New Education Policy

সবার সঙ্গে কথা হয়েছে, মোদীর দাবি ঘিরে প্রশ্ন

বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির অভিযোগ, শিক্ষা সংবিধানের যৌথ তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রের শাসক দল একতরফা ভাবে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি রাজ্যগুলির উপরে চাপানোর চেষ্টা করছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২০ ০৪:৩৯
Share:

ছবি: পিটিআই।

সমস্ত পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, শলা-পরামর্শ, তর্ক-বিতর্কের সাগর মন্থনের মাধ্যমেই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির ‘অমৃত কলস’ উঠে এসেছে বলে শুক্রবার দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সুরে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আগেই কথা বলা হয়েছে প্রতিটি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে। যদিও পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, খসড়া শিক্ষানীতি নিয়ে মতামত চাওয়া হলেও নীতি চূড়ান্ত করার আগে আর কথা বলেনি কেন্দ্র।

Advertisement

নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণার দিন থেকেই সকলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে বলে দাবি করছে মোদী সরকার। যে দাবি পত্রপাঠ নস্যাৎ করে দিয়েছে কংগ্রেস-সিপিএম-তৃণমূলের মতো বিরোধী দলগুলি। বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির অভিযোগ, শিক্ষা সংবিধানের যৌথ তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রের শাসক দল একতরফা ভাবে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি রাজ্যগুলির উপরে চাপানোর চেষ্টা করছে। যার মূল লক্ষ্য, শিক্ষার বাণিজ্যকরণ, বেসরকারিকরণ এবং বিদেশিকরণের রাস্তা খোলার পাশাপাশি পড়ুয়াদের মগজে সঙ্ঘের ভাবধারা ঢুকিয়ে দেওয়া। গত কয়েক দিনে এ নিয়ে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। জোরালো হচ্ছে প্রতিবাদ।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই আজ শিক্ষা মন্ত্রক এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত আলোচনায় ভিডিয়ো-বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত ৩-৪ বছর ধরে সারা দেশে বিস্তর আলাপ-আলোচনা, বিভিন্ন বিষয়ে মাথা ঘামানো এবং এ বিষয়ে আসা কয়েক লক্ষ পরামর্শ খতিয়ে দেখে তবে এই নীতি তৈরি হয়েছে।” আর শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কের দাবি, নীতি তৈরির আগে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের সঙ্গে যে পরিমাণ মতের আদান-প্রদান হয়েছে, গোটা বিশ্বে আলাপ-আলোচনার এত বড় প্রক্রিয়া আর কখনও হয়েছে কি না সন্দেহ। তাঁর কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানী, সাংসদ, অসরকারি সংস্থা, গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করে তবে তৈরি হয়েছে এই নীতি। কথা বলা হয়েছে সমস্ত রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে।”

Advertisement

আরও পড়ুন: কোঝিকোড়ে নামার সময় পিছলে গিয়ে দু’টুকরো বিমান, হত অন্তত ১৭, আহত বহু​

আরও পড়ুন: এক দিনে ৫২ জন মারা গেলেও রাজ্যে কমল সংক্রমণের হার​

এ প্রসঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “খসড়া শিক্ষানীতি সম্পর্কে আমাদের মত জানিয়েছিলাম। কিন্তু তা চূড়ান্ত করার আগে কোনও আলোচনা হয়নি। এ তো বই-খাতা বিক্রি করার ব্যবস্থা নয়। এটা শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন। তা নিয়ে সংসদে বা বাইরে কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।” কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি খতিয়ে দেখার জন্য শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার। পার্থবাবু জানান, কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরে এ মাসেই রাজ্য তার নির্দিষ্ট মত জানাবে।

এ দিনের আলোচনায় কেন্দ্রীয় শিক্ষাসচিব অমিত খারে দাবি করেন, “এই নীতি নিয়ে আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক খসড়া ২২টি ভাষায় অনুবাদ করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যাতে তা পড়ে সকলে মত দিতে পারেন। কথা হয়েছে সাংসদদের সঙ্গে। আলোচনা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। সারা দেশ থেকে আসা দু’লক্ষ পরামর্শের প্রত্যেকটি খতিয়ে দেখা হয়েছে।”

কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই পরামর্শ-মতামতের কতটা নয়া নীতিতে প্রতিফলিত হয়েছে, তা কেন স্পষ্ট করছে না কেন্দ্র? অতিমারির আবহে কেন সংসদকে এড়িয়ে তড়িঘড়ি অনুমোদন দেওয়া হল নয়া শিক্ষানীতিকে? সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, কংগ্রেস নেতা শশী তারুরদের বক্তব্য, সকলের সঙ্গে কথা বলেই যদি নীতি তৈরি হয়ে থাকে, তা হলে সংসদে বিতর্কে সরকারের এত ভয় কিসের? ইউজিসি, এআইসিটিই ইত্যাদি তুলে দিয়ে সমগ্র শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য একটিই নিয়ন্ত্রক তৈরি করতে সংসদে বিল পাশ করাতেই হবে সরকারকে। ফলে ক’টা দিন অপেক্ষা করলে কী ক্ষতি হত!

কেন্দ্র বলছে, স্কুল শিক্ষার পাঠ্যক্রমের ধাঁচ, পরীক্ষার পদ্ধতি থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা-- প্রস্তাবিত সমস্ত বদলই করতে হবে রাজ্যগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে। এ জন্য বৈঠকে বসতে হবে দফায় দফায়। তা-ই যদি হয়, তা হলে নতুন নীতি চূড়ান্ত করার আগেই কথা সেরে ফেলাটা যুক্তিযুক্ত ছিল না কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন