বেতন দিয়ে রাখা হচ্ছে সোনা পাচারের লোক

গত ২৯ অগস্ট সল্টলেকে আড়াই কোটি টাকার চোরাই সোনা-সহ এক অটোচালক ধরা পড়ে ‘ডিরেক্টরেট অব রেভেনিউ ইন্টেলিজেন্স’ (ডিআরআই)-এর অফিসারদের হাতে।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:০৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

মাসিক বেতন দিয়ে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে সোনা পাচারের জন্য। সম্প্রতি তদন্তে নেমে এমনই তথ্য উঠে এসেছে শুল্ক দফতরের গোয়েন্দাদের হাতে। বাংলাদেশ থেকে চোরাই সোনা সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে প্রধানত বনগাঁ ও তার আশপাশের এলাকায়। সেই সোনা মূলত বড়বাজারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেতনভুক কর্মচারী নিয়োগ করছে চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত মাথারা।

Advertisement

গত ২৯ অগস্ট সল্টলেকে আড়াই কোটি টাকার চোরাই সোনা-সহ এক অটোচালক ধরা পড়ে ‘ডিরেক্টরেট অব রেভেনিউ ইন্টেলিজেন্স’ (ডিআরআই)-এর অফিসারদের হাতে। সোনা পাচারের সঙ্গে যুক্ত ওই অটোচালককে গ্রেফতারের পরে জানা গিয়েছে, মাসিক ২০ হাজার টাকা বেতনের বিনিময়ে সে ওই কাজ করছিল। চোরাচালানকারীদের সঙ্গে ওই অটোচালক রাজকুমার সর্দারের চুক্তি ছিল, যত সোনাই সে পাচার করুক না কেন, মাসের শেষে তাকে ২০ হাজার টাকা নগদে দেওয়া হবে। সাধারণ পেশায় যুক্ত শহরের বিভিন্ন লোকজন এ ভাবে চোরাচালানের কাজে জড়িয়ে পড়ায় চিন্তায় পড়েছেন গোয়েন্দারা।

ডিআরআই সূত্রের খবর, ওই অটোচালক বনগাঁর লোক। সেখানে সে চাষের কাজ করত। তার খুড়োশ্বশুর সল্টলেকে অটো চালাতেন। তাঁরই পরামর্শে বছর পাঁচেক আগে সে কলকাতায় চলে আসে। শুরু করে ভাড়া নিয়ে অটো চালানো। বছর দেড়েক আগে রাজকুমার অটো কেনে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, কয়েক মাস আগে বনগাঁর পুরনো পরিচিতদের কাছ থেকে রাজকুমার সোনা পাচারের প্রস্তাব পায়। এমনিতে অটো চালিয়ে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা রোজগার হচ্ছিল তার। সেই সঙ্গে প্রতি মাসে বাঁধা ২০ হাজার টাকার লোভ সামলাতে পারেনি রাজকুমার। জেরার মুখে গোয়েন্দাদের সে জানিয়েছে, তার এই ‘উপরি’ রোজগারের কথা স্ত্রীও জানতেন। পরিবার নিয়ে সল্টলেকেই ঘর ভাড়া করে থাকছিল সে।

Advertisement

ডিআরআই সূত্রের খবর, বনগাঁর সীমান্তে থাকা কিছু ক্লাবের কয়েক জন সদস্য সক্রিয় ভাবে সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তারা সন্ধ্যায় ক্লাবে বসে মদ্যপান করে, ক্যারম খেলে, টিভি দেখে। আর দিনের বেলায় সোনা পাচার করে। অভিযোগ, এরা চোরাই সোনা নিয়ে সরাসরি কলকাতায় আসে না। সীমান্ত পেরিয়ে আসা সোনা এরা তুলে দেয় স্থানীয় গৃহবধূদের হাতে। বাসে, ট্রেনে করে সেই গৃহবধূরা কলকাতায় এসে রাজকুমারের মতো বেতনভুক চোরাচালানকারীর হাতে তুলে দিচ্ছে সেই সোনা। সে দিন রাজকুমারের সঙ্গে ধরা পড়েছিল এমনই তিন মহিলা। তারা বনগাঁর পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা। জেরায় জানা গিয়েছে, প্রতিবারই সোনা বনগাঁ থেকে কলকাতায় আনার জন্য তারা প্রত্যেকে ৫০০ টাকা করে পেত।

ওই গৃহবধূরা অটোচালকের কাছে সোনা পৌঁছে দেওয়ার পরে ক্লাবের সেই সদস্যেরা খালি হাতে কলকাতায় এসে রাজকুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করত। সেখান থেকে সোনা নিয়ে তারা পৌঁছে দিত বড়বাজারে ও পোস্তায়। এই কাজে মোটা টাকা পেত তারা। ডিআরআই-এর এক কর্তার কথায়, ‘‘অনেক সময়ে কম টাকার বিনিময়ে প্রলোভনে পড়ে যাচ্ছেন সীমান্তের যুবকেরা। এমনও ঘটেছে যে, তার ক্লাবকে একটি ক্যারম বোর্ড কিনে দেওয়া হবে— এই আশ্বাসেই এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সোনা পাচার করতে গিয়ে আমাদের হাতে ধরা পড়ে যায়। পরে জেলে বসেই পরীক্ষা দেয় সে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন