Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছেলেদের ফ্যাশন মেয়েদের প্যাশন

গালে অ্যাত্তখানি গোলাপি রং মাখলে কি সেই পাগলকরা এফেক্ট তৈরি হবে?

রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:৫৬
Share: Save:

পুজো এসে গেলেই ফি-বছর বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় ফ্যাশনের পাতায় দেখি ফলাও করে লেখা হয়, এ বারের পুজোয় ছেলেরা ফ্যাশনের দিক থেকে মেয়েদের চেয়ে কোনও অংশেই পিছিয়ে নেই! এটা যে কত বড় ভুল কথা তা বোধহয় এক জন পুরুষের চেয়ে বেশি কেউ জানে না।

আরে বাবা, একটু মন ঠান্ডা করে ভাবুন তো! মেয়েরা ছেলেদের সব ধরনের পোশাক ইচ্ছে করলেই পরে ফেলতে পারে। কিন্তু ছেলেরা কোনও দিন পারবে বিয়েবাড়িতে শাড়ি পরে যেতে? পারবে না। অথচ একটি মেয়ে অবলীলায় রঙিন ধুতি-পাঞ্জাবি পরে মহানন্দে ঘুরে বেড়ায়। মেয়েরা ছেলেদের মতো সব ধরনের হেয়ার কাট করতে পারে। এমনকি, মহাপ্রভু শ্রীশ্রীচৈতন্যদেবের মতো মাথা মুড়িয়ে ফেললেও তাদের কাউকে কাউকে নাকি আশ্চর্য ‘কিউট’ লাগে! অথচ ছেলেরা মেয়েদের মতো একটা বা দুটো লম্বা বিনুনি বেঁধে ঘুরতে পারবে কোনও দিন? পারবে মেয়েদের মতো পেন্সিল হিলওয়ালা জুতো পায়ে ঘুরে বেড়াতে?

উঁহু, পারবে না! একমাত্র মানুষ ছাড়া পৃথিবীর মোটামুটি সব ধরনের প্রাণীর বেলায় দেখা যায়, ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে বেশি সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। টুকটাক ব্যতিক্রম থাকলেও পাখি হোক, বাঘ হোক, মাছ হোক বা পতঙ্গ— গ্ল্যামারের দিক থেকে ছেলেরাই কিন্তু এগিয়ে। মানুষের বেলায় পুরুষরা যতই সাজগোজ করুক না কেন, নারীর স্নিগ্ধ সৌন্দর্যের কাছে তারা কোনও দিনই হালে পানি পাবে না।কিন্তু এই সহজ সত্যিটা সে সহজ ভাবে মেনে নিলে তো! ফ্যাশন আসলে যে কোনও মানুষের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বকে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।

আরও পড়ুন: ট্রেন্ডের পিছনে ছুটে সব পরে ফেলে ‘ক্রিসমাস ট্রি’ হয়ে উঠবেন না যেন!​

আরও পড়ুন: পুজোয় জেল্লাদার ত্বক চান! এখন থেকেই প্রস্তুতি নিন​

তাই, ঠিক কেমন ভাবে আর কতটুকু সাজলে নিজেকে অসামান্যা মনে হবে, এটা যদি একটি মেয়ে বুঝতেই না পারল, তা হলে তাকে একবার মাত্র দেখেই, তার কথা ভাবতে ভাবতে সারা রাত জানলার ধারে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাওয়া যাবে কি? তার কপালের মাঝখানের ছোট্ট একবিন্দু লাল কুমকুমের টিপ, ইংরেজি অনার্সের গোটা ক্লাসরুমে ধ্রুবতারার মতো একলা জ্বলজ্বল করবে, চারপাশের আর সব কিছু ভ্যানিশ হয়ে যাবে, এটাই তো দস্তুর। কপালে অনেকটা জায়গা ফাঁকা রয়েছে বলে কেউ যদি সেখানে দশখানা টিপ পরে ঘুরে বেড়ায় কিংবা গালে অ্যাত্তখানি গোলাপি রং মাখে, তবে কি সেই পাগলকরা এফেক্ট তৈরি হবে? কারণ, ফ্যাশন তো মানুষের আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলার জন্য, তাকে ক্লাউন সাজানোর জন্য নয়।

একই ভাবে পুরুষকেও মাথায় রাখতে হবে, তাদের কোন কোন জিনিস মেয়েদের মনে বিরক্তির সৃষ্টি করতে পারে। মেয়েরা ম্যাচিং করে পোশাক পরতে পছন্দ করে বলে পুরুষরাও যদি সাদা জামার সঙ্গে সাদা প্যান্ট আর সাদা জুতো-মোজা পরে, সেটা কিন্তু মোটেই খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারণ, অভিনেতা জিতেন্দ্র বা ভবানীপুরের টার্ফ রোডের মুখের মাছবিক্রেতা বিজয়দা কিন্তু ব্যতিক্রম।কমবয়সি ছেলেদের যেমন কখনওই উচিত নয় ডোরাকাটা, চকচকে বা অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে এমন পাতলা কাপড়ের জামা পরা। তেমনই ছেলেদের খুব ঢোলা বা গায়ে-পায়ে এঁটে বসেছে, এমন টাইট জামাকাপড়ও বেশির ভাগ মেয়েরই অপছন্দের। কেউ যদি মনে ভাবে, টাইট গেঞ্জি পরে হাতাটা একটু গুটিয়ে না-তুললে আমার বাইসেপস-বল্লরী ঠিক মতো বিকশিত হচ্ছে না, তবে তার চেয়ে মূর্খ পুরুষ দুনিয়ায় দুটো নেই।

আরও পড়ুন: খালি গায়েই রূপ খুলবে জামদানির সাজে​

আবার কোমর থেকে যে কোনও মুহূর্তে খসে পড়তে পারে এমন নিচু হয়ে ঝুলে থাকা প্যান্টও মেয়েদের চোখে অস্বস্তিকর। আসলে ফ্যাশন-স্টাইল মানে তো শুধু দামি দামি জামা-জুতো-চশমা পরা নয়, নিজেকে মানানসই এবং রুচিসম্মত করে সাজানো। ছ’হাজারি জামা পরেও গা দিয়ে যদি আঁশটে ঘেমো গন্ধ বেরোয় বা ইস্ত্রির অভাবে তা যদি কুঁচকে থাকে, তার চেয়ে চমৎকার ডিয়োডোরেন্ট ছড়িয়ে পরিপাটি করে পরা ছশো টাকার জামায় অনেক বেশি ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠতে পারে, এটা কিন্তু সবার আগে বুঝতে হবে।

অলঙ্করণ: দেবাশীষ দেব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE