জেএনইউয়ের ছাত্র-বিক্ষোভে লাঠি পুলিশের, নিরস্ত্র পড়ুয়াদের উপরে হামলার অভিযোগ

ক’দিন আগে আইনজীবীদের হাতে পুলিশের মার খাওয়ার স্মৃতি এখনও টাটকা। সেই দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধেই এ বার জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্র পড়ুয়াদের উপরে হামলার অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১০
Share:

রণক্ষেত্র: জেএনইউয়ে প্রস্তাবিত ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে নেমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত এক প্রাক্তন ছাত্র। ছবি: রয়টার্স।

সন্ধে তখন সাতটা। ছাত্র বিক্ষোভে অবরুদ্ধ দিল্লির অরবিন্দ মার্গের জোড়বাগ এলাকা। হঠাৎই রাস্তার দু’পাশের আলো নিভে গেল এক লহমায়। কিছু বোঝার আগেই ব্যারিকেড টপকে ভিড়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল পুলিশ।

Advertisement

ক’দিন আগে আইনজীবীদের হাতে পুলিশের মার খাওয়ার স্মৃতি এখনও টাটকা। সেই দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধেই এ বার জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্র পড়ুয়াদের উপরে হামলার অভিযোগ। ছাড় পাননি প্রতিবন্ধীরাও। জেএনইউ হস্টেলের বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে গত ক’দিন ধরেই আন্দোলন করে যাচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। ইতিমধ্যে আংশিক বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পড়ুয়ারা বর্ধিত ফি সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রশ্নে অনড়। আজ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্র সংগঠনগুলিও যোগ দেয় বিক্ষোভে।

আন্দোলন যাতে সরকারের চোখে পড়ে, তাই শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই সংসদ অভিযানের কর্মসূচি নিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। তাঁদের জোড়বাগের কাছে ব্যারিকেড করে আটকে দেয় পুলিশ। হাল্কা ধস্তাধস্তি চলে দিন ভর। এগোতে না পারায় জোড়বাগেই অবস্থান বিক্ষোভ করেন পড়ুয়ারা। গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তা দিনভর অবরুদ্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় বেলা সাড়ে এগারোটায় টুইট করে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের উচ্চশিক্ষা সচিব আর সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে স্বাভাবিক কাজের পরিস্থিতি ফিরে আসে, সেই জন্য একটি তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি পড়ুয়া ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ মন্ত্রককে দেবে।’’ সেই সঙ্গে মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দফায় দফায় ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়। পড়ুয়ারা তা মানেননি।

Advertisement

রাস্তায় শুয়ে পুলিশকে বাধা এক আন্দোলনকারীর। সোমবার দিল্লিতে। ছবি: রয়টার্স।

দুপুরে বিক্ষোভকারী ছাত্র সংগঠনের প্রধান ঐশী ঘোষ-সহ প্রায় একশো পড়ুয়াকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত ধর্না চলবে বলে পড়ুয়ারাও জানিয়ে দেন পুলিশকে। বিকেল পাঁচটা নাগাদ ফের ভিড় হটাতে লাঠি চালায় পুলিশ। আহত হন বহু পড়ুয়া। যার মধ্যে এক জন সন্দীপ লুইস। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই প্রাক্তনী পড়ুয়াদের সমর্থন জানাতে এসেছিলেন। পড়ুয়াদের অভিযোগ, সংঘর্ষে আহত হন আরও অনেকেই। এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সংগঠনের দিল্লি সভাপতি ফারোগ আহমেদ মারাত্মক জখম। আটক একাধিক নেতা।’’ বিক্ষোভকারীরা মেট্রো করে সংসদ চত্বরে চলে আসতে পারেন, এই আশঙ্কায় বিকেল থেকে সংসদ সংলগ্ন তিনটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাত আটটার পরে তা চালু হয়।

আরও পড়ুন: সরকার গড়া নিয়ে সংশয় তৈরি শরদের

রাতে ঐশী বলেন, ‘‘আমায় পুরুষ পুলিশ কর্মীরা টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলেন। বলা হয়, মন্ত্রকের আমলাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরিবর্তে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যান্টনমেন্ট থানায়। সেখানে কোনও চিকিৎসার সুবিধা ছিল না। পরে সময় পেরিয়ে গিয়েছে বলে আজ বৈঠক হবে না বলে জানান পুলিশ কর্মীরা।’’ ঐশীর অভিযোগ, একাধিক ছাত্রীকে হেনস্থা করেছে দিল্লি পুলিশ। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মন্ত্রকের আমলাদের সঙ্গে দেখা করেন ছাত্র সংগঠনের চার সদস্য। রাত ন’টার পরে আটক পড়ুয়াদের ছেড়ে দেওয়ার পরে ক্যাম্পাসে ফিরে যান তাঁরা। জেএনইউ-এর শিক্ষক সংগঠন এ দিনের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করবে কাল বিকেলে। সেই সঙ্গে সংগঠনের দাবি, মন্ত্রক যে কমিটি গঠল করল, তাতেই প্রমাণ হচ্ছে যে, উপাচার্য তাঁর কাজে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন