অস্বীকার করছে দিল্লি
India-China

পিছোতে গিয়ে নিজের জমিই ছাড়ছে সেনা?

দু’দেশের বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের বৈঠকের পরে সেনার পিছু হঠা এবং বাফার জ়োন তৈরি হওয়ার পর থেকেই এই প্রশ্নগুলি উঠে আসছে দেশের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক শিবিরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০৪:১৮
Share:

উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে সেনা সরানোর ছবি। ছবি: এপি

গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া বাফার জ়োন গড়ে কি নিজের ভূখণ্ড থেকেই পিছু হটছে ভারতীয় সেনা? প্রশ্ন উঠলে চুপ নরেন্দ্র মোদী সরকার। ওই বাফার জ়োনের জন্য নিজেদেরই এলাকায় ভারতীয় সেনার টহল দেওয়ার অধিকার খর্ব হওয়া নিয়ে ওঠা প্রশ্নে নীরব বিদেশ মন্ত্রক। তবে আজ সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারত এবং চিনের সীমান্ত বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধিদের (অজিত ডোভাল এবং ওয়াং ই) বৈঠকে ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে গালওয়ান উপত্যকা থেকে চিনা সেনাদের পিছু হটা এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা সমাবেশ কমানো— শান্তি ফেরানোর জন্য এই দুই পদক্ষেপ অত্যাবশ্যক শর্ত।

Advertisement

আজ কংগ্রেসের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, মোদী সরকার কি নিজেদের ভূখণ্ডের মধ্যেই বাফার জ়োন তৈরি করল? আর সেই কারণে কি আমাদের সেনাকে নিজেদের ভূখণ্ড থেকেই ২.৪ কিলোমিটার পিছিয়ে যেতে হল? কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার কথায় ‘‘গালওয়ান উপত্যকার উপর নিজেদের দাবি কি লঘু করা হচ্ছে? ভারতীয় ভূখণ্ডের পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪-র দাবি কি ভারত ছেড়ে দিল?’’

শুধু কংগ্রেস নয়, দু’দেশের বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের বৈঠকের পরে সেনার পিছু হঠা এবং বাফার জ়োন তৈরি হওয়ার পর থেকেই এই প্রশ্নগুলি উঠে আসছে দেশের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক শিবিরে। ভারতের বিবৃতিতে থাকলেও চিনা বিবৃতিতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে লাল ফৌজের বিপুল সমাবেশ কমানোর কোনও উল্লেখই না থাকায় বিতর্ক আরও গভীর হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, চিন তাদের প্রিয় কৌশল, অর্থাৎ দু’পা এগিয়ে এক পা পিছোনোর নীতি গালওয়ানেও নিয়েছে কিনা। নিজের ভূখণ্ডেই নিজেদের টহলের অধিকার হারিয়ে কেন বাফার জ়োন গড়ে ভারতীয় সেনাকে পিছু হঠতে হবে, উঠছে সেই প্রশ্নও।

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনার প্রতিষেধক নিয়ে ‘আশার কথা’ প্রধানমন্ত্রীর মুখে

বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব আজ বলেছেন, “আলোচনার সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্পষ্ট ভাবে গালওয়ান উপত্যকা-সহ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর কথায়, “দু’পক্ষই আলোচনায় একমত হয়েছেন যে, সীমান্তে শান্তি এবং সুস্থিতি বজায় রাখতে যত দ্রুত সম্ভব প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা কমানো প্রয়োজন।’’ সেনা পিছোনো নিয়ে কিছু ভুল তথ্য সংবাদমাধ্যমে পরিবেশন করা হচ্ছে দাবি করে অনুরাগ বলেছেন, “ভারত-চিন সীমান্ত নিয়ে সরকারের অবস্থান খুব স্পষ্ট করে বারবার জানিয়েছি আমরা। বলা হয়েছে যে, গালওয়ান উপত্যকা নিয়ে চিন সম্প্রতি যে দাবি করেছে, তা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি এবং টেকসই নয়। আমাদের ভূখণ্ডকেও তারা নিজেদের বলে দাবি করেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাকে অবশ্যই মানতে হবে, কেউ একতরফা ভাবে তার পরিবর্তন করতে পারে না।’’

আরও পড়ুন: অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর দাবিতে প্রশ্ন

এই কূটনৈতিক চাপান-উতোরের মধ্যে আজ গোগরা (পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৭) থেকে পিছিয়ে গিয়েছে দু’দেশের সেনা। সেনা সূত্রের মতে, তিনটি জায়গা থেকে সেনা সরে যাওয়ায় আপাতত সেনা পশ্চাৎপসারণের প্রথম পর্ব শেষ হল। দু’তরফে সেনা সরে গিয়ে মাঝে তিন কিলোমিটারের বাফার জ়োন তৈরি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে দু’দেশের সেনা নিয়ে গঠিত জয়েন্ট ভেরিফিকেশন টিম বা যৌথ নজরদারি দল। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সেই খতিয়ে দেখার কাজ সেরে ফেলা হবে। যার উপর ভিত্তি করে পরবর্তী সেনা কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকটি হবে। শেষ বৈঠকটি হয়েছিল ৩০ জুন। সূত্রের মতে, বাফার জ়োনে কোন প্রোটোকল মেনে দু’দেশের সেনা নজরদারি চালাবে, তা ঠিক হবে ওই সেনা কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে।

সেনা সূত্রের মতে, প্রথম ধাপ উতরে গেলেও ভবিষ্যতে স্নায়ুর যুদ্ধ শুরু হবে ফিঙ্গার চার থেকে ফিঙ্গার আটের দখল নিয়ে। প্যাংগং লেকের উত্তরে থাকা ফিঙ্গার চার থেকে আট পর্যন্ত এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে থাকে দু’দেশই। মে মাসের আগে পর্যন্ত এত দিন সেখানে নজরদারি চালাত দু’দেশের সেনাই। কিন্তু মে মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ফিঙ্গার চার থেকে আটের দখল নিয়ে নেয় চিন। পাহাড়ের উঁচু অংশেও নজরদারি পোস্ট বানিয়ে বসে রয়েছে চিন সেনা। পাকাপোক্ত কাঠামো গড়ার পরে তা ছেড়ে কতটা চিন ফিরে যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে ভারতের কাছে আশার বিষয় হল, ইতিমধ্যেই ফিঙ্গার ফোরের দাবি ছেড়ে দিয়েছে চিন। সূত্রের মতে, সেনা ও সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে তারা ফিঙ্গার পাঁচ পর্যন্ত ফিরে গিয়েছে। বাকি ফিঙ্গারগুলি শেষ পর্যন্ত দখলমুক্ত হল কি না, তার উপরে নির্ভর করছে নয়াদিল্লির প্রকৃত কূটনৈতিক সাফল্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন