Shaheen Bagh

শাহিন-ভিডিয়ো এ বার মেরুকরণ অস্ত্র বিজেপির

যে ভিডিয়োকে হাতিয়ার করে এ দিন আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি, তাতে দেখা যাচ্ছে মঞ্চ থেকে ‘ভারত ভাগের’ হুমকি দিচ্ছেন সারজিল ইমাম নামে এক ব্যক্তি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:০৩
Share:

ছবি: পিটিআই।

ভোটের দরজায় দাঁড়ানো দিল্লিতে ক্রমশ তরজার কেন্দ্রে উঠে আসছে শাহিন বাগ। শনিবার যার পারদ চড়ল একটি ভিডিয়োকে ঘিরে। বিজেপির অভিযোগ, এই ভিডিয়োতেই বোঝা গিয়েছে শাহিন বাগের চেহারা। সামনে মহিলা এবং শিশু আর হাতে জাতীয় পতাকা থাকলেও আসলে তা দেশবিরোধী স্লোগানের আখড়া। আম আদমি পার্টি-সহ বিরোধীদের পাল্টা অভিযোগ, হাওয়া সুবিধার নয় বুঝে এখন মেরুকরণের মরিয়া চেষ্টায় শাহিন বাগকে নিশানা করছে বিজেপি।

Advertisement

যে ভিডিয়োকে হাতিয়ার করে এ দিন আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি, তাতে দেখা যাচ্ছে মঞ্চ থেকে ‘ভারত ভাগের’ হুমকি দিচ্ছেন সারজিল ইমাম নামে এক ব্যক্তি। এই ভিডিয়ো সামনে এনে বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের প্রশ্ন, ‘‘এই বক্তৃতা যদি দেশদ্রোহ না-হয়, তবে কী?’’ ভোট প্রচারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও বলেছেন, ‘‘আজ একটা ভিডিয়ো প্রচার হয়েছে। অথচ একের পর এক নেতা বলছেন, তাঁরা শাহিন বাগের পক্ষে! ভোটের লোভে তাঁরা এই কথা বলছেন। কিন্তু আমরা কি পুরো দিল্লিকে শাহিন বাগ করতে চাই?’’ এ প্রসঙ্গে বিরোধীদের এক বন্ধনীতে এনে তাঁর কটাক্ষ, কংগ্রেস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এসপি, বিএসপি, কেজরীবালরা দেশকে বিভ্রান্ত করছেন।

আন্দোলনকারীদের পাল্টা প্রশ্ন, এই ভিডিয়ো যে শাহিন বাগেরই সে বিষয়ে কি কেন্দ্র নিশ্চিত? হলে কবেকার? শুরুতেই সেই তারিখ বলা হল না কেন? আর শাহিন বাগ-সহ দিল্লির যে কোনও মঞ্চে এমন দেশবিরোধী কথা বলা হয়ে থাকলে, কেন বক্তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করল না দিল্লি পুলিশ? দিল্লি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাতে। নাকি এ নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলাই মূল লক্ষ্য? রাতে এক বিবৃতিতে শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়েছে, এই আন্দোলন শাহিন বাগের মহিলাদের। কোনও একজন ব্যক্তি এর উদ্যোক্তা নন। এক আন্দোলনকারীর কথায়, ‘‘কোনও এক জনের বক্তব্যকে বিচ্ছিন্ন ভাবে তুলে ধরে আন্দোলনের মূল ভাবকে নষ্ট করা যাবে না।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: শাহিন বাগ প্রতিবাদের অন্যতম মুখ সারজিলের নামে মামলা

শনিবার দিনভর টিভির পর্দায় বিজেপি নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, এই শাহিন বাগেই এত দিন বক্তব্য রাখতে যাচ্ছিলেন ভীম আর্মির চন্দ্রশেখর আজাদ, কংগ্রেসের মণিশঙ্কর আইয়ার, দিগ্বিজয় সিংহ, শশী তারুররা? এই শাহিন বাগেরই পাশে দাঁড়ানোর কথা কি সম্প্রতি বলেছেন আপ নেতা মণীশ সিসৌদিয়া? পাল্টা আপ-এর দাবি, কেজরীবাল সরকারের সুশাসনে খুঁত না-পেয়েই মরিয়া হয়ে মেরুকরণের অস্ত্র হিসেবে শাহিন বাগের ওই ভিডিয়োকে আঁকড়ে ধরছে বিজেপি।

শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ বলছেন, এটা ঠিক যে, এই আন্দোলন শুরুর অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন সারজিল। শুরুর দিকে সক্রিয় থাকলেও অন্যদের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় অল্প দিনের মধ্যেই তিনি এই আন্দোলন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। বরাবর খামখেয়ালি হিসেবে পরিচিত আইআইটি-মুম্বইয়ের এই প্রাক্তনী জেএনইউয়ে পড়তে এসেছিলেন আধুনিক ইতিহাস নিয়ে। প্রথমে যুক্ত ছিলেন ছাত্র সংগঠন এআইএসএ-র সঙ্গে। কিন্তু সেখান থেকেও বেরিয়ে যান। এর আগেও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের প্রতিবাদ সভায় দেশবিরোধী কথা বলায় অভিযুক্ত হন তিনি।

পুরো বিষয়টিকে ঘিরে যে ভাবে ফের ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’ এবং দেশবিরোধী স্লোগানের সঙ্গে জেএনইউয়ের নাম জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তার বিরোধিতা করছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। শনিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে জেএনইউয়ের সেন্টার ফর হিস্টোরিকাল স্টাডিজের পড়ুয়া এবং প্রাক্তনীরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, যে ভাবে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চ শাহিন বাগকে দেশবিরোধী বক্তব্যের মঞ্চ হিসেবে সারজিল ইমাম ব্যবহার করেছেন, তার তীব্র নিন্দা করছেন তাঁরা। নিন্দা করছেন এই সূত্রে জেএনইউকে ফের দেশবিরোধী স্লোগানের আখড়া হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টারও। উল্লেখ্য, জেএনইউয়ে এই বিভাগেরই ছাত্র ছিলেন সারজিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন