Coronavirus in Kolkata

‘রোগের নাম শুনেই হেরে যাব! অন্তত লড়াইটা করি’

লেক টাউন পল্লিশ্রী এলাকার বাসিন্দা সমরবাবু কেন্দ্রীয় সরকারের অস্ত্র কারখানা অবসরপ্রাপ্ত কর্মী।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০৪:৩২
Share:

জয়ী: সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ির পথে সমরচন্দ্র ঘোষাল। ফুল-মিষ্টি এবং হাততালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

নিঃসঙ্গতা কাকে বলে তাঁকে বুঝিয়েছিল স্ত্রীর মৃত্যু। নিঃসঙ্গতার পরেও যে একাকিত্ব থাকতে পারে, তা বুঝিয়ে দিল কোভিড। অস্পৃশ্যতা কাকে বলে, তা শুনেছিলেন বছর আশির মানুষটি। কিন্তু সেটা যে তাঁর জীবনে আসবে বুঝতে পারেননি লেক টাউনের বাসিন্দা সমরচন্দ্র ঘোষাল। তবে করোনা-আক্রান্ত হওয়ার পরেও ভেঙে পড়েননি সমরবাবু। ১৭ দিন হাসপাতালে লড়াই করে মঙ্গলবার বাড়ি ফিরেছেন তিনি।

Advertisement

লেক টাউন পল্লিশ্রী এলাকার বাসিন্দা সমরবাবু কেন্দ্রীয় সরকারের অস্ত্র কারখানা অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। ছেলে অন্যত্র থাকেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে সুখেই দিন কাটত তাঁদের। গত বছরের জানুয়ারিতে স্ত্রীর মৃত্যু হয়। তার পর থেকে একাই তিনি। রান্নার ও কাজের জন্য লোক থাকলেও বাজার নিজে করতেন। করোনাকালেও এক দিন ছেড়ে ছেড়ে বাজারে যেতেন।

জুলাইয়ের ১৯ তারিখ থেকে অসুস্থতা শুরু হয়। সমরবাবু জানান, সব সময়ে মাথা ভার লাগত, শারীরিক অস্বস্তিও ছিল। কিছুই খেতে ভাল লাগছিল না। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গেলে দেখা যায়, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটাই কম। কয়েকটি পরীক্ষা করতে দেন চিকিৎসক। রিপোর্ট নিয়ে ফের তাঁর কাছে যান ২৫ জুলাই। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা সে দিন আরও কমে গিয়েছিল। তখনই করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন ডাক্তার। পরীক্ষা না করিয়ে পরের দিন সরাসরি ভর্তি হয়ে যান স্থানীয় নার্সিংহোমে।

Advertisement

আরও পড়ুন: অক্সিমিটার অ্যাপে আঙুল ছোঁয়ালেই লোপাট টাকা

সেখানে করোনার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে তাঁর। আলাদা কেবিনে লড়াই শুরু বৃদ্ধের।

তখন মনের অবস্থা কেমন ছিল? ফোনের ওপারে ক্ষণিকের নিস্তব্ধতা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “খবরটা শুনে মনে হয়েছিল, নদীর এক দিকে জনপদ। অন্য দিকে আমি একা।” ফের দৃঢ় তাঁর স্বর। সমরবাবু বললেন, “পরক্ষণেই মনে হল, একাই তো বাঁচছি। রোগের নাম শুনেই হেরে যাব! অন্তত লড়াইটা করি। তার পরেই ডাক্তারবাবুর কথা শুনে সাহস পেলাম। উনি যে ভাবে শক্তি জুগিয়েছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।” সমরবাবু জানান, ওই নার্সিংহোমের যে নার্স ১৭ দিন ধরে তাঁর খেয়াল রেখেছেন, যে কর্মী তাঁর কেবিন পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ওঁরা প্রত্যেকেই তাঁকে লড়াই চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে গিয়েছেন।

ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা নেই তাঁর। ফলে করোনার বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই খানিকটা সহজ হয়েছে, জানাচ্ছেন সমরবাবুর চিকিৎসকেরা। যদিও বয়সের বিষয়টা চিন্তায় রেখেছিল তাঁদের। তবে উপসর্গ ধরে চিকিৎসাতেই ফল মিলেছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। কয়েক দিনের মধ্যেই শরীরে অক্সিজেনের মাত্রাও বাড়ে।

পর পর দু’বার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছিল। অবশেষে সোমবার নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। সে কথা বলতে গিয়ে বুজে আসা গলায় সমরবাবু বলেন, “শিবানী নামে যে নার্স আমার দেখাশোনা করতেন, নেগেটিভ রিপোর্ট শুনে তিনি আনন্দে চিৎকার করে হাততালি দিয়ে উঠেছিলেন। এটাই শক্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।”

আরও ১৪ দিন কোয়রান্টিনে থাকতে হবে তাঁকে। আপাতত ভাড়াটিয়া পরিবারই তাঁকে খাবার দিচ্ছে। যাঁরা আক্রান্ত নন, তাঁদের জন্য সমরবাবুর পরামর্শ, “ভিড় বাজারে যাবেন না। বাড়ির সামনে থেকেই কেনাকাটা করুন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন