এই গাড়ি আভিজাত্যের চিহ্ন হিসাবে মর্যাদা পেত। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।
১৯৩৩ সালের হাম্বার গাড়িটি সম্ভবত সব থেকে পছন্দের গাড়ি ছিল বিশ্বকবির। রবীন্দ্রনাথ খুব ভালবাসতেন এই গাড়িতে চড়তে। জীবনের শেষদিনগুলিতেও তিনি এই গাড়ি ব্যবহার করেছেন। শুধু তিনিই নন, এই গাড়ির যাত্রীদের তালিকা চমকে দেওয়ার মতো। সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরুর মতো বিখ্যাত মানুষরা এই গাড়িতে চড়েছেন।
১৯৩৮ সালে কনিষ্ঠ পুত্র এবং বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমেরিকা থেকে কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ফিরেছেন। সেই বছরেরই রথীন্দ্রনাথ ১৯৩৩ সালের মডেলের একজোড়া হাম্বার কিনে ফেললেন ‘এইচএইচ লিলি’ নামক হাম্বার গাড়ির ডিলারের থেকে।
এরাই গোটা ভারত এবং বর্মাদেশের একমাত্র ডিলার ছিল। পার্ক স্ট্রিটের শোরুম থেকে কেনা দু’টি গাড়ির প্রত্যেকটি ৪০০ পাউন্ড (তখনকার মূল্যে ৫৩০০ ভারতীয় মুদ্রা) দিয়ে কিনেছিলেন। দু’টি গাড়ির একটি জোড়াসাঁকোতে ছিল, আর একটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিশ্বভারতীতে।
আরও পড়ুন: এ বার পেট্রল ইঞ্জিনের বিএমডব্লিউ এক্স-১ হাজির
রবীন্দ্রনাথের শরীর তখন খুব ভাল না থাকলেও রোজ বেশ কিছুটা হেঁটে চলে বেড়াতেন। ঘুরে বেড়াতেন ক্যাম্পাসের ভিতর। এই কারণেই তার জন্য এই গাড়ির ব্যবস্থা করেন রথীন্দ্রনাথ। গাড়িটি পেয়ে বড় খুশি হন তিনি, রোজ একাধিক বার গাড়ি চড়তেন, ঘুরে বেড়াতেন নিজের পছন্দ মতো। সেই সময় এই গাড়ি শান্তিনিকেতনের পথে দেখলেই লোকে বুঝতেন ভিতরে রবীন্দ্রনাথ বসে আছেন, ঘুরতে বেরিয়েছেন। তিনি এই গাড়ির অদলবদল করেছিলেন নিজের প্রয়োজন মতো, শীতলপাটি লাগিয়েছিলেন গাড়ির চারপাশে, যাতে ভিতরে ঠান্ডা থাকে।
থমাস হাম্বার ১৮৬৮ সালে নিজের নামে তৈরি করেন হাম্বার কোম্পানি। এই ব্রিটিশ গাড়ির কোম্পানি ধীরে ধীরে এতই বিখ্যাত হয়, পৃথিবীর অন্যতম সেরা গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে। এদের অন্যতম সেরা গাড়ি ছিল ১৯৩৩ সালের হাম্বার স্নাইপ এবং পুলম্যান সেডান। ৪ লিটারের ইঞ্জিন ধারনক্ষম এই গাড়ি যে সেই সময়ের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল।
আরও পড়ুন: ভারতের প্রথম গাড়ির র্যালি হয়েছিল কলকাতায়!
১৯৩৩ সালের মডেলের হাম্বার। —ফাইল চিত্র।
এই গাড়ির অন্যান্য বৈশিষ্ট্য গুলি হল:
১৯৩১ সালে রুটস্ ব্রাদার্স এই সংস্থার বেশির ভাগ শেয়ার কিনে নেয়। হাম্বার তার নিজস্বতা হারিয়ে ফেলে। বেশির ভাগ ডিজাইনার, ওয়ার্কার সংস্থা ছাড়েন। কারণ তাদের কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা কমে যাচ্ছিল। কিন্তু সেই কোম্পানি ১৯৩৩ সালে নিয়ে আসে এই হাম্বার, যা শুধু মার্কেটে তাদের ফিরিয়ে আনে তাই-ই নয়, ব্রিটিশ গাড়ির নামকেও পুরো পৃথিবীর কাছে তুলে ধরে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় এই হাম্বার গাড়িটি এখনও বিশ্বভারতীতে রাখা আছে দর্শনীয় বস্তু হিসাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy