Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছাইচাপা ঋতুস্রাব, ওঁদের ভরসা কিন্তু অটলই

প্যাড নয়, ঋতুস্রাবের সময় এখনও গ্রামের বেশির ভাগ মহিলার ভরসা এক টুকরো কাপড় ও ছাইয়ের উপরেই। 

অসচেতন: রাঁচীর লালপুর মোড়ে সেই সব দিনমজুর মহিলাদের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

অসচেতন: রাঁচীর লালপুর মোড়ে সেই সব দিনমজুর মহিলাদের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩১
Share: Save:

বিষয়টা নিয়ে অচেনা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে অনীহা। কিছু ক্ষণ পরে লাজুক মুখে কয়েক জন জানালেন, প্যাড নয়, ঋতুস্রাবের সময় এখনও গ্রামের বেশির ভাগ মহিলার ভরসা এক টুকরো কাপড় ও ছাইয়ের উপরেই।

অক্ষয়কুমার অভিনীত ‘প্যাডম্যান’ রাঁচীর অন্তত পাঁচটি সিনেমা হলে চলছে। কিন্তু যাঁদের সচেতন করার জন্য এই ছবি, তাঁরা তো থাকেন ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামে। এই আদিবাসী গরিব মেয়েরা কয়লা খাদান থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারখানায় দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, ঋতুস্রাবের সময় মা, মাসিরা যে ভাবে কাপড়ের টুকরোর সঙ্গে ছাই মিশিয়ে চালাতেন, সেই ভাবে তাঁরাও চালান। গ্রামের কিছু দোকানে স্যানিটারি ন্যাপকিন এসেছে ঠিকই। অনেকেই তা ব্যবহারে অভ্যস্ত নন।

কথা হচ্ছিল রাঁচীর লালপুর মোড়ে দৈনিক মজুরিতে কাজ খুঁজতে আসা মহিলা শ্রমিকদের সঙ্গে। আশপাশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা বিভিন্ন বয়সের মহিলা রোজ সকাল ন’টা থেকে দাঁড়িয়ে থাকেন। কোনওদিন কাজ মেলে। কোনওদিন নয়। এ রকমই এক মহিলা অনিতা কুমারী বলেন, ‘‘ঘুঁটে পুড়িয়ে যে ছাই হয়, তা ভাল করে ছেঁকে মেয়েরা ঋতুস্রাবের সময় ব্যবহার করেন। কোথাও কেটে গেলে রক্ত বন্ধ করতে তো আমরা ছাই ব্যবহার করি। ঋতুস্রাবেও তাই। ক্ষতি কী?’’ আর এক মহিলা বলেন, ‘‘দিনে দু’শো টাকা মজুরি। সাত দিন দাঁড়ালে দু’দিন কাজ। প্যাড কেনার পয়সা কোথায়?’’

কিন্তু এই পদ্ধতি কি আদৌ নিরাপদ? স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুব বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা। এই পদ্ধতিতে সংক্রমণের জেরে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। প্যাড ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।’’

গ্রামে ঘুরে ঘুরে সচেতনতার প্রচার চালান ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বাসবী কিরো। তিনি জানান, ছাই ব্যবহার করার মতো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ছাড়াও আরও সমস্যা রয়েছে। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই মহিলাদের একটা বড় অংশ অ্যানিমিয়া ও অপুষ্টিতে ভোগেন। তাই অনেকের ঋতুস্রাবই অনিয়মিত। বাসবী দেবীর মতে, ‘‘প্যাড ব্যবহারের পাশাপাশি কী ভাবে অ্যানিমিয়া ও অপুষ্টির হাত থেকে বাঁচানো যায়, সে ব্যাপারে সরকারি হস্তক্ষেপ জরুরি।’’

গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্যাড বিলি করেন ও ব্যবহারের জন্য প্রচার চালান মঙ্গেশ ঝা। তিনি ‘ঝাড়খণ্ডের প্যাডম্যান’ বলে পরিচিত। মঙ্গেশ বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুরোটা হয় না। সরকারের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার।’’ ঝাড়খণ্ডের নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী লুইস মরান্ডির যদিও দাবি, ‘‘গ্রামের স্কুল ও হোস্টেলে মেয়েদের সচেতন করা হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামেও যাওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE