Coronavirus in India

বেতন ৩০% ছাঁটাই মন্ত্রী-সাংসদদের, এমপিল্যাড বন্ধে ক্ষুব্ধ বিরোধীরা

সরকারি সূত্রের খবর, এই দু’টি বিষয়ে ঐকমত্য তৈরির জন্যই প্রধানমন্ত্রী রবিবার সব দলের নেতানেত্রীদের ফোন করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০২:৫৬
Share:

প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদদের বেতন এক বছরের জন্য ৩০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।—ছবি পিটিআই।

করোনা সঙ্কটের ধাক্কায় প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদদের বেতন এক বছরের জন্য ৩০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালেরাও ‘স্বেচ্ছায়’ নিজেদের বেতন ৩০ শতাংশ কম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Advertisement

আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সাংসদদের এলাকা উন্নয়ন বা এমপিল্যাড তহবিলে খরচও আগামী দু’বছর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক এক জন সাংসদ ফি বছর নিজের এলাকার উন্নয়নে খরচের জন্য ৫ কোটি টাকা পান। লোকসভায় ৫৪৩টি ও রাজ্যসভায় ২৪৩টি আসন রয়েছে। দু’বছরে মাথা পিছু ১০ কোটি টাকা ব্যয়সঙ্কোচ হলে কেন্দ্রের রাজকোষে প্রায় ৭,৯০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

সরকারি সূত্রের খবর, এই দু’টি বিষয়ে ঐকমত্য তৈরির জন্যই প্রধানমন্ত্রী রবিবার সব দলের নেতানেত্রীদের ফোন করেন। বেতন কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, এমপিল্যাড-এর টাকা বন্ধ করা নিয়ে বিরোধীরা আপত্তি তুলেছেন। কংগ্রেস, বামেদের অভিযোগ, কোনও সাংসদ চাইলে তাঁর এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা পুরোটাই নিজের কেন্দ্রে করোনা-মোকাবিলায় খরচ করতে পারতেন। তা সে মাস্ক, ডাক্তারদের সুরক্ষার সামগ্রী কেনাই হোক বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নয়ন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ হবে, সবটাই ঠিক করবে মোদী সরকার।

Advertisement

মন্ত্রী-সাংসদদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্তের পরে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি করে সরকারি কর্মীদের বেতনও কমানো হবে কি! লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকারের আজকের সিদ্ধান্ত থেকে প্রমাণিত যে দেশ আর্থিক জরুরি অবস্থার দিকে চলেছে।’’ কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের যুক্তি, সব দলের সাংসদেরাই করোনা-মোকাবিলায় যোগ দিতে চেয়েছেন। সবাই বলেছেন, ‘চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম’। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন কমানো নিয়ে তাঁর জবাব, ‘‘সরকারি কর্মীরা তো এক দিনের বেতন পিএম-কেয়ারস তহবিলে দিয়েছেন।’’

রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালেরা যথাক্রমে মাসে ৫ লক্ষ, ৪ লক্ষ এবং ৩.৫ লক্ষ টাকা বেতন পান। প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা অন্য সাংসদদের মতোই ১ লক্ষ টাকা বেতন পান। শুধু তাঁদের ভাতার পরিমাণ বেশি। সেই ভাতায় কাটছাঁট হচ্ছে না। চলতি অর্থ বছরে মন্ত্রী, সাংসদরা ১ লক্ষ টাকার বদলে ৭০ হাজার টাকা বেতন পাবেন। এ জন্য সাংসদের বেতন আইনে সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হচ্ছে। কিন্তু তা থেকে কত সাশ্রয় হবে, তা সরকার বলতে চায়নি। সূত্রের মতে, ৩০ কোটি টাকার মতো সাশ্রয় হবে। জাভড়েকরের যুক্তি, এখানে টাকার অঙ্ক নয়, বার্তাই আসল। রাজ্যগুলিও বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল বা বিধায়কদের বেতনের ক্ষেত্রে একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

বিরোধীদের অভিযোগ, করোনা-সঙ্কটের নামে বেতন কমানো বা এমপিল্যাড বন্ধ হলেও সাশ্রয়ের টাকা যে করোনা-মোকাবিলাতেই খরচ হবে, খাতায়-কলমে তার কোনও বাধ্যবাধকতা থাকছে না। কারণ এই বেঁচে যাওয়া টাকা পুরোটাই রাজকোষ বা কনসোলিডেটেড ফান্ডে থাকছে। সে টাকা সরকারের প্রচারের পিছনেও খরচ করা যায়। অধীর বলেন, ‘‘দরকার হলে সাংসদদের বেতন আরও কমিয়ে দিন। কিন্তু এমপিল্যাড-এর টাকা ভোটারদের চাহিদা অনুযায়ী সাংসদরা খরচ করেন। সেটা চালু রাখা হোক।’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘রাজকোষে টাকা না থাকলে দিল্লিতে নতুন সংসদ ও সচিবালয় তৈরির প্রকল্প বাতিল হচ্ছে না কেন? মানুষের জীবনের থেকে কি সেটার গুরুত্ব বেশি? বিজেপি নির্বাচনী বন্ড ছেড়ে বিপুল টাকা আয় করেছে। তা সরকারের কোষাগারে জমা করছে না কেন? এত দিন সরকার মূর্তি তৈরিতে, ব্যক্তি প্রচারে খরচ করে, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় গুরুত্ব না দিয়ে এখন এই সব বলছে।’’ তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমপিল্যাড বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত একতরফা এবং অযৌক্তিক।”

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন