মোষের মাংসের বিক্রি বাড়াতে পশু রক্ষায় মন

এই রোগ নির্মূল করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ‘ব্রজভূমি’ মথুরা থেকে জাতীয় পশু রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালু করলেন। ৩০ কোটি গরু-বলদ-মোষ, ২০ কোটি ছাগল-ভেড়া এবং ১ কোটি শুয়োরকে টিকা দেওয়া হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২১
Share:

আদর: পশু-স্বাস্থ্য মেলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার মথুরায়। ছবি: এএফপি

এ দেশের মোষের মাংসের বেশ কদর ছিল এশিয়া-ইউরোপের বাজারে। সুস্বাদু, দামেও সস্তা।

Advertisement

কিন্তু এশিয়ার সব থেকে বড় বাজার চিনেই এখন এ দেশ থেকে মোষের মাংস যাচ্ছে না। ইউরোপের বাজারও ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারণ, এ দেশে গবাদি পশুর মধ্যে ‘ফুট অ্যান্ড মাউথ’ রোগের প্রাদুর্ভাব।

এই রোগ নির্মূল করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ‘ব্রজভূমি’ মথুরা থেকে জাতীয় পশু রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালু করলেন। ৩০ কোটি গরু-বলদ-মোষ, ২০ কোটি ছাগল-ভেড়া এবং ১ কোটি শুয়োরকে টিকা দেওয়া হবে। খরচ হবে ১২,৬৫২ কোটি টাকা। টিকাকরণ হয়ে যাওয়া পশুদের জন্য আধার কার্ড চালু হবে। তৈরি হবে ‘হেল্‌থ কার্ড’। বছরে দু’বার টিকা দেওয়ার পরে পশুদের শরীরে ‘ট্যাগ’ লাগিয়ে দেওয়া হবে। লক্ষ্য, ২০২৪-এর মধ্যে দেশে ‘ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ়’ নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ২০৩০-এর মধ্যে তা নির্মূল করা।

Advertisement

বিজেপি সরকারের জমানায় গরু জবাইয়ের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে গো-রক্ষক বাহিনীও প্রবল সক্রিয়। কিন্তু মোষের মাংসের ব্যবসা বা রফতানিতে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, মায়ানমারে এ দেশ থেকে সেই মাংস রফতানি হচ্ছে। কিন্তু চিন ও ইউরোপের বাজারে মোষের মাংসের রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত পাঁচ বছরে রফতানি কমেছে। কমেছে বিদেশি মুদ্রার আমদানিও। ২০১৪-১৫-য় ১৪.৮ লক্ষ মেট্রিক টন রফতানি হয়েছিল। ২০১৮-১৯-এ তা নেমে এসেছে ১২.৩ মেট্রিক টনে। আয় হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।

জাতীয় পশু রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প

• ‘ফুট অ্যান্ড মাউথ’ রোগ নির্মূল করতে পাঁচ বছরে খরচ ১২,৬৫২ কোটি টাকা

• টিকাকরণ হবে ৩০ কোটি গরু-বলদ-মহিষ, ২০ কোটি ছাগল-ভেড়া, ১ কোটি শুয়োরের

• টিকাকরণ হয়ে গেলে পশুদের জন্য আধার কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড

মহিষের মাংস রফতানি

• ২০১৪-১৫: ১৪.৮ লক্ষ মেট্রিক টন

• ২০১৮-১৯: ১২.৩৬ লক্ষ মেট্রিক টন

• আয়: ২৫,১৬৮ কোটি টাকা

প্রধান ক্রেতা

• ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, মায়ানমার

কোথায় বাজার ধরার চেষ্টা

• চিন, ইউরোপ

প্রশ্ন উঠেছে, মোষের মাংস আরও বেশি করে বিদেশে রফতানি করতেই কি ‘ফুট অ্যান্ড মাউথ’ রোগ দূর করার পরিকল্পনা?

প্রধানমন্ত্রী আজ যুক্তি দিয়েছেন, দেশে কৃষকদের কথা বলতে হলে ‘পশুধন’-এর কথা বলতেই হবে। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামের মানুষের জীবনে পশুপালনের মূল্য অসীম। গ্রামের কোনও পরিবার এ ছাড়া বাঁচতে পারবে?’’ কেন্দ্রীয় সরকারের পশুপালন দফতরের দাবি, ‘ফুট অ্যান্ড মাউথ’ রোগ নির্মূল হলে চাষিদের লোকসান কমে যাবে। কারণ, ভাইরাসের সংক্রমণে গরুর পায়ে, মুখে ঘা হয়। গবাদি পশু সুস্থ থাকলে চাষিদের আয় বাড়বে। ২০২২-এর মধ্যে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে।

বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি শাসিত রাজ্যে গোরক্ষক বাহিনী ও কড়া আইনের দাপটে চাষিদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। গরু-বলদ দুধ দেওয়া বন্ধ করে দিলেও বেচে দেওয়ার উপায় নেই। আবার বসিয়ে খাওয়ানোরও পয়সা নেই। তাই তারা গরু-বলদ রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছে। বেওয়ারিশ গরুর পাল চাষের জমিতে ঢুকে ফসল নষ্ট করছে।

এই সমালোচনার জবাব প্রধানমন্ত্রী আজ নিজেই দিয়েছেন। মথুরায় নিজের হাতে গো-সেবা করে তিনি বলেন, ‘‘দেশে কিছু লোকের কানে ওঁ শব্দ গেলে চুল খাড়া হয়ে যায়। গরু শব্দটা কানে গেলে মনে হয় বিদ্যুতের শক লেগেছে। ওঁদের মনে হয়, গরুর কথা বললে দেশ ষোড়শ বা সপ্তদশ শতাব্দীতে পিছিয়ে গিয়েছে। দেশকে বরবাদ করতে চাওয়া লোকেরা কোনও সুযোগই ছাড়ে না।’’ তা শুনে এমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসি-র মন্তব্য, ‘‘গরুর নামে যখন মানুষ খুন করা হয়, সংবিধানের কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়, তখন নরেন্দ্র মোদীর কান খাড়া হওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন