‘মুসলিমদের কেন নাগরিকত্ব দেব?’, রাজ্যসভায় শাহের রাখঢাক নেই

বিরোধীদের মতে, এই বিল হল সরকারের আগ্রাসী হিন্দুত্ব নীতির পরিচায়ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১১
Share:

রাজ্যসভায় অমিত শাহ।

নাগরিকত্ব বিল প্রসঙ্গে লোকসভায় যা ঊহ্য রেখেছিলেন, রাজ্যসভায় আজ তা স্পষ্ট করে দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর কথায়, গোটা পৃথিবী থেকে যদি মুসলমানেরা এসে এ দেশের নাগরিকত্ব চান, তা হলে তা দেওয়া সম্ভব নয়। এ ভাবে চলতে পারে না।

Advertisement

বিরোধীদের মতে, এই বিল হল সরকারের আগ্রাসী হিন্দুত্ব নীতির পরিচায়ক। যদিও বিজেপির পাল্টা যুক্তি, দলের ইস্তাহারেই বিলটি আনার কথা ছিল। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়েছে। শাহের আশ্বাস, ‘‘কোনও ভাবেই মুসলিম মুক্ত হবে না ভারত।’’

বিরোধী শিবিরের তীব্র প্রতিবাদ, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই সত্ত্বেও আজ রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব স‌ংশোধনী বিল (সিএবি)। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে। এর ফলে আরও মসৃণ হবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ। ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বর বা তার আগে থেকে তাঁরা ভারতে শরণার্থী হিসেবে বাস করলে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। অবৈধ ভাবে বসবাস করার জন্য আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত হবে না বলে ভরসা দিয়েছেন শাহ। এ দিন বিল পাশ হতেই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘সমবেদনা ও সৌভ্রাতৃত্বের যে-সংস্কৃতি আমাদের রয়েছে, এই বিলটি তার মাইলফলক।’’

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিন জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি শাহ। অসমে হওয়া এনআরসির ব্যর্থতা ঢাকতে ও বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে বার্তা দিতে তড়িঘড়ি সিএবি আনার সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার। ওই বিলে কেন কেবল অ-মুসলিমদের (হিন্দু, শিখ, পার্সি, খ্রিস্টান, জৈন ও বৌদ্ধ) কেন সুবিধে দেওয়া হল, তা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, মুসলিমদের সঙ্গে বিভাজনের রাজনীতি করার উদ্দেশ্যেই বিলটি আনা হয়েছে।

লোকসভায় এই অভিযোগের স্পষ্ট জবাব না দিলেও, আজ শাহ পাল্টা প্রশ্নে বলেন, গোটা দুনিয়া থেকেই যদি মুসলিমরা এসে এ দেশে নাগরিকত্ব চান, তাঁদের সবাইকে কি নাগরিকত্ব দিয়ে দেব? কী করে দেব। দেশ কী ভাবে চলবে, এ ভাবে চলতে পারে না।’’ এর পরেই তাঁর যুক্তি, ‘‘প্রতিবেশী তিন দেশের রাষ্ট্রধর্ম হল ইসলাম। সেই কারণে শরণার্থী হিসেবে আসা তিন দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। না হলে উৎপীড়নের শিকার ওই মানুষেরা কোথায় যাবেন।’’

রাজ্যসভায় বিল পাশ

ভোট দিলেন ২২৪*

পক্ষে ১২৫

বিপক্ষে ৯৯

শিবসেনার ৩ সাংসদ আগেই ওয়াকআউট করেন

*রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের দফতরের দেওয়া হিসেব। ভোটের পরে অবশ্য চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, পক্ষে ভোট পড়েছে ১২৫টি, বিপক্ষে ১০৫।

জেডিইউ, অকালি, অগপের মতো শরিকেরা শেষ পর্যন্ত সরকারের পাশে দাঁড়ালেও বিল প্রয়োগের প্রশ্নে সতর্ক ভাবে এগোনোর পরামর্শ দিয়েছে। অগপ সাংসদ বীরেন্দ্রপ্রসাদ বৈশ্যের মন্তব্য, ‘‘অসমের পক্ষে আর অতিরিক্ত লোকের ভার নেওয়া সম্ভব নয়।’’

বিলটি আসায় মুসলিম সমাজ আতঙ্কিত বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বহু বিরোধী সাংসদ। কংগ্রেসের কপিল সিব্বলের অভিযোগ, ‘‘এনআরসি থেকে নাগরিকত্ব বিল কিংবা ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ— কী কারণে ওই বিলগুলি সরকার আনছে তা সকলেই বুঝতে পারছেন। সরকারের পদক্ষেপ দেখে মুসলিম সমাজ ভয়ে রয়েছে।’’

শাহ পাল্টা বলেন, ‘‘অতীতে কংগ্রেস যখন শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিয়েছে, তখন তাদের ধর্মনিরপেক্ষ বলা হয়। অন্যরা পদক্ষেপ করলেই প্রশ্ন ওঠে। সংখ্যালঘুদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। বিরোধী শিবির পরিকল্পিত ভাবে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ওই বিল কারুর কাছ থেকে কিছু কেড়ে নেবে না। বরং নাগরিকত্ব দেবে।’’

সিব্বল প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কোনও অ-মুসলিম যে ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, তা কী ভাবে প্রমাণ হবে? কারণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী বলেছিলেন যে কোনও অনুপ্রবেশকারী, তিনি যে ধর্মেরই হন, আসলে তিনি অবৈধ।’’ ধর্মের পরিবর্তে কপিল ভাষা, রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে যাদের প্রতিবেশী দেশ থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য সওয়াল করেন। জবাবে শাহ বলেন, ‘‘মানবাধিকার সংগঠন থেকে খবরের কাগজে প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের নান কাহিনি রয়েছে। অসম বা পশ্চিমবঙ্গে যান জানতে পারবেন। আমাদের চোখ-কান খোলা রয়েছে। ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করতে গিয়ে তা
বন্ধ করে ফেলেনি।’’ আডবাণীর মন্তব্য প্রসঙ্গে অমিতের ব্যাখ্যা, ‘‘শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।’’

বিতর্কের একেবারে শেষে পঞ্জাবের কংগ্রেস সাংসদ প্রতাপ সিংহ বাজওয়া জানান, তাঁর রাজ্যে পাকিস্তানের বহু আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন। ধর্মীয় বৈষম্যের কারণে পালিয়ে আসা ওই মুসলিম নাগরিকদের কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। জবাবে শাহ বলেন, ‘‘বিভিন্ন দেশের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ভারত নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে। ওই শরণার্থীরা যদি ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন মেনে আবেদন করেন, তবে খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন