দুর্ঘটনায় আহত অষ্টাদশীর মৃত্যু

শনিবার রাতে বন্ধু অভিষেক রায়ের সঙ্গে মোটরবাইকে ঘুরতে গিয়েছিলেন সদ্য অষ্টাদশী মনীষা। সঙ্গে ছিলেন খুড়তুতো বোন বিপাশাও। মধ্য রাতে বেঙ্গল কেমিক্যাল মোড়ের কাছে রাস্তার পাশের রেলিংয়ে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায় বাইকটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১০
Share:

মনীষা রায়।

জন্মদিনের রাতে বন্ধুর মোটরবাইকে ঘুরতে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরা হল না মানিকতলা মুরারিপুকুরের বাসিন্দা মনীষা রায়ের (১৮)। পথ দুর্ঘটনার তিন দিন পরে, মঙ্গলবার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। মনীষার বাবা অশোকবাবু বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই মনে হচ্ছিল মেয়েকে আর ফেরাতে পারব না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সরকারি হাসপাতালে ওকে নিয়ে যাওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে কথা বলব ভেবেছিলাম। তা আর হল না!’’

Advertisement

শনিবার রাতে বন্ধু অভিষেক রায়ের সঙ্গে মোটরবাইকে ঘুরতে গিয়েছিলেন সদ্য অষ্টাদশী মনীষা। সঙ্গে ছিলেন খুড়তুতো বোন বিপাশাও। মধ্য রাতে বেঙ্গল কেমিক্যাল মোড়ের কাছে রাস্তার পাশের রেলিংয়ে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায় বাইকটি। সে সময়ে বাইকে ছিলেন না বিপাশা। স্থানীয়েরা আহত মনীষা-অভিষেককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতেই ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার মৃত ঘোষণা করা হয় মনীষাকে।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে অভিষেক মত্ত অবস্থায় ছিলেন। দুর্ঘটনায় মনীষার ঘাড়ের হাড় ভাঙে। মাথাতেও চোট ছিল। রবিবার রাতে কোমায় চলে যান মনীষা। সোমবার রাতে তাঁর ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার সকালে ওই তরুণীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়। মনীষার পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁর অঙ্গ দান করা হবে। আজ, বুধবার পরিবারের হাতে তাঁর দেহ তুলে দেওয়ার কথা।

Advertisement

এ দিন মনীষার বাবা বলেন, ‘‘বাইকটা আমি দেখেছি। সেটা এমন কিছু ভাঙেনি। এর জেরে দু’টো প্রাণ চলে যেতে পারে না। আমার বিশ্বাস, সে রাতে আরও অনেকে ছিল। কী ঘটেছে জানতে পুলিশ তাদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করুক।’’ রহস্য রয়েছে বিপাশার কথাতেও। তিনি বলেন, ‘‘উল্টোডাঙা ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে অভিষেকের সঙ্গে দেখা করি। সেখান থেকে একটা বাইকে চড়েই তিন জনে গঙ্গার ঘাটে যাই। অভিষেক ওখানে মদ্যপান করছিল। পরে একটি বাইকে করে আরও দু’জন ওখানে আসে। ওরা অভিষেককে বাইক রেস করতে বলে। ১৫ মিনিটে হাইওয়ে ধরে কোলাঘাট যাওয়ার কথা বলে ওরা।’’

বিপাশার দাবি, মনীষা বাইক রেসে অংশ নিতে রাজি হননি। তাই বাইকে করে তিনজন বেরিয়ে পড়েছিলেন। সে সময়ে অভিষেক এতটাই মত্ত ছিলেন যে, বাইকে ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ ছিল না তাঁর। পরে নেমে যাওয়ার জেদ করায় রাত দেড়টা নাগাদ বিপাশাকে উল্টোডাঙায় নামিয়ে দিয়ে মনীষাকে নিয়ে চলে যান অভিষেক। পুলিশের অনুমান, এর পরেই ঘটে দুর্ঘটনা।

প্রশ্ন উঠছে, অত রাতে বিপাশাকে রাস্তায় একা কেন ছেড়ে দিলেন মনীষা? সে সময়ে বিপাশা কেন বাড়িতে খবর দিলেন না? তাঁর অবশ্য দাবি, ‘‘রাস্তা চিনতে পারছিলাম না। বাড়িতে ফোন করলে বকা খেতে হত। তাই নিজেই রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করছিলাম।’’

জানা গিয়েছে, মোটরবাইকটির রেজিস্ট্রেশন ছিল না। অভিষেকের ড্রাইভিং লাইসেন্সও পাওয়া যায়নি। মনীষার বাবারও অভিযোগ, নিছক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি তাঁর মেয়ের। তবে কি ফের তদন্ত হবে? দুর্ঘটনাস্থলটি মানিকতলা থানার অন্তর্গত। সেখানকার পুলিশ আধিকারিকেরা বলছেন, ‘‘কার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করব? বাইকের মালিকেরও তো মৃত্যু হয়েছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন