রানাঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় আটকে বিক্ষোভ। সোমবার সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে এ বার ঘেরাও করা হল খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে। সোমবার সন্ধ্যায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়িকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাল ক্ষুব্ধ রানাঘাট। এ দিন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ রানাঘাট মিশন গেটের সামনের এই ঘটনায় যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাঁকে। ঘণ্টাখানেক পর অবশ্য ছাড়া পান মুখ্যমন্ত্রী। তখনও ক্ষুব্ধ জনগণ চিৎকার করে চলেছে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
একটু আগেই রানাঘাট হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি বুঝিয়েছিলেন, বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে তাঁর প্রশাসন কতটা তৎপর। এমনকী, ঘটনায় কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তাঁর এই ঘোষণার কিছু ক্ষণ পর দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেই ঘেরাও হতে হল। প্রায় হাজারখানেক মানুষ বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের একটাই দাবি, অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। ঘটনার পর প্রায় ৬০ ঘণ্টা কেটে গেলেও এক জন অপরাধীও গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। সিবিআই তদন্তের দাবি তোলা হয়। বেশ কিছু ক্ষণ ভেতরে বসে থাকার পর গাড়ি থেকে নামেন তিনি। নিজেকে আন্দোলনের লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে মমতা এই বিক্ষোভের পিছনে সিপিএম-বিজেপির হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। ঘটনাচক্রে রানাঘাটের এই ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে এ দিনই রাজ্যের কাছে সবিস্তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর তাকে ছোট ঘটনা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, সেই তিনিই রানাঘাটের কনভেন্টে বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। এমনকী, ঘটনার সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন। সোমবার আরও এক ধাপ এগিয়ে রানাঘাটের হাসপাতালে গিয়ে ওই সন্ন্যাসিনীকে দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেন, সন্ন্যাসিনী ভাল আছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রানাঘাটের ওই কনভেন্টে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কনভেন্টের ভেতর মিনিট পাঁচেক থাকার পর বেরিয়ে আসেন তাঁরা। এর পর সামনের জাতীয় সড়ক ধরে প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে আনুলিয়ার হাসপাতালে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। ভর সন্ধ্যায় ব্যস্ত জাতীয় সড়ক ধরে মুখ্যমন্ত্রী হেঁটে যাওয়ায় ঘোরতর বিপাকে পড়েন পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। নিরাপত্তা কর্মী-সহ প্রচুর মানুষ তখন মমতাকে অনুসরণ করে হাসপাতালের পথে হাঁটছেন। এই ঘটনায় জাতীয় সড়কে সাময়িক ভাবে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়।
সন্ধ্যা সওয়া ছ’টা নাগাদ তিনি হাসপাতালে পৌঁছন। সেখানে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে বাইরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দেন, আপাতত ভাল আছেন ওই সন্ন্যাসিনী। তাঁর কথায়: “সিস্টার ইজ অলরাইট নাও। আর্চ বিশপের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওদের কমিউনিটির সঙ্গেও কথা হয়েছে। স্ট্রং অ্যাকশন নেওয়া হবে। কিছু জন অ্যারেস্ট হয়েছে। পুরো গ্যাংটা ধরার চেষ্টা চলছে। উনি ভাল আছেন। আমি কেবিনে গিয়ে কথা বলেছি। বর্ডার এলাকায় নজরদারি করা হচ্ছে। যদি অন্য রাজ্যে পালিয়ে গিয়ে থাকে সে দিকেও নজর রাখা হয়েছে।”
এই কথা বলেই তিনি গাড়িতে গিয়ে ওঠেন। তাঁর কনভয় মিশন গেটের কাছে পৌঁছতেই আটকে যায়। মোমবাতি দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে শয়ে শয়ে জনতা চিৎকার করে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানাতে থাকেন। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ তখন ক্ষোভে ফুঁসছেন। প্রথমে এক জন ফাদার গাড়ির সামনে এসে বিক্ষোভকারীদের প্রশমিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। এর কিছু ক্ষণ পর ক্ষুব্ধ মমতা গাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাঁকে এ ভাবে হেনস্থা করার পেছনে তিনি বিজেপি-সিপিএমকে দায়ী করেন। ঘড়িতে তখন সাতটা পঞ্চান্ন। পুলিশি তৎপরতায় ছাড়া পেয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। পিছনে তখন জাতীয় সড়কের উপর দাঁড়িয়ে হাজারখানেক মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy