Science News

বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন তারা ‘বিট্‌লজিউস’ কি হবে আর একটি ‘পূর্ণিমার চাঁদ’?

তারাটি কোথায় হারিয়ে ফেলল তার যাবতীয় ঔজ্জ্বল্য? কেনই বা হারিয়ে ফেলল? কেন এখন সত্যি-সত্যিই টিমটিম করে ‘জ্বলতে’ দেখা যাচ্ছে বিট্‌লজিউসকে? এ বার কি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হবে বিট্‌লজিউসে?

Advertisement

সুজয় চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ১৪:৫০
Share:

সেই তারা ‘বিট্‌লজিউস’। ছবি সৌজন্যে: নাসা

এ বার কি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে চুরমার হয়ে যাবে আকাশের একটি তারা? বিট্‌লজিউস। তার আয়ু কি ফুরিয়ে এসেছে একেবারেই? হয়ে যাবে আমাদের আকাশে আরও একটি ‘পূর্ণিমার চাঁদ’?

Advertisement

এই সন্দেহের কারণ, পৃথিবী থেকে মাত্র ৭০০ আলোকবর্ষ (আলোর গতিতে ছুটলে যেখানে পৌঁছতে সময় লাগবে ৭০০ বছর) দূরে বিট্‌লজিউসকে হালে আকাশে খুবই নিষ্প্রভ দেখাচ্ছে।

তারাটি কোথায় হারিয়ে ফেলল তার যাবতীয় ঔজ্জ্বল্য? কেনই বা হারিয়ে ফেলল? কেন এখন সত্যি-সত্যিই টিমটিম করে ‘জ্বলতে’ দেখা যাচ্ছে বিট্‌লজিউসকে? এ বার কি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হবে বিট্‌লজিউসে?

Advertisement

কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)’-এর অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তী ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে জানাচ্ছেন, আবিষ্কারের পর থেকে তারাটিকে এতটা অনুজ্জ্বল দেখা যায়নি আর কখনও। গত তিন মাসে (নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি) বিট্‌লজিউসের ঔজ্জ্বল্য কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ফলে, শীতের মেঘমুক্ত আকাশেও আর তেমন চোখে পড়ছে না তারাটিকে। এই জানুয়ারিতে তার ঔজ্জ্বল্য আরও কমেছে। সামনের কয়েক মাসে তা আরও কমতে পারে।

বিট্‌লজিউস হবে আমাদের ‘পূর্ণিমার চাঁদ’, আরও একটি!

বিট্‌লজিউস আমাদের সূর্যের চেয়ে বহু গুণ ভারী। ১০ গুণ তো বটেই। কারও কারও মতে তার ভর সূর্যের ভরের ২০ গুণ! আরও একটি নামে ডাকা হয় বিট্‌লজিউসকে। ‘আলফা ওরিয়নিস’।

এই বিট্‌লজিউস যদি আমাদের সৌরমণ্ডলের ‘সূর্য’ হত আর প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ফেটে যেত, তা হলে যে আগুনের গোলা আর গ্যাস ছিটকে বেরিয়ে আসত সেই বিস্ফোরণের ফলে, তা পৌঁছে যেত বৃহস্পতির কক্ষপথ পর্যন্ত।

সন্দীপের কথায়, ‘‘বিট্‌লজিউসে সুপারনোভা হলে অবশ্য আমাদের সেই বিস্ফোরণে শেষ হয়ে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। কারণ, বিট্‌লজিউস আমাদের থেকে ৭০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। তবে সেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণের ফলে যে অগ্নি-গোলকের জন্ম হবে আর তার যে ঔজ্জ্বল্য হবে, তাতে দীর্ঘ দিন ধরে সেটিকে আমরা আকাশে ‘পূর্ণিমার চাঁদ’-এর মতোই দেখব।’’

মৃত্যুর জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছে বিট্‌লজিউস? দেখুন ভিডিয়ো

গত তিন মাসে বিট্‌লজিউসের ঔজ্জ্বল্য কমেছে অর্ধেক!

ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড গুইনান আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ লিখেছেন, ‘‘আকাশে উজ্জ্বলতম তারাদের তালিকায় এত দিন বিট্‌লজিউস ছিল ৭ নম্বরে। কিন্তু গত তিন মাসে তার ঔজ্জ্বল্য এতটাই কমেছে যে, পিছতে পিছতে তালিকায় ২১ নম্বরে চলে গিয়েছে বিট্‌লজিউস।’’

বিট্‌লজিউসের ঔজ্জ্বল্য কত দ্রুত হারে কমছে, অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের তার উপর নজর রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন নিউ ইয়র্কের হেডেন প্ল্যানেটারিয়ামের অধিকর্তা নিল ডি’গ্রেস টাইসন। ফলে, তারাটি এ বার প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ফেটে যাবে কি না, তা নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যেই আলোচনা, বিতর্ক শুরু হয়েছে।

ঘনিয়ে এসেছে তার মৃত্যুর সময়...

তবে আজ হোক বা কাল বিট্‌লজিউসে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের দিন যে ঘনিয়ে এসেছে, সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশই। যে কোনও তারা মৃত্যুদশায় পৌঁছলে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয়, ‘সুপারনোভা’।

বিট্‌লজিউস: তখন-এখন। ২০১০-এ যেমন ছিল, ২০১৫-য় দেখা গেল বদলে গিয়েছে অনেকটাই

সন্দীপ জানাচ্ছেন, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে তারাটি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পরিভাষায় তারাদের এই গোত্রটিকে বলা হয়, ‘রেড সুপারজায়ান্ট’। বা, ‘লাল মহাদৈত্য। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে তার শরীরে থাকা হাইড্রোজেন পুড়ে গিয়ে হিলিয়ামে পরিণত হচ্ছে। বিট্‌লজিউসের অন্দরের সেই হিলিয়ামও পুড়তে শুরু করেছে। তৈরি করছে লোহার মতো ভারী ভারী মৌল। এই ভাবে পুড়তে পুড়তে বিট্‌লজিউসের পেটের ভিতরটা কঠিন লোহায় পুরোপুরি ভরে গেলেই তারাটিকে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে মৃত্যুর দোরগোড়ায়। তখনই হবে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। সুপারনোভা। তার পর সেখান থেকই তৈরি হবে একটি দৈত্যাকার ‘ব্ল্যাক হোল’ বা কৃষ্ণগহ্বর। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসাবে, সেটা আর এক লক্ষ বছরের মধ্যে হবেই হবে।

প্রচণ্ড বিস্ফোরণ কবে হবে, জানেন না কেউই!

তবে তার জন্য যে এক লক্ষ বছর ধরে অপেক্ষা করতেই হবে, তা কিন্তু নয়।

মুম্বইয়ের ‘টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর)’-এর অধ্যাপক দেবেন্দ্র ওঝা বলছেন, ‘‘সেটা আজও হতে পারে। কালও। কারণ, সেই প্রক্রিয়াটা যে এক লক্ষ বছর বা তার কিছু কম সময় আগে শুরু হয়ে যায়নি ইতিমধ্যেই, সে কথাটা কেই-বা বুক বাজিয়ে বলতে পারবেন? বিট্লজিউসের অস্তিত্বের কথা তো জানা গিয়েছে মাত্র কয়েক শতাব্দী।’’

ছবি, গ্রাফিক ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন