রিম পথ বেছে নে। এত দুশ্চিন্তা ভাল না। শরীর খারাপ হয়। প্রেশার, সুগার বাড়ে। এক্সট্রিম কিছু করে ফেললে সব টেনশন থেকে মুক্তি। মনে রাখবি, মুক্তিই আসল। বড় বড় মনীষীরাও তা-ই করেছেন। মুক্তির পথ খুঁজেছেন। স্কুলে ওনাদের জীবনী পড়িসনি?’

গণেশ বলল, ‘চূড়ান্ত পথটা কী বাবা?’

বাবা ফের মৃদু হাসলেন। খুকখুক কাশলেনও যেন। ‘পথ কী, তুমি নিজেই ঠিক করো গণেশবাবু। ঠান্ডা মাথায় ভাবলে পথ ঠিক পাওয়া যাবে।’

বাবার সঙ্গে কথা শেষ করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই গণেশ ‘মুক্তির পথ’ খুঁজে পায়। আত্মহত্যা। একমাত্র উপায়। সব টেনশনের অবসান। তখন দরজায় পুলিশ কড়া নাড়লেই বা কী, পথে মাথা ঘুরলেই বা কী? সব সমান। সব মায়া। গণেশের নিশ্চিন্ত লাগে। নিজের ওপর হালকা রাগও হয়। এমন সহজ একটা পথ খুঁজে বের করতে এত সময় লাগল! ছিঃ। সত্যি সে বোকা।

গণেশ পাকড়াশি শুনলে মনে হয়, বয়স্ক মানুষ। আসলে গণেশের বয়স মাত্র তিরিশ। বড়বাজারে ছোটখাটো একটা প্রাইভেট অফিসে চাকরি করে। কাজ ঝামেলার এবং অপমানের। কিন্তু ও নিয়ে ভাবলে চলে না। বাবার মৃত্যুর পর ছোট মফস্‌সল শহর থেকে কলকাতায় চলে আসতে হয়েছিল। কাজ চাই।

গণেশের বাড়িতে বাবা-ই ছিলেন একমাত্র রোজগেরে মেম্বার। বিডিও অফিসে সামান্য করণিক পদে কাজ করতেন। জীবনের শেষ তিনটে বছর ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে চাকরি থেকে সাসপেন্ড হয়ে ছিলেন। বন্যার সময় ত্রিপল কেনায় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ। সাসপেন্ড অবস্থাতেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু হয় মানুষটার। রেখে যান দেড় কামরার একটি বাড়ি, কঠিন অসুখে শয্যাশায়ী স্ত্রী, পাড়ার গুন্ডার ভয়ে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া সপ্তদশী কন্যা এবং কোনও ক্রমে কলেজ পাশ করা যুবক পুত্র গণেশকে। গণেশের কাজ খোঁজা ছাড়া উপায় কী? কলকাতায় দূর সম্পর্কের মামা এই অফিসে ঢুকিয়ে দিলেন। এটা হল ‘মামাধরা চাকরি’। মামাধরা চাকরিতে মান-অপমান থাকে না।

গণেশের বাবার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হয়েছিল। কঠোর তদন্ত কমিটি। কমিটি মেম্বাররা প্রথম বার বসেই অতি তৎপরতার সঙ্গে সাসপেনশনের হুকুম দিলেন। তার পর শুরু হল মূল তদন্ত। মূল তদন্তে অনেক হ্যাপা। দোষ প্রমাণ করতে হয়। তার পর বিচার। সব শেষে শাস্তি। দোষ প্রমাণ জটিল বিষয়। সাক্ষী লাগে, প্রমাণ। তদন্ত কমিটির মেম্বারদের সাবধানে চলতে হয়। কান টানতে মাথা না এসে পড়ে। দলাদলিও আছে। হুটপাট কিছু করা ঠিক না। এর মধ্যে আবার গণেশের বাবা কমিটির কাছে চিঠি লিখলেন। যে দিন অফিসে বসে ঘুষ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, সে দিন তিনি অফিসেই আসেননি। বন্যার জল ঘেঁটে জ্বরে কাবু হয়ে বাড়িতে কুঁইকুঁই করছিলেন। সুতরাং তাঁর সাসপেনশন প্রত্যাহার করা হোক। আবেদনের সঙ্গে স্থানীয় বিশিষ্ট হাতুড়ে চিকিৎসক উমাপদ মান্নার সার্টিফিকেট। এতে অবস্থা জটিল হল। কোনটা সত্য? অভিযোগ না আবেদন? মাসের পর মাস, বছর কেটে যেতে লাগল। তদন্ত আর এগোয় না। কমিটি মিটিঙেই বসে না। মেম্বাররা বদলি হয়ে যান, রিটায়ার করেন, কেউ চাকরি ছেড়েও দেন। এক জন তো মারাও গেলেন। এ দিকে গণেশের বাবার টাকাপয়সার অবস্থা ভয়ংকর। সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মানুষটা অফিসে অফিসে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। তদন্তে যদি গতি আসে। কোথায় গতি! বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর গণেশও ক’দিন কলেজ কামাই করে ছোটাছুটি করেছে। অফিসারদের ধরাধরি করেছে। কাঁচুমাচু মুখে বলত, ‘স্যর, কিছু কি করা যায় না?’

অফিসার মুখ দিয়ে চুকচুক আওয়াজ করে বলত, ‘কী করি বলো তো ভাইটি? আমাদের হাত-পা বাঁধা। তোমার বাবার কেস তো বিচ্ছিরি ভাবে ঝুলে আছে দেখছি। ফাইল আছে, কিন্তু মানুষ নেই। কমিটি আছে কিন্তু মেম্বার নেই।’

গণেশ বলে, ‘তা হলে স্যর, তদন্ত কমিটির ফাইলটাই তুলে দিন না!’

অফিসার দার্শনিক ধরনের মুখ করে বলেন, ‘ওটি হওয়ার নয় ভাইটি। সরকারের ঘরে সব তোলা যায়, ফাইল তোলা যায় না। সে বসে থাকে গ্যাঁট হয়ে। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে সব দেখে। অনেকটা মহাকালের মতো। অনড়, অটল।’

গণেশ তার অফিসে ক্যাশিয়ার রজনী চক্রবর্তীর অ্যাসিসট্যান্ট। সকালবেলা রজনী চক্রবর্তী হাতে লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দেন। কোন কোন পার্টির কাছে টাকা পাওনা, তার লিস্ট। সঙ্গে বিল, ক্যাশবুক। ক্যান্টিনে হাফ গ্লাস জল, এক কাপ তিতকুটে চা খেয়ে লিস্ট হাতে বেরিয়ে পড়ে গণেশ। লিস্টে তিনটি ভাগ। প্রথম ভাগে যারা সে দিন পাওনা টাকা দেবে, তাদের নাম। দ্বিতীয় ভাগে থাকে যারা কবে টাকা দেবে শুধু সেটুকু। আর তিন নম্বর ভাগে তাদের নাম যারা টাকা দেবে না, আবার কবে দেবে সে কথাও জানাবে না। শুধু বসিয়ে রাখবে।

তার পর এক সময় খবর পাঠাবে, আজ দেখা হবে না, চলে যান। ঘটনা অপমানের। গণেশ অবশ্য অপমান নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছে। কোথাও চুপ করে বসে থাকে। কোথাও দেয়ালে পিঠ রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। সব থেকে ভাল জায়গা ‘ঘোষ অ্যান্ড সন্স’-এর অফিস। রিসেপশনের মেয়েটি কোনও এক রহস্যময় কারণে তাকে পছন্দ করে। পছন্দ না হয়ে মায়াও হতে পারে। খাটাখাটনি দেখে মায়া। রোগাপাতলা মেয়ে। নাম মিলি। বয়স তেইশ চব্বিশের বেশি না। মিলি গণেশের মাথার ওপর ফ্যান চালিয়ে দেয়, চা দিতে বলে। টুকটাক কথাও হয়। গায়ের রং ময়লা হলে কী হবে, মিলিকে দেখতে মিষ্টি। মেয়েরা হাসলে সুন্দর দেখায়। গণেশ খেয়াল করে দেখেছে, গম্ভীর হলে মিলিকে বেশি সুন্দর লাগে।

লিস্টে টিক দিয়ে অফিসে ফেরে গণেশ। রজনী চক্রবর্তী টিক মিলিয়ে হিসেব দেখেন। খোদ মালিকের লোক। কথায় কথায় বলেন, এখানে কম্পিউটারের বালাই নেই। খাতা-কলমের সিস্টেম। টাকা জমা দেওয়ার আগে দু’বার যোগ-বিয়োগ করে নিতে হয়। এক বার ক্যালকুলেটরে, এক বার আঙুলে কর গুনে। সতর্ক থাকার আসল কারণ, মুখে কড়া হলেও রজনী চক্রবর্তী নিজে প্রায়ই হিসেবে গোলমাল করে ফেলেন। নয়কে ছয় লেখেন। শেষে শূন্য বসাতে ভুলে যান। বয়স হয়েছে। গণেশ ঠিক করে দেয়। রজনী চক্রবর্তী ভুল ঠিক করে নিতে নিতে ধমক দেন, ‘গাধা কোথাকারে। আমার ভুল ধরে। চশমার পাওয়ারে যে গোলমাল সেটা বোঝে না। তোমার ভুল যে দিন পাব, একেবারে দূর করে দেব।’

ভুল হয়েছে। বড় ভুল হয়েছে গণেশের।

দু’দিন আগে বিকেলে কাজ সেরে অফিসে ফিরে দেখে, সাড়ে সতেরো হাজার টাকার হিসেব মিলছে না। যে ব্যাগে টাকা, চেক, ক্যাশবুক থাকে, সেখানে সবই আছে, নেই শুধু প্লাস্টিকে মোড়া সাড়ে সতেরো হাজারের একটি বান্ডিল। সে দিনই এক পার্টি পেমেন্ট দিয়েছিল। টাকা নিয়ে সাবধানেই ছিল গণেশ। লিস্টের এক নম্বর, দু’নম্বর পর্যায় শেষ করে, ‘শুধু অপেক্ষা করে চলে আসা’র পর্যায়ে ঢুকেছিল বিকেলে। তিন জায়গায় ঢুঁ মেরেছে। এক জায়গায় অফিসের বাইরে পায়চারি করেছে, এক জায়গায় হালকা ঝিমিয়েছে। মিলির অফিসে ব্যাগ থেকে কাগজ-টাগজ বের করে কাজকর্ম ঝালিয়েও নিয়েছে। মিলি রিসেপশনের টেবিলে কাগজ ছড়িয়ে কাজ করলে কিছু বলে না। অফিসে ফিরে টাকা, চেক, বিল সব রজনী চক্রবর্তীর কাছে জমা রেখে বাথরুমে যায় গণেশ। চোখেমুখে জল দিয়ে আসে। ঠান্ডা মাথায় হিসেব নিয়ে বসে, আর তখনই জানা যায়, টাকার বান্ডিল ভ্যানিশ। রজনী চক্রবর্তী চাপা হুংকার দিয়ে ওঠেন।

এই দু’দিনে অফিসে সবাই জেনে গেছে। ‘গাধা পাকড়াশি’ টাকা সরিয়েছে। কেউ বলছে, ‘এত দিনে মানুষ হল।’ কেউ বলছে, ‘মিটমিটে শয়তান’। কেউ বলছে, ‘এখন শুনছি গাধাটার বাবাও এমন ছিল। ঘুষ নিয়ে ফেঁসেছিল।’ কোম্পানির মালিক গণেশকে ডেকে পাঠালেন।

‘এক সপ্তাহ সময়। টাকা ফেরত না দিলে থানায় কমপ্লেন হবে। থানা কী জিনিস জানো তো? ওখানে গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করা হয়। এই যে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছ, পুলিশের ডান্ডা খাওয়ার পর দেখবে ছুটছ। যাও, আপাতত সাসপেন্ড। অফিসে আসবে না।’

তিন দিন হল গণেশ নিজের ঘরে বন্দি। ভাড়াবাড়ির এক কামরার ঘর। অনেক ভেবেও কূলকিনারা পায়নি। টাকা কোথায় গেল? টেনশন হচ্ছে। পুলিশের মার তো আসছেই, তার আগে মানসম্মান সবই গেল। মিলিও নিশ্চয়ই খবর পাবে। সব থেকে বড় সমস্যা, কাজটা গেল। বাড়িতে অসুস্থ মা, গুন্ডার সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া এবং বছর ঘুরতে না ঘুরতে আবার ফিরে আসা বোন। তাদের কে খাওয়াবে? শুধু একটাই ভাল লাগা। বাবার সঙ্গে একটা মিল হল। বাবা সাসপেন্ড, ছেলেও সাসপেন্ড। যাঃ, বাবাকে এই মজার কথাটা বলা হল না। মনে মনে হাসল গণেশ। পাশ ফিরে শুল। কালই আত্মহত্যার কাজটা সেরে নিতে হবে।

সকালবেলা দরজায় ধাক্কা। ধড়ফড় করে উঠে বসল গণেশ। কে? নিশ্চয়ই পুলিশ। দরজা খুলে গণেশ থ। মিলি! মিলি কেন? সে কী করে এ বাড়ির ঠিকানা জানল?

মিলি ঘরে ঢুকে গম্ভীর গলায় বলল, ‘এত দিন দেখিনি কেন? কী হয়েছে? শরীর খারাপ?’

গণেশের কী যেন হল! মিলিকে ভাঙা খাটে বসিয়ে, চা বানিয়ে কাপ হাতে দিয়ে হড়বড়িয়ে সব ঘটনা বলে ফেলল। বলে লজ্জাও পেল খুব। লোকে কি তাকে এমনি ‘গাধা’ বলে? একটা প্রায় অচেনা মেয়েকে এত কথা বলার মানে কী? মিলি পুরো ঘটনা আরও দু’বার শুনল। তার পর বলল, ‘আমি আগেই সব খবর পেয়েছি। আপনার অফিস থেকে অন্য লোক এসেছিল, তার কাছে। শুনেই খটকা হল। এখন আপনার কাছে ঘটনা জেনে বুঝতে পারছি, ওই রজনী চক্রবর্তী টাকা সরিয়েছে। আপনি যখন বাথরুমে গিয়েছিলেন, তখনই করেছে। ওর বাড়ির ঠিকানা জানেন?’

গণেশ ভয়ে কুঁকড়ে যায়। মেয়েটা বলছে কী! মাথা খারাপ হল না কি?

মিলি তড়াক করে উঠে দাঁড়াল। তার চোখমুখ রাগে থমথম করছে। বলল, ‘চলুন। ঠিকানা খুঁজে নেব। এই সব লোককে কী ভাবে শায়েস্তা করতে হয়, মিলি বসুর খুব ভাল জানা আছে। ঘাড় ধরে টাকা আদায় করব। মনে রাখবেন, আমার দাদু দারোগা ছিলেন।’

গণেশ মিনমিন করে বলল, ‘মিলি... মিলি... এক বার শুনুন...’

মিলি এ বার ধমক দিল এবং সম্বোধন বদল করল। বলল, ‘চুপ করো। আমার সঙ্গে তোমাকে যেতে বলছি না?’

রজনী চক্রবর্তীর কাছ থেকে সব টাকা পাওয়া গেল না। কিছু খরচ করে ফেলেছেন।

রোগাপাতলা একটা মেয়ের তেজ দেখে যে উনি অমন ঘাবড়ে যাবেন, গণেশ ভাবতেও পারেনি। গণেশ নিজেও ভয় পেয়ে গিয়েছিল।

গণেশ মিলিকে বিয়ে করেছে। ফুলশয্যার রাতে মিলিকে বলল, ‘ভাগ্যিস আত্মহত্যা করিনি! তা হলে বিয়েটাই করা হত না।’

মিলি বরের কানে ফিসফিস করে গাঢ় স্বরে বলল, ‘আমার গাধা পাকড়াশি।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Short Story Love
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE