নিউ ইয়র্ক থেকে সিডনি, ২০ ঘণ্টার দীর্ঘতম উড়ান

অনেকটা, অর্থাৎ ১৯ ঘণ্টা ১৬ মিনিট। আজ স্থানীয় সময় সকাল ৭.৪৩ মিনিটে উড়ান ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় লেখা হল। সৌজন্যে, কোয়ানটাসের  কিউএফ৭৮৭৯।

Advertisement

 সংবাদ সংস্থা

সিডনি শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:১৪
Share:

ছবি: সংগৃহীত

সমুদ্রপৃষ্ঠের ১০ হাজার ৯৭২ মিটার উপরে স্প্যানিশ গানের সঙ্গে একটু নেচে নিলেন তাঁরা। দেখলেন কয়েকটি ছবি। বেশ কয়েক বার পেটপুরে খাওয়াদাওয়া সারলেন চিংড়ি আর মাছের নানা পদ দিয়ে। অনেকটা সময় কাটাতে হবে যে!

Advertisement

অনেকটা, অর্থাৎ ১৯ ঘণ্টা ১৬ মিনিট। আজ স্থানীয় সময় সকাল ৭.৪৩ মিনিটে উড়ান ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় লেখা হল। সৌজন্যে, কোয়ানটাসের কিউএফ৭৮৭৯। অস্ট্রেলিয়ার সংস্থাটি গত কাল পরীক্ষামূলক ভাবে দীর্ঘতম অসামরিক উড়ান চালালো। শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৯.২৭-এ নিউ ইয়র্ক থেকে শুরু করে ১৬,২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সিডনি পৌঁছয় সেটি। যাত্রী-সহ বিরতিহীন ভাবে দীর্ঘতম উড়ানের কৃতিত্বে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সকে পিছনে ফেলে দিল কোয়ানটাস।

বিমানটি বোয়িং সংস্থার একটি আনকোরা ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার। ৪০ জন যাত্রী, ১০ জন বিমানকর্মী এবং ৪ জন চালক-সহ পরীক্ষামূলক ভাবেই বিমানটি চালানো হয়। ২০২২ থেকে বাণিজ্যিক ভাবে এই উড়ান পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা আছে সংস্থাটির।

Advertisement

কোন পথে উড়ান

কোয়ানটাস কর্তৃপক্ষ জানান, এই বিরতিহীন রুট চালু হলে যাত্রীদের অনেকটা সময় বাঁচবে। তবে আকাশে এতটা পথ পাড়ি দিতে যাত্রীদের ক্ষেত্রেও যেমন বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিমানের ক্ষেত্রেও তাই। ঠিক কী কী সমস্যা হতে পারে এবং তার সমাধানই বা কী তা খতিয়ে দেখতেই এই পরীক্ষামূলক উড়ানটি চালানো হয় বলে জানিয়ে‌ছেন তাঁরা। ১৫টি সময়-অঞ্চলের উপর দিয়ে উড়েছে বিমানটি। ফলে ‘জেট-ল্যাগ’ একটা বড় সমস্যা। এর প্রভাব কিছুটা কমাতে উড়ানের প্রথম ৬ ঘণ্টা যাত্রীদের ঘুমোতে দেওয়া হয়নি।

এই পরীক্ষামূলক উড়ানে যাত্রী বলতে বেছে নেওয়া হয়েছিল সংস্থাটির বেশ কয়েক জন পুরনো যাত্রী, সংস্থার কিছু অফ-ডিউটি কর্মচারী, কয়েক জন গবেষক এবং সাংবাদিককে। ভার বেশি হলে উড়ানে আরও সময় লাগতে পারে এই আশঙ্কায় যাত্রী সংখ্যা সীমিত রাখা হয়েছিল। সকলকেই বিজ়নেস ক্লাসের আসনে বসানো হয়। তবে বিমানের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাধারণ আসনের জায়গাতে তাঁদের কিছুটা সময় কাটাতে বলা হয়েছিল।

নিউ ইয়র্ক থেকে আকাশে ওড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেবিনের আলো, খাবার এবং খাবারের তালিকাও সিডনি সময়-অঞ্চল অনুযায়ী সাজিয়ে ফেলা হয়। নিউ ইয়র্কে যখন রাত ১১টা ১৫ মিনিট তখনই ‘লাঞ্চ’ দেওয়া হয় যাত্রীদের। নিউ ইয়র্ক সময়-অঞ্চল অনুযায়ী যখন সময় ভোর ৪টে ১৫ মিনিট, তখন দেওয়া হয় ডিনার। শারীরিক সুবিধের কথা মাথায় রেখে মেনুটিও বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে কোয়ানটাস। চালক এবং বিমানকর্মীদের শিফ্টও সুবিধেজনক ভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল।

২০২২-এর শেষ থেকে নিউ ইয়র্ক থেকে সিডনি পর্যন্ত বিরতিহীন বিমান পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে কোয়ানটাসের। তবে তার আগে বোয়িং বা এয়ারবাসের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী তুলতে সক্ষম বিমান কিনতে হবে সংস্থাটিকে। পাশাপাশি ২০ ঘণ্টার থেকে বেশি সময় কাজ করার জন্য বিমানকর্মীদের চুক্তিবদ্ধ করার কাজও রয়েছে। এই রুটের পর লন্ডন থেকে সিডনি পর্যন্ত বিরতিহীন বিমান পরিষেবা শুরুরও পরিকল্পনা রয়েছে কোয়ানটাসের। সেই পথ এর চেয়েও ৮০৪ কিলোমিটার লম্বা। ফলে সময়েও লাগবে ঘণ্টা খানেক বেশি।

অবশ্য পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের দীর্ঘ উড়ান পরিবেশের প্রচুর ক্ষতি করে। যেমন এই উড়ানে প্রায় ১০০ টন জ্বালানি খরচ হয়েছে। যার ফলে ৩১০ টন কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস নির্গমন হয়েছে বলে দাবি তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন