গত পাঁচ বছরে পাক সীমান্তে অন্তত আট বার মিলেছে সুড়ঙ্গের সন্ধান। কখনও জম্মু-কাশ্মীর, কখনও রাজস্থান, কখনও পঞ্জাবে। কিন্তু কী ভাবে তা কাটা হচ্ছে, কারা কত দিন ধরে কাটছে— সে সব কিছুই ঠাওর করতে পারছে না ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। কর্তারা মনে করছেন, কাঁটাতারের ঘেরাটোপ এড়িয়ে এই সব সুড়ঙ্গ দিয়েই চলছে জঙ্গি অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে মাদক পাচার। পাক সেনা ও রেঞ্জার্সের মদতে তৈরি এই সুড়ঙ্গগুলিই বড় বিপদ বলে মত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরও।
অঙ্কুরেই এই সুড়ঙ্গ-বিনাশে বিএসএফের ভরসা এখন মার্কিন বাহিনীর ‘মেক্সিকো অভিজ্ঞতা’। বিএসএফের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘মেক্সিকো সীমান্তে এই ধরনের সুড়ঙ্গ খুঁড়ে মাদক এবং মানুষ পাচারের চল আছে। খোঁড়ার সময়েই সেই সব সুড়ঙ্গ ধরে ফেলতে নানা কৌশল ব্যবহার করে মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সেই অভিজ্ঞতাই অনুসরণ করা হবে।’’ প্রয়োজনে মেক্সিকো সীমান্ত পরিদর্শনও করতে চায় বিএসএফ।
মেক্সিকো সীমান্তে সুড়ঙ্গ খনন ঠেকাতে ভূমিকম্প ও শব্দের কম্পন মাপার বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে আমেরিকা। সেই কারণে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময়েই তা ধরা সহজ হয়। উপগ্রহ চিত্র এবং ড্রোনের সাহায্যও নেওয়া হয়। ভারত উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার করলেও বিএসএফ সূত্রে দাবি, মার্কিন উপগ্রহ চিত্র আরও স্পষ্ট। এই প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতাই এ বার ব্যবহার করতে চায় ভারত।
বিএসএফ সূত্রের খবর, ২০০১ সালে পঞ্জাবের গুরুদাসপুর সীমান্তে প্রথম মাটির প্রায় ৮ ফুট নীচে প্রায় ৩৯০ ফুট দীর্ঘ একটি সুড়ঙ্গ পাওয়া গিয়েছিল। ওই সুড়ঙ্গপথ কখনও ব্যবহার করা হয়েছিল কি না, জানতে পারেনি বিএসএফ। এর পর সীমান্ত বরাবর যন্ত্রের সাহায্যে খাল কেটে খুঁজে দেখা হয় আর কোনও সুড়ঙ্গ আছে কি না। কিন্তু এখন সেই ‘ডিটানেলিং’ করেও সুড়ঙ্গ খোঁড়া আটকানো যাচ্ছে না। ২০০৮-এর পর থেকে প্রতি বছর সুড়ঙ্গের সন্ধান মিলেছে রাজস্থানের বারমের, পঞ্জাবের পঠানকোট, জম্মু-কাশ্মীরের আখনুর সেক্টরের জিরো লাইন, পালানওয়ালা, চামলিয়ালের মতো এলাকায়।
আরও পড়ুন:ভারত-পাক সীমান্তের বেড়া বরাবর ২০ মিটার সুড়ঙ্গ মিলল!
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “পাকিস্তান কী প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, সুড়ঙ্গের মাটি কোথায় ফেলা হচ্ছে, মানুষ কাটছে, না যন্ত্রের সাহায্যে কাটা হচ্ছে— কিছুই জানতে পারছেন না গোয়েন্দারা।” তা ছাড়া, সীমান্ত জুড়ে নালা কেটে ‘ডিটানেলিং’ করার খরচও বিশাল। তার চেয়ে সুড়ঙ্গ কাটতে শুরু করার সময়েই তা ধরে ফেলা জরুরি। সেই কারণেই মার্কিন বাহিনীর প্রযুক্তির উপরে নির্ভর করছে বিএসএফ।