National News

ভিক্ষাজীবীদের পাশে দাঁড়াতে চাকরিই ছেড়ে দিলেন এই ইঞ্জিনিয়র

সংসারে একটা পর্দার আড়ালও ওঁদের কাছে বিলাসিতা। ভাবতেও পারেননি এই চিটে ধরা সংসারেই একদিন নজর পড়বে কোনও দেবদূতের। হ্যাঁ, গণপত কৃষ্ণ যাদব আজ তাঁদের কাছে দেবদূতের কাছাকাছিই কিছু একটা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ১৬:১৯
Share:

রাস্তার ভিক্ষুকদের জন্য কিছু করবেন, এটাই স্বপ্ন ছিল গণপতের। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে

ফুটপাতের উপরেই খোলা আকাশের সংসার। ওখানেই হাঁড়ি-পাতিল, ধূলো ধূসরিত জামা কাপড়, ওখানেই রান্না, নোংরা খুঁটে খাচ্ছে কোলের বাচ্চাগুলো। কিন্তু দেখার মতো সময় নেই কারও। পেটের হাউ হাউ খিদে মেটাতে দিন যায় ওঁদের। সংসারে একটা পর্দার আড়ালও ওঁদের কাছে বিলাসিতা। ভাবতেও পারেননি এই চিটে ধরা সংসারেই একদিন নজর পড়বে কোনও দেবদূতের। হ্যাঁ, গণপত কৃষ্ণ যাদব আজ তাঁদের কাছে দেবদূতের কাছাকাছিই কিছু একটা।

Advertisement

নামী ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে মোটা মাইনের চাকরি করতেন গণপত। কিন্তু ফুটপাতের ওই মানুষগুলো নিশ্চিন্তে ঘুমতে দেয়নি তাঁকে। কিছু একা করতেই হবে, ইচ্ছাটা তাড়া করে বেরাত গণপতকে। অবশেষে ছেড়েই দিলেন লোভনীয় চাকরির নিরাপত্তা। ওঁদের জন্যই শুরু হল অর্গানিক ফার্ম। ভিক্ষা করে খাওয়া নয়, নিজের পরিশ্রমের অর্থেই ওঁদের মুখে ভাত তুলে দিয়ে আজ স্বপ্নপূরণের হাসি গণপতের মুখে।

আরও পড়ুন: লক্ষ্য আইএএস, ক্যানসারকে হারিয়ে সোনার পদক এই দৃষ্টিহীন মেয়ের

Advertisement

রাজস্থানের সিকাত জেলা থেকে শুরু হয়েছিল গণপতের গল্প। এখানেই মুন্দ্রু চোলাই গ্রামের বাসিন্দা সে। পারিবারিক চাষবাষের কারবার ছিল তাঁদের। কিন্তু গণপত যখন ছোট তখনই গ্রামের বেশিরভাগ জমিতে জলের স্তর নেমে যায়। বন্ধ্যা হয়ে যায় ফসুলে জমি। গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষরাই রোজগারের আশায় গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি দেন। সমৃদ্ধ পরিবারগুলোকে চোখের সামনে নিঃস্ব হয়ে যেতেও দেখেছেন গণপত। সেই সময় ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতেও বাধ্য হয়েছিলেন অনেকে। সেই দৃশ্য বড় হয়েও ভুলতে পারেননি গণপত।

ত্রিবেণী কৃষ্ণ অর্গানিক প্রাইভেট লিমিটেড-এ কাজের ফাঁকে গণপত। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে

পড়াশোনায় বরারবরই ভাল ছিলেন মেধাবী গণপত। দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় জেলা ও রাজ্যের মেধা তালিকায় নাম তুলেছিলেন তিনি। এরপরেই জয়পুরের মালব্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি(এমএনআইটি) থেকে ধাতুবিদ্যা নিয়ে ভর্তি হন গণপত। ২০১৩-তে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কলেজ ক্যাম্পাসিংয়ে নামী কোম্পানিতে চাকরি পান গণপত।

আরও পড়ুন: মেয়ে হয়েই চাকরি করব, রূপান্তরকামীর জেদের কাছে হার বহুজাতিকের

সেই সময় থেকেই গ্রামে গিয়ে জব কাউন্সিলিং করাতে শুরু করেন তিনি। আস্তে আস্তে ইচ্ছাটা পূর্ণতা পেতে শুরু করে। কিন্তু খেতে না পাওয়া শুখা মুখগুলোয় কী ভাবে তুলে দেওয়া যাবে সম্মানের রোজগার? পারিবারিক ব্যবসাকেই ঢেলে সাজানোর কথা মাথায় এল। অত পয়সা কোথায়? এরই মধ্যে ২০১৫-তে ছেড়ে দিয়েছেন প্রথম চাকরি। একদিকে খোঁজ চলছে অন্য চাকরির, অন্যদিকে মাথায় ঘুরছে ভুখা মুখগুলো। কিছু একটা করতেই হবে। চাকরির পরীক্ষার ইন্টারভিউতে বললেন, নিজের স্বপ্নের কথা। জানালেন ভিক্ষাজীবীদের চাকরি দিতে চান তিনি। আর এটাই তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

গ্রামীণ সভায় গণপত। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে

গণপতের এই ইচ্ছার কথা শুনে এগিয়ে এসেছিল সেই কোম্পানি। তাদেরই উদ্যোগে অবশেষে সূর্যের আলো দেখল গণপতের সাধের অর্গানিক ফার্ম— ত্রিবেণী কৃষ্ণ অর্গানিক প্রাইভেট লিমিটেড।

এরপরেই শুরু হল আসল লড়াইটা। জয়পুরের স্টেশন, মন্দির চত্বরে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষাজীবীদের বোঝাতে শুরু করেন তিনি। অনেকে আনন্দিত হয়ে গণপতের ফার্মে যোগ দেন, অনেকেই পুরনো ব্যবসার মোহ কাটাতে অস্বীকার করেন প্রথমিকভাবে। কিন্তু গণপতও নাছোড়বান্দা। যে ক’জনকে বোঝাতে সক্ষম হলেন তাঁদের নিয়েই শুরু করলেন তাঁর ফার্ম। তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে হাতে ধরে কাজ শেখানো সবটাই একা হতে করতে শুরু করলেন গণপত।

আরও পড়ুন: বোর্ডের পরীক্ষায় দশে ১০ পেয়ে বাজিমাত মেয়ের, গর্বিত গাড়িচালক বাবা

একজন, দু’জন করে এখন শতাধিক সদস্যে ভরা ‘সংসার’ গণপতের। শুধু তাই নয়, যাঁরা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে খেটে খেতে চান তাঁরা যাতে ত্রিবেণী কৃষ্ণ অর্গানিক প্রাইভেট লিমিটেডে যোগ দিতে পারেন সে ব্যবস্থাও করে রেখেছেন গণপত। বিজ্ঞাপনে নিজের মোবাইল নম্বর (৯৭৮৫৩৩৬৭৪৯) এবং ই-মেল (ganpat.bharat@gmail.com)- ও ব্যবহার করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন