করোনা ‘ঠেকাতে’ আলো-বাজি-পটকা-হুল্লোড়ে মেতে উঠল দেশ

করোনার চোখরাঙানির সামনে স্তব্ধ দেশ যে ভাবে হঠাৎ আলো-বাজি-পটকায় মেতে উঠল, তাতে সত্যিই ধাঁধা লেগে যাওয়ার জোগাড়। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৩২
Share:

ছবি: পিটিআই।

‘হ্যাপি দিওয়ালি!’

Advertisement

করোনার চোখরাঙানির সামনে স্তব্ধ দেশ যে ভাবে হঠাৎ আলো-বাজি-পটকায় মেতে উঠল, তাতে সত্যিই ধাঁধা লেগে যাওয়ার জোগাড়।

গত ২২ মার্চ জনতা-কার্ফুর দিনে বাড়ির বারান্দা থেকে হাততালি দিতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অনেক জায়গায় কাঁসর-ঘণ্টা-থালা নিয়ে মিছিল পর্যন্ত বার করে ফেলেছিল অতি উৎসাহী জনতা। আর আজ রাত ন’টায় ন’মিনিটের জন্য ঘরের আলো নিভিয়ে প্রদীপ, মোমবাতি জ্বালানোর ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে তাঁরা ফাটালেন দেদার পটকা, আতসবাজি।

Advertisement

যে দেশ করোনার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে গত দু’সপ্তাহ বাড়িবন্দি, তার প্রতি ঘরে একঘেয়েমি বাসা বাঁধা স্বাভাবিক। তা কাটাতে সামান্য সুযোগে হুল্লোড়ও হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিদিন করোনা যে বাসা বাঁধছে কয়েকশো মানুষের শরীরে, কত দিনে দেশ স্বাভাবিক হবে বা অর্থনীতির হাল কী হবে, তা যে অজানা— রাত ন’টায় অন্তত তার আঁচ মিলল না। এ দিন ঘড়ির কাঁটা ন’টা ছোঁয়ার মিনিট পাঁচেক আগে থেকেই ছাদে-ছাদে, প্রতি ব্যালকনিতে মানুষ। ভেসে আসছে সিটির আওয়াজ! পারস্পরিক দূরত্ব? প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিতে গিয়ে তত ক্ষণে সব জলে। নয়ডার পার্কে প্রদীপে স্বস্তিক চিহ্ন সাজিয়েছেন অনেকে। চেন্নাইয়ে প্রদীপ সাজিয়ে ভারতের মানচিত্র। নিজের বাড়িতে দীপ জ্বালানোর অনুষ্ঠানে বেশ কয়েক জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে! সরকারের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাতে স্পষ্ট যে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এককাট্টা তাঁরা।

আরও পড়ুন: নয়ডায় বাড়বে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ

দেশ কতটা এককাট্টা, তার হিসেব শুধু বাজি-পটকায় বোঝা শক্ত। তবে অনেকের মতে, নিখুঁত ‘ইভেন্ট ম্যানেজার’ হিসেবে পরিচিত প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি সম্ভবত এ দিন পোক্ত হল আরও। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন যে এই ডাকে সাড়া দেবেন, তা প্রত্যাশিত। সাড়া দিল বলিউড, খেলার মাঠের তারকাদের বড় অংশও। আর ঘরের আলো নিভিয়ে থালায় প্রদীপ হাতে বাড়ির বাইরে বসে রইলেন হীরা বেন— নরেন্দ্র মোদীর মা।

তারই মধ্যে তাল কাটল কোথাও-কোথাও। কিছু দিন আগে দিল্লি থেকে যে সমস্ত ঠিকা কর্মী কাজ খুইয়ে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন বিভিন্ন অস্থায়ী আস্তানায়। গাজিপুরে তেমনই এক আস্তানায় আটকে থাকা ওই কর্মীরা জানান, আলো জ্বালানোর মন তাঁদের এখন নেই। বিভিন্ন রাজ্যে ২৭,৬৬১টি ত্রাণশিবিরে ১২.৫ লক্ষ আটকে থাকা কর্মীর কত জনের তা আছে কে জানে? আর করোনায় প্রিয়জন হারানো পরিবার, পিপিই না-পেয়েও চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া ডাক্তারদের?

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন