Brexit

ওয়েস্টমিনস্টারে উৎসব, স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতা দাবি

পার্লামেন্ট স্কোয়ারের বাইরে কেউ কেউ চিৎকার করছিলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) কে চায়!’’ এঁদের মধ্যে কয়েক জন ইইউ-এর পতাকাও পুড়িয়েছেন।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৫৯
Share:

ছবি: এপি।

ব্রিটেনের পতাকার লাল, সাদা আর নীলে সেজেছিলেন ওঁরা। গত কাল রাতে ইংলিশ ওয়াইন আর ইংলিশ বিয়ার খেয়ে চেঁচিয়ে উঠছিলেন, ‘‘স্বাধীনতা!’’ বলে! পার্লামেন্ট স্কোয়ারের বাইরে কেউ কেউ চিৎকার করছিলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) কে চায়!’’ এঁদের মধ্যে কয়েক জন ইইউ-এর পতাকাও পুড়িয়েছেন।

Advertisement

কয়েকশো মিটার দূরে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট অবশ্য তখন সব অদ্ভুত রকমের শান্ত। দেওয়াল ঘড়িটায় ব্রিটেনের সময় ধরা, রাত এগারোটা। ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে দাঁড়ানো সাংবাদিকদের ভিড়ের মধ্যে তখন আস্তে আস্তে মিশে গিয়েছে পার্লামেন্ট স্কোয়ারের ভিড়ের একটা অংশ। এর পরেই শুরু হল কাউন্টডাউন। ‘‘১০, ৯, ৫...’’ এক এক করে বলে চলেছে সবাই। ঠিক এগারোটা বাজতেই বিগ বেন-এর ছবি প্রোজেক্টরে চলে এল ডাউনিং স্ট্রিটে। টেপের আওয়াজ শোনাল ঘড়ির কাঁটার শব্দ। এগারো বার পর পর। ইইউ ছেড়ে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার সময় ধরা রইল। আসল বিগ বেন অবশ্য এখনও মেরামতির জন্য ঢাকা।

পার্লামেন্ট স্কোয়ারের অস্থায়ী মঞ্চে ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ বিজয়ীর ঢঙেই দাঁড়িয়েছিলেন। ব্রিটেনের ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে গণভোটে যেতে সরকারকে বাধ্য করেছিলেন তিনিই। রাতে গেয়ে উঠলেন, ‘গড সেভ দ্য কুইন।’ তার পর বললেন, ‘‘আজকের রাতটা আমরা এমন ভাবে উদ্‌যাপন করতে চাই, যেমনটা আগে কখনও করিনি। আমাদের দেশের আধুনিক ইতিহাসে সব চেয়ে অসাধারণ মুহূর্ত।

Advertisement

ডাউনিং স্ট্রিটের ভিতরে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আর তাঁর শীর্ষ স্তরের মন্ত্রীরা তখন নিঃশব্দে স্পার্কলিং ওয়াইন আর ইংলিশ চিজ় সহযোগে ব্রেক্সিট-মুহূর্ত উপভোগ করছিলেন। বরিস বাইরে এসে কোনও বক্তৃতা দেননি। বিজয়ী হওয়ার চেষ্টাও করেননি। ফারাজদের উপরে আনন্দে লাফালাফির দায়িত্ব ছেড়ে সরকার চেষ্টা করেছে বিষয়টা সাধারণ রাখতে।

এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিয়ে জনসন বলেছেন, দেশকে একজোট রেখে এগিয়ে যেতে হবে। ব্রেক্সিট-মুহূর্তের ঘণ্টাখানেক আগে পোস্ট করা সেই বার্তায় বরিস বলেন, ‘‘অনেকের কাছে আশ্চর্যজনক আশার মুহূর্ত। অনেকেই ভেবেছিলেন, এই মুহূর্তটা বোধহয় আর আসবে না। তবে এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা উদ্বেগ আর হারানোর বেদনায় রয়েছেন। আর রয়েছে তৃতীয় একটি দল, যাঁরা সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি— যাঁরা ভেবেছিলেন, রাজনৈতিক ডামাডোল বন্ধ হবে না। সবার মনোভাবই বুঝতে পারছি আমি। তাই সরকারের দায়িত্ব সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।’’

আটশো কিলোমিটার দূরে স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় তখন অন্য রকম মেজাজ। মোমবাতি হাতে সেখানে ‘অল্ড ল্যাঙ সাইন’-এর (‘পুরানো সেই দিনের কথা’) সুর। ‘‘উই লাভ ইইউ,’’ ‘‘ইন্ডিপেনডেন্স ফর স্কটল্যান্ড’’— স্লোগান শোনা গিয়েছে সেখানে। রাত ১১টায় স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন টুইট করেন, ‘‘স্বাধীন দেশ হিসেবে স্কটল্যান্ড ইউরোপের কেন্দ্রে ফিরে যাবে।’’ ইইউ-এ থাকতে সর্বসম্মত ভাবে ভোট দিয়েছিল স্কটল্যান্ড। নিকোলার কাছে ব্রেক্সিট পরিস্থিতিগত কিছু পরিবর্তন ছাড়া কিছুই নয়। যদিও স্কটিশ স্বাধীনতার জন্য বরিস এখনও স্টার্জনকে গণভোট করতে দেননি। স্টার্জন অবশ্য একরোখা, গণভোট তিনি করেই ছাড়বেন। ফলে এ-ও বরিসের এক চিন্তা, ব্রেক্সিট হয়ে গেল ঠিকই। দরকষাকষিতে স্কটল্যান্ড বুঝি হারাতে হবে তাঁকে!

নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড মূলত ইইউ-এ থাকার পক্ষেই ছিল। তা বাদে ব্রেক্সিটপন্থীরা সেখানকার অ্যাসেমব্লিতে রাতটা উদ্‌যাপন করলেও পথে নেমে ইইউ-এর পতাকা হাতে প্রতিবাদে শামিল হন অনেকে। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এবং রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের মধ্যেকার সীমান্ত এ বার ব্রিটেন আর ইইউ-এর সীমান্ত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল।

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ইইউ-এর নাগরিকদের সঙ্গে দিনটা কাটিয়ে আশ্বাস দিলেন। অনেকেরই আশঙ্কা, এখনই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে তাঁদের। যদিও সরকার জানিয়েছে, তেমনটা ঘটছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন