ও-পারে ভারত বিদ্বেষ ঘিরে উদ্বেগ
India-Bangladesh Relation

বাংলাদেশে ডাক্তারি পাঠরত কাশ্মীরিদের বিষয়ে খোঁজখবর

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বেশ কয়েক বছর আগে কাশ্মীরের ডাক্তারি পড়ুয়াদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে পাকিস্তানের মেডিক্যাল কলেজগুলি। এ দেশের মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ না পাওয়া বহু কাশ্মীরি পড়ুয়াই সে সময়ে পাকিস্তান থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে ভারতে এসে চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকেন।

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সে দেশে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে বাড়াবাড়ি না করে কিছুটা নীরবেই এই মূল্যায়ন করা হচ্ছে। গত বছর অগস্টে সংরক্ষণ-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে আসার পর থেকেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করে। ভারত-বিরোধিতাও নয়া মাত্রা পায়। এই অবস্থায় সে দেশে এমবিবিএস পড়তে যাওয়া পড়ুয়াদের উগ্রপন্থায় জড়িয়ে পড়া বা চরমপন্থী আদর্শের দিকে ঝোঁকার সম্ভাবনা মাথায় রেখেই এই পর্যালোচনা শুরু করেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বেশ কয়েক বছর আগে কাশ্মীরের ডাক্তারি পড়ুয়াদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে পাকিস্তানের মেডিক্যাল কলেজগুলি। এ দেশের মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ না পাওয়া বহু কাশ্মীরি পড়ুয়াই সে সময়ে পাকিস্তান থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে ভারতে এসে চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকেন। কিন্তু উপত্যকা-সহ ভারতের নানা অংশে জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে তদন্ত চালাতে গিয়ে এনআইএ ও জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ জানতে পারে, উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা ও পাকিস্তানে জঙ্গিদের হ্যান্ডলাররা কাশ্মীরি পড়ুয়াদের জন্য সে দেশের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আসনের ব্যবস্থা করত। ওই পড়ুয়াদের দেওয়া অর্থের একটি অংশ চলে যেত জঙ্গি তহবিলে। এমনকি পাকিস্তান থেকে ডাক্তারি ডিগ্রি নিয়ে ভারতে চলে আসা বহু চিকিৎসক পরে দেশে ফিরে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বলেও সে সময় তদন্তে উঠে আসে।

এর পরেই পাকিস্তানি মেডিক্যাল ডিগ্রি নিষিদ্ধ করে ভারত। কাশ্মীরি পড়ুয়াদের বিদেশ ভ্রমণে নজরদারিও বাড়ায়। সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে গত এক দশকের কিছু বেশি সময় ধরে কাশ্মীরের পড়ুয়াদের কাছে এক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ‘পাকিস্তান রুট’ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

‘পাকিস্তান রুট’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে বাংলাদেশ হয়ে ওঠে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের, বিশেষ করে ডাক্তারি পড়ুয়াদের পছন্দের গন্তব্য। সহজ ভর্তিব্যবস্থা, তুলনামূলক কম খরচ এবং শেখ হাসিনার সন্ত্রাস-বিরোধী নীতির কারণে বাংলাদেশের তুলনামূলক স্থিতিশীল পরিবেশই ছিল এর মূল কারণ। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীর বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে প্রতি বছর কয়েকশো কাশ্মীরি পড়ুয়া ভর্তি হতেন। সেখান থেকে ডাক্তারি পাশ করে তাঁরা ভারতে ফেরেন।

কিন্তু গোয়েন্দাকর্তাদের বক্তব্য, বাংলাদেশের পরিস্থিতি গত দেড় বছরে নাটকীয় ভাবে বদলে গিয়েছে। গোটা দেশে অস্থিরতা বৃদ্ধি, গোলমাল, ভারত-বিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির পুনরুজ্জীবন এবং প্রশাসনিক শিথিলতা— সব মিলিয়ে সে দেশের মেডিক্যাল কলেজগুলির ক্যাম্পাসের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে গোয়েন্দাদের। যদিও এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে পাঠরত কোনও কাশ্মীরি পড়ুয়ার বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রমাণ মেলেনি, তবুও গোয়েন্দাকর্তারা মনে করছেন যে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

লাল কেল্লা বিস্ফোরণের পরে তদন্তে নেমে দেশে ‘হোয়াইট-কলার টেরর মডিউল’-এর সঙ্গে জড়িত কয়েক জন ডাক্তার-সহ উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবীর গ্রেফতারির পরে গোয়েন্দা মহলে উদ্বেগ বেড়েছে। তদন্তে ধৃতেরা সবাই সমাজে উচ্চশিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েও তাঁরা জঙ্গি সংগঠনগুলিকে নানা রকম সাহায্য করছিলেন বলে তদন্তে ধরা পড়ে। এখন গোয়েন্দাকর্তাদের শঙ্কা, পাকিস্তানে এক সময়ে যে ভাবে মেডিক্যাল কলেজগুলিকে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের একাংশকে জঙ্গি সংগঠনে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হত, তেমন পরিবেশ বাংলাদেশেও তৈরি হতে পারে।

তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়ার ব্যাপারে সরকার এখনই কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করছে না, জানিয়েছেন এক প্রবীণ গোয়েন্দাকর্তা। এর অন্যতম বড় কারণ সে দেশের সঙ্গে সংবেদনশীল কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং ইতিমধ্যেই বিপুল সংখ্যক কাশ্মীরি পড়ুয়ার সে দেশে উপস্থিতি। তার পরিবর্তে গোয়েন্দারা এখন বাংলাদেশে পড়তে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে বিশদ তথ্য সংগ্রহ, ছাত্র ভর্তি সংস্থাগুলির ওপর নজরদারি এবং দেশে ফেরা পড়ুয়াদের ব্যাপারে আরও ভাল ভাবে খোঁজখবর নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে মেডিক্যাল কাউন্সিলের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করছেন গোয়েন্দারা। ওই গোয়েন্দাকর্তার কথায়, “উদ্বেগটা বাস্তব। যে বিদেশি মেডিক্যাল শিক্ষা-পরিকাঠামো এক সময় কাশ্মীরি পড়ুয়াদের একাংশকে পাক-সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যুক্ত করেছিল, বাংলাদেশের বর্তমান অস্থিরতায় সেই একই ঘটনা ঘটতে পারে। সেই ঝুঁকিটাই ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন